নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার আমিকে খুজে ফিরি সবসময়.....

.আমার আমিকে খুজে ফিরি সবসময়!!!!!

জমিদার সাহেব

জমিদার সাহেব › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্ধকারে ছায়া (ছোট গল্প)

১০ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৪১

ভোর রাতে হাল্কা বৃষ্টি হয়েছিল।

রাস্তায় বের হয়ে কাদামাখা পিচ্ছিল পথটা দেখেই মনটা দমে গেলো শিহাবের। নির্ঘাত পায়ের তলাটা ভিজে যাবে। পায়ের জুতো জোড়া ছয় বছরের পুরনো। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় নিয়ে সেটি এতোদিন সার্ভিস দিয়ে আজ জীর্ণ... পরিশ্রান্ত...ক্লান্ত। জুতোর তলিতে দু’যায়গায় পট্টি দিয়ে চলছে শিহাব। এজন্য ভেজা রাস্তা দেখে ওর ভ্রু দু’টো কুঞ্চিত হল। আজ মোজা ভিজে নির্ঘাত গন্ধ ছড়াবে। আর মকবুল আজই কিনা একটা জব-ইন্টারভিউর জন্য ওকে পাঠালো। খুব সন্তর্পণে সে রাস্তার কাদাময় যায়গাগুলো এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করল।

টিউশনটা সেরে মকবুলের দেয়া ঠিকানায় রওয়ানা হল।

আরামবাগ বললেও আসলে আরো ভিতরে বেশ খানিকটা দূরে একটা চিপা গলির ভিতরে অফিসটা। একটা পুরনো বিল্ডিঙের টপ ফ্লোরে। বিল্ডিঙটা চারতলা। অন্ধকার সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে মনটা কোনো কারণ ছাড়াই খারাপ হয়ে গেলো। একেবারে খাড়া ধাপের সিড়িগুলো বেয়ে বেয়ে যখন চারতলার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাল, পা দু’টো কেমন ধরে এলো।

একটা সাইনবোর্ড দেখতে পেল-

এস এল আই সি এল

কি মানে হতে পারে?

ভাবতে ভাবতে ভিতরে ঢুকে পড়ল।

প্রথম রুমটাতে তিনটি ডেস্ক টেবিল। একজন মেয়ে ও বাকি দু’জন পুরুষ। প্রত্যেকের সামনে একটি করে চেয়ার। ফ্লোরে ফ্লোর ম্যাট থাকলেও ভিতরের রুমের দৈন্য দশা ঢাকতে ব্যর্থ হয়েছে। একটা দেয়াল ঘড়ি হলদে কালারের ওয়ালে বড্ড বেশী বেমানান লাগল শিহাবের চোখে।

‘ জী বলুন?’ একজন তার ডেস্ক থেকে শিহাবকে জিজ্ঞেস করলে সে যার কাছে এসেছে তার নাম বলল। ছেলেটি এবার ওকে ভিতরের দ্বিতীয় রুমটিতে নিয়ে গেলো। এই রুমটি প্রথমটির থেকে বেশ উন্নত। দেয়ালের ডিস্টেম্পার মনকে ভাল করে দেয়ার মত। একটা দুর্বোধ্য পেইন্টিং মানানসই ভাবে সেটে আছে। রিভলবিং চেয়ারে যিনি বসে আছেন তাকে দেখতেও বেশ। উপরে কাঁচ দেয়া টেবিলটাও অনেক বড়। শিহাবকে বসতে বললে সে ধন্যবাদ দিয়ে সামনের চেয়ারটিতে বসে পড়ে।

রাতে খেতে বসে মকবুলের সাথে কথা হয়। সে-ই জিজ্ঞেস করে,

‘কি রে, গেছিলি ঐ যায়গায়?’

‘হ্যা।‘ হাত দিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে বলল শিহাব।

‘ কেমন বুঝলি?’

‘ ওটা একটা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। সান লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। ‘

‘ইনস্যুরেন্স কোম্পানি? সান লাইফ??’

‘ হ্যা! অবাক হচ্ছ যে? তুমি ই তো পাঠালে...’

‘ আরে আমি তো পেপারে এস এল আই সি এল দেখেছিলাম। ওইটাই যে সান লাইফ তা কেডা জানত? ... তোর কাছে টাকা চায়নি? ... চাকরি দেবে বলে?’

একটু অবাক হয় শিহাব। এক দলা ভাত গিলে ফেলে গ্লাস থেকে পানি খায়। এরপর উত্তর দেয়-

‘ হ্যা, চেয়েছে তো? ৫০০০ টাকার একটা পলিসি খুলতে বলেছে।এরপরে ওখানেই এক্সিকিউটিভ পদে একটা জব দিবে বলেছে।‘

‘ তিনদিন... মাত্র তিনদিন পরে যেয়ে দেখিস, ঐ অফিসের লোকগুলো থাকলেও যে তোর ইন্টারভিউ নিয়েছে সে থাকবে না।‘

‘ মানে? বুঝলাম না?’

‘ এরা নতুন লোকদের কাছ থেকে এভাবে পলিসি খোলায়, কিন্তু সেই টাকা ওদের আসল অফিসে দেয় না। ওই লোক নিজেই মেরে দেয়। আর ওদের অফিসের পক্ষ থেকে পেপারে একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে দেয় যে, “ একে ধরিয়ে দিন”... “ এর সাথে আমাদের কোম্পানির কোনো সম্পর্ক নেই” এরকম আউল ফাউল কাহিনী। আসলে এরা একটা ভাঁওতাবাজ চক্র।‘

‘ আমি তো কয়েকজনকে দেখলাম সেখানে বেশ কাজ করছে?’

‘ আরে, খোঁজ নিয়ে দেখ ওরাও সবাই ৫০০০ করে টাকা দিয়ে পলিসি করিয়েছে। এই বিজ্ঞাপনটা এক সপ্তাহ আগের। দেখিস তিন চার দিনের ভিতর অফিস আর থাকবে না।‘

‘ তুমি কীভাবে এতো কিছু জানো?’

‘কারণ... কারণ আমি প্রথম ঢাকা এসে এদের শিকার হয়েছিলাম। কত কষ্ট করে হাজার পাঁচেক টাকা ধার করে এনে ওদেরকে দিয়েছিলাম। এরপর... বাদ দে। তুই টিউশনিই করতে থাক। এটাই ভাল।‘

একটা ১৩০ স্কয়ারফিট রুমের ভিতরে দু’জন যুবকের অসহায়ত্ব ইট-পাথরের দেয়ালে বাড়ি খেয়ে খেয়ে রুমের ভিতরেই থেকে যায়। আর তাদের চাপা নিঃশ্বাস রুমের গুমোট আবহাওয়াকে কেবল ভারীই করতে থাকে...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.