নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

এক নিরুদ্দেশ পথিক

সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সমস্যার প্রকৃতি নির্ধারণ করা, আমাদের আচার ব্যবহার, সমাজের প্রচলিত কৃষ্টি কালচার, সৃষ্টিশীলতা, চারিত্রিক উদারতা এবং বক্রতা, অপরাধ প্রবৃত্তি, অপরাধ সঙ্ঘঠনের ধাঁচ ইত্যাদির স্থানীয় জ্ঞানের আলোকে সমাজের সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়াই অগ্রসর নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে দুর্নীতি রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং টেকনোলজির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় অপরাধের জ্ঞান কে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধান এর জন্য লিখা লিখি করি। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। ব্যক্তিগত ভাবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন কে দেশের ঐক্যের ভিত্তিমূল মনে করি। ডাটাবেইজ এবং টেকনোলজি বেইজড পলিসি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রোপজাল দেবার চেষ্টা করি। আমি মূলত সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এর নিরিখে- অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজাইন ত্রুটি, কৃষি শিক্ষা খাতে কারিগরি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মাইক্রো ইকনমিক ব্যাপার গুলো, ফিনান্সিয়াল মাইগ্রেশন এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চোরকে চোর বলার জন্য দুর্নিতি নিয়ে লিখি। পেশাঃ প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন।

এক নিরুদ্দেশ পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনাঃ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কৌশল, ডিজাইন ত্রুটি এবং দুর্নীতির ছাপ

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪১

প্রাকৃতিক দুর্যোগে অগণিত প্রাণহানি, অবকাঠামো, ব্যক্তি, সংস্থা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বাংলাদেশের অতি কঠিন বাস্তবতা। মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে সিডর ও আইলার মতো দুটো প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় এই কঠিন বাস্তবতারই প্রতিফলন। ধারনা করা হচ্ছে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে সৃষ্ট এই সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়বে।



জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের বিপর্যয়ের এই ঘটনাকে বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নব্বইয়ের দশকে প্রণীত ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট এ্যাকশন প্ল্যান (NEMAP)-এ দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।



কোনো দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সত্যিই পড়ছে কিনা, তা চারটি মানদন্ডে বিবেচনা করা হয়:

১. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ

২. কোথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে

৩. সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা কোথায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে

৪. ক্ষতিগ্রস্থ দেশটি ক্ষতি মোকাবিলায় বা অভিযোজনের জন্য এরই মধ্যে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে।



বাংলাদেশে একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক অনেক বেশি। এই চারটি মানদন্ডেই বাংলাদেশ, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকায় শীর্ষে।



আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ-এর ২০১০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স (CRI) অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্থ দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এই সমীক্ষা চালানো হয় ১৯৯০ থেকে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১৯৩টি দেশের উপর। উল্লেখ্য, উক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত ২০০৭ এবং ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ।জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্থতার বিচারে বিশ্বব্যাপী গবেষকগণ বাংলাদেশকে পোস্টার চাইল্ড (Poster Child) হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।

ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার প্রেক্ষাপটে, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রার ব্যাপক প্রচার, আন্তর্জাতিক সাহায্য আবেদন এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় অভ্যন্তরীণ কর্ম পরিকল্পনার ঘোষণা করে বিগত এক দশকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক প্ররিবেশ বাদী সঙ্ঘঠন এবং জাতিসংঘের পরিবেশ ও জলবায়ু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহের আগ্রহের কেন্দ্রে ঠাই পেয়েছে। বৈশ্বিক পরিবেশ এবং জলবায়ু ব্যবস্থাপনার অঙ্গনে বাংলাদেশ এক সরব ভোকাল এবং সেই সাথে জলবায়ু তহবিলের শীর্ষ ভাগীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।



বাংলাদেশ জলবায়ু দুর্যোগ মোকাবেলায় বহুমুখী কৌশল প্রনয়নের প্ল্যান ঘোষণা করেছে (২০৯ টি প্রজেক্ট) এবং নিজস্ব রাজস্ব বরাদ্দে "বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্ট ফান্ড" নামে একটি জলবায়ু তহবিল গঠন করেছে। এই ২ টি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্ল্যান জলবায়ু তহবিল প্রাপ্তিকে আপাতত জাস্টিফাই করছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলেরর দাতা দেশ সমুহের কাছে। সব মিলিয়ে নিন্মোক্ত ফান্ড এসেছে বাংলাদেশের জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়-



ক। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দুর্যোগ মোকাবেলার পাইলট ফান্ড PPCR Fund (আন্তর্জাতিক)

খ। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্ট ফান্ড BCCTF (আন্তর্জাতিক, বহু পক্ষীয়)

গ। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন দুর্যোগ প্রতিরোধ ফান্ড BCCRF (বাংলাদেশের জাতীয় বরাদ্দ)



ঊল্লেখ্য, PPCR ফান্ড এবং BCCRF একই আন্তর্জাতিক সোর্স থেকেই আসতে পারে। PPCR প্রকল্প সমূহ ADB র অনুমোদনে করা হয়। BCCTF উল্লেখযোগ্য দাতা দেশ সমুহ হল যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ড।



PPCR এর অর্থায়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক "উপকূলীয় জলবায়ু পরিবর্তন সহায়ক স্থাপনা নির্মাণ" প্রকল্প অনুমোদন করেছে ডিসেম্বর ২০১২ তে। এর উদেশ্য হল ১২ টি উপকূলীয় জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জীবন এবং সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করন। এই প্রজেক্টে দুর্যোগ প্রতিরোধী সম্পদ নিরাপত্তায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক ঠিক করা হয়েছে, ১। রাস্তা ২। দুর্যোগ কালীন বাজার সুবিধা।





ফান্ড বরাদ্দের চাহিদা







বরাদ্দক্রীত ফান্ড এবং বরাদ্দের অধঃক্রম-







উল্লেখ্য BCCTF ডিসেম্বর ২০১২ তে সাইক্লোন প্রুফ ঘর বাড়ী বানানোর জন্য ঘর প্রতি ১,৪০০ ইউএস ডলার করে অনুমোদন দিয়েছে।





প্রোগ্রাম এবং প্রকল্প সমুহের ধরনঃ





১। PPCR পাইলট প্রকল্পঃ আন্তর্জাতিক তহবিেল (Pilot Program for Climate Resilience, PPCR) এর আওতায় ডিসেম্বর ২০১২ থেকে বাংলাদেশে ২ টি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে "জলবায়ু দুর্যোগ প্রতিরোধী কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তা" এবং "উপকুলীয় এলাকায় দুর্যোগ প্রতিরোধী ঘর বাড়ি নির্মাণ"।



উল্লেখ্য যে PPCR আরো ৫ টি দেশে (নেপাল, নাইজার, মোজাম্বিক, তাজিকিস্তান এবং জাম্বিয়া) দুর্যোগ প্রতিরোধী পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্প সমূহের ধরন অঞ্চল ভেদে কিছুটা ভিন্ন।







জলবায়ু ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড CIF এর "২০১২ বাৎসরিক রিপোর্ট " এ প্রকল্প দুটির ভুমিকায় বলা হয়েছে,



""বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বিশ্বের সবচেয়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত ২ দশকে দেশটির দারিদ্র দূরীকরণ এবং আয় বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য অর্জন কে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এর ফলে দেশের অতিরিক্ত ১৪% লোক বন্যায় অতি মাত্রায় দুর্গত হতে পারে এবং সাড়ে তিন কোটি উপকূলীয় মানুষ আবাস স্থল হারিয়ে অন্যত্র সরতে হতে পারে। ৮৭% রাস্তা অতিমাত্রায় জলমগ্ন হতে পারে ২০৫০ সালের মধ্যে। ""



২। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্ট ফান্ডের অর্থায়নে অনুমোদিত প্রকল্পঃ



স্ট্র্যাটেজি এবং একশন প্ল্যান BCCSAP-2009 আর এডাপ্টেশন প্ল্যান NAPA-2009 এর আওতায় ৬ টি মেজর থিমেটিক এরিয়াতে BCCF এবং BCCTF ফান্ড বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে-



১। খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য

২। সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা

৩। অবকাঠামো

৪। শিক্ষা ও গবেষণা ব্যবস্থাপনা

৫। প্রতিরোধ এবং নিন্ম পর্যায়ের কার্বন নিঃসরণ

৬। ধারন ক্ষমতা তৈরি এবং প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন



পুরো কর্মযজ্ঞে বিবিধ ইন্সটিটিউট (কৃষি গবেষণা, ধান গবেষণা, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, স্পারসো, জ্বালানি গবেষণা ও উন্নয়ন ইন্সটিটিউটি, বুয়েট ইত্যাদি ), পানি উন্নয়ন বোর্ড, পিডিবি, ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল আধিদপ্তর "এল জি ই ডি, পরিবেশ ও বন আধিদপ্তর সহ প্রায় সকল অধিদপ্তর, জেলা পরিষদ, এমনকি পৌরসভা কে কার্য পরিধিতে এনে সর্ব মোট ২০৯ টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।



জলবায়ু দুর্যোগ সংক্রান্ত পাইলট প্রজেক্টের গাইডলাইন কে আমলে নিয়ে ন্যাশনাল একশন এন্ড এডাপ্টেশন এর আলোকে প্রজেক্ট ফাইনান্সিং এর কথা বলা হয়েছে, যাতে প্রকল্প সমূহ ফুচার ফ্রুফ হয়।



গাইডলাইনে নিন্মোক্তো সেক্টর সমূহে বিশেষ ভাবে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছেঃ



১। ডিজাস্টার শেল্টার এর আপগ্রেড

২। স্থানীয় কমুনিউনিটির এডাপ্টেশন ক্ষমতা বর্ধিত করন

৩। সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন মেজারমেন্ট প্ল্যান এবং মেজারমেন্ট টুলস ডেভেলপ করা এবং সেগুলোকে ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানে এ সমন্বিত করা

৪। সরকারকে ক্লাইমেট ফ্রুফিং মেজার এবং টুলস বাবদ ৩০-৪০% পর্যন্ত বধিত খরচ এর ফাইনান্সিয়াল সাপোর্ট দেবার কথা বলা হয়েছে

৫। ডিজাইন স্টেইজ এ রিস্ক এসেস্মেন্ট, বিভিন্ন অবকাঠামোর এডাপ্টেশন মেজার (বিশেষ করে রাস্তা , বাঁধ, জলাবদ্ধতা এবং ড্রেনেইজ অবকাঠামো, বাঁধের ক্ষয় রোধ) নেবার উপর জোর দেয়া হয়েছে।

৬। বাস্তবায়নের সময় মানসম্পন্ন নির্মাণ, এশিউরড মেজারমেন্টস এর আলোকে নির্মাণ নিশ্চয়তা, ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট সাইক্লোন শেল্টার, পানির ট্যাঙ্ক, দুর্যোগ প্রতিরোধী রাস্তা,বাঁধ এবং পোল্ডার ইত্যাদির মানসম্পন্ন নির্মাণ এবং নির্মাণ উত্তর ব্যবস্থাপনা্র কথা সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।



অব্জারভেশনঃ



১। প্রাথমিক বিবেচনায় জলবায়ু তহবিলের অনুমোদিত প্রকল্প সমূহ সমন্বিত বলে মনে হলেও একটু গভীর পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে বাংলাদেশ যে ২০৯ টি প্রজেক্ট পরিকল্পনা এপ্রুভ করেছে তার অধিকাংশই উপকূলীয় জেলা তো বটেই বরং অন্য জেলা সমুহেরও অঞ্চল এবং নগর পরিকল্পনা, পৌরসভা এবং জেলা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন, শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ এবং ব্যবস্থাপনা, ইত্যাদি সাধারন এবং নিয়মিত এজেন্ডায় থাকার কথা।



সুতরাং এইসব সাধারন নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা কে (যা কিনা গণপূর্ত, পাউবো, স্থানীয় সরকার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ইত্যাদি অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রোজেক্ট) জলবায়ু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আনলে দেশের নিজস্ব জলবায়ু ফান্ডের নামে বিশেষ বরাদ্দ ব্যয়ের জাস্টিফিকেশন থাকে না। এর মানে দাঁড়ায় একই প্রকল্পের বাজেট (যা স্থানীয় সরকার বা অন্য অধিদপ্তরের রুটিন কাজে পড়ার কথা ) কে জলবায়ু তহবিলে দেখিয়ে মিথ্যা পরিকল্পনা দাঁড়া করানো হচ্ছে, আদতে বিশেষ কোন বরাদ্দ নেই। ২০১৪ বাজেটে নতুন কোন বরাদ্দ না রাখা জলবায়ু তহবিলে সরকারের সত্যিকারের কমিটমেন্ট না থাকারই প্রমান।

এভাবে চলতে থাকলে, ঘোষিত প্রজেক্ট আগানোর সাথে সাথে এই ফান্ড শুন্য হয়ে পড়বে। কারন জুলাই ২০১৩ এর পর আন্তর্জাতিক ফান্ড আসাও বন্ধ রয়েছে।



কাজেই এই ফান্ড কে সাস্টেইনেবল ডেভেল্পমেন্টের জন্য শুধুমাত্র সাইক্লোন জলোচ্ছ্বাস এবং বন্যা রিজিলিয়েন্ট বিশেষ বিশেষ প্রকল্পে ব্যবহার করা দরকার। বিশেষ ভাবে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট টুলস, কৃষি গবেষণা, লবন সহায়ক কৃষি জাত উদ্ভাভন, সাইক্লোন রেজিলিয়েন্ট শেল্টার, পানির ট্যাঙ্ক, দুর্যোগ প্রতিরোধী রাস্তা, দীর্ঘ মেয়াদি বন্যা প্রতিরোধী বাঁধ, রেজিলিয়েন্ট পোল্ডার কিংবা জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ / কাল্ভারট ইত্যাদির মানসম্পন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং নির্মাণ উত্তর ব্যবস্থাপনা্ তে ব্যবহার করা দরকার। অর্থাৎ তহবিলকে খাদ্য এবং কৃষি নিরাপত্তা এবং অবকাঠামো খাতের দূরদর্শী প্রকল্পে ব্যয় করা সমীচীন।



২। সাইক্লোন, সাইক্লোন জনিত জলোচ্ছ্বাস, বন্যা প্রতিরোধে স্থানীয় জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানো খুবই জরুরি। এই বিষয় গুলো আন্তর্জাতিক গাইড লাইনে সুস্পষ্ট ভাবে থাকলে লোকাল প্রকল্প ডিজাইনে খুবই কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।



৩। সাইক্লোন, সাইক্লোন জনিত জলোচ্ছ্বাস, বন্যা প্রতিরোধে স্থানীয় লোকজন কে উপযোগী ট্রেনিং এর উপর জোর দেয়া হয় নি।



৪। নির্মাণ, ব্যবস্থাপনা, গবেষণা ইত্যাদি তে ট্রন্সপারেন্সি এবং দুর্নীতি রোধ এ ব্যাপক ফোকাস প্রয়োজন।

৫। বাংলাদেশের সরকারি নির্মাণ খাতে যে ধরনের অতীব নিচু মানসম্পন্ন কাজ করা হয় তাতে গাইডলাইনের ম্যাটেরিয়াল এবং মেজারমেন্টস বজায় থাকবে না, এই বিষয়ে ফোকাস না দিলে ভবিষ্যতে BCCTF থেকে দাতা দেশ সরে যেতে পারে, কিংবা নতুন দেশের সংযুক্তি কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

৬। মানসম্পন্ন নির্মাণ স্থাপনা ব্যবস্থাপনা দরকার, এই কালচার বাংলাদেশে অনুপুস্থিত।

৭। বাংলাদেশ সম্পূর্ণ অবিবেচকের মত ২০১৪ বাজেটে বরাদ্দ রাখে নি। এটা আন্তর্জাতিক ডোনার দের ফান্ড দিতে অনুৎসাহিত করবে। টি আই বি বলছে,





""আমরা শুনে থমকে গিয়েছি যখন অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত জুনে ঘোষণা করেছেন যে, BCCTF এ বাংলাদেশের ফান্ডিং কমান হবে, নতুন কোন বরাদ্দ থাকবে না ২০১৪-২০১৫ বাজেটে। এটা ইঙ্গিত দেয় যে দীর্ঘ মেয়েদে এই ফান্ড শুন্য হয়ে যেতে পারে। বাজেটের অর্থায়ন কে সংকুলান করতে গিয়ে দুর্নীতির কারনে মাথাব্যাথা জনিত রোগে মাথাই কেতে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে! এটা আত্বহত্যার ই প্রচেষ্টা যা জলবায় ক্ষতিগ্রস্ত দের আরও বেশি অসহায় করে তুলবে।

বাংলাদেশে নিজেই জলবায়ু তহবিলের জাতীয় বরাদ্দ তুলে নেবার প্রকৃত রিস্ক হল, এটা আন্তর্জাতিক ডোনারদের জলবায়ু এডাপ্টেশন চেষ্টা কে সংশয় যুক্ত করে তুলবে। এবং এই বহু পক্ষীয় অনুদান "BCCTF" হতে আন্তর্জাতিক ডোনার দের সরে জেতে উৎসাহ যোগাবে।""











অলরেডি তৈরি করা সাইক্লোন রিজিলিয়েন্ট বাড়ি, এই সবের মান, দুর্নীতির আর ফান্ড হরিলূটে্র মহা আয়োজনঃ





BCCTF বরাদ্দে ইতমধ্যেই কিছু ঘর বানানো হয়েছে, ঘর প্রতি ১,৪০০ ইউ এস ডলার অনুদানে। এই প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করে টি আই বি ভীতি জাগানিয়া রিপোর্ট দিয়েছে।



""আমাদের খুলনা জেলা পরিদর্শনের এর সময় (যা কিনা প্রজেক্টের কাজ শেষ হবার যখন কথা তারও ১ বছরের বেশি সময় পর) আমরা পেয়েছি কিছু অর্ধ সম্পন্ন নির্মাণ কাজ-চার টা পিলার, কোন দেয়াল নেই এমন ঘর যা মানুষের বসবাসের অনুপযোগী।



দেখে মনে হয়েছে, পলিসি মেকার গন বুঝতেই অক্ষম হয়েছেন যে দুর্যোগ প্রবন এলাকায় মানুষ গুলো কতটা অসহায়, এবং এই অর্ধ নির্মিত ঘরগুলো তাদের দুর্গতির মাত্রার সাথে উপহাস করার সমান।



আমার সহকর্মী কথা বলেছেন খাদিজা বেগম নামক একজনের সাথে, উনার এই নির্মাণ প্রকল্প থেকে সুবিধা লাভ করার কথা ছিল। তিনি তাঁর অনুদান পাওয়া চার পিলারের উপর রশি বেঁধে দিয়ে কিছু ছাউনি দিয়েছেন যা বাতাসে উড়ে গেসে। উনি বলেছেন, কেউ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করতে আসেননি, অর্ধেকেরও কম কাজ করে এবং বাকি নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি করে দিয়ে ঠিকাদাররা উধাউ হয়ে গেসে।""




এই ধরনের একটি ঘর (আসলে চালা বলা ভাল) ছবি এরকম- শুধু মাত্র ৪ টি পিলারের উপর একটি কয়েক বর্গফুট এর ছাদ। কোন দেয়াল নেই!!! স্থানীয় দের প্রশ্ন এটা ঘর হয় কিভাবে, এটা কি মানুশের থাকের জন্য নাকি গৃহপালিত পশু রাখার জন্য। এই ঘর কোন মতেই সাইক্লোন এর সময় দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র হতে পারে না। সাইক্লোন জনিত জলোচ্ছ্বাস এর এফেক্ট বিচারে এটা একটা দুর্যোগ প্রতিরোধী ঘরের পাটাতন হতে পারে মাত্র, মানে এই চার পিলার এবং তার যে ছাদ তার উপর নির্মিত হবার কথা মেইন ঘর। যা হস্তান্তর করা হয়েছে তা সাইক্লোন এর জলচ্ছাসে কাউকে সুবিধা দিবে না। তাই এই ধরনের ফালতু এবং লুটপাটের প্রকল্প বাদ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সাইক্লোন রেজিলিয়েন্ট ঘর কিংবা স্থায়ী উপকূলীয় সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণে, বন্য, ঝড় সাইক্লোন প্রতিরোধী রাস্তা, ব্রিজ, বাঁধ, পানীয় জলের ব্যবস্থাপনা কিংবা স্যালাইন / লোনা পানি সহনীয় কৃষি, ধান, সবজি ইত্যাদির জাত উতপাদনের গবেষণার দূরদর্শী কাজে টাকা ঢালা দরকার।



এই ধরনের ডিজাইন কে বা করা করেছে, এবং কারা এটা এপ্রুভ করেছে এটা একটা বিস্ময় বটে।









অথচ সাইক্লোন প্রুফ ঘর সাধারনত সাইক্লোন এর সাথে ধেয়ে আসা জলোচ্ছ্বাস কে মাথায় রেখে বানানো হয়। সাধারণত এই আচমকা জলোচ্ছ্বাস এই অধিকাংশ মানুষ এবং গবাদি পশু প্রান হারায়। বাংলাদেশে সিডরের সময় ঠিক তাই হয়েছিল। তারপরও আমরা অভিজ্ঞতা আমলে নিচ্ছি না। এখানে কয়েকটি সাইক্লোন রেজিস্ট্যন্ট ঘরের নকশা দিচ্ছি। বাংলাদেশের উপুকূলে জাইকা অনুদানে নির্মিত কাছা কাছি মডেলের কিছু সাইক্লোন প্রুফ ঘর রেয়েছে।















টি আই রিপোর্টে সুস্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে, প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে, নিন্ম মানের ম্যাটেরিয়াল দেয়া হচ্ছে যা নির্মাণের কিছু মাস পরেই প্লাস্টার খসে পড়ার ঘঠনা ঘঠেছে। আন্তর্জাতিক তহবিল সংশ্লিষ্ট প্রজেক্টে মানহীন সাপ্লায়ার এবং নির্মাণ কারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে আশংকা জনক হোল স্থানীয় দের সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ জ্ঞান না নেয়া এবং ডিজাইন ফেইজ এ স্থানীয় জ্ঞান কে সমন্বিত না করা, অথচ এই ব্যাপারে গাইড লাইনে ডিটেইল বলা আছে।



সবমিলিয়ে যত টুকু কাজ হয়েছে, তাতে দুর্নীতি আর লূটপাটে ভরা বাংলাদেশের গতানুগতিক নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার সাধারন ছাপ ফুটে উঠেছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফান্ড আসার পথ বন্ধ হয়ে পড়া স্বাভাবিক। সুতরাং সাধু সাবধান। ব্যাপক প্রচারিত জলবায়ু পরিবর্তন পরিকল্পনা কালিমালিপ্ত হচ্ছে, তা দুর্নীতিতে আমাদের সম্পৃক্ততার বর্তমান ধারণা সুচক কে বর্ধিত করবে। জলবায়ু ফান্ড হারানোর ঝুকি ছাড়াও এর অনেক পরোক্ষ লোকসান রয়েছে।





পাইলট প্রকল্পে মানহীন নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে হাস্যকর পর্যায়ের, ত্রুটি পূর্ণ ডিজাইন দিয়ে যেসব চালা বানিয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে, তা শুধু স্বাভাবিক সময়ে গৃহপালিত পশু রাখার কাজে ব্যবহার করা যাবে, দুর্যোগ পূর্ণ সময়ে এবং দুর্যোগ পরবর্তীতে তা উপকূলীয় মানুষ এবং গৃহপালিত পশুর কোন কাজে আসবে না। আমরা চাই না যে, জলবায়ু তহবিল (আন্তর্জাতিক অনুদান এবং দেশীয় বরাদ্দ) কিছু অতি লোভী এবং দুর্নীতি পরায়ন মানুষের পকেট পুরোনোর মাধ্যমই হয়ে দাঁড়াবে শুধু।



প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে দুর্গত অঞ্চলের মানুষের স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে দুর্জয় সাহস ও প্রত্যয় নিয়ে ঘুরে দাড়াবার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু মানুষের দায়িত্বহীন, লোভাতুর ও অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যহত হচ্ছে, মানুষ ও পশুর প্রাণহানি হচ্ছে, সম্পদের অপচয় হচ্ছে, দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে। সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি কুফলের বিপরীতে আমাদের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে না।





আমাদের সরকারের দুর্নীতি বিরোধী সেন্স আসুক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য দূরদর্শিতা আসুক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক।













তথ্য সুত্রঃ

১। CIF 2012 Annual Report: Creating the Climate for Change, Click This Link



২। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্ট ফান্ডের অর্থায়নে অনুমোদিত প্রকল্পের তালিকা।http://www.moef.gov.bd/html/climate change unit/Total projects fund allowcation from cctf.12.01. 2014.pdf



৩। "AN ASSESSMENT OF CLIMATE FINANCE GOVERNANCE BANGLADESH" Click This Link



৪। Climate Finance Governance Project, Click This Link



৫। BANGLADESH: CUTTING OFF OUR HEADS TO CURE A HEADACHE? Click This Link

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২০

ঢাকাবাসী বলেছেন: এমন মহা দুর্ণীতিবাজ মুলুক দুনিয়াতে আর পাবেন না! নাইজেরিয়া সোমালীয়া আমাদের তুলনায় ফেরেশতা। আর আপনি লেখাটা আরো সহজ করে লিখলে ভাল হত।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:১৪

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: ঢাকাবাসী, আপনাকে দীর্ঘ পোস্ট পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বিষয় টা একটু কঠিন, দেখি কিভাবে আরো সহজ ভাবে উপস্থাপন করা যায়। মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
"আমাদের সরকারের দুর্নীতি বিরোধী সেন্স আসুক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য দূরদর্শিতা আসুক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক "

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.