নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সমস্যার প্রকৃতি নির্ধারণ করা, আমাদের আচার ব্যবহার, সমাজের প্রচলিত কৃষ্টি কালচার, সৃষ্টিশীলতা, চারিত্রিক উদারতা এবং বক্রতা, অপরাধ প্রবৃত্তি, অপরাধ সঙ্ঘঠনের ধাঁচ ইত্যাদির স্থানীয় জ্ঞানের আলোকে সমাজের সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়াই অগ্রসর নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে দুর্নীতি রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং টেকনোলজির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় অপরাধের জ্ঞান কে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধান এর জন্য লিখা লিখি করি। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। ব্যক্তিগত ভাবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন কে দেশের ঐক্যের ভিত্তিমূল মনে করি। ডাটাবেইজ এবং টেকনোলজি বেইজড পলিসি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রোপজাল দেবার চেষ্টা করি। আমি মূলত সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এর নিরিখে- অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজাইন ত্রুটি, কৃষি শিক্ষা খাতে কারিগরি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মাইক্রো ইকনমিক ব্যাপার গুলো, ফিনান্সিয়াল মাইগ্রেশন এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চোরকে চোর বলার জন্য দুর্নিতি নিয়ে লিখি। পেশাঃ প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এন্ড টু এন্ড ফুল ফিচারড পে গেইট ওয়ে নেই। তবে Bangladesh Electronic Fund Transfer Network (BEFTN 2011) এর সাথে ব্যাংক গুলো ধীরে ধীরে কানেক্টেড হচ্ছে ফলে বর্ধিত পরিসরে আন্তঃ ব্যাংক ফান্ড ট্র্যান্সফার সম্ভব হচ্ছে (OMCR check এবং অনলাইন ব্যাংকিং), বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৩৯৩ কোটি টাকা এই নেটোয়ার্কের মাধ্যমে আন্তঃ ব্যাংক লেনদেন হচ্ছে। অন্যদিকে National Payment Switch Bangladesh (NPSB) একটি আংশিক পেমেন্ট টোল হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে যার মাধ্যমে আন্তঃ ব্যাংক ATM নেটোয়ার্ক ব্যবহার, সীমিত পরিসরে POS মেশিন (পেমেন্ট টার্মিনাল ব্যবহার), ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং (Electrinic Bank Transfer EFT Application) ইত্যাদির পথ সুগম হয়েছে। রোডম্যাপে Real Time Gross Settlement (RTGS) নামক উচ্চ ভলিউমের ট্রানজেকশন, গভর্নমেন্ট সিকিউরিটি এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশনের প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রস্তুতি রয়েছে। তথাপি BEFTN এবং NPSB বেইজড পেমেন্ট টোল গেইট বাংলাদেশের ক্যাশ ট্রানজেকশনের লাগাম টেনে ধরতে পারেনি। যে ব্যাংক গুলো নিজেদের মধ্যে সরাসরি আইটি ইনফাস্ট্রাকচার দিয়ে কানেক্টেড তারা নির্দিস্ট চার্জ সাপেক্ষে (গ্রাহক দিয়ে থাকে যা অগহনযোগ্য) একে অন্যের ATM মেশিন ব্যবহার করতে পারে, হতে পারে NPSB কানেক্টেড থাকা স্বত্বেও তারা সেই রিসোর্স ব্যবহার করছে না কিংবা NPSB প্রয়োজনীয় ক্যাপাসিটিতে গড়ে উঠেনি। মোট ব্যাংকের সংখ্যা অতি মাত্রায় বেশি হবার কারনে (প্রায় ৫৩ টি) প্রতিটির সাথে প্রতিটির “Mesh নেটোয়ার্ক” সংযোগ একটা বিরাট ও বিশৃঙ্খল নেটোয়ার্ক গড়ে তোলার প্রয়োজন সৃষ্টি করেছে যা নন টেকসই।
অর্থাৎ আন্তঃ ব্যাংক ফিজিক্যাল নেটোয়ার্ক কানেক্টিভিটির দিক থেকে এন্ড টু এন্ড ডিজিটাল ব্যাংকিং সক্ষমতা একটি স্তরে পৌঁছেছে যাকে সিকিউরড করতে হবে এবং এতে ক্যাপাসিটি যোগ করতে হবে। কিন্তু ক্যাশ লেইস সোসাইটির জন্য কিংবা সমাজে ক্যাশকে নিরুৎসাহিত করার জন্য কিংবা ভ্যাট প্রবাহ ট্রান্সপারেন্ট রাখার জন্য ইউজার ইন্টারফেইস এবং ইউজার নেটোয়ার্ক রেডিনেস এখনও সুদূর পরাহত। অর্থাৎ মেশিন টু মেশিন পে কমিউনিকেশনের জগতে বাংলাদেশের আর্থিক খাত বহু যোজন পিছিয়ে।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের ব্যাংক কার্ড গুলো এখনও ১ম প্রজন্মের ডেবিট কার্ড থেকে গেছে যা দিয়ে পে মেশিনে পে করা যায় না (হাতে গুনা এক্সসেপ্সহন থাকতে পারে)। ক্যাশ ট্রানজেকশনের ভিড়ে শহরের দোকান পাট ও চেইনশপে পে মেশিনের (POS terminal, পয়েন্ট অফ সেলস টার্মিনাল) আধিক্য ও ব্যবহার সীমিত পরিসরে। সেসব পে কার্ড ব্যবহৃত হয় যা মূলত বিদেশি ক্রেডিট কার্ড। এখানে স্থানীয় ব্যাংক গুলোর ক্রেডিট কার্ড ডেভেলপ করা হয়েছে বিদেশি ক্রেডিট কার্ডের এফিলিয়েশনে, পিউর স্থানীয় ক্রেডিট কার্ড ডেভেলপ হয়নি অজ্ঞাত কারণে যদিও বিদেশি ক্রেডিট কার্ডের নন ইন্টারন্যাশনাল (লোকাল) ক্যাটাগরি রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছর গুলোতে MFS ভিত্তিক ( যেমন বিকাশ) কিছু লেনদেন চোখে পড়ে। তথাপি স্মল বিজনেস ও যাবতীয় পণ্য ক্রয়ের সিংহ ভাগ বিনিময় ভলিউম ক্যাশ ভিত্তিক, আর বৃহৎ ব্যবসার ট্রানজেকশনও মূলত ক্যাশ ভিত্তিক যদিও সেখানে চেক ভিত্তিক পেমেন্ট রয়েছে সিগ্নিফিকিন্টলি। সরকারি বেতন ব্যাংকিং চ্যানেলে হলেও নাগরিকের কাছ থেকে নেয়া সেবার সার্ভিস পেমেন্ট মূলত পে-ওর্ডারের সেকেলে পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। ফলে ক্যাশ নির্ভর আর্থিক ইকো সিস্টেমে ব্যাংক কার্ড শুধু এটিএম থেকে ক্যাশ উত্তোলনের ডিভাইস, যদিও এটাকে প্ল্যাস্টিক মানি বলা হয় তথাপি এই মানি ভার্চুয়াল মানি নয় আদতে ATM হোল ক্যাশ উত্তোলনের একটি সহজ ও হেসেল ফ্রি মিডিয়াম যা ক্যাশ ব্যবস্থাপনাকেই সমৃদ্ধ করছে।
(উল্লেখ্য বর্তমানে প্রায় ১ কোটির কাছাকাছি ব্যাংক কার্ডের (ATM প্ল্যাস্টিক কার্ড) ৯৩% ডেবিট কার্ড, ৬% ক্রেডিট কার্ড এবং ১% প্রি-পেইড কার্ড)। ২০১৭ তে মোট লেনদেন ভলিউম প্রায় ১৫১২ বিলিয়ন টাকা পৌঁছাবে। কোয়ার্টার-৩ ২০১৫ তে ২৮০,৮৯ বিলিয়ন ছিল, ট্রাঞ্জেকশন গ্রোথ ১৬% ধরে)। দৈনিক ATM লেনদেন পরিমান প্রায় ৪,১৫ বিলিয়ন টাকা (৪১৪,৩ কোটি)। সেপ্টেম্বর ২০১৫ অব্দি মোট এটিম সংখ্যা ছিল ৬৬৯৪, POS মেশিন ছিল মাত্র ২৯১৮৮ (বর্তমানে সর্বোচ্চ ৩৭৫৬৯টি), এদের গ্রোথ ১২-১৫%। দৈনিক POS লেনদেন মাত্র ৪-৪.২৫ কোটি যা আবার ক্রেডিট কার্ড কেন্দিক। ফলে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৯৩ লক্ষ ব্যাংক কার্ড বাজারে এভেলেবল থেকেও পে কার্ড হিসেবে তাদের উপযগীতা কিংবা ইউজার এন্ড বা পেমেন্ট এন্ড নেটোয়ার্ক রেডিনেস নেই। ব্যাংক কার্ড এখানও ২য় প্রজন্মের পে কার্ডও হয়ে উঠার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করেনি। উপরন্তু WiFi ক্যাপাবল ব্যাংক কার্ড, এপ নির্ভর ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, ডিজিটাল ওয়ালেটের ধারণা এখানে বাস্তবিক ভাবে আসেইনি।
তৃতীয়ত, গতানুগতিক ব্যাংকিং এর বিপরীতে বাংলাদেশে মোবাইল ফানিনাসিয়াল সার্ভিস এক্সেসভ সহজ এবং স্বাভাবিকভাবেই সংক্যায় বেশি। বহুবিধ কোলেটারাল জমাদানের (উপার্জনের ফর্মাল পেপারস) বাধ্যবাধকতা থাকায় বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য, স্থানীয় শিল্প, ট্রান্সপোর্টেশনের বিস্তৃত শ্রমজীবী শ্রেণী ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাংকিং খাতের গ্রাহক হয়ে উঠতে পারেনি। ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাংকিং কখনই তাদের ব্যাংকিংকে ইঙ্কলুসিভ করে গড়ে তোলার মডেল ডেভেলপ করেনি। ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকিং ধনীর দ্বারা তৈরি ধনী তোষণ ব্যবস্থা (পড়ুন খেলাফি ঋণ, তথাকথিত বিশ্বাসী ঋণ ইত্যাদি) ডেভেলপ করে বিস্তৃত উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তকে উচ্চ সুদে বেঁধে বিনিয়োগ অবান্ধব আয় জারি রেখেছে। অন্যদিকে অর্থ হীন গরীবের তরে এই ব্যবস্থা ব্যাংকিংকে একটা “পুলিশি তদন্তের মত দেখতে” ভয়ংকর কাঠামোয় দাঁড়া করে রেখেছে।
রাষ্ট্র নাগরিকের ন্যাশনাল আইডি ও বায়ো ম্যাট্রিক ফিঙ্গার ডেটা নিয়ে বহু ব্যস্ত থাকলেও নাগরিকের এড্রেস ভেরিফিকেশনের মত মৌলিক ডেটাবেইজ নিয়ে ভাবে নি। ফলে ব্যাংক ঋণ নিয়ে উধাও হবার ঝুঁকি জারি থেকেছে এবং এই অজুহাতে যাবতীয় ব্যাংক ঋণের সুদও (বহু কারণের একটি) বর্ধিত থেকেছে। যদিও ধনীর ব্যাংক সৃষ্টির অন্যতম মূখ্য এবং অপ্রকাশিত কারণ হিসেবে এটাই প্রধান। অতি উল্লেখ্য যে, অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ আমলে নিলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ জিডিপির ১২,৪৫%। মোট ঋণের তুলনায় খেলাপি ঋণের পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে।
ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকিং কোলেটারাল ভিত্তিক প্রতিবন্ধকতার উপর দাঁড়িয়ে ক্ষুদ্র ঋণ বহু ধারায় প্রসারিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে মাত্র ১ যুগ পেরিয়ে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঋণের মোট গ্রাহক প্রায় ২ কোটি (উল্লেখ্য এই ক্ষুদ্র ঋণের আড়ালেও রয়েছে বহুবিধ কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও মাল্টি পারপাস সমিতি ভিত্তিক মহাজনী সুদি প্রথা, ১৭৮৯৫৬টি সমবায় লাইসেন্সের সিংহ ভাগের বিপরীতেই রেগুলেশনহীন মহাজনী সুদি ও কথিত ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবসা ও আর্থিক প্রতারণা চলছে, এর বাইরে অলিখিত মহাজনী সুদি প্রথার সমিতি আছে গ্রামে গ্রামে)। তবে নাগরিকের এড্রেস ভেরিফিকেশন অনিশ্চয়তায় ক্ষুদ্র ঋণের সুদও বছর শেষে আকাশ চুম্বীই থেকে গেছে।
অর্থনৈতিক প্রান্তিক সমাজের জন্য ক্ল্যাসিক্যাল ব্যংকিং এর সৃষ্ট এক্সেস প্রতিবন্ধকতার উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে এক নবতর ধারার লেনদেন বেইজড ব্যাংকিং এর বিকাশ ঘটেছে যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হচ্ছে “মোবাইল ব্যাংকিং”। টেলিকম নেটয়ার্ক ইনফাস্ট্রাকচার নির্ভর এই ভার্চুয়াল ব্যাংকিং টেলিকমের লাইট সিগনালিং USSD সাপ্লিমেন্টারী সার্ভিসকে ব্যবহার করে ভার্চুয়াল ফান্ড ট্রান্সাফার সেবা দিয়ে থাকে যার এক প্রান্তে থাকে মোবাইল ইউজার (ব্যাংক গ্রাহক) অন্যদিকে থাকে ফাইনান্সিয়াল বিজনেস এপ্লিকেশন সার্ভার (ভার্চুয়াল ব্যাংক) যারা একটি USSD Gateway দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত। বর্তমানে “মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস MFS”এর মোট গ্রাহক প্রায় ৪ কোটি যা মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ। “এজেন্ট একাউন্ট” এবং “পার্সোনাল একাউন্টে” বিভক্ত এই সার্ভিসের সেবা একেবারেই তৃণমূল নাগরিকের দোরগোড়ায় যা ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ ইন এবং ক্যাশ আউট করতে সহায়ক। জুন ২০১৭তে MFS এর দৈনিক লেনদেন ১০২৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, ধারণা করা হচ্ছে এটা ক্ল্যাসিক্যাল ব্যংকিং এর দৈনিক লেনদেন পরিমাণের (মাত্র ৪১৪,৩ কোটি) প্রায় ২,৪৮ গুণ!
ফলে শ্রম ও পণ্যের বিপরিতে উপার্জিত ক্ষুদ্র অর্থের বিনিময় মধ্যম হয়ে উঠেছে এই সো কল্ড মোবাইল ব্যাংকিং। বলা চলে খরুচে হলেও জঞ্জাল মুক্ত ও সিকিউরড আর্থিক সিস্টেমের অনুপুস্থিতে ফর্মাল, সেমি ফর্মাল কিংবা একেবারেই আন ফর্মাল আর্থিক লেনদেনর অবকাঠামো তৈরিতে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য, স্থানীয় শিল্প, ট্রান্সপোর্টেশনের বিস্তৃত শ্রমজীবী শ্রেণী, নিন্ম বিত্ত, মধ্যবিত্ত নাগরিক নিজেই স্বতঃ স্ফুর্ত অংশগ্রহণে এই লেনদেন কেন্দ্রিক ব্যাংকিং এগিয়ে নিচ্ছে।
চতুর্থত, টেকনোলজি বিবেচনায় মোবাইল ব্যাংকিংও এর প্রথম প্রজন্মে রয়েছে। মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সিস্টেমকে আধুনিক এপস বেইজড প্ল্যাটফর্মে ট্রান্সফর্ম ঘটিয়ে সরাসরি টেলিকমের USSD নির্ভরতা যথাসম্ভভ কাটিয়ে তোলার চ্যালেঞ্জ রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। USSD বেইজড ফাইনান্সিয়াল প্ল্যাটফর্ম গুলো এখনও ইন্টার অপারেবল না ফলে ইন্টার MFS ট্রানজেকশনের পথ রহিত রয়েছে। ফলে একই ব্যাক্তিকে সবগুলো সার্ভিস প্রভাইডারের একাউন্ট হোল্ডার হতে হচ্ছে এবং USSD বেইজড MFS ব্যাপক ভিত্তিতে স্মল ও মিডিয়াম রেইঞ্জ পাওনা পরিশোধ ও শ্রমের উপার্জন স্থানান্তরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং দৈনিক ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট এর মোট ভলিউম ১১০০ কোটি টাকার অংকে ছুঁই ছুঁই করছে। তবে MFS পণ্য ক্রয়ের পে মেথড হয়ে উঠেনি ব্যাপকভাবে। উপরন্তু ১,৮৫ বা ২% ট্র্যান্সফার কষ্ট এর উপর দাঁড়িয়ে উঠা এই সিস্টেম গ্রাহক সন্তুষ্টির দিক থেকে নন টেকসই যার কষ্ট মডেল মূলত এরকম-(৭৭% এজেন্ট, ৭%, ১৬% MFS প্রভাইডার)।
যেখানে বাংলাদেশের শ্রমের মূল্য অতি নিন্ম, স্মল ও মিডিয়াম বিজনেসে এখনো মার্জিনাল প্রফিটিবিলিট বিদ্যমান সেখানে ২% ট্র্যান্সফার কষ্ট মোটেই গ্রাহক বান্ধব নয়। অন্যদিকে যে কোন একটি ট্রানজেকশন একই পরিমান নেটোয়ার্ক রিসোর্স (মুলত টেলিকম কোর ও রেডিও রিসোর্স, অতি সীমিত পরিসরে থার্ড পার্টি এপ্লিকেশন সার্ভার রিসোর্স) এবং সম পরিমাণ এজেন্ট ইনভল্ভমেন্ট রাখে, ফলে নেটয়ার্ক কষ্ট একই হয়েও উচ্চ অংকের ফান্ড ট্র্যান্সফারেও ফ্ল্যাট রেইটে ২% চার্জ কাটা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ও অন্যায্য।
বিকাশ ১০০ টাকা ট্র্যান্সফারে ১.৮৫ টাকা (আদতে ২ টাকা)চার্জ করছে,ঠিক একই ভাবে ২০০০০ টাকায় ৪০০ টাকা নিচ্ছে, যেখানে তার নেটোয়ার্ক কষ্ট মাত্র ২ টাকা বা এর কম (নেটোয়ার্ক কস্টিং আসলে অনুর্ধ ১ পয়স, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে লেনদেনের যৌক্তিক ফি কত হতে পারে? ১৪ই মে ২০১৭ বনিকবার্তা। বাকিটা ম্যানেজমেন্ট কষ্ট, প্রমোশন কষ্ট, প্রভাইডার প্রফিট ও এজেন্ট প্রফিট ইত্যাদি)। এই চিত্র নির্দেশ এটাই করে যে দেশের মানুষ সত্যই একটি সহজ এক্সেস সম্পন্ন ব্যাংকিং কিংবা পেমেন্ট সার্ভিসের অনুপুস্থিতে অন্য কোন পথ না পেয়ে খরুচে MFS কে ব্যবহার করছে।
বিকাশ ১০০ টাকা ট্র্যান্সফারে ১.৮৫ টাকা (আদতে ২ টাকা)চার্জ করছে,ঠিক একই ভাবে ২০০০০ টাকায় ৪০০ টাকা নিচ্ছে, যেখানে তার নেটোয়ার্ক ও ম্যানেজমেন্ট কষ্ট মাত্র ২ টাকা বা এর কম । এই চিত্র নির্দেশ এটাই করে যে দেশের মানুষ সত্যই একটি সহজ এক্সেস সম্পন্ন ব্যাংকিং কিংবা পেমেন্ট সার্ভিসের অনুপুস্থিতে অন্য কোন পথ না পেয়ে খরুচে MFS কে ব্যবহার করছে।দরকার ছিল বিকাশকে এমন একটি ফি মডেলে এডাপ্ট করা যেখানে ১০০০ টাকা ও নিচের অংকের ট্র্যান্সফারে অর্থের পরিমাণের ১,৮৫% বা ২% চার্জ রাখা হবে এবং ১০০০ টাকার উর্ধ্বের সকল ট্রান্সফারে সর্বোচ্চ ২০ টাকা চার্জ করা হবে। এমনিতেই সিকিউরিটি জনিত কারণে সর্বোচ্চ পেমেন্ট একটি পরিমাণগত থ্রেশল্ডে (২০০০০ হাজার) সেট করা আছে। আদতে একটি দেশের আর্থিক লেনদেনে এমন একটি ইনফাস্ট্রাকচার থাকা চাই যেখানে ফাইনান্সিয়াল ট্র্যাঞ্জেকশন কষ্ট লেস হবে। USSD বেইজড সলিউশন খুবই লাইট সিগনালিং বলে এর কস্টিং কমানো সম্ভব, তথাপি এই মডেল কষ্ট লেস করা অসম্ভব। তাই USSD ভিত্তিক MFS কে রূপান্তর করে অন্য সহজ, গ্রাহক বান্ধব ও যথাসম্ভব কষ্ট লেস মডেলে ট্রান্সফর্ম করার বাধ্যবাধকতাও তৈরি হয়েছে।
পঞ্চমত, অতি উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে এখনও টেলি ওয়ালেট চালু হয়নি, টেলি চার্জ ভিত্তিক রিফিল এবং ব্যাংক ওয়ার ভিত্তিক রিফিল উভয়টাই অনুপুস্থিত । ট্রান্সপোর্টেশন সেবার (বাস ট্রেইন) জন্য কোন পে কার্ড ডেভেলপ হয় নি, আর এই পে কার্ডের ডিজিটাইজেশন (এপস বেইজড বাস/ট্রেইন কার্ড যার সাথে ব্যাংক একাউন্ট বেইজড অটো রিফিল সিস্টেম) তো থাকার গ্রাউন্ডই তৈরি হয়নি। মোবাইলের একাউন্ট এর ব্যালান্স থেকে কিছু সীমিত পেমেন্ট করা যায় (যেমন ভর্তি ফি দেয়া ও ট্রেইনের টিকেট কাটা)যা আদতে “মোবাইল টেলি ওয়ালেটের”আদলে গড়ে উঠেনি বরং উঠেছে বিচ্ছিন্ন সেবা অর্থ ট্র্যান্সফারের বাণিজ্যিক সেবা হিসেবে।
USSD বেইজড পেমেন্ট সার্ভিসে কন্টেন্ট ভার্সেস প্রভাইডারের বিতর্কে জড়িয়ে বাংলদেশ ব্যাংক কমার্শিয়াল ব্যাংক গুলোর “মোবাইল ব্যাংকিং প্রোডাক্ট”কে সুরক্ষা দিতে গিয়ে টেলিকম অপারেটরদের ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস প্রভাইডার হয়ে উঠায় বাঁধা দিয়েছে। এতে টেকনোলজি ও কম্পিটিটিভনেসের উভয় দিক থেকেই MFS খরুচে থেকে যাচ্চে। কিন্তু USSD হীন মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসে টেলিকম অপারেটরদের কেন “টেলি ওয়ালেট”সার্ভিস বা ফিনান্সিয়াল সার্ভিস সেবা প্রদানের সুযোগ দেয়া হবে না তার নিষ্পত্তি জরুরি। এটা দৃশ্যমান যে বাস্তবতা যে, টেলকম নেটোয়ার্ক অপারেটর গুলোকে ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস সেবাদানের অনুমতি দেয়া রেগুলেটরি দৃষ্টি কোন থেকে কিছুটা ঝঞ্ঝাট পুর্ন যেহেতু ব্যাংক ও টেলি রেগুলেটরি দুটি ভিন্ন ভিন্ন অথরিটির অধীনে। তবে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সীম লেস ফ্লো আনতে এবং এক্সট্রিমিলি লো ফাইনান্সিয়াল ট্রানজেকশন কষ্ট ভিত্তিক সেবা প্রদানের অঙ্গীকার রেখে টেল্কো গুলোর মাদার অর্গানাইজেশন গুলোকে ভিন্ন ফাইনান্সিয়াল কোম্পানির ফর্মেশনে MFS সেবা দেয়ার অনুমতি দেয়া উচিত। কেননা এমনিতেই উচ্চ মান টেকনোলোজি কোম্পানি হবার কারণে টেলকমের টেকনোলোজি রেডিনেস এবং এভেইলেবিলিট থার্ড পার্টি নির্ভর ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকিং ডোমেইন থেকে বড্ড বেশি এবং নিরাপদ।
ষষ্ঠত, বাংলাদেশে NFC বেইজড পে প্ল্যাট ফর্মের সুচনাই হয়নি।
সপ্তমত, রেমিটেন্স আনয়নের জন্য কোন দেশীয় এপস বেইজড পে-টোল করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশী গ্রাহক ভারতীয় কিংবা অন্য আঞ্চলিক এপ বেইজড পে গেইটোয়ে ব্যবহার করছেন।(বাংলাদেশ ব্যাংক সম্ভভত EFT ও RTGS এর সমন্বয়ে এই ধরনের কিছু পরিকল্পনায় রেখেছে, তবে তার বাস্তবায়ন কবে হবে যা অনিশ্চিত)।
অষ্টমত, ব্যাংক ও মোবাইল ফাইনান্সিং এর বাইরে শুধু ইন্টারনেট ভিত্তিক এপস বেইজড সেকেন্ড পার্টি (ফাইনান্সিয়াল মার্চেন্ট)পেমেন্ট টোল ব্যবস্থা এবং তার সাথে ক্লিয়ারেন্স হাউজ এর ইন্টারফেইস ডেভেলপ হয়নি।
মোটকথা বর্তমানে ফিজিক্যাল নেটোয়ার্ক ইন্টারফেইস রেডিনেস একটা পর্যায়ে থাকলেও (যদিও এর সিকিউরিটি এট্রিউবিউট একেবারেই ভালনারেবল) বিজনেস ও গ্রাহকের পেমেন্ট এন্ডের ইনফাস্ট্রাকচার একেবারেই পশ্চাৎ পদ। দেখা যাচ্ছে ATM দিয়ে ক্যাশ তুলে লোকে মোবাইল ব্যাংকিং দিয়ে পে করছে। এর সমুদয় ব্যবস্থা দেশে ক্যাশ টাকার ব্যবহার ও বিস্তারকে জারি রেখেছে।
০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:১৩
এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: দুটি পদ্ধতি প্রচলিতঃ
১। এলসি'তে পনয়ের/মেশিনের দাম বেশি দেখিয়ে। (বিদেশি বিক্রেতার সাথে আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর মাধ্যমে)।
২। হুন্ডির মাধ্যমে।
আগে ইম্পোর্ট ডিউটি কমাতে এলসিতে পণ্যের পরিমাণ কম দেখিয়ে বেশি পরিমাণে মাল আনা হোত, এখন যুগ পাল্টেছে। বোথ ওয়ে ই চলছে!
২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৫
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন বিষয়ে বিস্তারিত লেখনিতে কৃতজ্ঞতা।
আমাদের কথিত বিশেষজ্ঞদের কথা ভাবলেও কষ্ট হয়।
রাজনীতিবিদদের কথাতো বাদই!
আইডিয়াতো ক্রিয়েট করতেই পারে না- বাকী বিশ্ব যা করছে দেখে দেখে নকুল কর! তা্ও পারেনা!
কেউ ক্রিয়েটিভ কিছু করলে তাকে অবদমিত করতে পারে কেবল!!!!
আর পারে রাস্তার, ব্রীজের, ফ্লাইওভারের কমিশন খেতে!!!
এমপি পদের জন্য বেসিক শিক্ষার পাশাপাশি এইসব ক্রিয়েটিভ শিক্ষাও বাধ্যতামূলক করা হোক।
প্রয়োজনে জাতীয় মেধাবী সার্চ প্রোগ্রাম করা হোক
আর কত? শুধু ভুতের পিছপা চলা!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
৩| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৩০
গরল বলেছেন: বাংলাদেশে যারা পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে তারা আসলেই PCI-DSS, ISO 8583 এবং ইনফরমেশন সিকিউরিটির ISC^2 বা ISO 27001 ফলো করছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। কারণ আমি কিছু বিকাশ স্ক্যামিং এর কথা শুনেছি যেগুলো আসলে এইসব ষ্ট্যান্ডার্ড ফলো করলে ঠেকানো যেত। যেমন Challenge-Response বা Multi Factor Authentication এ ধরণের কোন ম্যাকানিজম আসলে কেউ ফলো করছে না বা বাংলাদেশ ব্যাংকও এধরনের কোন গাইডলাইন দিচ্ছে কিনা সন্দেহ আছে। ব্যাংকগুলো অবশ্য PCI-DSS মানছে কারন তা না হলে VISA, Master, AMEX এসব অপারেট করতে পারবে না। কিন্তু চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং, কারণ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেই দেশের ৮০ ভাগ মানুষ টাকা লেনদেন করে থাকে।
৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৫:১৪
এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: ভাইয়া, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচিং সিস্টেম NPSN এর সিকিউরিটি নিয়ে এবং মাস্টারকার্ডের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে একটি লিখা লিখেছি। সময় করে আপডেট দিব। প্লিজ সেখানে রিভিউ দিয়েন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:২৭
মেটাফেজ বলেছেন: আমার এক আত্মীয়ের কাছে শুনেছিলাম বিদেশে টাকা পাঠাতে হলে এলসি খোলা ছাড়া নাকি অন্য কোন উপায় নাই, কার্ড নাকি বাইরে টাকা পাঠাতে পারে না ব্যাংকের নীতির কারণে। তাহলে টাকা পাচায় হয় কিভাবে?