নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

এক নিরুদ্দেশ পথিক

সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সমস্যার প্রকৃতি নির্ধারণ করা, আমাদের আচার ব্যবহার, সমাজের প্রচলিত কৃষ্টি কালচার, সৃষ্টিশীলতা, চারিত্রিক উদারতা এবং বক্রতা, অপরাধ প্রবৃত্তি, অপরাধ সঙ্ঘঠনের ধাঁচ ইত্যাদির স্থানীয় জ্ঞানের আলোকে সমাজের সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়াই অগ্রসর নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে দুর্নীতি রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং টেকনোলজির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় অপরাধের জ্ঞান কে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধান এর জন্য লিখা লিখি করি। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। ব্যক্তিগত ভাবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন কে দেশের ঐক্যের ভিত্তিমূল মনে করি। ডাটাবেইজ এবং টেকনোলজি বেইজড পলিসি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রোপজাল দেবার চেষ্টা করি। আমি মূলত সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এর নিরিখে- অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজাইন ত্রুটি, কৃষি শিক্ষা খাতে কারিগরি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মাইক্রো ইকনমিক ব্যাপার গুলো, ফিনান্সিয়াল মাইগ্রেশন এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চোরকে চোর বলার জন্য দুর্নিতি নিয়ে লিখি। পেশাঃ প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন।

এক নিরুদ্দেশ পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পানির জন্য নাগরিক ভাবনাঃ বাঁচার জন্য পানি ব্যবস্থাপনা, পানির জন্য অবিরত সংগ্রাম!

০৩ রা মে, ২০১৮ রাত ৯:৫১

বাংলাদেশের সাস্টেইনেবিলিটির প্রধান সূত্র অভিন্ন নদীতে পানির অধিকার আদায় এবং স্বাদু পানির (ভূ-উপরিভাগ এবং ভূগর্ভস্ত) পানির টেকসই ব্যবস্থপনা ও ব্যবহার বিন্যাস।
ক। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীর পানির অধিকারঃ
১। আন্তর্জাতিক ও অভিন্ন নদী থেকে একতরফা পানি প্রত্যাহার শুস্ক মৌসুমে বাংলাদেশে ভয়াবহ সারফেইস ওয়াটার (স্বাদু পানি) স্বল্পতা এবং মরুকায়ন সৃষ্টি করেছে। তাই আন্তর্জাতিক নদীর পানি হিস্যার দাবীকে ভারতের সাথে কৌশলগত নেগসিয়েশনের পর্যায়ে নিতে কার্যকর সামাজিক, নাগরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জন আন্দোলন দরকার যাতে পানি অধিকারের বোধ এবং অব্যহত নাগরিক চাপ প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রধানতম রাজনৈতিক অঙ্গীকারে পরিণত হয়। উল্লেখ্য আমাদের ক্ষমতার বলয়ে এবং ক্ষমতার বাইরের নেতৃত্ব দুরদর্শী হলে দলীয় ব্যাকগ্রাউন্ডের বাইরে নদী ও পানি বিষয়ে একটি সর্বজন নাগরিক আন্দোলন চালু রেখে ভারতের সাথে নেগোশিয়েশনের ট্রাম্প চালু রাখতেন। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের পানি বিষয়ক কূটনীতিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞা। নেই আন্তর্জাতিক নদীর পানি অধিকারের নৈতিক বোধ, নেই সমাজে জন আন্দোলনের উপস্থিতি, নেই বুদ্ধিবিত্তিক নেগোশিয়েশনের এলিমেন্ট এমনকি দেশের বুদ্ধিজীবীদেরও কোন মাথাব্যাথা নেই!

২। ফলে ভারত পানি না দিলেও বাংলাদেশ ও তাঁর সমাজ সচেতনতা, জন আন্দোলন, ইন্টেলেকচুয়াল মুভ, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা তৈরিতে অক্ষম।

৩। প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে যে গ্যারান্টি ক্লজ যুক্ত গঙ্গা চুক্তি আমরা পেয়েছিলাম তার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে এরকম- প্রথমত-মওলানা ভাসানীর সূচিত ব্যাপক জনআন্দোলন ভিত্তিক নাগরিক ও সমাজ সচেতনতা। দ্বিতীয়ত- এই জনদাবীর বিপরীতে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিজ্ঞা। তৃতীয়ত- বিষয়টি জাতিসংঘে তুলে ভারতের মান সম্মানে আঘাত আনার কূটনৈতিক স্ট্রাটেজী। এখন জন আন্দোলনও নাই, আর বর্তমানের প্রধান দলগুলো ক্ষমতার সমীকরণে কেউই ভারতকে চটাতে চায় না, আর নদী ও পানির গুরুত্ব এবং কৃষি- মৎস্য -প্রাণ- প্রকৃতি ও মানুষের সাটেইনেবিলিটির জ্ঞানও এদের কারো নাই।

৪। ভারতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অসম্মানিত করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গঙ্গা, তিস্তা,যমূনার পানি হিস্যার দাবী জানানো খুবই কার্যকরী হবে তবে এর জন্য একটা সমাজ আন্দোলনের নৈতিক প্ল্যাটফর্ম এবং ভিত্তি দরকার। এটা করা গেলে জাতিসংঘের কার্যপ্রণালী বিধি মেনে ভারতকে পানি হিস্যা নিয়ে বসতে তাগাদা দিবে জাতিসংঘ। তবে বাংলাদেশে পানি হিস্যার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক ও নাগরিক আন্দোলনের অনুপুস্থিতে এই সময়ে এটা আমাদের জন্য বুমেরাং হবে, কারণ আমদের নিজেদেরই সেখানে সচেতনতা নেই, সেখানে ভারত আন্তরিকতা নিয়ে আসবে না। আর অন্য আলোচনায় এর পরোক্ষ ফল ভালো নাও হতে পারে, ভারত ভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশকে আর্থিক ভাবে বিপদে ফেলতে পারে।

৫। এই ব্যাকগ্রান্ড তৈরিতে বাংলাদেশকে কিছু স্টেপে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন সাজাতে হবে।
৫ক। প্রথম স্টেইজে বাংলদেশের উচিৎ "কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি" ফোরামে নালিশ করা। ভারত যে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে ক্রমাগত স্যালাইন পেনিট্রেশন করে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র নষ্ট করছে, বাংলাদেশ ডেল্টায় স্বাদু পানির মাছের আবাসস্থল নষ্ট করছে, একতরফাভাবে বন্যার পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশের বন্যা তৈরি করে, প্রাণ ও পরিবেশের ক্ষতির কারণ তৈরি করে, ক্রমাগত ফ্ল্যাশ ফ্লাডে বনের গাছ এবং পশুর আবাসন নষ্ট করে, কৃষির ফসল ভাসিয়ে দেয়, বাণিজ্যিক মৎস্য চাষ বাঁধাগ্রস্ত করে,কিংবা নদী সিল্টেড আপ করে ফেলে এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপারকে অত্যন্ত ডকুমেন্টেড ওয়েতে উপস্থাপনা করতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক পরিবেশ ফোরামে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

৫খ। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কনভেনশন, রামসার কনভেনশন, ইন্টারন্যাশনাল ওয়েট ল্যান্ড কনভেনশন। এসব কনভেনশনের আলোকে কিছু ফোরাম রয়েছে , আছে কিছু চুক্তি ও অঙ্গীকার। এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নদী ও নদীর পানি নিয়ে আরগুমেন্টগুলো করা সম্ভব।

৫গ। বায়োডাইভারসিটি কনভেনশনের যে ফোরাম রয়েছে, সেখানে বলা সম্ভব যে ভারত পানি প্রত্যাহার করছে বলে আমাদের প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কনভেনশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বলতে পারে, ভারত পানি প্রত্যাহার করার কারণে আমাদের যে বিশ্বঐতিহ্য রয়েছে, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

৫ঘ। রামসার কনভেনশনে বাংলাদেশ বলতে পারে, ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করার কারণে দেশের ওয়েটল্যান্ডগুলোর ওপর এর প্রভাব পড়ছে। আন্তর্জাতিক পরিবেশ ফোরামগুলোর কাছে এগুলো অবশ্যই তুলে ধরা যেতে পারে।

৬। ক্রমান্বয়ে এই কাজ গুলো কয়েক বছর ধরে অবিরত সম্পাদন করলে কিছু ফল আসবে, অন্তত ভারতীয় প্রশাসনে কিছু সচেতনতা আসবে। একেবারেই ফল না এলে এইসব করেস্পন্ডেন্সের আলোকে বাংলাদেশ ভারতকে পানি হিস্যার দাবী নিজে জাতিসংঘে যাবার লিখিত ইঙ্গিত দিয়ে যৌথ নদী কমিশনের গুরুত্ব ফিরানোর স্ট্রাটেজি নিতে পারে। এর অন্য একটি দিক হোল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পানি অধিকার একটা ইস্যূ হয়ে দাঁড়াবে। এতে চূড়ান্তভাবে জাতিসংঘে পানি বিষয়ক নালিশ করতে বাংলাদেশের একটা ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি হবে।

৭। আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে বাংলাদেশের প্রাণ বৈচিত্র, নদী হারিয়ে যাওয়া এবং ফসলের ক্ষতির দিক উঠিয়ে আনতে কিছু ইনভেস্ট করতে হবে।



৮। প্রস্তুতি এবং প্রেসেস ডেভেলপঃ

বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে যে যৌথ নদী কমিশন আছে, ভারতীয় ইচ্ছায় এবং বাংলাদেশের অজ্ঞতায়-নির্লিপ্ততায় আজ সেটা প্রায় অকেজো। তার পরেও মেজারমেন্ট, ডকুমেন্টেশন রেকর্ড এবং পরবর্তিতে সালিশি কাজে সহায়তার ভিত তৈরি করতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক নদীর পানির পরিমাপ, কম প্রবাহ, একেবারেই প্রত্যাহারকৃত প্রবাহের তথ্য নিয়ে নিয়মিত চিঠি পাঠিয়ে যেতে হবে যৌথ নদী কমিশন, ভারতীয় পানি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। যার রেফারেন্স পরবর্তিতে আন্তর্জাতিক সালিশি কাজে আসবে।

এই জন্য বাংলাদেশকে ভারতীয় সীমানার ঠিক কাছাকাছি নদী অবস্থানে ওয়াটার ফ্লো ম্যাজারমেন্ট ডাটা নিবার প্রসেস ঠিক ঠাক করতে হবে, এক্সিস্টিং প্রসেস এবং সিস্টেমকে আরো উন্নত করতে হবে।

শুস্ক মৌসুমে সারফেইস ওয়াটার বাড়াতে বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে দেন দরবার করার জন্য যৌথ নদী কমিশন রয়েছে। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক গুলো এজেন্ডা ও দাবী বিহীন রাখার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তাঁবেদার পাঠিয়ে এই ধরণের সুযোগ হেলায় নষ্ট করা বাংলাদেশের জন্য বড়োই লজ্জার।

আমাদের জাতীয় পর্যায়ে নদী ও পানি প্রাপ্তির আন্দোলনকে বেশ কয়েকটি ধাপে বিন্যস্ত করে আমাদের সরকারকে ভারতের কাছে পানি হিস্যার দৃশ্যমান নাগরিক চাপ উপস্থাপনের কৌশল তৈরি করতে হবে। এইরকমের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতিতে আমরা যোজন যোজন পিছিয়ে।


খ। সেচে স্বাদু (ভূ-উপরিভাগ এবং ভূগর্ভস্ত) পানির টেকসই ব্যবহার বিন্যাসঃ

১। অপরিকল্পিত ব্যবহারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। মাটির উপরিভাগ থেকে ৩০-৩৫ ফুট গভীরেও অগভীর নল্কুপে পানি পাচ্ছেন না কৃষকরা। ১০ ফুট গর্ত করে মাটির নিচে সেচপাম্প বসিয়ে পানি তুলতে হচ্ছে তাদের। উল্লেখ্য, পানির জন্য মাটির এক ফুটের বেশি গভীরে গেলেই বেশি অশ্বশক্তির পাম্প দরকার হয়, এতে জ্বালানি তেলও বেশি দরকার হয়। (পানির স্তর এক ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষকদের বছরে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ৯০ কোটি টাকা!) তবে কয়েক বছর পর পানির স্তর আরো নেমে গেলে লক্ষ লক্ষ পাম্প কাজ করবে না, কৃষককে উচ্চ ক্ষমতার পাম্প কিনায় ইনভেস্ট করতে হবে।

২। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডবি্লউএম)-এর পানি বিশেষজ্ঞ মাইনুর রহমান বলেন, গত চার দশকে দেশে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়েছে প্রায় শতভাগ। এখন সুপেয় পানি ও চাষাবাদের জন্য চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ (বর্তমানে দাবী করা হচ্ছে এটা ৭৬% হয়েছে) পানিই মেটাতে হচ্ছে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে গভীর ও অগভীর নলকূপ বসিয়ে পানি তোলার ফলে সারাদেশেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি প্রতিবছর পানির স্তর দুই থেকে তিন মিটার করে নিচে নামছে।

৩। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের গ্রাউন্ড ওয়াটার জোনিং ম্যাপ বলছে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকাজুড়ে বিস্তৃত দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর ১০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার হারে নেমে যাচ্ছে। বিএডিসির তথ্যমতে, বাংলাদেশে ১৭ লাখ অগভীর নলকূপ (শ্যালো টিউবওয়েল) মাটির ২২ থেকে ২৪ ফুট নিচ থেকে পানি ওঠায়। বর্তমানে বহু এলাকায় মাটির ২৪ ফুট নিচ থেকে আর পানি উঠছে না। বিএডিসির ক্ষুদ্রসেচ বিভাগের পরিচালক জাহিদুর রহমান সমকালকে বলেন, 'বোরো মৌসুমের শুরুতেই সারাদেশে ছয় লাখের বেশি সেচযন্ত্রে পানি না পাওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন।'

৪। সাভার ও মানিকগঞ্জে ভূ-গর্ভস্ত শীলার অভ্যন্তরে পানির দুটি বিশাল খনি (একুইফার) পাওয়া গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। শুনা যাচ্ছে ওয়াসা সেখান থেকে অতি দ্রুত পানি উত্তোলন করার পরিকল্পনাও করছে!

উচ্চ মান পরিবেশ ও ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা না করে ভূগর্ভস্ত পানির অতি ব্যবহার বাংলাদেশে প্রাণ পরিবেশ ও কৃষি বৈচিত্রে ভয়াবহ হুমকি তৈরি করছে।

ওয়াসাকে খনিজ ও ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের পরিবর্তে সারফেইস ওয়াটারের সর্বোচ্চ ব্যবহারে এবং পানি ব্যবহারের মিতব্যয়ী পদ্ধতির ডেভেলপ করতে মনোযোগ দিবার পরামর্শ দেই। ভূ-গর্ভস্ত পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হোন, বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনার সঠিক বন্দবস্ত করুন, অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীতে পানি প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সিরিয়াস হোন এবং জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালান।


গ। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণঃ
দেশে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় দুই মিটার। তা থেকে এক মিটার পানি রিচার্জ হয়। এ ছাড়া বর্ষার সময় নদীর কূল ছাপিয়ে পানি ক্ষেত-খামার ও জলাভূমিতে ঢুকে গেলে সেখান থেকে বাকি চার মিটার পানি রিচার্জ হতো। কিন্তু এখন মৌসুমি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা বন্যার প্রকোপ কমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পূরণ হচ্ছে না।

বাংলাদেশের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা একেবারেই নাই বলা চলে। কয়েকটা সেচ এলাকায় (গঙ্গা কপোতাক্ষ প্রধানত) কিছু পানি সংরক্ষিত হয়। তবে ষাটের দশকের পরিকল্পিত গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প, সমন্বিত নদী খনন এবং স্লুইস গেইট নেটয়ার্ক তৈরি না হওয়ায় বৃষ্টির পানি গড়িয়ে যায়। সেচ তো দুরের কথা পানীয় জল হিসেবে বাংলাদেশে বৃষ্টির পানির বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত ব্যবহার হচ্ছে না।

একদিকে শুষ্ক মৌসুমে চরম পানি সংকটেও নদী অববাহিকায় ব্যারেজ নাই এবং আমাদের সব নদীর বেড সিল্টেড আপ অন্যদিকে শহুরে এলাকায় পর্জাপ্ত লেইক, খাল ও পুকুর না থাকায় আরবান ওয়াটার রান অফ খুবই বেশি। ফলে বৃষ্টির পানির ভূগর্ভস্ত রিচার্জ একেবারেই নগণ্য। উল্লেখ্য সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় এখনও চাইলে ঢাকার লেইক গুলোকে কানেক্টেড করা সম্ভব। রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা নিলে নগরীর পুকুর ও খাল গুলোর সিঙ্ঘভাগ উদ্ধার করা সম্ভব। পুকুর এবং লেইক গুলো আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যানেল নেটোয়ার্ক (রাস্তা, বসত বাড়ি এবং অন্য ভবনের নিচ দিয়ে) দিয়ে সংযোগ করা যায়। এতে কারিগরি কোন বাঁধা নেই। চ্যালেঞ্জ যা রয়েছে তা বিশ্বের বহু দেশই তা অতিক্রম করেছে (নেদারল্যান্ডস)।

---------------------------------------------------------------------------------------
ফিরে দেখা-
---------------------------------------------------------------------------------------
পঞ্চাশের দশকে ফারাক্কার প্রস্তুতি শুরু হলে সেসময়ের পানি ও পরিবেশ এক্সপার্টগণ পাল্টা ব্যবস্থায় গঙ্গা, এর শাখা প্রশাখা, শাখা নদী, উপ নদী, খাল, বিল সহ পুরো অববাহিকার ইকো সাইকেল, কৃষি, মৎস্য রক্ষার জন্য অর্থাৎ গঙ্গা অববাহিকার প্রায় ৩২টির মত নদী উপনদী, শাখা নদীর পানি নির্ভর কৃষি ও মৎস্য বাঁচাতে, ভারতের বাঁধ ছেড়ে একতরফা বন্যার সৃষ্টি ঠেকাতে "গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্পের" পরিকল্পনা তৈরি হয়।

ষাটের দশকে এর একটা খসড়া দাঁড়িয়ে যায়। যদিও ১৯৭৪ এ ফারাক্কা চালু হলেও তা আর বাস্তবায়নের টেবিলে উঠানো হয়নি। পরবর্তি সরকারগুলো দায়সারা ভাবে এই পরিকল্পনা শুরুর কথা চিন্তা করেছে যার জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নতুন নতুন সমীক্ষার দরকার পড়ে। ফলে আমরা বিগত চার দশকে সমীক্ষাই নিয়ে পড়ে আছি, এর মধ্যে ভারত এই কাজে ভেটো দিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে-এর মধ্যে পদ্মা এবং তার অববাহিকা সিল্টেড আপ হয়ে জল ধারণ ক্ষমতা একেবারেই হারিয়েছে, পদ্মা অববাহিকার পুরো ইকো সাইকেল বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। ফলে যত দিন যাচ্ছে ততই পুর্বের ফরমেটে রাজবাড়িতে গঙ্গা ব্যারেজ করা ততই খরুচে হবে, যদি আগের পরিমানে পানি ধারণ টার্গেট নেয়া হয়, অর্থাৎ হাজার হাজার কোটি টাকার শুধু ড্রেজিং ই করতে হবে।

এমতাবস্থায় ভারত চাইছে এই প্রকল্প আরো প্রলম্বিত করতে অন্তত পরবর্তি গঙ্গা চুক্তির সময় আসন্ন হওয়া পর্জন্ত। ২০২৬ এ বাংলাদেশে গঙ্গা ব্যারেজ করতে না পারলে তার স্ট্রং নেগোসিয়েশন করার এবং গ্যারান্টি ক্লজ ইঙ্কলুড করার ট্রাম কার্ড আমাদের হাতছাড়া হবে। ফলে আরো কম পানি এবং গ্যারান্টি ক্লজ হীন একটি সায় সারা নবায়িত গঙ্গা পানি চুক্তি (যা মানা হবে না এখনকার মত) আমাদের জন্য অপেক্ষা করেছে।

---------------------------------------------------------------------------------------

গঙ্গা ব্যারেজ এর সাথে সাথে যমুনা ও ব্রম্মপুত্র অববাহিকাকে যুক্ত করে একটির বদলে ভিন্ন ভিন্ন স্তরে যমুনা ও পদ্মায় সমন্বিত ব্যারেজ করা যায় কিনা তার দ্রুত স্ট্যাডি করা দরকার। কারণ পুর্বের নদী বৈচিত্র নেই, নেই পানির আঁধার আর গঙ্গার সমস্যা তিস্তা, মহানন্দা এবং যমুনাতেও বিস্তৃত, ব্রম্মপুত্র তো আগেই নাই হয়েছে। ব্যারেজ থেকে উজানে যেরকম ড্রেজিং দরকার (সেচ, পানির আঁধার গড়া এবং ৩২টি নদী উপনদী শাখা নদী খালে পানি সঞ্চালন) তেমনি ভাটিকেও ড্রেজিং এ আনতে হবে। কেননা বর্ষায় ভারত ফারাক্কা ছেড়ে দিলে ব্যারেজ থেকে চাঁদপুর, বরগুনা, পায়রা, পাথরঘটা পর্জন্ত চ্যানেল গুলোর ওয়াটার ক্যারেজ ক্যাপাসিটি (এগুলা সবই সিল্টেড আপ রিভার বেড) এই পাশে ভয়াবহ বন্যা এবং আর্থিক ক্ষতি হবে। দেখা যাবে উত্তরে যা আয় হচ্ছে দক্ষিণে তা ক্ষতিতে যাবে। (ফারাক্কারও একই সমস্যা, ফলে বিহার ফারাক্কার গেইট ওপেন রাখতে চাইছে)। অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন ভাবে গঙ্গায় ব্যারেজ প্রকল্প না করে সম্পুর্ণ নতুন ডেল্টা স্ট্যাডী করে পুরো বাংলাদেশের উত্তর দক্ষিণের জন্য সমন্বিত করে একটি মহা পরিকল্পনা করা হোক যা বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ তে সমন্বিত করতে হবে। নচেৎ বিচ্ছিন্ন ভাবে টাকা লূটপাটের অকার্যকর প্রকল্পই বাড়বে কাজের কাজ কিছু হবে না, ইতিপূর্বে ড্রেজিং, বিভিন্ন সেচ, নদি পুনঃ খনন (যেমন গড়াই পুনঃ খনন) কথা বলেও রাষ্ট্রের অর্থ লোপাট হয়েছে।

ঘ। শোধিত স্বাদু পানির (ভূ-উপরিভাগ এবং ভূগর্ভস্ত) টেকসই ব্যবস্থপনাঃ
ওয়াসা কিভাবে ভবিষ্যৎ এর শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা নাগঞ্জে এত বিপুল পরিমাণ শোধিত পানি সাপ্লাই করবে সেটা রোডম্যাপে আনতে হবে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী নদী পানি শোধনের অযোগ্য। বর্তমানে শীতলক্ষ্যার পানি নির্ভর শোধন আর এগিয়ে নেয়া যাবে না কারন তাতে ৬২ রকমের অশোধনযোগ্য ক্যামিক্যাল আবর্জনা দেখা মিলেছ। এমতাবস্থায় সরকার বর্তমানে পদ্মার পানি শোধন করে ঢাকায় আনার প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে (পদ্মা -জশলদিয়া পানি শোধনাগর প্রকল্প)। এর পর আর কোন সম্ভাবনা নেই! এই সমস্যা আমাদের সবার, সরকারকে এক্সপার্টের সাথে বসে রোডম্যাপ নিয়ে ভাবতে হবে, এখনই!

বাংলাদেশের ৫৩টি আন্তর্জাতিক নদী বিস্তীর্ণ ভারতীয় ভূখন্ডের ভিতর দিয়ে গড়িয়ে বাংলাদেশের জালিকার নদ বেষ্টিত বদ্বীপ সমভূমি প্লাবিত করে বাঙ্গোপসাগরে মিলছে। এক কথায় বলা যায় এই ৫৩টি নদী সর্ব ভারতীয় পথ পরিক্রমা শেষ করে সকল আরবান ওয়েস্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্ট এবং সুয়েজ সহ অন্য সব ধরনের হিউম্যান ওয়েস্ট বহন করে এনে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ার সময় বাংলাদেশের পলিগঠিত নরম সমভূমিতে এইসব ওয়েস্ট ল্যান্ড পেনেট্রিটেট করে দিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশিদের এক ভয়াবহ কৃষি মৎস্য এবং স্বাস্থ্য বিপর্জয়ে ঠেলে দিচ্ছে। শুকনো মৌসুমে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহারের কারনে উল্লেখযোগ্য ওয়েস্ট উজানের ভারতীয় ভূমিতে রি-সার্কুলেট করে সয়েল পেনীট্রেটেড হলেও বর্ষায় সেসবও বিধৌত হয়ে উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে এবং আল্টিমেইটলি তা বাংলাদেশের সমভূমিতেই আসছে।উল্লেখ্য বাংলাদেশে দেশে তিনটা মেইন রিভার সিস্টেম-যমুনা রিভার সিস্টেম, গ্যাঞ্জেস রিভার সিস্টেম আর একটা হচ্ছে মেঘনা রিভার সিস্টেম- এই রিভার সিস্টেমের যে ক্যাচমেন্ট এরিয়া তার ৯৩ শতাংশ বাংলাদেশের বাইরে নেপাল, ভুটান, ইন্ডিয়া এবং সামান্য কিছু চায়নার। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ৯৩% ইন্দো-চীন নদী বিধৌত অঞ্চলের আরবান, ইন্ডাস্ট্রি এবং পপুলেশন ওয়েস্ট বাকি ৭% পুর্ব বঙ্গীয় সমভূমিকে এক অভাবনীয় বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশ নিজস্ব অববাহিকায় তাঁর অংশের নদী দূষণ রক্ষার জন্য ফলপ্রসূ কোন উদ্যোগই নিচ্ছে না। বাংলাদেশের কোথাও ইন্ডাস্ট্রিয়াল, আরবান এবং হিউম্যান ওয়েস্ট পরিশোধন করে নদীতে উন্মুক্ত করার নজির নাই, দেশটি পরিবেশ এবং দূষণ সংক্রান্ত ব্যাপারে চরম দায়িত্বহীন। তবে কথা থেকে যায়, ৯৩% রিভার ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল, আরবান এবং হিউম্যান ওয়েস্ট পরিশোধন না হলে এর ৭% অববাহিকা এরিয়া দূষণ চেষ্টা করা ব্যক্তির দেয়াল ঠেলার মতই ফলহীন। ক্যাচমেন্ট এরিয়ার সিংহ ভাগ ভারতেই অবস্থিত এবং ভারত গঙ্গা সহ সব নদী দূষণের জন্য মূলত দায়ী তা ভারতের গবেষণা কাজেই প্রমাণিত। তাই দূষণ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক কোন ফ্রেইমোয়ার্ক থেকে থাকলে তার আঞ্চলিক প্রয়োগ বাঞ্চনীয়। অব্বাহিকার দেশ সমূহের সৃষ্ট দূষণ এর শতকরা হারের বিপরীতে দূষণ প্রতিরোধি কার্যক্রম ইন্টেগ্রেট করা দরকার। নিজের সচেতন হয়ে উঠার পাশাপাশি বাংলাদেশের উচিৎ এখনই (বিশেষ করে ভারতীয়) কাউন্টার পার্টানারদের কাছে দূষণ সুরক্ষা দাবি করা, নিজ নিজ অংশে শক্তিশালী নদী সুরক্ষা পদক্ষেপ নেয়ার দাবি করা, শোধন খরচ দাবী এবং স্বাস্থ্য সমস্যার বিপরীতে ক্ষতিপূরণ দাবির মত মৌলিক ব্যাপার গুলো সামনে আনা।

অচিরেই পদ্মার পানি অশোধনযোগ্য হবে পড়বে।অব্যহত দূষণের ফলে পদ্মার পানি কত দিন শোধন সক্ষম থাকবে এবং এর শোধন খরচ ও ওয়াটার ট্রান্সপোর্টেশন কষ্ট কিরকম হারে বাড়তে থাকবে তার স্ট্যডী দরকার। পদ্মার পানিও শোধন অক্ষম (অন্তত শুষ্ক মৌসুমে) হয়ে পড়লে বাংলাদেশের গঙ্গা-মেঘনা-যমূনা বেসিনে অবস্থিত নগরগুলোতে শোধিত পানি সরবারহের ভবিষ্যৎ কি হবে তার রোডম্যাপ দরকার। কেননা ভূগর্ভস্ত পানির স্তর নেমে যাচ্ছে এবং ভূগর্ভস্ত পানিতে দেশের ৮০% সেচ হচ্ছে। সারফেইসের পানি ও ভূগর্ভস্থ পানির প্রাপ্তি ও ব্যাবহার বিন্যাস কিভাবে পরিবর্তিত হতে থাকবে তার স্ট্যাডী এবং ট্রেন্ড নির্ণয় আমাদের সাটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ গুলোর একটি।

অদূর ভবিষ্যৎ পদ্মার পানিতেও ওয়াসার ঢাকা ও নাগঞ্জ চাহিদা কভার করা যাবে না।
১। পদ্মার পানি দিনকে দিন কমছে।
২। পদ্মা সর্ব ভারতীয় সুয়ারেজ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্বান ও নন আর্বান আবর্জনা বহন করে নিয়ে বাংলাদেশে ও বঙ্গোপসাগরে ডাম্পিং করছে। ফলে এই পানিও কিছু বছর পরে শোধনে অযোগ্য হবে।
সম্প্রতি কক্সবাজারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের গভীরতা বৃদ্ধি ও তেজস্ক্রিয় দুষণ সংক্রান্ত দুঃসংবাদ পাওয়া গিয়েছে যা শুধু কক্সবাজার বাসীর জন্য সংকেত নয়। ( প্রায় চারশত অপরিকল্পিত হোটেলে স্থাপিত গভীর নলকূপ থেকে প্রতিদিন ১ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। শহরের বাসিন্দাদের জন্যও প্রায় সমপরিমাণ পানি তোলা হয়। ফলত: নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। এর মধ্যেই ভূ-গর্ভস্থ পানিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ পাওয়া গেছে, বেড়েছে লবণাক্ততা। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই পানির অভাবে পড়বে কক্সবাজারবাসী।)

অদূর ভবিষ্যৎ এ উপকূলীয় বেল্টের বহু শহর এলাকা তো বটেই (এমনকি ঢাকা চট্রগ্রামেও) সামুদ্রিক লবনাক্ত পানি শোধনের মত খরুচে প্রকল্প নিতে হবে। এখন থেকেই ভাবনায় এনে রিসার্চ ও ডেভেলেপমেন্ট কাজ (ওস্মোসিস ও অন্যান্য মেথড) শুরু করলে বিদেশী টেকনোলজির দিকে হা করে বসে থাকতে হবে না।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ঢাকার ভূস্তরের উচ্চতা ৫০ ফুট। রাজধানী ঢাকার পানির স্তর সমুদ্রপৃষ্ঠেরও ১৬০ ফুট নিচে নেমে গেছে। এ হিসাবে ঢাকায় পানির স্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ২১০ ফুট নিচে অবস্থান করছে। সেচকাজে ১৯৬৮ সালে গভীর নলকূপ বসানোর শুরুতে ৫০ ফুট নিচ থেকে পানি তোলা যেত, এখন গভীর নল্কুপে পানি তুলতে হচ্ছে ১৫০ ফুট নিচে থেকে। অন্যদিকে ওয়াসার বর্তমান হারে পানি তোলা অব্যাহত থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ঢাকায় সমুদ্রের লবণপানি ঢুকে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


এমতাবস্থায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, সর্বোচ্চ ব্যবহার বাঞ্চনীয়। পানি বাজারজাতকারি কোম্পানি গুলোকে মোট বাজারজাতকৃত পানির ১০০% বৃষ্টির সোর্স থেকে নিবার টার্গেট নিতে হবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে। স্যালাইন পানি শোধনের স্ট্যাডিও দরকার, বিভিন্ন মাধ্যমের পানি শোধনে কম্পারেটিভ কষ্ট স্ট্যাডী বের করে আনতে হবে। আজ থেকে ২০-৩০ বছর বা ৫০-১০০ বছরে আমাদের পানি নির্ভরতার প্যাটার্ণ এবং সাস্টেইনেবিলিটির সুত্র কি হবে, তার স্ট্যাডী এখনই দরকার।

বাংলাদেশকে একদিকে আন্তর্জাতিক নদীর পানির অধিকার প্রাপ্তিতে, সবগুলো নদী বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিটি নদীতে শুষ্ক মৌসুমে নূন্যতম পানি প্রবাহের জন্য শক্তিশালী কূটনৈতিক ও পরিবেশগত তৎপরতা চালাতে হবে। এক নদীর পানির বিপরীতে অন্য নদীর পানি সমঝতা বিষয়ক অদুরদর্শিতা থেকে সরে এসে প্রতিটি নদীতে স্বাদু পানিতে ভাটির দেশের মানুষের অধিকার নিতে এবং নদী বাঁচাতে নূন্যতম পানি প্রবাহ নিশ্চিতে সোচ্চার থাকতে হবে সংগ্রাম করতে হবে। অন্যদিকে মৌসূমের বন্যা এবং বৃষ্টিপাতের পানির সঠিক ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী এবং দুরদর্শী মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে হবে। নগরীতে পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী ও ও রিসাইকেল সক্ষম হতে হবে। পানি ব্যবহারে (ভূ-উপরিভাগ এবং ভূগর্ভস্ত পানির ব্যবহার বিন্যাসে) এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এর জন্য চরম খেসারত দিতে হবে।


লেখক: সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এক্টিভিস্ট।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মে, ২০১৮ বিকাল ৩:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা অনেক বড় তবু পুরোটা পড়লাম।

০৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৪

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: ভাই, ধন্যবাদ!

২| ০৪ ঠা মে, ২০১৮ বিকাল ৫:০৬

করুণাধারা বলেছেন: বাংলাদেশের নদী এবং পানিসম্পদ, এদের উন্নয়ন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আমার গভীর আগ্রহ রয়েছে। তাই আপনার পোস্টটি মনোযোগের সাথে পড়লাম। আজকে খুবই দরকারী কথা বলেছেন, কিন্তু শুনবে কে?

পানিসম্পদ পরিকল্পনার জন্য একটা সংস্থা ছিল WARPO, যার পূর্বনাম ছিল MPO, master planning organization. এই সংস্থাটির কাজ ছিল প্রতি পাঁচ বছরের জন্য পানি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করা। ছিল যৌথ নদী কমিশন, যারা প্রতি মাসে বৈঠক করতেন নদীগুলোর অবস্থা নিয়ে। নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটকে ঢাকা থেকে ফরিদপুরে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল নদী নিয়ে গবেষণার জন্য। এই সংস্থাগুলো কোন কাজ করছে বলে শোনা যায় না, একমাত্র IWM কিছু কাজ করছে। ডঃ আইনুন নিশাতের রয়েছে পানিসম্পদ নিয়ে vision, প্রজ্ঞা, এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে গিয়ে পানি নিয়ে দেনদরবার করবার মতো বাকচাতুর্য, এবং অর্ধ শতাব্দীর অভিজ্ঞতা। এই মানুষটিও আজ উপেক্ষিত।

আপনার পোস্ট পড়তে খুব ভালো লাগলো, আশান্বিত হলাম, হয়তো এখনো কিছু করা হবে পানিসম্পদ উন্নয়নের বিষয়ে।

০৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৪

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: WARPO/MPO 'র কিছু মাষ্টার প্ল্যান আমি IWM এ কাজ করা এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে জোগাড় করেছি, এগুলা সময় নিয়ে পড়তে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটা মাষ্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন না করেই নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। আগের মাষ্টার প্ল্যান কেন ঠিক মত বাস্তবায়ন করা হল না বা গেল না, সেখান কার ইনপুট কি ছিল, লার্নিং কি ছিল, আউটকাম কি ছিল সেগুলা নতুন মাস্টারপ্ল্যানে না নিলে ফল ভালো হবে না। বাংলদেশ ডেল্টা প্ল্যানের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য।

প্ল্যান আর প্ল্যান, আর বাজেট বুকিং, কোন টেকসই বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে!

৩| ০৫ ই মে, ২০১৮ সকাল ৮:১৩

সোহানী বলেছেন: ভাইরে কেউ কি আছে দেশে আপনার এ কথাগুলো একটু শুনবে? বুঝবে? ভাববে? ও কিছু কাজ করার চেস্টা করবে??????

০৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২০

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: নাহ! এই তল্লাটে এই অধমের কথা শুনার কেউ নেই!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.