নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সমস্যার প্রকৃতি নির্ধারণ করা, আমাদের আচার ব্যবহার, সমাজের প্রচলিত কৃষ্টি কালচার, সৃষ্টিশীলতা, চারিত্রিক উদারতা এবং বক্রতা, অপরাধ প্রবৃত্তি, অপরাধ সঙ্ঘঠনের ধাঁচ ইত্যাদির স্থানীয় জ্ঞানের আলোকে সমাজের সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়াই অগ্রসর নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে দুর্নীতি রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং টেকনোলজির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় অপরাধের জ্ঞান কে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধান এর জন্য লিখা লিখি করি। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। ব্যক্তিগত ভাবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন কে দেশের ঐক্যের ভিত্তিমূল মনে করি। ডাটাবেইজ এবং টেকনোলজি বেইজড পলিসি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রোপজাল দেবার চেষ্টা করি। আমি মূলত সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এর নিরিখে- অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজাইন ত্রুটি, কৃষি শিক্ষা খাতে কারিগরি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মাইক্রো ইকনমিক ব্যাপার গুলো, ফিনান্সিয়াল মাইগ্রেশন এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চোরকে চোর বলার জন্য দুর্নিতি নিয়ে লিখি। পেশাঃ প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন।
যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন করিডোর নীতিমালা ঠিক হোক!
এক
বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অরুণাচল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী দেশ ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরকালে প্রস্তাবটি জোরেশোরে আলোচনার টেবিলে আসে। অরুণাচল প্রদেশ এবং তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব ভারতীয় অঞ্চলগুলো বিপুল পরিমাণ জলবিদ্যুৎ শক্তির উৎস হিসেবে চিহ্নিত। জলবিদ্যুতের যাবতীয় সম্ভাবনা অনুসন্ধানে ভারত এরইমধ্যে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্থায়নের মডেল সহ কারিগরি পরিকল্পনার কাজ এগিয়ে নিয়েছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের করিডোর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্ব থেকে পশ্চিম অঞ্চলে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়ার গ্রিড লাইনের রুটের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে দুই দেশের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি (জেএসসি)। জ্বালানি খাতে ২০১৪ সালে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতা বিষয়ক যৌথ পরিচালনা কমিটির (জেএসসি) সপ্তম বৈঠকে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া বা জামালপুরসহ তিনটি রুট ব্যবহার করে ভারতের আসাম থেকে তার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ প্রেরণ করতে পারে।
বাংলাদেশ সরকার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে সঞ্চালিত মোট বিদ্যুতের ২০-২৫ শতাংশ কেনার পাশাপাশি হুইলিং চার্জ থেকে লাভবান হতে পারে।ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ভারতকে স্থল ও নৌ ট্রানজিট, চট্রগ্রাম বন্দরের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ব্যবহার এবং ট্রান্সশিপমেন্ট সহ বহুমূখী করিডোর ও সংযোগ সুবিধা দিয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, প্রাক্কলিত অনুপাতে প্রত্যাশিত ট্রানজিট ফি বাংলাদেশ আদৌ পায়নি। ভারত বাংলাদেশকে টন প্রতি ট্রানজিট ফি দিতে অস্বীকার করে জাহাজ কিংবা ট্রাকপ্রতি প্রতি নামমাত্র ফি দিতে চায়, এতে নৌ রুটের ড্রেজিং, সড়ক রক্ষাণবেক্ষণ কিংবা পণ্য নিরাপত্তার কোন খরচই উঠে আসে না। অর্থাৎ বিপুল আলোচিত ট্রানজিট বাংলাদেশের পক্ষে প্রত্যাশীত অর্থনৈতিক উপযোগ তৈরি করছে না। বাংলাদেশের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ২২ হাজার মেগাওয়াটের বিপরীতে সর্বোচ্চ উৎপাদন সাড়ে চৌদ্দ হাজার মেগাওয়াট। তথাপি বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে ভেড়ামারা হয়ে প্রায় ১১০০ মেগাওয়াট এবং উত্তর-পূর্ব ত্রিপুরা রাজ্য থেকে আখাউড়া হয়ে ১৪০ মেগাওয়াট ক্রসবর্ডার বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ।
দুই
বাংলাদেশে নন-নিউক্লিয়ার নবায়নযোগ্য বা সবুজ বিদ্যুতের কথা উঠলেই ভারতের অরুণাচলে পরিকল্পিত ১৫৪টি জলবিদ্যুৎ বাঁধ থেকে ‘সস্তা ও দূষণহীন’ জলবিদ্যুৎ আমদানির পরামর্শ আসে। বস্তুত অরুণাচল প্রদেশ এবং তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব ভারতীয় অঞ্চলগুলোতে পরিকল্পিত ১৫৪টি জলবিদ্যুৎ বাঁধ বহুবিধ পরিবেশ ও জলবায়ু ঝুঁকি এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করবে। এগুলো চীনকে ব্রহ্মপুত্রের ওপর অতি বৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প করার বৈধতা দেবে, দিনশেষে ভারত ও চীন উভয়েই জলবিদ্যুৎ এর নামে ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের স্বাদু পানির প্রধানতম উৎসটিকে একেবারেই সংকীর্ণ করে তুলবে। তিব্বতের বিদ্যুৎ ঘাটতি কমাতে ব্রহ্মপুত্রের পানিসম্পদ ব্যবহার করে চারটি বৃহৎ বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা আগে থেকেই চীনের আছে। শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গা ও তিস্তা থেকে প্রত্যাশিত পানি না পাওয়ায়, বাংলাদেশের স্বাদু পানির প্রধানতম উৎস ব্রহ্মপুত্র (বাংলাদেশে যমুনা নামে পরিচিত), এই পানির বড় অংশ আসে হিমালয় বিধৌত অঞ্চল সমূহের বিপুল মৌসুমি বৃষ্টি থেকে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ভারতের সীমানা মার্জিনাল (জনসংখ্যার তিন শতাংশ, ভূমির ছয় শতাংশ)। অপেক্ষাকৃত কম জনবহুল এই অঞ্চল চীনের ভূমির তিন শতাংশ। ব্রহ্মপুত্র বেসিন বাংলাদেশের ভূমির ২৭ শতাংশ। এখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বসবাস। সিএনএ গবেষণামতে, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বর্তমানে বাংলাদেশের সেচ চাহিদার অন্তত ২৫ শতাংশ পানি ঘাটতি রয়েছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার প্রস্থের যমুনা চলমান শুষ্ক মৌসুমে মাত্র ৭০০ মিটারে নেমে এসেছে। সবমিলিয়ে চীন ও ভারতের উপর্যুপরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় চরম পানি সংকট দেখা দিতে পারে। তাই যেকোন নতুন পরিকল্পনায় পানির প্রাপ্তির গ্যারান্টিক্লজ যুক্ত থাকা সমীচীন।
ভারতের যেকোন জলবিদ্যুৎ-বাঁধ শুধু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং জলাধার ভরাট ও আন্তঃনদী সংযোগের মতো বিষয়ও এতে যুক্ত হবে। কেননা ভারতের আন্তঃনদী সংযোগেরজলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের বৃহৎ লক্ষ্য হচ্ছে পানি-উদ্বৃত্ত অঞ্চলথেকে পানি-ঘাটতি অঞ্চলের দিকে খাবার ও সেচের পানি প্রবাহিত করা।যেহেতু ভারতে বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের লক্ষ্য অর্জনে সৌর ও বায়ুবিদ্যুতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, তাই অরুণাচলের অতি খরুচে জলবিদ্যুৎ আদতে ভারতের প্রয়োজন নেই, দরকার আসলে পানি-ঘাটতি অঞ্চলের দিকে পানি প্রত্যাহারের। ব্রহ্মপুত্র (যমুনা) নদী ও এর শাখা নদীর ওপর পরিকল্পিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর হলে, তা আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পকেই এগিয়ে নেবে। আশঙ্কা হয়, এই প্রক্রিয়াটি ভাটির ব্রহ্মপুত্র (যমুনা) নদীটিকে ধীরে ধীরে হত্যা করবে, এতে বাংলাদেশ কৃষি এবং পরিবেশ বিপর্যয় দেখাদিবে। তদুপরি এই বাঁধগুলোর অনেকগুলো জলাধার হিসেবে কাজ করবে এবং ভবিষ্যতে চ্যানেল দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত করা হবে। উদাহরণস্বরূপ,মানস-শঙ্কোশ-তিস্তা-গঙ্গা সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে এরই মধ্যে যমুনা নদীর শাখা নদী মানস ও শঙ্কোশের পানি সরিয়ে নেয়ার মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে। (সূত্র: ইন্ডিয়া ওয়াটার পোর্টাল/ন্যাশনাল-রিভার-লিংকিং-প্রজেক্ট)। মোটকথা, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কিংবা জলবিদ্যুৎ আমদানির ফাঁদে পড়ে যাতে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বিসর্জন না দেয়া হয়, সেটি সর্বোচ্চ গুরুত্বসহ বিবেচনায় রাখা চাই।
গবেষণা সংস্থা ‘এনার্জি মিনিট’-এর মতে, বর্তমান বিশ্বের ২৩ শতাংশ এনথ্রোপোজেনিক মিথেন উৎপাদনের জন্য দায়ী বিশ্বের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো।জলবিদ্যুৎ বাঁধে জলাবদ্ধতা থেকে মিথেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ অপরাপর গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন হয়। কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়েও মিথেন প্রায় ৩০ গুণ বেশি ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস (সূত্র: এনার্জি-মিনিট)। ‘নেপালের জলবিদ্যুৎ খাতের চ্যালেঞ্জ ও সুবিধার মূল্যায়ন’ নামক গবেষণা প্রবন্ধে শর্মা তেজস্বী বলেছেন, ‘হিমালয়ান নদীগুলোর বেশিরভাগ জলবিদ্যুৎকেন্দ্র অত্যধিক ভাঙন, পলিপতন ও অবক্ষেপে পড়ে। এতে জলাধারের ক্ষমতা ও জীবনকাল সংকুচিত হয়। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাত ধরে অনিয়মিত বন্যার অভিশাপও অমূলক নয়। একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধের জলাধার ভরাটে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। এ সময়ে জলপ্রবাহ সংকুচিত হয়ে ভাটিতে পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পলিবাহিত নদীতে বাঁধ দেয়ায় তা ভাটিতে পলিপতনজনিত উর্বরতা হ্রাস করে। এতে ম্যানগ্রোভ বন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, স্বাদুপানিতে লবণাক্ততা বাড়ে এবং ব-দ্বীপায়ন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়।’
তিন
ভারত-বাংলাদেশের ২০তম জেএসসি/জেডব্লিউসি মিটিং ডাকা হয়েছে ২৮ মে ২০২২। ইতিপূর্বের বাংলাদেশের কারিগরি টিমের পক্ষ থেকে ১৯তম জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির মিটিংএ ‘বারনগর-পার্বতীপুর কাটিহার’ সঞ্চালন করিডোর বাস্তবায়নের সম্ভ্যাবতা যাচাইয়ে বিষয়ে পাঁচটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এর প্রথমটি ছিল সঞ্চালিত জলবিদ্যুৎ উৎসের জলবিদ্যুৎ-বাঁধে পানি ব্যবহার নীতিমালা এবং তথ্যশালা ভারত-বাংলাদেশের যোথ নদী কমিটি (জেআরসি) কে অবহিত করা। পাশাপাশি ছিল বিদ্যুৎ সঞ্চালন সম্পর্কিত তথ্য আদানপ্রদান, হাইড্রোলজিক্যাল ও ওয়াটার মডেলিং স্ট্যাডি করা, পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনা করা, লোকালয় ও কৃষিভূমির উপর দিয়ে যাওয়া উচ্চ ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের সামাজিক অর্থনৈতিক প্রভাব নিরূপণ করা।আশ্চর্যজনকভাবে ভারত এই প্রস্তাবনার প্রথমটিতে ভেটো দিয়ে বসে, বাদবাকি চারটি প্রস্তাবে সম্মতি জানায়।
প্রথম প্রস্তাবে বাংলাদেশের কারিগরি কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশ ভাটির অঞ্চলের (লোয়ার রিপারাইন) দেশ হওয়ায় জল-ব্যবহার ও জল-বন্টনের বিষয়টি ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনে (জেআরসি) আলোচনা করা দরকার কিন্তু ভারত তাতে অসম্মতি জানায়। ভারত দুটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আসে। ক- ‘ডিউ ডিলিজেন্স’ যাচাই করা। খ- দুই দেশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিটি করা যারা হাইভোল্টেজ সঞ্চালন লাইন সংক্রান্ত আইনি এবং পরিচালনাগত বিষয়াদি দেখভাল করবে। স্বভাবতই প্রশ্ন এসেছে যে, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পানি নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত না করার নিশ্চয়তা তৈরিকে, যেকোন গ্যারান্টিক্লজকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছে ভারতীয় পক্ষ।
ডিউ ডিলিজেন্স (due diligence)মূলত একটি ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া। এটি হচ্ছে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেআইনগত প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য একপক্ষের দ্বারা নেওয়া যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ। এতে অপরপক্ষের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হয় না আসলে। মোটকথা,ভারত ব্রহ্মপুত্রের পানির ব্যবহার নীতিপদ্ধতি, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জলাধার ভরাটে ব্রহ্মপুত্রের পানি ব্যবহারের পরিমাণ ও সময়, কিংবা অপরাপর পানি সংক্রান্ত তথ্য ও তথ্যশালা যৌথ নদী কমিশনে পাঠাতে রাজি নয়। এই সিদ্ধান্তটির সাথে বিগত প্রায় এক দশকে ‘যৌথ নদী কমিশন’কে অকার্যকর করে রাখার ধারাবাহিকতা দেখতে পাই।
‘ডিউ ডিলিজেন্স’ যাচাইয়ের ভারতীয় প্রস্তাব মেনে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিষয়টি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) চিঠিতে জানিয়েছে। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় পাউবোও আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটির দ্বারা বাংলাদেশের পরিবেশগত ক্ষতিসহ ভাটির দেশ হওয়ায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাবগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পিডিবি, পাউবো, নদী ও পানি গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং বাংলাদেশ পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। উল্লিখিত সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিকে অত্যন্ত উচ্চমান সম্পন্ন ও ভবিষ্যৎমূখী হওয়া চাই, যাতে বর্তমানের অবহেলায় কোন ভবিষ্যৎ ঝুঁকি তৈরি না হয়। ফিজিবিলিটি অধ্যয়নের সার্বিক সুবিধার্থে বাংলাদেশের নদী ও পানির আইনগত সুরক্ষা এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃনদীর পানি বণ্টনের ভবিষ্যৎ, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সুরক্ষা, নদী ও পানি গবেষণার বিশদ খুঁটিনাটি, পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাবপর্যালোচনা করতে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্যমান ও সম্ভাব্য হাইড্রো-পাওয়ার স্টেশনগুলির বিশদ তথ্য এবং ডেটাবেজ, ডিজাইন, পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণ নীতিপদ্ধতি, পানি প্রবাহ ও পানি বন্টন ইত্যাদির নিখুঁত বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
বর্তমানে বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যেও ঋতুভেদে বিদ্যুৎ চাহিদার তারতম্যের আলোকে পারস্পারিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যের বিষয় আলোচিত হচ্ছে। নেপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অর্থায়ন, সম্ভাব্য প্রকল্প চিহ্নিতকরণ, উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানির পন্থা নির্ধারন ও আন্তঃদেশীয় বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চলনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য উভয় দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত দুটি পৃথক যৌথ কারিগরি দল (উৎপাদনও সঞ্চালন) কাজ করছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নদী অববাহিকা গুলো পরস্পর আন্তঃসংযুক্ত বলে ভবিষ্যৎ পানি ব্যবহারের তথ্য আদান-প্রদান, জলবন্টন, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং জলবায়ু ঝুঁকির প্রশ্নে চীন-ভারত-নেপাল-ভূটান-বাংলাদেশের মধ্যে সমন্বিত একটি আঞ্চলিক তথ্যপ্রবাহ এবং ‘উইন-উইন’ সমঝোতার ফ্রেইমওয়ার্কের অধীনে বিদ্যুৎ বাণিজ্যের কাজ এগিয়ে নেয়াই অধিকতর কল্যাণময় এবং টেকসই হবে বলে মনে করি।
দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত, ২০ মে ২০২২।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। গ্রন্থকার: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ, বাংলাদেশঃ অর্থনীতির ৫০ বছর, অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবিত কথামালা, উন্নয়ন প্রশ্নে বাংলাদেশের কিছু সংকট ও সম্ভাবনা।
২| ২০ শে মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৭
ঢাবিয়ান বলেছেন: বছরের পর বছর ট্রাঞ্জিট সুবিধা দেয়া হচ্ছে কিন্ত পরিবর্তে ট্রাঞ্জিট ফি আদায় হচ্ছে না। এতে যে পরিমান ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ , তাতো অর্থনীতিতে ব্যপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফরেন রেমিটেন্স ও গার্মেন্টস শিল্প কতদিন আর পারবে রুগ্ন অর্থনীতিকে সামাল দিতে? বলা হচ্ছে যে দেশ স্রীলংকার অবস্থায় পড়বে না। কিন্ত তা কি হলফ করে বলা যায়?
৩| ২১ শে মে, ২০২২ সকাল ১১:০৫
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বড় দেশের পাশে ছোট দেশের অবস্থান মনে হয় অনেক ক্ষেত্রে একটা অভিশাপ।
৪| ২১ শে মে, ২০২২ রাত ১১:৪১
খাঁজা বাবা বলেছেন: তথ্যবহুল পোষ্ট, পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে যে ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয় তা জানতাম না।
ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩০
আহমেদ জী এস বলেছেন: এক নিরুদ্দেশ পথিক,
এক এক করে সব কিছুতেই বন্ধুপ্রতীম (??????) ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে। এটাও বা বাকী থাকবে কেন ? এটাও দিয়ে দেয়া হোক। নইলে রক্ষা যে হবেনা!
এমনকি একদিন ভারত বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জের "শৌচাগার"গুলির ব্যবহার করতে ট্রানজিট চাইলেও অবাক হবোনা। কারন ভারতের লোকজন এখনও উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম সমাধা করে।