নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইবলিশের হেডমাস্টার

ডাক্তারী পড়া শেষ করি নাই,

ইবলিশের হেডমাস্টার › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা আমাদের ভাষা, বাঙালি আমাদের জাতিসত্তা

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১৭

১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীন হয়। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বেই পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। আজকের বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ, পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তান আয়তনের পূর্ব পাকিস্তানের চার গুণ হলেও পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার পরিমাণ ছিল গোটা পাকিস্তানের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও অনেক বেশি। যদি জনসংখ্যার আধিক্য বিবেচনায় দেশের রাষ্ট্রভাষা নির্দিষ্ট হয় সে মতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত ছিল বাংলা। যা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ভাষা। কিন্তু সেই বাংলাকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে বলে ঘোষণা দিলেন স্বয়ং দেশের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। অথচ উর্দু ভাষা পশ্চিম পাকিস্তানের সব এলাকার ভাষা নয়। পশ্চিম পাকিস্তানে পাঞ্জাবী, সিন্ধি, বালুচ, পাঠান ও অন্যান্য জাতিসত্তার প্রদেশ নিয়ে গঠিত। যাদের ভাষাও আলাদা আলাদা। উর্দু প্রকৃত পক্ষে সমগ্র পাকিস্তানের শতকরা বিশ ভাগ লোকের ভাষা নয়।



ঢাকার কার্জন হলে জিন্নাহ সাহেব যখন ঘোষণা দিলেন উর্দু এ্যান্ড উর্দু শ্যাল বি দি স্টেট ল্যাংগুয়েজ অব পাকিস্তান। তখন প্রথমে একজন বাঙালি তরুণ 'নো' 'নো' বলে উঠলেন। সাথে সাথে আরো অনেক তরুণ 'নো' 'নো' বলে উঠলেন। এখান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ তখন থেকেই ভাষা আন্দোলন শুরু করে দিল। তাদের শ্লোগান "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।" ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের সহিত জনতাও সম্পৃক্ত হইল। ক্রমে ক্রমে আন্দোলন বেগবান হতে থাকল। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের পক্ষে ঐ আন্দোলন সামাল দেওয়া তখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ল। শিল্পী, সাহিত্যিকরাও গান, কবিতা রচনা করে বাংলাভাষা আন্দোলনকে এগিয়ে দিলেন। এক পর্যায়ে ১৯৫২ সনের ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করল সরকার। ছাত্র সমাজ ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলেন। ছাত্র জনতার মিছিলের উপর সরকার গুলি চালাল। জব্বার, রফিক, শফিক, বরকতসহ কয়েকজন শহীদ হলেন। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান স্তব্ধ হয়ে গেল। বাঙালিরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে পাকিস্তান সরকার অবশেষে ঘোষণা দিল উর্দুর পাশাপাশি বাংলাও রাষ্ট্রভাষা থাকবে। ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদের স্মরণ করে রাখার জন্য ছাত্র সমাজ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে শহীদ মিনার তৈরি করল। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালিরা শহীদ দিবস পালন করে। ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চের রাতে পাকিস্তানি সেনারা উপর্যুপরি কামানের গোলার আঘাতে শহীদ মিনার চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল। শহীদ মিনারের সেই ভাঙ্গা অংশগুলি এখন জাতীয় যাদুঘরে রেখে দেয়া হয়েছে। যে বাঙালি বলে যে, আমি বাঙালি না আমি বাংলাদেশি। তাকে আমার প্রশ্ন-আপনি তো বাড়ালি হয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন, আপনি অবাঙালি হলেন কোন প্রক্রিয়ায়? আমার এ প্রশ্ন এই জন্যে যে, যে বাঙালি নয় সে আর যাই হোক না কেন, সে অবাঙালি। কোন বাঙালি কি কোন প্রক্রিয়ায় অবাঙালি হতে পারে? কাকে খুশি করার জন্য আপনি অবাঙালি হলেন?



বাঙালি জাতীয়তাবাদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রধান অংশ। বাঙালি সত্তাকে চিরস্থায়ীভাবে রক্ষা করার জন্য ৭১ সালে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি পাকিস্তানি ও অবাঙালিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনে ছিল। ৭৫ এর পর দীর্ঘদিন বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাংলা ভাষাকে অবহেলায় বিসর্জন দিলেও বিগত নির্বাচনে জনতা তিন-চতুর্থাংশ ভোটে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকে জয়যুক্ত করে সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। যারা বিভ্রান্ত যারা বাঙালি হয়েও বাঙালি বিদ্বেষী, তাদের কাছে এ জাতির অনুরোধ বাঙালি জাতীয়তাকে নিয়ে আর কোনদিন অবহেলা করবেন না। একটি সুখের কথা, একটি গৌরবের কথা, একটি বিরাট অর্জনের কথা আমি উল্লেখ করতে চাই, তা হল আমাদের ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস, রাষ্ট্রভাষা দিবস, এখন বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হয়। বিশ্বের প্রায় দুইশত দেশ এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারি শ্রদ্ধার সাথে পালন করে।



১৯৯৯ সালে কানাডা প্রবাসী জনাব রফিকুল ইসলাম ও অন্য কয়েকজন তখনকার সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেন জাতিসংঘে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসাবে স্বীকৃতির প্রস্তাব দিবার জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশনে এই প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা গৃহীত হয়। জাতিসংঘ ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেন। তখন থেকে অব্যাহতভাবে পৃথিবীর প্রতিটি দেশে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত এমনকি পাকিস্তানেও এই দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হয়। পৃথিবীর সব দেশ বাংলা ভাষার সহিত পরিচিত হল। পৃথিবীর সব দেশ আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জল ইতিহাসের কথা জানতে পারল। এটা আমাদের গৌরবময় অর্জন। বিশ্বে বাঙালিরা গৌরবান্বিত জাতি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.