![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নাম ঃ এ সূরার শেষ শব্দটি দিয়ে এর নাম রাখা হয়েছে।
নাযিলের সময় ঃ এ সূরাটি মাক্কী না মাদানী যুগের, সে বিষয়ে বিস্তর মতভেদ আছে। তবে সূরাটির মধ্যে এমন প্রমাণ রয়েছে, যার দরুন এ সূরাকে মাদানী বলে স্বীকার না করে উপায় নেই। সূরার ৪-৬ আয়াতে যাদের দিকে ইশারা করা হয়েছে, তারা ঐ শ্রেণীর মুনাফিক, যাদের অস্তিত্ব মাক্কায় ছিল না। মাদীনার বিজয় যুগেই লোক দেখানো নামাযীদের সন্ধান মেলে। এরা আসলে মুসলিম ছিল না। এরা মুসলিম সেজে মুসলিম সমাজে ঢুকে ইসলামের দুশমনী করতো। কিন্তু নামাযের জামায়াতে যারা হাযির হয় না, তাদেরকে মুসলিম হিসাবে গণ্যই করা হতো না বলে বেচারাদেরকে নামাযী সাজতে হতো। এ জাতীয় মুনাফিক মক্কার সংগ্রাম যুগে ছিল না। সে সময় তো খাঁটি মুসলমানদের পক্ষেও প্রকাশ্যে নামায পড়া কঠিন ছিল। মাক্কী যুগের মুনাফিকদের পরিচয় সূরা আনকাবুতের পয়লা রুকুতে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই সূরা মাঊন নিঃসন্দেহে মাদানী।
আলোচ্য বিষয় ঃ আখিরাতের প্রতি ঈমান না আনলে মানুষের চরিত্র কি ধরনের হয়।
আলোচনার ধারা ঃ (১) পয়লা তিন আয়াতে বলা হয়েছে যে, তোমরা কি খেয়াল করে দেখ না যে, যারা এ দুনিয়ার জীবনকেই সবকিছু মনে করে এবং মৃত্যুর পর আখিরাতে যে দুনিয়ার জীবনের হিসাব নিয়ে ভাল ও মন্দ কাজের বদলা দেয়া হবে-এ কথাকে যারা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয়, তাদের চরিত্র কেমন হয়ে থাকে ? এ জাতীয় লোকেরা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। ইয়াতীম, মিসকীন ও সমাজের অভাবগ্রস্তদের প্রতি এদের কোন দরদের পরিচয় পাওয়া যায় না। কারণ, দরদ থাকলেই ত্যাগ সম্ভব। আখিরাতে বদলার আশা যারা করে না, তারা কেন ত্যাগ করবে ? অভাবীদের জন্য দরদ বোধ করা ও তাদের জন্য খরচ করার মধ্যে তারা দুনিয়ার কোন লাভই দেখে না। আর বিনা লাভে মানুষ কি কাজ করতে পারে ?
(২) ৪-৬ আয়াতে আখিরাতে অবিশ্বাসীদের একটা বড় দোষের উল্লেখ করা হয়েছে। এরা যদি কোন ভাল কাজ করেও, তাহলে তা দেখাবার উদ্দেশ্যেই করে। ভোটের জন্য, নেতৃত্ব ও ক্ষমতার জন্য অর্থাৎ দুনিয়ার কোন স্বার্থ পাওয়ার জন্য দরকার হলে এরা দরদ দেখায় এবং ত্যাগও করে থাকে। এ দরদ আসল দরদ নয়, একেবারেই মেকি।
আর এ জাতীয় ত্যাগ আরও বেশী পাওয়ার জন্য করে থাকে। এমনকি এরা যদি দুনিয়ার স্বার্থে ঈমানদার সাজতে বাধ্য হয়, তাহলে নামাযও লোক দেখাবার জন্যই পড়ে এবং এর মধ্যে যত রকমভাবে ফাঁকি দেয়া যায়, সে চেষ্টাই করে।
(৩) শেষ আয়াতে এদের ছোটলোকীর পরিচয় দিয়ে বলা হয়েছে যে, এরা দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিস পর্যন্ত কাউকে ধার দিতে রাযী হয় না। মানুষের সামান্য কোন প্রকার উপকারই তাদের দ্বারা হয় না। এরা শুধু নিজের স্বার্থ-চিন্তা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আখিরাতে বিশ্বাস করলে তাদের এ ধান্দাই বড় হতো যে, আল্লাহর সৃষ্টির কি কি খিদমাত করে আল্লাহকে খুশী করা যায় যাতে আখিরাতে লাভবান হওয়া যায়। এদের নিকট দুনিয়ার স্বার্থই একমাত্র ধান্দা।
সূরা আল-মাউন
সূরা ঃ ১০৭, মাক্কী যুগে নাযিল, মোট আয়াত ঃ ৭ , মোট রুকু ঃ১
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
১.তুমি কি তাকে দেখেছ, যে (আখিরাতের) বদলাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে ?
২-৩. ঐ লোকই তো ইয়াতীমকে ধাক্কা দিয়ে (তাড়ায়) এবং মিসকীনের খাবার* দিতে উৎসাহ দেয় না।১
৪-৫. অতঃপর ঐ নামাযীদের জন্য ধ্বংস, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে অবহেলা করে,২
৬. যারা লোক দেখানো কাজ করে।
৭. (এমনকি) সাধারণ ব্যবহারের জিনিসও (অন্যকে দেয়না।)
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
১। অর্থাৎ এরা ইয়াতীমকে সাহায্য করা দূরের কথা, ভদ্রতার সাথেও বিদায় করে না, বরং গলাধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। আর এদের মালে যে মিসকীনদের হক আছে, সে কথাও তারা স্বীকার করে না।
২। এর অর্থ নামাযে ভুল করা নয়। নামাযে অবহেলা করা মানে, নামাযকে গুরুত্ব না দেয়া। কখনো পড়ে, কখনো পড়ে না, পড়লেও সময় মতো পড়ে না, নামাযে এমন ভাবে যায় যেন এতে কোন আগ্রহ নেই, দায়ে ঠেকে যেন যায়, নামায পড়া অবস্থায় কাপড় নিয়ে খেলে, বার বার হাই তোলে, নামায পড়ছে অথচ মন সেদিকে নেই, এত তাড়াহুড়া করে পড়ে যে, রুকু -সাজদা ঠিকমত হয় না, ইত্যাদি।
* খেয়াল রাখা দরকার যে, মিসকীনকে খাবার দেবার কথা বলা হয় নি। মিসকীনের খাবার বলা হয়েছে। এর অর্থ হলো যে সচ্ছল লোকদের নিকট মিসকীনদের খাবার আছে। যখন মিসকীনকে খাবার দেয়া হয়, তখন তার নিজের খাবারটুকুই সে পায়। এ খাবার দাতার দয়া নয়-মিসকীনের হক।
'মাঊন' মানে সাধারণ ব্যবহারযোগ্য এমন সব দৈনন্দিন জরুরী জিনিস, যা প্রতিবেশীরা একে অপর থেকে ধার নেয় এবং কাজ শেষে ফেরত দেয়। এ সব জিনিস ধনী-গরীব সবাই ধার চাইতে লজ্জা করে না। এ ধরনের জিনিস দেয়া-নেয়া সাধারণভাবে প্রচলিত এবং কেউ চাইলে না দেয়াটা খুব ছোটলোকের স্বভাব বলে মনে করা হয়। যেমন বই-কলম, বাসন-পেয়ালা, দা-কোদাল-কুড়াল-খন্তা, বিছানা-বালিশ, ডেক-ডেকচি, বালতি ইত্যাদি।
©somewhere in net ltd.