![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ হিসেবে একটু ভাবুক টাইপের , যেসব ভাবনার সমাধান আগে হয়নি আর সামনেও হওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই ।
জানালার ফাঁক দিয়ে সকালবেলার চমকিত আলোকরশ্মি তীরের মত চোখেই বা কেন এসে লাগে তা আজও প্রান্ত'র কাছে অজানা ৷ কতকিছুই তো বিরক্তিকর লাগে ওর কাছে , তবুও তার মাঝেই আবার একধরণের ভাললাগাও কাজ করে খানিকপরেই ৷ বৃষ্টির দিনে বালিশ আর বিছানা লেপ্টে ঘুম ছাড়ার জন্য যে বিরক্তির উদ্রেক হয় তার উল্টোটা হয় ঝুম বৃষ্টিতে ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বেলকুনিতে বসে প্রতিটি বৃষ্টির ফোটার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া আনন্দ দেখে ৷ সেই সময়ে মৃদু বাতাসে রাস্তায় দাড়ানো গাছগুলির সবুজ পাতার চোখ বুজানো দুলুনি দেখে, পিচের জলমাখা রুপের বাহার দেখে, আকাশ থেকে নেমে আসা মেঘকন্যার চাহনি দেখে- কী অপুর্ব মায়া লাগে ! আজ হয়তো তেমনি একটা দিন, অনেক প্রত্যাশার, অনেক আকাঙ্ক্ষার, পথ চেয়ে বসে থাকার পর কাছে পাওয়ার, খানিকটা আবেগে চোখের কোণায় পানি জমার ৷ প্রান্ত'র বয়স পঁচিশ ছুঁই ছুঁই করছে ৷ মাষ্টার্স পাশ দিয়েছে মাস ছয়েক হল , হালকা গড়নের চেহারা, মাঝারি লম্বা, উজ্জ্বল শ্যামল বর্ণের ৷ পড়াশুনায় বেশ ভালো করেছে ছেলেবেলা থেকেই, পাশাপাশি ফটোগ্রাফীতে উঁকি ঝুকি মারে মাঝে মধ্যে ৷ স্বভাবের দিক থেকে শান্তশিষ্ট, ঢাকা শহরে থেকেও যার কোলাহল মুক্ত গ্রামের পথই বরাবরই পছন্দের ৷ হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব যাদের সাথে অলস কিংবা আমুদে সময়গুলো নিশ্চিন্তে পার হয়ে যায় তার ৷ অবশ্য বাজে সময় তার হাতে থাকেনা কখনই ৷
কাক-ডাকা ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায় আজ ৷ তখন অব্দি একা একা সে বারান্দায় বসে একটানা বৃষ্টি দেখে যাচ্ছে ৷ যেন ক্ষ্যাপা বৃষ্টি, সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে তার বানের জলে ৷ বৃষ্টির হিমেল বাতাস শরীরের ত্বক ভেদ করে অন্তর ছুয়ে যাচ্ছে মুহূর্তে মুহূর্তে ৷ চেয়ার থেকে উঠে পড়ে এবার ঘরের ভিতর থেকে মুড়ি-চানাচুর আর সরিষার তেল মেখে নিয়ে আবারো বেলকুনিতে এসে বসে পড়ে ৷ দু এক মুঠো মুখে পুরছে আর দূরে তাকাচ্ছে বারবার ৷ পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ৷ কাউকে ফোন দিতে ইচ্ছে করছে ওর ৷ ফোনবুকটা থেকে এ মুহূর্তে কারো নামই কল করার জন্য যুতসই ঠেকছে না ৷ ফেসবুকে লগ-ইন করে দেখল লাইনে এখন কেউ নেই ৷ এরকম ভোরবেলা স্বাভাবিকভাবে কারো লাইনে না থাকারই কথা ৷ অনেকটা অসহায় অসহায় লাগছে ওর ৷ কথা বলার জন্য মনটা যারপরনাই অস্থির হয়ে উঠেছে ৷ দুটো কথা বলার জন্য, দু' দণ্ড সময় নিয়ে, এই বর্ষণসিক্ত পূর্বাহ্নে ৷ আফিমের নেশার মত অথবা 'অদ্ভুত চা-খোর' গল্পের নায়কের মত ; দুধের সাধ ঘোলে মিটলেও আপাতত তার ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ হৃদয়টুকু অল্প বিস্তর প্রশান্তি পেত ৷ আবারো ঘরে গিয়ে ক্যামেরাটা হাতে নেয় প্রান্ত ৷ তাক করে রাস্তা বরাবর ৷ ওপারে রাস্তার সাথেই একটা মাঝারি আয়তনের পুকুর আছে ৷ পুকুরপারের পেয়ারা গাছে একটা রঙ্গিন মাছরাঙ্গা জড়সড় হয়ে স্থির দৃষ্টিতে শিকার খুঁজছে ৷ ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বলে উঠলো ! অপরুপ ! অসাধারণ ! কতগুলো রঙের মিশ্রণ পালকে, মাথায়, চকিত চাহনি, নিরীহ মায়াবি ধাচের একটি পাখি ৷ হঠাৎ মনটা চাঙ্গা হয়ে গেল দারুনভাবে ৷ শিড়দাঁড়া বেয়ে কী যেন আনন্দের ঝলকানি বেয়ে বেয়ে নেমে গেল প্রান্ত'র ৷ দৃষ্টি ফেরাতে যাবে এমন সময় কীসের যেন রঙ্গিন ঝলকানি আবারো ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করলো ৷ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো ৷ যে জিনিসের প্রতি তার এই তাকানো - সাধারণত এইভাবে এই জিনিসটার প্রতি সে কখনো এই অপলক চোখে তাকিয়ে থাকেনি ৷ আজ কি লাজ -লজ্জার মাথা খেল ? সাধারণ বুদ্ধিমত্তার কিছুটা লোপ হয়েছে হয়তো ৷ কিন্তু সে দিকে তার খেয়াল নেই ৷ মনের অজান্তেই ক্যামেরায় হাত গেল এবং মুহূর্তেই আরেকটি ফ্ল্যাশ ৷ পরপর আরো দুটি ৷ অবশ্য যাকে ক্যামেরার জালে বন্দী করা হল সে রাস্তার ঐ দূরত্ব থেকে আরেকটি মানবের এমন অনুচিত কর্মের কথা মোটেও জানতে পারলেন না ৷ এটা যে একধরণের লাইন ক্রস হয়ে গেল তা যিনি ক্রস করলেন তিনিও এ মুহূর্তে উপলব্ধি করতে পারলেন না ৷ যার জন্য এমনটি করল, তিনি একজন অসামান্য মানবী ৷ টকটকে লাল রঙের জামায় কালো কালো বৃত্ত যেমন জামাটাকে চমৎকৃত করেছে তেমনি লাল রঙের সালোয়ার কামিজ এই পরিপূর্ণ বয়সের মানবীর সৌন্দর্য কয়েক সহস্রগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ৷ নিকষ কালো চুলের দৈর্ঘ্য বেশ দেখার মত, আর তাতে বৃষ্টির পানি মাখামাখি করে এমন অবস্থা করেছে যেন সাক্ষাৎ মেঘ কালো আকাশ সেটি৷ প্রান্ত ভাবল, বড় বড় সাহিত্যিকরা প্রিয়ার চুলের যে বিবরণ দিয়েছে তার চাক্ষুষ প্রমাণ আজকেই সে পেল ৷
মুখের পার্শ্বদেশ যেটুকু দেখা গেল তাতে তার রুপের মোহে পুরো মুখখানি দেখার সাধ আরো বেশী হয়ে উঠলো ৷ ডানদিকের চক্ষু যেন জোৎস্না রাতের চাঁদের মত স্থির হয়ে আছে ৷ তার দিকে অনন্তকাল তাকিয়ে থাকা যায় নির্দ্বিধায় ৷ বৃষ্টি, কথা বলার জন্য মনের আনচান টানাটানি, মাছরাঙ্গা পাখি আর জলকন্যা - প্রান্ত যেন এমন একটি দিন পেল; পাওয়ার মত করে , না চাইতেই চাওয়ার মত করে ৷ মেয়ে নয় সে ; মানবী অথবা কন্যা, বৃষ্টি ভেজা জলকন্যা ,অথবা মাছরাঙ্গার সখি জলকন্যা ! জলকন্যা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল বটে কিন্তু তা রাস্তাতেই , তবে তার আবির্ভাব ধীরে ধীরে চুড়ান্ত স্পষ্ট হল প্রান্ত'র হৃদয় পথে এবং সে ক্রমেই বাস্তব স্বপ্নের মত ধরা দিল ৷ বৃষ্টি, জল, মাছরাঙ্গা সবই দিনে দিনে প্রান্ত ভুলে গেল কিন্তু তার ঠিক বিপরীতটাই ঘটল জলকন্যার মুখচ্ছবির ক্ষেত্রে ৷ কিছুদিন যেতে না যেতেই তার বেশ বড় অফিসে চাকুরী হল ৷ এর কিছুদিন পরেই তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হল ৷ অপরাধ অনেক মারাত্মক ! জলকন্যার সাথে সে যে অন্যায় করেছিল তারই ফল হাতেনাতে ! যে জন্য জলকন্যার সাথেই তার আজীবন সংসারদণ্ড বা কারাদণ্ড দেয়া হল অনেক ঘটা করে ৷ এর বছর খানেক পরে একদিন সেই বেলকুনিতেই প্রান্ত চেয়ারে বসে সেই মুড়িমাখা খাচ্ছে ৷ বাইরে সেই ঝুম বৃষ্টি, জলকন্যা তার সামনে উপবিষ্ট ৷ পরনে লাল শাড়ী, হাতে চুড়ি আর খোপায় বেলীফুল ৷ পুকুরপারে মাছরাঙ্গাটি বসল কিনা সে কথা বেমালুম ভুলে গেছে ! ভুলবেনা কেন ? জলকন্যা যে তার হৃদয়ডাঙায় সাক্ষাৎ হাজির !
©somewhere in net ltd.