![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ হিসেবে একটু ভাবুক টাইপের , যেসব ভাবনার সমাধান আগে হয়নি আর সামনেও হওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই ।
জাঁকালো কোন ঘর - বাড়ি বা কোন স্থাপত্য কিছুই নেই এর আশেপাশে । বেশ ফাকা ফাকা, নিকটের প্রতিবেশী বলতে সামনের হালকা সবুজাভ প্রশস্ত আর সর্পিল রেলপথটুকু , দু' পাশে উজার করে দেয়া শস্য ক্ষেতের বুক । স্টেশনের বারান্দায় জনসমাগম নেই বললেই চলে । তবুও প্লাটফর্মের একেবারেই সামনে মধ্যবয়স্ক মানুষটি কেমন সতেজ সতেজ ভাব নিয়ে সিগারেট টানছে । পরনে ব্লু জিন্স, খয়েরী আর বাদামী রঙের মিশ্রণে সুতি কাপড়ের একটা টি- শার্ট । পায়ের স্যান্ডেলটা বয়স্ক লোকদের জন্য 'বাটা' কোম্পানীর যে ডিজাইনগুলো থাকে তার একটি হতে পারে । হাতে চামড়ার ফিতার একটি দামী ঘড়ি তার সাথে বেশ মানিয়ে গেছে । ভাবুক প্রকৃতির মানুষ হতে পারে, সিগারেট অর্ধেকটা বাকী তখনও ।কী মনে করে পায়চারী শুরু করলেন মাথাটা মাটির দিকে করে বাকিয়ে । পদক্ষেপ গুলো খুব ছোট ছোট, কিন্তু চাহনির পর্ব বেশ বেশ প্রলম্বিত । পকেটে হাত দিয়ে একসময় একটা কাগজের টুকরো বের করলেন, সাদা কাগজ কিন্তু নীল কালির একটা আবছা লেখা তাতে ভ্যাপসাঁ হয়ে আছে । বোঝা যায় যে লেখক এবং লেখা দুটোরই বয়স এখন মাঝ বয়সের । কিছুক্ষণ পড়লেন লোকটি ওই কাগজটি, ফের পায়চারী শুরু করলেন । হতে পারে, অনেক সাংঘাতিক কিছু একটা, হতে পারে চাপা কোন অভিমান । কোন বিষাক্ত দীর্ঘশ্বাস । এটা চিঠির যুগ নয়, ভিডিও চ্যাটিংয়ের । লোকটার চশমার কাচে দিগন্তে এসে আছড়ে পড়েছে । পায়চারী বন্ধ করে বসে পরে কাঠের বেঞ্চিটাতে ।
কাগজটা মেলে ধরে । মেয়েলি একটা হাতের বুননে কিছু আবছা স্মৃতির লাইন । লোকটি পড়তে থাকে । চিঠিতে কোন সম্বোধন নেই । সরাসরি শুরু এভাবে -
আমি জানি, এই চিঠি, এই কাগজ কিছুক্ষণ পরে তোমাকে পাথর করে দিবে । আমি জানি তোমার চোখের পানি কোন বাধ মানতে চাইবেনা, যেমন আমারও চাচ্ছেনা ঠিক এই মূহুর্তে । আমি জানি, আমি একটা অপরাধ করছি, কিন্তু সেটা অনেক বড় কোন অপরাধ থেকে তোমাকে, আমাকে বাচাতে । তোমার মা প্যারালাইজ্ড রোগী, বাবাও প্রেশারের । কার যে কখন দূর্ঘটনা ঘটবে – তা একদম অনিশ্চিত । তুমি শহরে হন্যে হয়ে চাকুরি খুঁজছ । পরিবারের বড় ছেলে তুমি, তোমার কাঁধে এখনও তোমার ছোট্ট বোনটি আছে । তুমিই বল এতগুলো মানুষের স্বপ্ন, বেঁচে থাকার তাগিদের কাছে আমাদের চাওয়া পাওয়া কি শুধুই স্বার্থপরতা নয় ? জানি, চাঁদনী রাতে তোমার পাশে নিশ্চিন্তে বসে থাকার সময় হয়তো আমার আসবে না, কিন্তু তুমি তো তোমার অসুস্থ মায়ের পাশে দুদণ্ড বসে সান্ত্বনার পরশ দিতে পারবে । বাবাটা তোমায় দেখে হয়তো সাহস পাবে ! বোনটার একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যত হবে ।
আমি জানি , তুমি আমাকে সন্দেহ করতে পার । আমার অন্য কোন মতলব হয়তো আছে –এমনটি ভাবতে পার । জোর গলায় আমাকে বলতেই পারো, প্রতারক ! তুমি ভাবতেই পার, এখন সেরকম ভাবার যৌক্তিক কারণ তোমার কাছে আছে । আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ! এটা শুনে তুমি শহর থেকে ছুটে এসেছ, আমায় নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছ ! প্রেমিক হিসেবে তুমি সাহসী; আগুনে ঝাপ দিতে চাইছ । আমিও চেয়েছিলাম । কিন্তু শহরে গিয়ে কত কষ্ট তোমাকে করতে হতে পারে ! যদি তড়িঘড়ি কোন চাকুরি না পাও ? বাড়িতে টাকা পাঠানো তো অনেক দূরের কথা, একটা গ্রাম্য অসহায় মেয়েকে নিয়ে তোমার জীবনে তখন অমাবস্যার আঁধার নেমে আসবে রাক্ষস হয়ে । সব হারাবে তুমি !
দেখ, জীবন থেমে থাকেনা, থাকবেও না । জীবনে সবকিছু একসাথে পাওয়া যায়না । কাছের মানুষগুলোকে দুদণ্ড শান্তি দিতে চাইলে নিজের জীবনে কিছু অপ্রাপ্তিকে ঠাই দিতে হয় । তুমি যদি আমাকে ক্ষমা নাও কর, তবুও আমার দুঃখ নেই ! তোমাকে দুঃখ দিলাম, কারণ সে অধিকার আমার আছে । আর যাদেরকে দুঃখ পাওয়া থেকে বাচালাম, তাদেরকে দুঃখ দেওয়ার কোন অধিকার আমার ছিলই না ! আমার এই অনুরোধগুলো রেখ, জীবনে অগোছালো হয়ো না, কোন পাগলামি করো না । আমি জানি, আমি বললে তুমি আমার কথা রাখবে । এ পর্যন্ত যত কথা দিয়েছ আমায়, সবই তো রেখেছিলে । কত ভালবাসতে তুমি আমায় ! শোন, অপূর্ণতার ভালোবাসায় নাকি ভালোবাসাটাকে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করা যায় ! আমি আজীবন সেটা নাহয় উপলব্ধি করলাম । আমি তোমাকে বলব না, ভুলে যাও আমাকে । হয়তো দিনে দিনে আবছা হয়ে যাব তোমার কাছে , মাঝে মাঝে ঝকঝকে তারার মত ভেসে উঠবো তোমার আকাশে, তবে সেটা অনেক অনেক সহস্র কোটি মাইল দূরে থেকেই । ব্যাগ যেহেতু সাথে আছেই, শহরেই যাও । যাওয়ার আগে মায়ের সাথে দেখা করে যেও । মায়ের কাছে, বাবার কাছে দুয়া নিও । পৃথিবীর যতবড় আবেগীয় বা বাস্তবমুখী ভালোবাসাই হোকনা কেন , মা বাবার ভালোবাসার কাছে তা অতি তুচ্ছ । আমি সেরকম অসহায় কয়েকটি মানুষের নির্ভেজাল ও দুর্মূল্যের ভালোবাসার কাছে আমাদের নিষ্পাপ ভালবাসাকে কুরবানী করলাম । ভালো থেকো । - তোমারই
গোধূলি !
লোকটি উঠে পড়ে । ব্যাগটি হাতে নেয় । আজো তাকে শহরেই যেতে হবে । প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেটটি ফেলে দেয় দূরে । একটা অদ্ভুত ভঙ্গিতে ট্রেনে উঠে পরে । সে ভঙ্গি চেপে রাখা কোন দুর্বিষহ ঘোলাটে বিষবাষ্পের মত !
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৯
ফেরদৌস প্রামানিক বলেছেন: আমি জানিনা লেখাগুলো কেন মানুষগুলোকে আটকে রাখতে পারে । তবুও মনে হয় আমার কাচা হাতে গল্পটাকে অমর্যাদা করা হয়েছে । আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম, কেননা এ ধরণের লেখার ফ্যান না হয়েও লেখাটি পড়েছেন দরদ নিয়ে । কৃতজ্ঞতা রাইলো
২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৮
ফেরদৌস প্রামানিক বলেছেন: আমি জানিনা লেখাগুলো কেন মানুষগুলোকে আটকে রাখতে পারে । তবুও মনে হয় আমার কাচা হাতে গল্পটাকে অমর্যাদা করা হয়েছে । আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম, কেননা এ ধরণের লেখার ফ্যান না হয়েও লেখাটি পড়েছেন দরদ নিয়ে । কৃতজ্ঞতা রাইলো ।
৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩০
মাদিহা মৌ বলেছেন: সত্যিই লেখাটা চমৎকার। অনেক ভাল লাগলো লেখাটা।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:২০
ফেরদৌস প্রামানিক বলেছেন: অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো !
৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৩
মাহমুদ০০৭ বলেছেন: বাস্তবঘেরা লেখা ।
শুভেচ্ছা রইল ।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:২১
ফেরদৌস প্রামানিক বলেছেন: অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো !
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১৬
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: আমি এই ধরণের লেখার খুব বড় একটা ফ্যান না। তবুও লেখাটা আঁটকে রেখেছিল। ভাল লাগলো লেখাটা। একটু হলেও অন্যরকম এবং রিয়েলিস্টিক।
++