নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার লাশটা গত তিন ঘন্টা ধরে সিলিং এর সাথে ঝুলে আছে।
কেউ আসছে না ঘরে। আসতে পারছে না আসলে। মা এসে এর মধ্যে দু তিনবার নব ঘুরিয়েছে, টের পেয়েছি। প্রথমবার ভেবেছে হয়তো একা থাকার জন্য লক করেই রেখেছি। তবুও পরে আবারো এসেছে এর মধ্যে লক খুলেছি কিনা দেখতে। যদিও আমি ভেবেছিলাম মা আর আমার রুমে আসবে না। যে কড়া ধমক দিয়ে শেষবার বলেছি মা কে ঘরে না আসতে! তারপরও মা কি উৎকণ্ঠা নিয়ে পায়চারি করছে ঘরের বাইরে।
বাবাও ডাইনিং এ কয়েকবার এসে খুব চিন্তিত মুখে বসে থেকে থেকে নিজের ঘরে চলে গেলেন। খুব অদ্ভুত ব্যাপার, মৃত্যুর পর থেকে কে কি ভাবছে আমি সব বুঝতে পারছি। আমি ভেবেছিলাম আমি এ প্লাস না পাওয়ায় বাবা কি চরম কষ্টই না পেয়েছেন। হয়তো সকাল থেকে ভাবছেন কারো সামনে মুখ দেখাতে পারবেন না। এদিকে বাবা এখনো ভাবছেন কিভাবে আমার মন একটু ভালো করা যায়। এ প্লাস পেলে যে বলেছিলেন ল্যাপটপ কিনে দেবেন সেটা দুদিন আগে থেকেই কিনে আলমারিতে রাখা হয়েছে। বাবা ভাবছেন কখন আমি দরজা খুলব, ল্যাপটপটা আমার হাতে তুলে দেবেন। তাতে যদি আমার মন খারাপ একটু কমে।
আমার বন্ধুরা কি ভাবছে তাও বুঝতে পারছি। পল্টু আর আকাশ এর মধ্যেই প্ল্যান করেছে কাল দলবল মিলে বাসায় এসে আমাকে চমকে দেবে। সবাই মিলে কেএফসি তে নিয়ে যাবে। আকাশ আমাকে নিয়ে মজার একটা কবিতা লিখেছে, বেঁচে থাকলে এই মুহুর্তে যেটা পড়ে আমি হো হো করে এসে ফেলতাম। অথচ আজ বিকালেও আমি ভাবছিলাম সবাই আমাকে নিয়ে কত উপহাসই না করছে। হয়তো আমার সাথে এখন আর কথা বলবে না, মিশবে না। আচ্ছা সবার বন্ধুরাই কি এতো ভালো হয়?
মা ভাবছে আমার প্রিয় ইলিশ মাছের ডিমের তরকারিটা ঠান্ডা হয়ে গেলে আমি আর খেয়ে তেমন মজা পাবো না। তাড়াতাড়ি দরজাটা খুলে আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে খাওয়াতে নিয়ে যাবে। আমি সেই দুপুর থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম বলে মা সারাদিন কিছুই খায়নি। তবু সে ভাবছে আমি সারাদিন না খেয়ে আছি তাই নিয়ে। একবার বাবাকে গিয়ে কি ভীষণ বকাও দিয়ে দিল, “তোমাকে বলেছিলাম না রেজাল্ট নিয়ে এত চাপাচাপি করো না? ছোট মানুষ, এত কি বোঝে?” আমার ধারণা ছিল বাবা পাল্টা তর্ক করবেন, কিন্তু কি অদ্ভুত, বাবা চুপচাপ মেন নিয়ে বললেন, ঠিকই বলেছ। এবার কলেজে উঠলে ও যেভাবে পড়ুক, যা রেজাল্ট করুক, কোন চাপাচাপি করবো না। রেজাল্ট এর চেয়ে ছেলে বড় !”
কথাটা শুনে আমি বেঁচে থাকলে কাদতাম, অবশ্যই কাঁদতাম। হঠাৎ মনে হলো অযথাই সারাদিন কেঁদে চোখ ফুলাচ্ছিলাম, অযথাই কান্ডটা করলাম। জীবন কত সুন্দর। এ প্লাস পাওয়ার চেয়ে আরো অনেকগুণ সুন্দর মায়ের হাতে এক নলা ভাত খাওয়া! বাবার পাশে বসে ফুটবল খেলা দেখা, বন্ধুদের সাথে ক্ষণিকের খুনসুটি।
মা এখন দরজায় জোরে জোরে নক করছে। বাইরে থেকে বলছে, “বাবা খেয়ে নে, আর কখনো বকবো না, দরজা খোল বাবা”। খুব বলতে ইচ্ছা হচ্ছে, এই দরজা কখনো খুলো না মা। কখনো খুলো না এই দরজা !
২| ১৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:১৫
হিসলা সিবা বলেছেন: অসাধারন লেখনী। চালিয়ে যান
৩| ১৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:২২
রাজীব নুর বলেছেন: চালিয়ে যান...
৪| ১৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৫৪
চুক্কা বাঙ্গী বলেছেন:
৫| ১৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১:১১
এলে বেলে বলেছেন: ভাই সালাম। অনেক দিন পর একটা ভাল লেখা পড়লাম। ধন্যবাদ ভাই। ভাল থাকবেন।
৬| ১৮ ই মে, ২০১৪ রাত ২:২৬
জাফরুল মবীন বলেছেন: আত্মহন্তারকের আত্মকথন!হৃদয়স্পর্শী।
৭| ১৮ ই মে, ২০১৪ সকাল ৭:২৮
ঢাকার কুতুব বলেছেন: দারুণ। গ্রন্থগত শিক্ষার চেয়ে মানবিক শিক্ষা বড় হয়ে উঠুক।
৮| ১৮ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৬
পৃথিবীর আলো বলেছেন: দারুন লেখা। চোখে জল চলে এল।
৯| ২৭ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:২৯
আমি নী বলেছেন: অসম্ভব ভালো একটা লেখা। দিনদিন উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকুক।
পুঁথিগত বিদ্যার বাহাদুরি থেকে মুক্ত হোক মানবিক জীবন বোধ।
১০| ২৭ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৩
মুদ্দাকির বলেছেন: দারুণ সুন্দর লিখেছেন +++++
১১| ২৭ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:৫৪
সাইদুর রহমান সিদ্দিক বলেছেন: লেখাটি কি আপনার ভাই...
??? আমার ফেসবুক ওয়াল থেকে কপি করে ব্লগে পোস্ট করলেন, এটা মোটেও ঠিক না। ---সুত্র বসিয়ে দিতেন
১২| ২৭ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭
সাইদুর রহমান সিদ্দিক বলেছেন: Click This Link
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:১৩
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: