নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেরদাউসুর রহমান খান

ফেরদাউসুর রহমান

ফেরদাউসুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুত্বের সংজ্ঞা কি?

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৭



আমরা অনেকেই মনে করি বন্ধুত্ব মানে শুধু সহায়ক বা উপকারী( helpful man) কোন ব্যক্তি। আসলে বন্ধুত্বের মানে কি তাই? একে অপরের উপকারী হবে তা ছাড়া আর কিছু নয়? প্রকৃতপক্ষে বন্ধুত্ব বলতে কি বোঝায় শুধু সাহায্যকারী না অন্য কিছু?

বন্ধুত্ব কি?
বন্ধুত্ব হচ্ছে দুই অথবা তার অধিক কিছু মানুষের মধ্যে একটি সম্পর্ক বিশেষ যাদের একে অপরের প্রতি পারস্পরিক স্নেহ রয়েছে। বন্ধুত্বকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের খুব কাছের একটি অংশ ধরা হয়। দার্শনিক এমারসন বলেছেন, একজন বন্ধু হচ্ছেন প্রকৃতির সবচেয়ে বড় মাস্টারপিস। বন্ধুত্বের গুরুত্ব উপলব্ধি করার জন্যে কবি বা দার্শনিক হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আপনার আনন্দ এবং দুঃখে আপনার পাশে কেউ না থাকলে আনন্দ যেমন বহুলাংশে মাটি হয়ে যায়, তেমনি দুঃখও সহজে হালকা হয় না। মানুষ যখন বেদনাভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে তখন বন্ধুর কাছ থেকে সে প্রথম সান্ত্বনা পায়, আর যখন আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে তখন এ আনন্দের খবর সে প্রথম বন্ধুকেই জানায়। বন্ধুত্বের সাথে যেহেতু আবেগের ব্যাপার জড়িত সেহেতু বন্ধুত্ব আনন্দের সাথে সাথে সমস্যারও সৃষ্টি করতে পারে। তাই বন্ধুত্বের সংজ্ঞা, বন্ধুর কাছ থেকে কতটুকু চাওয়া ও পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে ভুল বোঝাবুঝির বা সমস্যার পরিমাণ অনেক কমে যেতে পারে।

ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা একে অন্যের জীবনের সবকিছুতেই ভাগীদার হবে:
সাধারণভাবে এ ধারণা প্রচলিত হলেও আধুনিক নগরজীবনে এ ধারণা বাস্তবসম্মত নয়। অধিকাংশের কর্মজীবনের বন্ধু এবং পারিবারিক বন্ধু ভিন্ন। আবার পড়শীদের সাথে যে বন্ধুত্ব তা-ও আলাদা। শখ বা আগ্রহের ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তা-ও আলাদা। আবার ধর্মচর্চার বেলায় দেখা যায় সম্পূর্ণ আলাদা কারোর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব এক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ঘটনা। কারণ মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, জীবনের সব ব্যাপারেই দুই ব্যক্তির মধ্যে আগ্রহের মিল হওয়া খুব দুর্লভ ব্যাপার। এমনকি আপনার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরও এমন কিছু আগ্রহ ও শখ থাকতে পারে যেগুলোর সাথে আপনার আগ্রহের আদৌ মিল নেই। তাছাড়া সদানির্ভরযোগ্য বন্ধুত্ব কামনা, শিশুসুলভ নিরাপত্তাহীনতাবোধেরই প্রকাশ। একজন বন্ধুর উপর পুরোপুরি নির্ভরতা অনেক সময়ই দুঃখের কারণ হতে পারে। অপরপক্ষ তার সামাজিক পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করলেই প্রথম পক্ষকে দুঃখবোধে পেয়ে বসতে পারে। তাই একক বন্ধুত্বের চেয়ে একাধিক বন্ধুত্ব সব সময়ই আবেগগতভাবে ভাল।

সত্যিকারের বন্ধুত্ব মানে আজীবন বন্ধুত্ব:
এ ধারণা সবসময় ঠিক নয়। তবে এখন ভার্চুয়াল জগতের কারণে বন্ধুত্ব আজীবন টিকিয়ে রাখার সুযোগ রয়েছে। ছোটবেলায় যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে, শিক্ষাজীবনে যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে, কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর তার অধিকাংশই হারিয়ে যায়। আবার বাসস্থান পরিবর্তনের কারণেও পুরানো বন্ধুত্বের জায়গায় নতুন বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয়। কর্মজীবী মহিলাদের বেলায় এ ব্যাপারটি আরও সুস্পষ্ট। কর্মজীবনে বা শিক্ষাজীবনে অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়, কর্ম ও শিক্ষাজীবন ত্যাগ করে পুরোপুরি গৃহিণী হয়ে গেলে তখন বন্ধুত্বের আওতা পুরোপুরি পাল্টে যেতে পারে। তবে এ ধরনের খণ্ডকালীন বন্ধুত্বকেও কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করার কোন প্রয়োজন নেই। জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কালে বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রয়োজনীয় ও আনন্দদায়ক বন্ধুত্ব হতে পারে।

বন্ধুত্বের যোগ্যতা যাচাইয়ে নিচের বিষয়গুলি আবশ্যকঃ
# পারস্পরিক বিশ্বাস
# একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করা
# সহানুভূতি থাকা
# পারস্পরিক চিন্তাভাবনা ও মূল্যবোধের গুরুত্ব দেওয়া, কম্প্রোমাইজ করার ক্ষমতা থাকা, মানসিক সমর্থন দেওয়া
# অন্যের ভাল কীভাবে হবে এই বাসনা থাকা
# কঠিন সত্যের স্বীকার করে হলেও নিজের সততার প্রমাণ দেওয়া।
# প্রয়োজনে সবার জন্য ইতিবাচক, গভীর কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করা
# তুমি কি করতেছ এটা নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে কোন সংশয় না থাকা।
# একে অপরের সাথে ঝগড়া করলে বা মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে, সহনোভুতির সাহয্যে তা মিটিয়ে ফেলা।


বন্ধুত্ব প্রকারভেদ:
বন্ধু হচ্ছে যাদের আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি, এবং যারা আমাদের সামাজিকভাবে এবং আবেগের জন্য পছন্দের। সাধারণত বন্ধু হয় এমন যারা আমাদের নিজেদের মত হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বন্ধু হিসেবে এমন ব্যক্তি খোঁজে যারা:
# একসঙ্গে বড় হয়েছে
# অনুরূপ পেশাতে কাজ করছে
# সমবয়স্ক শিশুদের বাবা-মা
# একই ব্যাপারে আগ্রহ আছে এমন ব্যক্তি
# সাধারণত একই বয়স এবং একই লিঙ্গ

প্রাপ্তবয়স্কদের ৩ বা তার বেশি ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং ১০ বা তার বেশি বন্ধু থাকে। পুরুষ এবং মহিলাদের বন্ধু একই সংখ্যক আছে কিন্তু,, মহিলাদের পুরুষদের তুলনায় বন্ধুত্ব বেশি নির্ভরশীল হতে দেখা যায়। তবে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বন্ধুত্ব স্থায়ী হয় বেশি

বন্ধুত্বের বিকাশ:
ব্যক্তির মানসিক বিকাশের আগে, বন্ধুত্ব এবং পরে পিতামাতার আনুগত্য পক্কতার অভিগমন এ প্রবৃত্ত আসে। শৈশবের সমাপ্তি এবং পূর্ণ সাবালকত্ব সূত্রপাত মধ্যে তফাৎ সময়কালে, বন্ধুত্ব প্রায়ই মানসিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কিশোর এবং প্রায়ই সম্পর্ক পরে জীবনের চেয়ে আরো তীব্র। যাইহোক, বন্ধু তৈরীর ব্যক্তিদের অনেক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে; থাকার কোনো বন্ধু নেই কিছু ক্ষেত্রে আবেগের ক্ষতিকর হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুত্ব আগের বন্ধুত্তের চেয়ে বেশি স্থায়ী।

বন্ধুত্ব সম্পর্কে ইসলাম:
এবার দেখা যাক বন্ধুত্ব সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এমনটি করবে, আল্লাহ তাদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখবেন না। হাদিসে বলা হয়েছে, 'মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। সুতরাং বন্ধু নির্বাচনের সময় খেয়াল করা উচিত সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।' পবিত্র কোরআন ও হাদিসের এসব বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো যে, সব ধরনের লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করাকে ইসলাম সমর্থন করে না।

রাসূল (সা.) বলেছেন, 'দুনিয়াতে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তার সঙ্গেই হাশর হবে ।' এ জন্য বন্ধু নির্বাচনের আগে তাকে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি। ইমাম গাযযালী (রহঃ) বলেন, 'সবাইকে বন্ধু নির্বাচন করা যাবে না, বরং ৩টি গুণ দেখে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। গুণ তিনটি হল-

১. বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ

২. বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময় এবং

৪. বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পুণ্যবান

' ফরাসী এক প্রবাদে বলা হয়েছে, 'বন্ধুত্ব হলো তরমুজের মতো। ভালো একশটিকে পেতে হলে এক কোটি আগে পরীক্ষা করে দেখতে হয়।'

ইরানের বিখ্যাত মনীষী শেখ সাদী (রহঃ) বলেছেন, 'সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।' এ উক্তির মূলকথা হচ্ছে, একজন উত্তম বন্ধু যেমন জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিতে পারে । তাই যাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তাকে আগেই যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে।

বিশ্ব বিখ্যাত মনীষীরা বন্ধুত্বকে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন।

মোদ্দা কথা, মানুষ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন অনুভব করে। কারণ, একজন প্রকৃত বন্ধু জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার অংশীদার হয়। প্রকৃত বন্ধুই পারে আত্মার আত্মীয় হয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে রাখতে। বন্ধুতের একটা বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে দুষ্টামী। যা অস্বীকার করার সুযোগ কোন নেই।

প্রাচীন প্রবাদে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হতো- ‘সম্পর্ক যখন জ্বরে পুড়ে তখন তার নাম হয় ভালবাসা, আর ভালবাসা যখন জ্বরে পুড়ে তার নাম হয় বন্ধুত্ব।'

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটল বলেছেন, ‘দু'টি দেহে একটি আত্মার অবস্থানই হলো বন্ধুত্ব।'
এমারসন বলেছেন, 'প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব।' নিটসে বলেছেন, 'বিশ্বস্ত বন্ধু হচ্ছে প্রাণরক্ষাকারী ছায়ার মতো। যে তা খুঁজে পেলো, সে একটি গুপ্তধন পেলো।'

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:০৯

অাব্দুল মান্নান বলেছেন: অসাধারণ বিশ্লেষন....!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.