![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রোববার। ১২
জানুয়ারি। সকাল থেকেই আন্তর্জাতিক
বাণিজ্য মেলায় ডিউটি। বেলা বেড়ে দুপুর হলো।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। এরপর বিকেল
পেরিয়ে সন্ধ্যা।
কিছুটা ক্লান্তি নিয়ে হালকা খাবারের
দোকান খুঁজছি। হঠাৎ চোখ আটকে গেলো এক
দোকানের কোনায়।ওখানে উচ্ছিষ্ট খাবার
ফেলে গেছে কেউ।
তা নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে তিন শিশু।
ক্যামেরা ক্লিক করতেই মিইয়ে গেলো ঝগড়া।
ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে খেতে শুরু
করলো তারা। কেমন নিষ্পাপ চেহারা।
ধুলো জমে আছে শরীরে।
ক্যামেরা নামিয়ে একটু ভাব জমাতেই মুখ
ফুটলো তাদের। তিন বন্ধু ওরা। মনির, শিহাব
আর শামীম। বয়স সাত কি আটের মধ্যেই।
থাকে মেলার পাশের এক বস্তিতে। মনির ও
শিহাব এক বয়সী হলেও শামীম তাদের
চেয়ে এক বছরের ছোট। বয়সে ছোট হলেও
বুদ্ধি বেশি তার। তার পক্ষে মনির ও শিহাবের
সাফাই, বুদ্ধি খাটিয়েই খাবার জোগাড়
করে দেয় শামীম।
বুদ্ধিটা কি তা অবশ্য জানাতে নারাজ
তিনজনই।
মনির ও শামীমের বাবা রিকশা চালান।
শিহাবের বাবা রং মিস্ত্রি। সকাল থেকেই
তারা মেলায় ঘুরে বেড়ায়। মেলা শুরু
হলে তাদের সকালে, দুপুরে ও রাতে খাবারের
চিন্তা থাকে না।কারণ, মেলায়
ঘুরতে আসা মানুষ নিজেদের খাবারের যেটুকু
উচ্ছিষ্ট ফেলে দেয় তা দিয়ে কোনমতে দিন
চলে যায়।
মেলা না থাকলে তারা তিনজন তাদের
বাড়ির আশপাশের
দোকানগুলোতে গ্যালনে করে পানি দেয়। দিনের
শেষে যা পায় তাতে তিন বন্ধুর
একবেলা খাবারের খরচ হয়। কিন্তু পানির
পাম্প অনেক দূরে তাই পানি আনতে খুবই কষ্ট
হয় তাদের।
লেখাপড়ার কথা জানতে চাইলে মনির বলে,
আমরা ৪ ভাই-বোইন।বাবার এতো টেকা নাই
বই, খাতা কিন্না দিবো। পড়তে গেলে অনেক
টেকা লাগে।
তার কথায় সায় দিয়ে শিহাব ও শামিম বলে,
ঠিকই কইছে।
বাড়িতে কাজ
করবে কিনা জানতে চাইলে তিনজনই
বলে উঠলো, না ভাই
বাইততে (বাড়িতে)কামে যামুনা।
টিভিতে দেখছি বাইতে কামে গেলে দরজা আটক
আর আগুনে পুইড়ালায়। আরেকটু বড়
অইলে বাবার লগে কামে যামু, তাও
মাইনষের বাইত কামে যামুনা।
রাতে কয়টা পর্যন্ত
এখানে থাকবে জানতে চাওয়ামাত্র
হয়তো রাতের খাবারের কথাই মনে পড়ে যায়
ভাগ্যাহত তিন শিশুর। প্রথমেই উঠে ছুট দেয়
শিবাব। তাকে অনুসরণ করে মনির ও শামীম।
হয়তো রাতের খাবারের
সন্ধানে তারা ছুটবে এক দোকান থেকে অন্য
দোকানে।
©somewhere in net ltd.