নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিরাশার মাঝে আশার নাবিক.।.।

মোঃ ফিরোজ সোহাগ

আমি চিন্তা করি তবে কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত নই।

মোঃ ফিরোজ সোহাগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিলি স্থল বন্দরঃ ভ্রমণ, বিভ্রান্তি এবং অন্যান্য

৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৫৮

যাত্রার শুরুতেই বুঝতে পারলাম A long walk & struggle for Hili landPort নামের একটা বই লেখার অবকাশ আজ পেতে হবে। বন্ধু হুমায়ুন সকাল ৬-টায় বলল,ট্রেন ৭ টায় ছাড়বে। আরামের ঘুম হারাম করে ব্রাশ ছাড়াই একটা ব্যাগ নিয়ে পাশে ঘুমিয়ে থাকা ছোট মামাকে টেনে তুলে বাইকে করে দিলাম ছুট। ভয়; ট্রেন না মিস হয়ে যায়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস,বাবা-দাদাদের ট্রেন-ঠিক সময়ে আসা নিয়ে সব গল্প মিথ্যে পরিণত করে ৭ টার ট্রেন আসলো ৯.৩০-এ। দাড়িয়ে আর বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে রেল মন্ত্রীকে কামড়াইতে ইচ্ছে করছিলো বার বার। যাহোক,এতে আবার মজাও ছিল যখন বন্ধু হুমায়ুন বট গাছের নিচে দাড়িয়ে রোদের দিকে বার বার যেতে চাইছিল ছায়ার খোঁজে।পরে আবিষ্কার করলাম,আসলে সে রোদ থেকে বাঁচার জন্য ছায়া নয় বরং জীবনের “সঙ্গী” ছায়ার খোঁজ করছে। তবে ট্রেনের না আসা,পরে আসা আবার ট্রেনে উঠা থেকে নামা পর্যন্ত তার সহ আমাদের ছায়া খোঁজার চেষ্টার করা অব্যাহত ছিল।যদিও আমরা ব্যর্থ হলাম তবুও ট্রেনের সিটে অবাক হয়ে বসে থাকার চেয়ে এটাও বা কম আনন্দের কিসের।

ট্রেন থেকে নেমে হিলি স্থল বন্দর পর্যন্ত যাওয়ার আগেই হঠাৎ বন্ধু উৎপলের ফোন। বলল, “দোস্ত,তাড়াতাড়ি আয় চারপাশের বিভিন্ন মানুষ আমায় নানা ধরনের প্রশ্ন করছে।কোথা-থেকে আসছেন,এখানে কি?-ইত্যাদি ইত্যাদি। মনে মনে ভাবলাম, “এই এভারেজ চেহারা নিয়ে উৎপল ওদের আগ্রহের কারণ হয় কি করে? নাকি,শালা আমাদের টেনশন বাড়ানোর জন্যই এসব বলছে”। কিন্তু বাস হিলি চার রাস্তার মোড়ে নামলে বুঝতে পারলাম উৎপল জীবনে প্রথম বারের মত সত্যি বলেছে। আমাদের নিজেদের ফিলিংসটা তারা এরকম বানিয়ে দিয়েছিল যে হয় আমরা এলিয়েন,গোয়েন্দা,সাংবাদিক বা আরও বেশি কিছু।সবার প্রশ্নময় চক্ষু-চাহনি আমাদেরও যে বিভ্রান্ত করেছিল সেটা অস্বীকার করব না।কারণ,ছবি তুলবো বলে দাড়িয়ে দেখি চারদিক থেকে সবাই দৌড় দিয়ে আসছে। সবার উচ্চ চিৎকার :-“এ ভাই এ,ছবি তোলা মানা”!!!এ যাত্রায় আর ছবি তোলা হল না।

অনেক গেটের বাঁধা আর ডিউটি ম্যানের প্রশ্নের বাঁধা কে পেরিয়ে যখন বিরক্ত সাথে ক্লান্ত হয়ে হিলি রাজস্ব অফিসে পৌঁছলাম তখন তাদের বিভিন্ন ডিপ্লোম্যাটিক প্রশ্ন শুনে মনে হল, IR পড়ি আমরা আর কূটনীতি করে এরা।” তবে তাদের কাছে তথ্য চাওয়ার সময় একটার পর একটা টেবিল এ ঘুরে মনে হয়েছিলো এরা খুব সন্ত্রস্থ জীবন কাটায় সাথে এদের কলিগ-প্রীতিও অসাধারণ।আর “কাক যে কাকের মাংস খায় না” –এটা এদের সাথে কথা না বললে ও দেখলে বোঝা যাবে না।

এতো কিছুর পরে অবশেষে যখন হিলি রাজস্ব বোর্ডের ডেপুটি কমিশনারে রুমে ঢোকার অনুমতি পেলাম,এ সির গোমট পরিবেশ যেন পিছনের ক্লান্তি গুলোকে চেপে ধরে আমাদের ঘুমের আলসেমির দিকে টানতে চাইছিল। যাহোক, ডেপুটি কমিশনারের সাথে পরিচয় দিয়ে কথা শুরু মাত্রই তিনি আমরা কোন ব্যাচের স্টুডেন্ট সেটা জিজ্ঞেস করলেন।বুঝলাম,মালটা পরিচিত। এ সির গোমট পরিবেশ সাথে চুপচাপ ভদ্র লোকটির সাথে তথ্য আদান-প্রদানের মত নীরস বিষয়টার শেষে হটাত যখন তাকে তার ক্যাম্পাস কোনটি; সেটি জিজ্ঞেস করলাম-মনে হল হিলি রাজস্ব অফিসের ডেপুটি কমিশনারের রুমটি প্রথম বারের মত হাসল,হাসলাম আমরাও......এতক্ষণ যাকে স্যার বলে সম্বোধন করেছি তাকে ভাই বলে সম্বোধন আর হাসতে হাসতে সব কিছু জিজ্ঞেস করার যে কি মজা, এটা বলে বোঝানো যাবে না। কারণ সেও আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের ৩১-তম ব্যাচের। মুহূর্তেই হিলি রাজস্ব অফিস ও সব জায়গা যেন নিজের নিজের লাগতে শুরু করল।উৎপল তো হাসতে হাসতে ভাইয়ার বিয়ে থেকে বেবি হয়েছে কি না পর্যন্ত গল্পকে টেনে নিয়েছিল! এবার ভেতর বাহির সব জায়গা ছবি কিন্তু তুললাম সদর্পে।এবারও কিন্তু সবাই দৌড়ে আসলো আর আমরা কি বলব- বললাম ভাই বলেছেন...!!সবাই চুপ হয়ে পিছন ফিরলে আমাদের হাসি আর কে দেখে।তবে হুমায়ুনের হাসি আর কে দেখে,মনে হয় পয়দা হওয়ার পর এটাই তার সবচেয়ে সুন্দর হাসি ছিল!!!
ছবি তুলে দৌড় দিলাম বি জি বি ক্যাম্পের দিকে,অপেক্ষা ট্রেন আর ক্যাপ্টেনের সাথে দেখা করার---
এখানে এসে মনে হল আমাদের দেশের প্রতিটা মানুষ প্রতিটা মানুষ কে ভালবাসে অন্তত বিজিবিরা নয়তো বিএসএফরা যেখানে বন্দুক নিয়ে হাতে নিয়ে সীমানা পাহারা দিচ্ছে সেখানে বিজিবিরা বন্দুক কাঁধে ঝুলিয়ে হাতে বাঁশের কঞ্চি নিয়ে চোরাচালানিদের তারা করছে।এখানে ছবি তুললে ক্যামেরা গায়েব হয়ে যায়,কিভাবে এখানে আসলে বোঝা যায়।আমরা বুঝে ফেলেছিলাম,তবে ছবি তোলার সুযোগও পেয়েছিলাম।তুলিনি কারণ মানুষের কষ্টের ছবি ভাল হয় না,এটা আমরা বিশ্বাস করি। চোরাচালানিদের সাথে কথা বলে বুঝেছি অভাবে স্বভাব নষ্ট এই প্রবাদটা তাদের জন্যই বোধয়। তবে তাদেরই একজন যখন আমাদের বি জি বির কাছে নিয়ে গেল,কি কি হয়,কিভাবে হয়,কাদের দ্বারা হয় এসব বলল আমাদের সহযোগিতা করতে করতে, সত্যি বলতে কি আমরাও বোধয় ভাবতে শুরু করেছিলাম-“যাহ্‌ শালার কি আছে,চলছে চলুক না; কিছু মানুষ তো এসব না হলে না খেয়ে মারা পরবে”।কিন্তু না আমরা IR-এর স্টুডেন্ট; আবেগের কোন জায়গা নেই,আছে স্বার্থ ও সম্পর্কের। আর তাইতো বিজিবির ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে সব তথ্য সংগ্রহ করে বিএসএফদের সাথে কথা বলতেও দেরি করিনি। সম্পর্ক উন্নয়নে আমরা(IR-এর স্টুডেন্ট) যে আসলেই পারদর্শী বুঝলাম ছোট ভাই লিমনের অনেক কষ্ট করে বিএসএফের মহিলা সদস্যের সাথে ভাঙা ভাঙা হিন্দি দিয়ে জমিয়ে গল্প করতে দেখে।
যাহোক,ফেরার সময় একটা জিনিস খুব কষ্ট দিলো,দেখলাম আমদানি করা সব পণ্যের ভারতীয় ট্র্যাক শুধু বাংলাদেশেই ঢুকছে আর দীর্ঘ ভারতীয় ট্র্যাকের লাইন প্রবেশের জন্য অপেক্ষারত ,রপ্তানি হবে এমন কোন বাংলাদেশী ট্র্যাক অপেক্ষারত নেই সেখানে। তবে তবুও যে আশা নিয়ে ফেরার জন্য রওনা হলাম তা হল- “হয়তো এমন একদিন আসবে যখন বাংলাদেশী ট্র্যাকের দীর্ঘ লাইন থাকবে ভারতে পণ্য রপ্তানির জন্য আর আমদানি করা পণ্যের ভারতীয় ট্র্যাক থাকবে অদৃশ্য”।

বাড়ি ফিরে চিন্তা আর নতুন অভিজ্ঞতার ঘুমটা কেমন হয়,এখন সেটাই দেখার পালা...!

লেখাটি প্রথম প্রকাশিতঃ ৩ আগস্ট ২০১৪

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:২৯

সঞ্জয় নিপু বলেছেন: ভারতীয় ট্রাকের এই রকম বীরের মতন প্রবেশ আমি তামাবিলে ও দেখেছি যেখানে বাংলাদেশী ট্রাক নাই বললেই চলে,
আসলেই খুব কষ্ট লাগে।
ওই সব জায়গায় গেলে কিছুটা বোঝা যায় যে আমরা শোষিত হচ্ছি।

ধন্যবাদ আপনাকে, শুভ সময়ের অপেক্ষায় রইলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.