নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিরাশার মাঝে আশার নাবিক.।.।

মোঃ ফিরোজ সোহাগ

আমি চিন্তা করি তবে কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত নই।

মোঃ ফিরোজ সোহাগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আইনের মান্যতাঃ কোন আইন-ই ছোট নয়!

১১ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৭:৫৫

‘The safety of the people shall be the highest law.’’- প্রায় শত বছর আগে সিসেরো এ কথা বলেছিলেন মূলত মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার অন্যতম নিয়ামক আইন এর প্রয়োগ নিশ্চিতের কথা চিন্তা করে। আমাদের দেশেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইন হয়েছে বা হচ্ছে শুধু সুন্দর, নিরাপদ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের নিমিত্তে। কিন্ত আইন গুলো শুধু আইন-ই থেকে যাচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সদস্যদের জোর গুরুত্ব প্রদানের অভাবে। অন্যদিকে এই গুরুত্বাভাবের কারনে সাধারণ জনমনেও আইন গুলো অত্যাবশ্যকীয় মনে হয় না বা তারা করে না। অনেকের ভাষায় এই আইন গুলো ‘ছোট আইন’ বা তেমন না মানলেও কোন ক্ষতি নেই। প্রশাসন বড় আইন(অর্থাৎ অপারাধী বা অন্যান্য অপরাধ সনাক্ত করণ) কিংবা দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও অজানা কারনেই বিভিন্ন আইন গুলো পালন করা নিশ্চিত থেকে এড়িয়ে যায়। অথচ এটা সর্বত সত্য যে, এই ছোট ছোট অনিয়ম গুলোই দানা বেধে বড় অনিয়ম গুলোর দিকে অপরাধীদের নিয়ে যায় এবং সমাজের স্বাভাবিক শৃঙ্খলা ও সুস্থতা কে ব্যহত করে।অথচ এই আইনগুলো বাস্তবায়ন করলে আমাদের দেশ আরও অনেকটা যে এগিয়ে যাবে এবং সুশৃঙ্খল হবে, সেটি শতভাগ সত্য।

ট্রাফিক আইনঃ
২০০৯ সালের ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ যানজট নিরসনে তিন লেনে গাড়ি চালানোর পদ্ধতি চালু করে এবং ২০১১ সালের শুরুতে আবারো লেন পদ্ধতিতে গাড়ি চালানো, অটো সিগনাল চালু, পুরনো গাড়ি উচ্ছেদ, সিসি ক্যামেরায় ভিডিও চিত্র দেখে আইন অমান্যকারী গাড়িচালকসহ আটক, বাধ্যতামূলক ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারসহ ৮ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই সাথে ২০ বছরের ওপরে বাস ও ২৫ বছরের ওপরের ট্রাক ঢাকায় চলা নিষিদ্ধ করা হয়। আইন না মানলে অথবা ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে ভিন্ন লেনে গাড়ি চালালে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে এক হাজার টাকা জরিমানা ও তিন মাসের জন্য লাইসেন্স স্থগিত করার ঘোষণা দেয়া হয়। পরবর্তীতে লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়।
কিন্ত দুঃখের কথা, সেই আইনের তেমন কোন প্রয়োগ তো নেই-ই বরং জানবাহন গুলো ইচ্ছে মতো লেন ভঙ্গ করে বেপরোয়া গতিতে ফিটনেস বিহীন হয়েও চলাচল করছে প্রতিনিয়ত। মাঝে মাঝে ফিটনেস বিহীন গাড়ি উচ্ছেদ নামের যে অভিযান গুলো হয় সেগুলো নিয়েও জনমনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর ওভারটেকিং ও যানজট তো নিত্য ব্যাপার।অথচ বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয়হীনতার কারণে বিভিন্ন উদ্যোগগুলো যে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে,তা সত্য। এ পরিস্থিতিতে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করা হলে হয়তো যানজট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু বরাবরের মতো কতৃপক্ষ ও প্রশাসন উদাসীন।

সিট বেল্ট আইনঃ
‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭’ এ উল্লেখ রয়েছে সিট বেল্ট না বাঁধালে সর্বোচ্চ এক মাসের জেল বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এছাড়াও আইনে উল্লেখ রয়েছে, মোটরযানের সম্মুখ সারিতে আসন গ্রহণকারী এবং অনধিক ১৫টি আসন বিশিষ্ট মোটরযানের যাত্রিগণকে সিটবেল্ট বাঁধতে হবে।অথচ এই আইন পালন নিয়েও আশংকা থেকে যাবে।তবে জনগনও এর দায় এড়াতে পারে মূলত নিজেদের সচেতনতা ও আন্তরিকতার অভাবের কারনে, যদিও প্রশাসন কে নিশ্চিত করতে হবে আইন সর্বত্র প্রয়োগের। যেকোনো দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা অনেকটা কমানো সম্ভব হবে যদি এই আইন টিকে যথাযথ প্রয়োগ করা যায়।কিন্তু সে ক্ষেত্রেও প্রশাসনের উদাসীনতা ও বিশেষ ব্যাক্তির ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার ব্যাপারটি চোখে পড়ার মতো।

ধূমপান আইনঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী তামাক সেবন ও ধূমপানের কারণে ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭৩ লক্ষ মানুষ অকালমৃত্যু বরণ করেছে। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে এর সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কমপক্ষে ৪৩.৩ ভাগ মানুষ ধূমপান অথবা অন্য কোন উপায়ে নিয়মিত তামাক সেবন করে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের জন্য বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫৭,০০০ মানুষ মৃত্যু ও প্রায় ৩,৮২,০০০ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে।আইন করে উন্মুক্ত ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে ২০০৫ সালে। আইনের ভাষায় তা হচ্ছে ‘পাবলিক প্লেসে ধূমপান’। অথচ এই আইন বোধয় সব চেয়ে বৈধ ভঙ্গনীয় আইন, নয়তো প্রশাসনের সদস্যসহ জনগন কেউ-ই এই আইন পালনের তোয়াক্কা করে না। ধূমপান কে বলা হয় সকল অপকর্মের মা অথচ এই অপকর্ম ও অশোভনীয় কাজ নির্বিঘ্নে চলছে।আইনের ৭ ধারায় পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্ত আইনে থাকলেও এটা রাজধানী কিংবা শহরগুলোতেও বিরল বা নেই বললেই চলে।এই ব্যর্থতার দায় সরকার এবং প্রশাসন উভয়কেই নিতে হবে।এছাড়াও এ আইনের অধীন সম্ভাব্য অপরাধের ধরণ ও অপরাধীর দ্রুত এবং জনসম্মুখে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করার জন্য আইনটিকে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর তফশীলভুক্ত করা হয়েছে। যেটা শুধু পদক্ষেপ হয়েই থেকে গিয়েছে।


পলিথিন নিষিদ্ধ আইনঃ
উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে ২০০২ সালে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয় পরিবেশ সংরক্ষণ ও সুস্থ জীবন নিশ্চিতের লক্ষে। আইনানুসারে সকল প্রকার প্লাস্টিক শপিং ব্যাগের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরন, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। নামানো হয়েছিলো ভ্রাম্যমান আদালত। মোটামুটি সেই সময় ভালো সারাও পাওয়া গিয়েছিলো। এছাড়া প্লাস্টিক ব্যাগ এর বিপরীতে পরিবেশসম্মত পাটের ব্যাগ ব্যবহার করার পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বাজার থেকে এই দীর্ঘ একযুগ পরে এসেও প্লাস্টিক ব্যাগ যেমন পুরোপুরি উঠে যায়নি, তেমনি জনপ্রিয় হয়নি পাটের ব্যাগের ব্যাবহার। যদিও এখন নেটের ব্যাগ ব্যবহৃত হয়ে আসছে কিন্তু হরদম ব্যবহৃত হচ্ছে প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ। যার উপর কোন নিয়ন্ত্রন নেই সরকারের পক্ষ থেকে।১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়, কেউ যদি পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি বা বাজারজাত করে তবে তার শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। অথচ এই আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে এবং যেটি শুধুই আইন হয়ে রয়েছে।

শব্দ দূষণ আইনঃ
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়েছিল মূলত নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়ার লক্ষ্যে। নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবল ও রাতে ৪০ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০, রাতে ৫০ এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ রাতে ৭০ ডেসিবল এই বিধিমালার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
বিধিমালার আইন অমান্য করলে, প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
অথচএকাধিক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের শব্দ দূষণের মাত্রা ৬০ থেকে শুরু করে কোনো কোনো স্থানে ১০৬ ডেসিবল পর্যন্ত রয়েছে। যা মানুষের শারীরিক-মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির অন্যতম কারণ বলে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।অথচ এই আইন প্রয়োগ নিয়ে প্রশাসনের যেন কোন মাথা ব্যাথাই নেই। এটাকে স্বাভাবিক ঘটনা মনে করেই তারা বরাবর আইন টিকে প্রয়োগের ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখিয়ে আসছেন।

এভাবে যদি এই আইনগুলোকে প্রয়োগ না করা ও গুরুত্ব না দেয়া হয় তাহলে দেশের কোন উন্নয়নই যেমন টেকসই হবে না তেমনি শৃঙ্খল জাতি হিসেবেও আমাদের পরিচিতির বিকাশ ঘটবে না। প্রশাসন এবং সরকারকে আইনগুলো প্রয়োগের মাধ্যমেই জনগনের আস্থা অর্জন ও নিজেদের যোগ্যতার প্রমান প্রদর্শনে উৎসাহী হতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.