![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান১৯৭৭ এ নাটকের মাধ্যমে বিচারের নামে ১১ জন কর্মকর্তাসহ এক হাজার ৪৫০ জন বিমানসেনাকে ফাঁসি দেন।
১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে বিদ্রোহের ঘটনার পুনঃ তদন্ত দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বিমানসেনা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।
গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা এ দাবি জানান। তাঁরা বলেন, কথিত বিদ্রোহের পর ’৭৭ সালে সামরিক আদালতে সাজা দেওয়ার প্রতিটি ঘটনা দেশের সংবিধানের আলোকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
ওই সময় সামরিক আদালতের রায়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, বিমানবাহিনীর এমন ২৩৮ জন সদস্যের একটি তালিকা সংবাদ সম্মেলনে বিতরণ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন: বিমানবাহিনীতে বিদ্রোহের পর সামরিক ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি পাওয়া করপোরাল খায়রুল আনোয়ার, নূরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, মনির শরীফ, সৈনিক কামরুজ্জামান, সার্জেন্ট মামুনসহ শতাধিক ব্যক্তি। এ ছাড়া ফাঁসি হওয়া ও নিখোঁজ বিমানসেনাদের কয়েকটি পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে করপোরাল খায়রুল আনোয়ার বলেন, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর বিমানবাহিনীতে একটি অভ্যুত্থান-নাটক হয়। তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এ নাটকের মাধ্যমে বিচারের নামে ১১ জন কর্মকর্তাসহ এক হাজার ৪৫০ জন বিমানসেনাকে ফাঁসি দেন। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত করা হয় আরও তিন হাজার ব্যক্তিকে। নিখোঁজ হন অনেকে। এক হাজারের বেশি মানুষকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই ঘটনার পর নিখোঁজ সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী নুরের নাহার বলেন, ‘আমার স্বামীর লাশ ফিরে পেতে চাই। তাঁর কী অপরাধ ছিল, সেটা জানানো হোক। দেশের মানুষ হিসেবে সে অধিকার আমার আছে।’
নিখোঁজ করপোরাল মান্নানের স্ত্রী সুরাইয়া বলেন, ‘দুজন লোক আমার স্বামীকে টানাহেঁচড়া করে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাঁর কোনো হদিস নেই। অথচ বিদ্রোহের ঘটনার সময় তিনি গ্রামের বাড়িতে ছুটিতে ছিলেন।’
ফাঁসি হওয়া সার্জেন্ট আফাজ উদ্দিনের স্ত্রী রহিমা খাতুন বলেন, ‘পত্রিকায় খবর পড়ে জানতে পারি, আমার স্বামীর ফাঁসি হয়েছিল। কিন্তু সরকার কিছুই জানায়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই পাইনি।’
খায়রুল আনোয়ার বলেন, সামরিক আদালতে এক মিনিটের রায়ে অনেকের ফাঁসির আদেশ দিয়ে তা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়েছিল। এ ছাড়া কথিত বিদ্রোহের সময় নিহত ব্যক্তিদের আর খোঁজ মেলেনি। লাশগুলো হয় পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, নয়তো মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হওয়ার পর সুবিচার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত বিমানসেনাদের পূর্ণ পেনশন দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিল। কিন্তু তা আর কার্যকর হয়নি। অথচ এখন অনেকের জীবন বিপন্ন হতে চলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, পুনর্বাসিত করা এবং তাঁদের আজীবন পেনশনের দাবি করে বলা হয়, এটা কোনো রাজনৈতিক দাবি নয়, এটা মানবিক ও ন্যায়বিচার-সংক্রান্ত। এ ছাড়া সঠিক তদন্তের মাধ্যমে চক্রান্তকারীদের নাম, ক্ষতিগ্রস্ত সবার ছবিসহ তালিকা প্রকাশ ও বিমানবাহিনীর তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে তদন্তের দাবি করা হয়।
বিমানবাহিনীতে বিদ্রোহের ঘটনার পুনঃ তদন্ত দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রথম আলো
http://www.prothom-alo.com/detail/news/190765
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৫১
াহো বলেছেন: জিয়া যে এতো নিষ্ঠুর ছিল তা জানতাম না :লুৎফা তাহের
তারা গ্রামের বাড়ির তিন মাইল দূরে লাশ ফেলে চলে যায়
মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল (অবঃ) আবু তাহেরের (বীর উত্তম) স্ত্রী লুৎফা তাহের বলেছেন, জিয়াউর রহমান কর্নেল আবু তাহেরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জিয়াউর রহমান বন্দী হলে তার মুক্তির জন্য কর্নেল তাহেরকে ফোন করেছিলেন। ৭ নভেম্বর সিপাহীদের সহায়তায় কর্নেল তাহের জিয়াকে মুক্ত করেন। তাহের জিয়াউর রহমানের জীবন রক্ষা করলেও তিনি চরম বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়ে তাহেরকে হত্যা করেছেন। শুধু তাই নয়, হত্যাকাণ্ডের পর তাহেরের কবরে পর্যন্ত সেনা পাহারার ব্যবস্থা করেছিলেন জিয়া। তবে আমরা কখনো ভাবিনি, কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হবে। আমাদের ধারণা ছিল তাকে সাজা দেয়া হতে পারে। কিন্তু জেনারেল জিয়া যে এতো নিষ্ঠুর ছিল তা জানতাম না।
গতকাল ইত্তেফাকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। লুৎফা তাহের বলেন, ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানের নায়ক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহ-সভাপতি কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে ঢাকা কেন্দ ীয় কারাগারে ফাঁসি দেয়া হয়। এটি ছিল ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাযজ্ঞ। সশস্ত্র বাহিনীতে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে তাহেরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের কথিত অভিযোগ আনা হয়েছিল। জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে কথিত অভিযোগে তাহেরসহ জাসদের ৩৩ জন নেতা-কর্মীকে গোপন বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করান। তড়িঘড়ি করে ৩৩ জন জাসদ নেতা-কর্মীর বিচার শুরু করেন।
এতোদিন পর রিট কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হঠাৎ করেই কর্নেল তাহেরের বিচার চাওয়া হয় নি। কর্নেল তাহের পরিবার, জাসদ ও কর্নেল তাহের সংসদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ফাঁসির নামে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিচারের নথিপত্র চেয়ে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আমাদের আবেদনে সরকার সাড়া দেয়নি। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে কর্নেল তাহেরের প্রহসনের বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ বন্ধ হয়েছিল।
তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীতে অস্থিরতা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ১৯৭৫ সালের ২৪ নভেম্বর কর্নেল তাহেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে কোথায় রাখা হয় তার কোন খবর ছিল না আমাদের কাছে। ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই তার ফাঁসির রায় দেয়া হয়। ১৯ জুলাই বেলা ২টার দিকে কারাগারে তাহেরের সাথে দেখা করার জন্য পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়া হয়। বিকাল ৩টায় কারাগারের ৮ নম্বর সেলে আমাদের সাথে তার শেষ দেখা করানো হয়। এসময়ে তাকে স্বাভাবিক দেখা যাচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখনো বিচ্ছিন্ন রাজনীতি করিনি। ক্ষুদিরামের পর আমি অপরাজনীতির শিকার। যে জিয়াকে আমিবাঁচিয়ে ছিলাম সেই আমার সঙ্গে বেঈমানি করেছে।’ শেষ মুহূর্তে সন্তান নিতু, যিশু ও মিশুর খোঁজ নিয়েছিলেন তিনি।
১৯৭৬ সালের ভয়াল ২১ জুলাইয়ের কথা স্মরণ করে তাহেরের স্ত্রী বলেন, ২১ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টায় মোহাম্মদপুরে তাহেরের বড় ভাই আরিফুর রহমানের বাসায় ছিলাম। কারাগার থেকে ফোন করে কর্নেল তাহেরের লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়। উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা জেল গেটে গিয়ে তার লাশ গ্রহণ করে। তবে আমাদের ইচ্ছা ছিল ঢাকার কোন জায়গায় কর্নেল তাহেরকে সমাধি করা হোক। সরকারের কাছে এ ইচ্ছা প্রকাশ করলে তারা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। একটি এম্বুলেন্সে তাহেরের লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হলো। আর আমাদের একটি মাইক্রোবাসে পাঠিয়ে দেয়া হলো। নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার কাজলা গ্রামে বাড়ির ৩ মাইল দূরে শ্যামগঞ্জে লাশ ফেলে রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চলে যান। তখন গ্রামে কোন রাস্তা ছিল না। লাশের জন্য সরকার আলাদা কোন কফিনের ব্যবস্থা করেনি। কারাগারের চাদর দিয়ে ঢাকা অবস্থায় ৩ মাইল লাশ কাঁধে নিয়ে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এমনকি লাশ দাফনের ২১ দিন পর্যন্ত তাহেরের কবর পাহারা দেয়া হয়েছিল।
তাহেরকে আপাদমস্তক দৃঢ়চেতা সাহসী মানুষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণেই পরিবারের পক্ষ থেকে চাপ দেয়ার পরও রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী না হয়ে বরং উচ্চকণ্ঠে বলেছিলেন, 'নিঃশঙ্কচিত্তের চেয়ে জীবনের মূল্যবান সম্পদ আর কিছু নেই। কোন অবস্থাতেই তিনি কারো কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হবেন না। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য পরিবার এমনকি তার মা আশরাফুন্নেসার পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও তিনি একবারের জন্যও সে পথে পা বাড়াননি; বরং তিনি নিজের সাহসী সিদ্ধান্তের কথা বলেছেন অকপটে। তিনি বলেছিলেন, ‘মৃত্যুতে বিন্দুমাত্র ভয় নেই, ইতিহাস একদিন তাকে মূল্যায়ন করবেই। আর এ কারণেই বিপ্লবী তাহের দৃঢ়তার সঙ্গে নিজ হাতে ফাঁসির দড়ি গলায় পরে সারাবিশ্বে মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল (অব আবু তাহেরকে (বীর উত্তম) গোপন বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেয়া হয়। গত ২৩ আগস্ট গোপন বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেয়া ও সামরিক ফরমান জারি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তার কারণ দর্শাতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সামরিক আদালতের গোপন বিচারের নথি তলব করেছে হাইকোর্ট। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র সচিব এবং কারা মহাপরিদর্শককে নথি আদালতে জমা দেয়ার
নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৪৯
রবিনহুড বলেছেন: এখন কি করা যায়?
কবর থেকে জিয়াকে তুলে কি ফাসিতে দেবার ব্যবস্থা করা উচিৎ না?
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:২৪
াহো বলেছেন:
তাহের স্মরণ সভায় লিফশুলজ নিখোঁজ সেনা কর্মকর্তাদের হদিস জানতে জরিপ দরকার
Click This Link
৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৫৪
াহো বলেছেন:
সাতাত্তরের গণফাঁসি ও ইতিহাসের দায়
জায়েদুল আহসান |
Click This Link
কর্নেল তাহের হত্যা দিবস উপলক্ষে মার্কিন অনুসন্ধানী সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজের একটি বক্তব্য তিন পর্বে প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে। অপেক্ষায় ছিলাম এর প্রতিক্রিয়া কী হয় তা দেখার জন্য। লিফশুলজ ৩৫ বছর ধরে বলে আসছেন, জেনারেল জিয়া কর্নেল তাহেরকে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। এবার তিনি আরও একটি অভ্যুত্থান নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। বলেছেন, জিয়ার আমলে শত শত সৈনিককে বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছিল। মূলত তিনি সাতাত্তরের অক্টোবরের অভ্যুত্থানের কথাই বলেছেন। লিফশুলজ সত্তরের দশকে সেনাবাহিনীর মধ্যকার অন্তর্ধান ও অমীমাংসিত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ, সত্য ও বিচার কমিশন গঠন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন।
আশা করেছিলাম, কোনো না কোনো মানবাধিকার সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, কলাম লেখক বা নাগরিক সমাজের কেউ যাঁরা ন্যায়বিচারের কথা বলেন বা যাঁরা সরকারকে নানা রকম কমিশন গঠনে বাধ্য করে থাকন, তাঁরা লিফশুলজের এই আহ্বানে কোনো না কোনোভাবে সাড়া দেবেন, কোথাও না কোথাও একটা প্রতিধ্বনি তৈরি হবে। কিন্তু আমাকে হতাশ হতে হয়েছে। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে লেখালেখি হবে, যত দিন বাঙালি জাতি থাকবে; তাহের হত্যাকাণ্ড নিয়েও লেখালেখি হবে, যত দিন তাঁর অনুসারীরা থাকবেন। কিন্তু সাতাত্তরের সেই অভ্যুত্থান নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে না। এর কারণ বোধ হয় ওই ঘটনায় যে শত শত ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন, তাঁরা সাধারণ সৈনিক। তাঁরা কেউ জেনারেল ছিলেন না। ইতিহাসের ওই অধ্যায়ের ব্যাপারে আমরা যেন দায়হীন।
সেনাবাহিনীর মধ্যকার হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের জন্য নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবিটা সবার আগে এ দেশেরই কারও কাছ থেকে উচ্চারিত হতে পারত অথবা দাবি ওঠার আগেই কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের উচিত ছিল, এত দিনে নিজ উদ্যোগে ন্যায়বিচার কমিশন গঠন করে প্রকৃত সত্য বের করে জনসমক্ষে তা প্রকাশ করা। সেই দাবি তুলেছেন একজন বিদেশি সাংবাদিক। তাই বিএনপি অভিযোগ করেছে, জিয়াউর রহমানের চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে সরকার একজন বিদেশি সাংবাদিক ভাড়া করেছে। আর এ কারণেই হয়তো এ দেশের কোনো কলমযোদ্ধা সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর রক্তাক্ত অধ্যায় নিয়ে আলোকপাত করেননি। পাছে তাঁরা বিএনপির বিরাগভাজন হন।
এটা সবার মনে রাখা উচিত যে ইতিহাসের সত্য অনন্তকাল চাপা পড়ে থাকে না। কোনো না কোনো পথ বেয়ে সেটা একদিন ওপরে উঠে আসে। এত দিন কেউ ওই দিনগুলোর অবগুণ্ঠন খুলে ফেলার চেষ্টা করেননি বলেই ৩০-৩৫ বছর আগে সেনানিবাসের ভেতরে কী ঘটেছিল, তা এখনো আলোচনা ও গবেষণার বিষয়। যদি সে সময়ের ঘটনাগুলো আড়াল করা না হতো, বিচারে ও তদন্তে স্বচ্ছতা থাকত, তবে আজ এত কথা হতো না। লিফশুলজ তাঁর বক্তব্যে আমার লেখা বই থেকে নানা তথ্য উদ্ধৃত করেছেন। বইয়ের অনেক অধ্যায়ই ১৯৯৭ সালে ভোরের কাগজ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। লিফশুলজ আমার সঙ্গে সাম্প্রতিক আলাপচারিতার কিছু অংশও তাঁর লেখায় তুলে ধরেছেন। তিনি তাঁর বক্তব্য যুক্তি ও তথ্য দিয়ে প্রমাণ করার জন্য আমার বই রহস্যময় অভ্যুত্থান ও গণফাঁসি থেকে বারবার উদ্ধৃতি টেনেছেন। এই লেখার আগেই লিফশুলজের বাংলাদেশে আগমন ও তাঁর বক্তব্যের সূত্র ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার লিফশুলজের ওপর খেপেছেন, তাঁর বক্তব্যে দুরভিসন্ধির গন্ধ পেয়েছেন। বিএনপি নেতৃত্ব জানে কি না জানি না, সাতাত্তরের সেই অভ্যুত্থানের কারণেই জেনারেল জিয়া রাজনৈতিক দল গঠনে তৎপর হয়েছিলেন। বিএনপির জন্মের পেছনে সেই অভ্যুত্থানটির ভূমিকা ছিল সুদূরপ্রসারী। এই লেখায় সেটার বিশদ আলোচনা সম্ভব নয়। তবে তারা এটুকু নিশ্চয়ই মানবে, সত্য উন্মোচনে অথবা ইতিহাসের অন্ধকার দিক উদ্ঘাটনে কাউকে ভাড়া করতে হয় না। আমার লেখা বই কিংবা লরেন্স লিফশুলজের লেখায় বিএনপির নেতাদের সংশয় যদি কিছুতেই না কাটে, তবে তাঁরা পড়ে দেখতে পারেন তাঁদেরই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, একসময়কার আইনমন্ত্রী, জেনারেল জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়ে পরে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লেখা বই ডেমোক্রেসি অ্যান্ড দ্য চ্যালেঞ্জ অবডেভেলপমেন্ট (Democracy and the Challenge of Developmet)। এ বইয়ে মওদুদ আহমদ জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের বিস্তারিত বয়ান তুলে ধরেছেন। বইটিতে সাতাত্তরের অক্টোবরের ঘটনা প্রসঙ্গে বিএনপির প্রথম সারির এই নেতা লিখেছেন, ‘বিদ্রোহের সময় সংঘটিত সংঘর্ষে প্রায় ২০০ লোক নিহত হয়েছিল, যাদের মধ্যে ছিল ১১ জন বিমানবাহিনীর অফিসার ও ১৭ জন বেসামরিক ব্যক্তি। এ সময় জিয়া ও তার সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয় এবং সেনানিবাসের ভেতরে অবস্থিত তার বাসভবনে আক্রমণের চেষ্টা করা হয়। অবশেষে জিয়ার অনুগত সৈন্যরা বিদ্রোহ দমন করে। ২ অক্টোবরের অভ্যুত্থান দেশের বিমানবাহিনীকে পঙ্গু করে দিয়েছিল, কেননা ভিকটিমদের বেশির ভাগই ছিলেন বিমানবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। কয়েকটি ভারতীয় পত্রপত্রিকা ভুলক্রমে এই খবর প্রচার করেছিল যে, অভ্যুত্থানটি অন্যান্য সেনানিবাসেও ছড়িয়ে পড়েছিল, তবে ঢাকার ঘটনার সূত্র ধরে কয়েকটি এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল বটে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘তবে এখানেই এর ইতি ঘটেনি। অভ্যুত্থানে যারা অংশ নিয়েছিল, জিয়া তাদের বিরুদ্ধে ত্বরিত এবং নির্দয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানানো হয়েছে, ৪৮৮ জন সেনা কর্মকর্তার সংক্ষিপ্ত বিচার করা হয়েছিল এবং তাদের হয় গুলি করে, নয়তো ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল; প্রায় ৫০০ জন কর্মস্থলে ফিরে আসেনি বা ভয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেছিল। আরও সহস্রাধিক লোককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। যাকেই সন্দেহ হয়েছে, সেটা সেনাবাহিনীর লোক হোক বা না হোক, জিয়া তার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। গুজব রটেছিল, সেনাবাহিনীর অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই অভ্যুত্থানের পেছনে ছিলেন, যা জিয়ার মধ্যে ভীষণ অস্বস্তির জন্ম দেয়।’
বিএনপির নেতৃত্ব কী বলবে, জেনারেল জিয়াউর রহমানকে কালিমালিপ্ত করতে ব্যারিস্টার মওদুদকেও ভাড়া করা হয়েছে? মওদুদ ১৯৯৫ সালে যখন তাঁর বইটি প্রকাশ করেন, তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল।
সত্তরের দশকের মধ্যভাগে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে যখন খুনোখুনির ঘটনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছিল, বিনা বিচারে কারাগারগুলোতে প্রতিরাতে ৮-১০ জন করে ফাঁসি দিয়েও যখন তথাকথিত বিদ্রোহীদের শেষ করা যাচ্ছিল না, তখন ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে সৈনিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং এসব ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার পেছনে রাষ্ট্রের সব কলকবজা ব্যবহার করা হয়েছে। এর ২০ বছর পর কুয়াশাবৃত সেই সময়টার স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে নেমে সে সময়কার প্রায় সব সেনা ও বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলাম আমি। অনেকেই তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন, আবার অনেকেই মুখ খুলতে রাজি হননি। ঘটনার সময় জেনারেল এরশাদ ছিলেন সেনাবাহিনীর উপপ্রধান, পরে যিনি একজন রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন। তাঁর কাছে বারবার ধরনা দিয়েও সে সময়কার কোনো তথ্য পেতে ব্যর্থ হয়েছি। সম্প্রতি তাঁর একটি চিঠি আমার হাতে এসেছে। চিঠিটি তিনি লিখেছিলেন তাঁর দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের উদ্দেশে, জেলে বসে। সদ্য পতিত স্বৈরশাসক হিসেবে তখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাঁর সামনে। ইংরেজি ভাষায় সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘...৫০০ জন সিপাইকে জিয়া ফাঁসি দিয়েছেন...এক একটা ফাঁসির বিচার হয়েছে পাঁচ মিনিটে।’
জেনারেল এরশাদের এই চিঠির কথা উল্লেখ করলাম লিফশুলজের ন্যায়বিচার কমিশন গঠনের আহ্বানের কার্যকরতা রক্ষার সময়সীমা কত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে সেটা বোঝানোর জন্য। সাতাত্তরের সেই বিদ্রোহ দমনের দায়িত্ব ছিল তৎকালীন নবম ডিভিশনের অধিনায়ক জেনারেল মীর শওকত আলীর। তিনি কিছু তথ্য দিয়ে গেছেন। এখন তিনি আর বেঁচে নেই। সেই সময়কার সামরিক কর্মকর্তাদের অনেকে এখনো বেঁচে আছেন। অনেক তথ্যই তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হতে পারে। তাঁরা নিজেরা সত্য প্রকাশের দায় বোধ করতে পারেন। কমিশন হোক বা না হোক, স্বপ্রণোদিত হয়েও তাঁরা এসব তথ্য প্রকাশ করতে পারেন।
সাতাত্তরের নির্মম সেনা হত্যাকাণ্ডের আরও বিশদ অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রয়োজন। সেটা প্রয়োজন শুধু ইতিহাসকে অন্ধকারমুক্ত করতেই নয়, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেও। আর এই কাজে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করতে পারেন সেই সব সামরিক কর্মকর্তা, যাঁরা ঘটনাটি কাছ থেকে দেখেছেন বা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
জায়েদুল আহসান: প্রধান বার্তা সম্পাদক, দেশ টিভি।
জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১৬
াহো বলেছেন: প্রথম আলো
Click This Link
৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:০২
নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: আচ্ছা ভাইজান তাহেররে নিয়া ব্লগার দাসত্ব ভাইয়ের একটা পোষ্ট আছে। ওইখানে তো আপনারে কিংবা কোন নিবেদিত প্রান আওয়ামীরে দেখলাম না ডিফেন্ড করতে! কি তখন কি লজ্জা লাগে নাকি?? আহারে! আইচ্ছা তোমার লাইগা পোষ্টটার লিঙ্ক দিয়া গেলাম। দেখি এবার কত ইতিহাস আর তথ্য জানো তুমি!সেয়ানা বিপ্লবী তাহের আর ৭ ই নভেম্বরের ছায়া নায়ক কর্ণেল আমিন , মেজর মুনীর , সুবেদার আনিসদের অস্পষ্ট কায়া...........
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:০৮
াহো বলেছেন: সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ এ নাটকের মাধ্যমে বিচারের নামে ১১ জন কর্মকর্তাসহ এক হাজার ৪৫০ জন বিমানসেনাকে ফাঁসি দেন।
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১৪
াহো বলেছেন: মওদুদ আহমদের লেখা বই ডেমোক্রেসি অ্যান্ড দ্য চ্যালেঞ্জ অবডেভেলপমেন্ট (Democracy and the Challenge of Developmet)। এ বইয়ে মওদুদ আহমদ জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের বিস্তারিত বয়ান তুলে ধরেছেন। বইটিতে সাতাত্তরের অক্টোবরের ঘটনা প্রসঙ্গে বিএনপির প্রথম সারির এই নেতা লিখেছেন, ‘বিদ্রোহের সময় সংঘটিত সংঘর্ষে প্রায় ২০০ লোক নিহত হয়েছিল, যাদের মধ্যে ছিল ১১ জন বিমানবাহিনীর অফিসার ও ১৭ জন বেসামরিক ব্যক্তি। এ সময় জিয়া ও তার সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয় এবং সেনানিবাসের ভেতরে অবস্থিত তার বাসভবনে আক্রমণের চেষ্টা করা হয়। অবশেষে জিয়ার অনুগত সৈন্যরা বিদ্রোহ দমন করে। ২ অক্টোবরের অভ্যুত্থান দেশের বিমানবাহিনীকে পঙ্গু করে দিয়েছিল, কেননা ভিকটিমদের বেশির ভাগই ছিলেন বিমানবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
৫| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১১
নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: ধুর তুই একটা থার্ড ক্লাশ আবাল। হুদাই তোর পোষ্টে কমেন্ট করলাম। দাসত্বের পোষ্ট ক্লিক করার ই সাহস পাইলি না! কিসব বাল-ছাল গুলা যে এখন আওয়ামী ব্লগিং করে !
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১৪
াহো বলেছেন: জিয়াউর রহমান ১৯৭৬-এর ২৯শে নভেম্বরে প্রধান সামরিক শাসক সায়েমের বিরুদ্ধে ক্যু করে নিজে প্রধান সামরিক প্রশাসক
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:২৯
াহো বলেছেন:
ঘটনার বর্ণনা করে রায়ে বলা হয়, ১৯৭৬ সালের ১৪ জুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৭ জুলাই তাহেরকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কিন্তু তাহেরকে যে আইনে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, সে আইনে ওই সময় মৃত্যুদণ্ডের কোনো বিধান ছিল না। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর ’৭৬-এর ৩১ জুলাই মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়। তাই আইনগতভাবে ওই দণ্ড ছিল অবৈধ। তথাকথিত ওই আদালতের বিচারক আবদুল আলী ও অন্যরা বলেছেন, বিচারের সময় তাঁদের সামনে কোনো কাগজ বা নথিপত্র ছিল না। এ ছাড়া আসামিরা জানতেন না যে তাঁদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ। তাঁদের পক্ষে বক্তব্য দিতে কোনো আইনজীবীও দেওয়া হয়নি। এসব বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল ও এর কার্যক্রম ছিল অবৈধ। তথাকথিত ওই বিচার সংবিধানের ২৭, ২৯, ৩০, ৩২, ৩৩ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার পরিপন্থী।
Click This Link
৬| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৩৬
মাইন রানা বলেছেন: জিয়া ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল আর ভাল রাষ্ট্রপতি মুরুব্বীদের মুখ থেকে শোনা কথা।
জিয়াই বাংলাদেশের আনাচে কানাচে চষে বেড়িয়েছে মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখার জন্য।
জিয়াই বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শক্তিশালী করেছে
শাসকদের জিয়াকেই বাংলার মানুষ সবচেয়ে বেশী ভালবাসে। এই কথা যে অস্বীকার করবে সে বেইমান হবে।
একজন আর্মি অফিসারের এত জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে আর কারো হয় নাই।
জিয়া থাকলে আজ বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর থকেও উন্নত হত।
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৩৮
াহো বলেছেন:
আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির। আমাদের আইনজীবীরা ধারাবাহিক উদাহরণ সহ যুক্তি প্রদর্শন করলেন এ প্রশ্নে। তারা উল্লেখ করলেন যে, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে রশিদ-ফারুকের ক্যুদেতা ছিল প্রতিরক্ষা বাহিনীতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের বড় নজির। এ ব্যাপারে জিয়া সরকার কি কিছু বলেছেন? ৭৫-এর ১৫ আগষ্ট থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বিরাজমান নৈরাজ্য ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের সাথে তো তাহের ও তার সহযোগিরা জড়িত নন।
সুযোগ থাকা সত্ত্বেও জিয়া সে সমস্ত শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনার বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নেননি। তাহের তাঁর ঐতিহাসিক জবানবন্দীতে ঘোষণা করলেন যে, তিনিই সিপাহী অভ্যুত্থান পরিচালনা করেছেন। তার মধ্য দিয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে বিরাজমান প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলার অবসান সূচিত হয়েছিল। তাহের উল্লেখ করলেন যে, বাংলাদেশের নতুন মীরজাফর জিয়া সিপাহী অভ্যুত্থানের লক্ষ্যের সঙ্গে বেঈমানী করে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নতুন অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৪০
াহো বলেছেন:
জিয়াউর রহমান ১৯৭৬-এর ২৯শে নভেম্বরে প্রধান সামরিক শাসক সায়েমের বিরুদ্ধে ক্যু করে নিজে প্রধান সামরিক প্রশাসক
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৫১
াহো বলেছেন:
কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার হত্যাকাণ্ড: লিফশুলজ[/sb
‘কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার হত্যাকাণ্ড। এর সঙ্গে জড়িত একজনের নাম বলতে হলে তা হলো জিয়াউর রহমান। জিয়া জটিল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।’ কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার নিয়ে করা রিটে বক্তব্য দিতে গিয়ে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ আজ সোমবার হাইকোর্টে এসব কথা বলেন।
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বেলা দুইটা ২৭ মিনিটে তিনি বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। আর বিকেল তিনটা ৩৭ মিনিটে তিনি আদালত থেকে বের হয়ে আসেন।
আদালতে বক্তব্য দেওয়ার আগে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানের কার্যালয়ে লিফশুলজ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরবর্তী ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন জিয়াউর রহমান। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য, স্বৈরতান্ত্রিক শাসন প্রক্রিয়ায় তিনি কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছিলেন।
মার্কিন এই সাংবাদিক আরও বলেন, ‘তাঁর (জিয়া) সঙ্গে মোশতাক, ফারুক ও রশীদ গংদের যোগসূত্র ছিল। তবে তিনি (জিয়া) কখনো সামনে আসেননি।’
লিফশুলজ বলেন, ‘লন্ডনে আমাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে রশীদ বলেছিলেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের আগে তাঁর (জিয়া) সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল। এরপর জিয়া ৭ নভেম্বরে স্বরূপে আবির্ভূত হন।’
‘লে. কর্নেল এম এ তাহেরের গোপন বিচার নিয়ে করা মামলাটি ঐতিহাসিক। নতুন প্রজন্মের এ বিষয়ে জানার আগ্রহ আছে। আমার প্রশ্ন, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে কেন এ ঘটনার বিচার হলো না?’
আজ বেলা ১১টার দিকে লরেন্স লিফশুলজ কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার নিয়ে করা রিটে বক্তব্য দিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আসেন। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে লরেন্স লিফশুলজের সঙ্গে লে. কর্নেল তাহেরের পরিবারের সদস্যরা ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু সাক্ষাত্ করেন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি লিফশুলজের বাংলাদেশে আসার বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হয়।
জানা যায়, ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার তাহেরসহ ১৭ জনকে বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালের গোপন বিচারে সাজা দেওয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই ভোররাতে তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ১৯৭৬ সালে তাহেরসহ অন্যদের গোপন বিচার চলাকালে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তাঁর ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন, তাহেরের স্ত্রী লুত্ফা তাহের এবং সামরিক আদালতের বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ গত বছরের আগস্টে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৩ আগস্ট তাহেরের বিচারের জন্য সামরিক আইনের মাধ্যমে জারি করা আদেশ এবং এর আওতায় গোপন বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
একই আদালত তাহেরের সঙ্গে গোপন বিচারের মুখোমুখি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জিয়াউদ্দিন, হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার, করপোরাল শামসুল হক ও আবদুল মজিদের গোপন বিচার নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করেন। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সহসভাপতি রবিউল আলমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেও গোপন বিচার ও দণ্ড-প্রশ্নে রুল জারি করেন আদালত।
তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা প্রশ্নে রিটের চূড়ান্ত শুনানিকালে গত ২০ জানুয়ারি হাইকোর্ট এ সম্পর্কে বক্তব্য দিতে মার্কিন সাংবাদিক লিফশুলজকে অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও পররাষ্ট্রসচিবকে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় লরেন্স লিফশুলজ ই-মেইলে রাষ্ট্রপক্ষের বরাবর তাঁর বক্তব্য পাঠান। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ওই বক্তব্য আদালতে তুলে ধরা হয়।
লিফশুলজের ওই বক্তব্যে বলা হয়, মেজর জেনারেল মঞ্জুর নিশ্চিতভাবে জানতেন যে কথিত ওই বিচার শুরু হওয়ার আগেই জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হবে। ওই সময় জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন এমন দুজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাও এ বিষয়ে তাঁকে নিশ্চিত করেছিলেন।
http://www.prothom-alo.com/detail/news/138390]
৭| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৫০
মাইন রানা বলেছেন: মানুষ কয় কি এই ব্লগার সারিন্দা বাজায় কি!!!!!!
কি ঠাকুর দাদার গল্প শুনাইতেছে!!!
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৫৯
াহো বলেছেন:
গোপনে বিচার করে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়ার ঘটনাকে আইনজীবী ড. কামাল হোসেন নাটক বলে অভিহিত করেছেন । তিনি বলেছেন, ‘১৯৭৬ সালে একটি জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটে। তাহেরকে জীবন দিতে হয়। এটা জাতীয় লজ্জার বিষয়। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে ভেজা এই মাটিতে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমরা তাঁকে সম্মান দিচ্ছি এটা নয় বরং তিনি নিজেই নিজের সম্মান অর্জন করেছেন।’
http://www.prothom-alo.com/print/news/138962
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:১৫
াহো বলেছেন:
কর্নেল তাহের হত্যা
যেকোনো স্থানে অবিচার সর্বত্রই ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি
লরেন্স লিফশুলজ | তারিখ: ২২-০৭-২০১১
৩৫ বছর আগে আজকের দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এমন একজন মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল, যাঁকে আমাদের অনেকেই চিনতেন, শ্রদ্ধা করতেন, অনেকে যাঁর গুণগ্রাহী ছিলেন। অতীতের বছরগুলোর মতো আমরা এখানে সমবেত হয়েছি—কেউ এসেছেন প্রথম বারের মতো, অন্যরা আগেও স্মরণসভায় যোগ দিয়েছেন—আমরা এসেছি আবু তাহের ও তাঁর আদর্শকে স্মরণ করতে। এবং এ কথা স্মরণ করতে যে, কীভাবে ক্ষমতাসীন শক্তি আইনের শাসনকে পরিণত করেছিল একগুচ্ছ স্বেচ্ছাচারী ও বিশেষ কায়দাতে। অপরাধ সংঘটিত করে হলেও শাসন চালিয়ে যেতে তারা ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তবে এ বছর আমরা শুধু মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছি না, আমরা একদল দৃঢ়সংকল্প মানুষের সারা জীবনের লক্ষ্যপূরণও উদ্যাপন করছি। তাঁদের অভীষ্ট ছিল ন্যায়বিচার অন্বেষণ—তাঁদের অধরা আশা ছিল একদিন ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে। আমরা সবাই বেঁচে থাকি আশা ও স্বপ্ন নিয়ে। আজকের দিনটি সত্যিই এক বিরল দিন; কারণ ‘ন্যায়বিচার পাওয়ার স্বপ্ন’ এমনভাবে সত্যি হয়েছে, যা হওয়া একেবারেই অসম্ভব বলে মানুষের মনে হতো।
চলতি বছরের ২২ মার্চ এমনই এক স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। দেশের জন্য এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আর তাহেরের পরিবারের কাছে অত্যন্ত আবেগঘন ব্যাপার। তাঁরা ভাবতেও পারেননি এমন দিন আসবে। যা ঘটেছে তার তাৎপর্য আমার দৃষ্টিতে এ দেশের সমাজের জন্যও বিরাট। অন্যায়-অবিচারে পরিপূর্ণ পৃথিবী ও সমাজে ন্যায়বিচারের দিকে একটি পদক্ষেপের মানে আশার দিকে একটি পদক্ষেপ।
কোনো দেশের সর্বোচ্চ আদালত যেসব আদর্শের পক্ষাবলম্বন করবে বলে প্রত্যাশা করা হয়, তার সমতুল্য কোনো অবস্থান নেওয়ার ঘটনা বিরল। সর্বোচ্চ আদালত কতবার আমাদের হতাশায় ডুবিয়েছেন; প্রতিটি বাঁকে ন্যায়বিচারকে বিপথে চালিত করতে অব্যাহত রাজনৈতিক চাপ আর হুমকি-ধমকির কারণে তেমন ঘটেছে।
এবার তেমন ঘটেনি। তাহেরের মামলা পুনর্বিচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ, বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাকির হোসেনের নেতৃত্বে ঘোষণা দেন, আবু তাহেরের বিচার অবৈধ ও অসাংবিধানিক ছিল। বিচারপতি শামসুদ্দিন তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, তথাকথিত বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনাল নম্বর ১ এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর যে বিচার অনুষ্ঠিত হয়, সেটা বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না।
বিচারকাজটি বেআইনি পদ্ধতিতে সম্পাদিত হয়—কোনো আদালতে নয়, জেলখানার ভেতরে। বিচারিক কার্যক্রমের ওপর এ দেশের সংবাদপত্রে কোনো একটি শব্দও লেখা যাবে না—নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল সে সময়। একজন সম্পাদক—দৈনিক ইত্তেফাক-এর আনোয়ার হোসেন মঞ্জু—তাহেরের বিচারের বিষয়টি সংক্ষেপে প্রকাশ করেছিলেন। তৎক্ষণাৎ তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়, তাঁর পত্রিকায় এ মামলার ব্যাপারে আর কোনো শব্দ প্রকাশিত হলে ভীষণ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে ট্রাইব্যুনালের কাছে তাহের যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তা সত্যিই দূরদর্শী: ‘১৯৭৬ সালের ১৫ জুন যে অধ্যাদেশ ঘোষণা করা হয়েছে, তা একটি কালো আইন। সরকারের মতলব চরিতার্থ করতেই এই অধ্যাদেশ ঘোষিত হয়েছে। অধ্যাদেশটি অবৈধ। তাই এই ট্রাইব্যুনালের আইনগত অথবা নৈতিক কোনো অধিকার নাই আমার বিচার করার।...সময়ের শুরু থেকে আজ অবধি নিরন্তর চেষ্টার ফলে মানবসভ্যতার যা কিছু ভালো অর্জন, সেসবকেই লজ্জায় ফেলে দিয়েছে এই ট্রাইব্যুনালের কর্মকাণ্ড।’
৩৫ বছর পর বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট তাহেরের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আদালত ঘোষণা করেছেন, তাহের ও তাঁর সহযোগীদের বিচার ছিল ‘একটি ধাপ্পাবাজি, বিচারের ভান ও অলীক কাহিনী।’ ‘জোচ্চোরির ট্রাইব্যুনাল’ যে রায় দিয়েছিলেন তা ‘খারিজ ও বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল...যেন...এমন প্রহসনমূলক বিচার কোনো দিন ঘটেইনি।’
আদালত তাহেরকে শহীদ ও দেশপ্রেমিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আরও বলেছেন, আজ যদি জেনারেল জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকতেন, তাহলে তাঁকে তাহেরের মৃত্যুর জন্য ‘হত্যাকাণ্ডের বিচারের’ সম্মুখীন হতে হতো। আদালত আরেকটু এগিয়ে গিয়ে ঘোষণা করেছেন, ‘কর্নেল আবু তাহেরের তথাকথিত বিচার ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনাটি ঠান্ডা মাথায় হত্যা। এবং এর পরিকল্পনাকারী আর কেউ নন, জেনারেল জিয়াউর রহমান নিজেই।’
সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার কয়েক দিন আগে আদালতে বসে আমি শাহ্দীন মালিকের মুখে শুনছিলাম ১৯৭৬-এর জুলাইয়ের ঘটনাবলির বর্ণনা। তিনি তাহের-পরিবারের আইনজীবী। তিনি যে সময়ের কথা বলছিলেন তখন বাংলাদেশি সমাজ অবিশ্বাস্য রকম নিচে নেমে গিয়েছিল। দেশের পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছিল যে হত্যাকাণ্ডের পরপরই গঠন করা হয়েছিল গোপন সামরিক ট্রাইব্যুনাল আর বিচারের রায় ছিল পূর্বনির্ধারিত—মৃত্যুদণ্ড।
তারপর, কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৭৭ সালের শরৎকালে গণহারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো। জেলখানার ভেতর সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের ভানও করা হলো না এবার। উল্টো আইনসংগত সব সামরিক পদ্ধতি লঙ্ঘন করে সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের জোরপূর্বক ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয় অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়।
শাহ্দীন মালিক চমৎকার ভাষায় আদালতের কাছে পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী মামলায় আদালতের প্রদত্ত রায়ের যৌক্তিক ফলাফল হিসেবে তাহেরের মামলার রায় উল্টে দেওয়ার মাধ্যমে ‘আইনের শাসন’ বাঁচানোর আহ্বান জানান। চলতি বছরের ২২ মার্চ বিচারপতি শামসুদ্দিন ও বিচারপতি জাকির বিরাট সাহস দেখিয়েছেন আর বাঁচিয়েছেন আইনের শাসনকে। তা করার মধ্য দিয়ে তাঁরা বাংলাদেশের সমাজকে তাহেরের জবানবন্দিতে বর্ণিত আধুনিক সভ্যতার পথে ফিরিয়ে আনতে প্রচণ্ড সহায়তা করেছেন।
তাহের উল্লেখ করেছিলেন যে ‘নিরন্তর চেষ্টার ফলে মানবসভ্যতার যা কিছু ভালো অর্জন, সেসবকেই লজ্জায় ফেলে দিয়েছে’ জিয়ার বিশেষ সামরিক আদালত নম্বর-১। ৩৫ বছর আগে জেনারেলদের কৃত দুষ্কর্মের কারণে এ দেশকে যে লজ্জা বরণ করতে হয়েছিল, তা মোচনের জন্য জিয়ার ট্রাইব্যুনালকে বেআইনি ও অপরাধমূলক হিসেবে সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ কাজের জন্য বিচারপতি শামসুদ্দিন ও বিচারপতি জাকিরের প্রশংসা করতে হয়। অবশ্য তাঁদের মহান কাজ এখনো অসমাপ্ত।
আবু তাহেরের প্রতি যে অবিচার করা হয়েছিল, তার যত দূর সম্ভব বিহিত করা হয়েছে। ২২ মার্চের আগ পর্যন্ত এটুকুও ছিল স্বপ্ন। অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো অপরাধের সত্যিকারের প্রতিকার করা খুব দুঃসাধ্য; যা কিছুই করা হোক না কেন তা সব সময়ই তা অপ্রতুল হবে। জীবন তো ফিরিয়ে আনা যায় না। তিনটি ছোট শিশুর নিজেদের বাবার দৈনন্দিন উপস্থিতি ছাড়াই বেড়ে ওঠা কিংবা এক তরুণ নারী তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়ে স্বামীহারা হওয়ার অভিজ্ঞতা ‘সংশোধনের’ কোনো উপায় নেই। এ ধরনের আন্তরিক বেদনা ঠিকমতো সারানো যায় না কোনোভাবেই। কোনো আদালত সেই জগৎকে স্পর্শ করতে পারেন না। স্বৈরতন্ত্রের ওপর গণতন্ত্রকে জয়ী করতে হলে উচ্চাভিলাষী সেনাসদস্যদের বেসামরিক শাসন রহিত করার সব প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ‘আইনের শাসন’কে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এই রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ফলাফল মেনে নিতে পাকিস্তানের অস্বীকৃতির ফলস্বরূপ। নির্বাচনের ফল বাস্তবায়নের দাবিতে কয়েক সপ্তাহ অহিংস আইন অমান্য কর্মসূচি চলার পর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এই বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানে শুরু হয়েছিল এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে সেই ঘটনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর ভেতরকার কিছু সদস্য কতগুলো শক্তির সঙ্গে মিলে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল। মনে হচ্ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি মডেল ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চলেছে সামরিক শাসন অথবা আধাসামরিক শাসন। জিয়া ও এরশাদের শাসনামলে মুজিবের খুনিরা ‘সুরক্ষিত ব্যক্তি’ হিসেবে জীবন যাপন করেছেন। ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাসদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পর এ দেশ আরেক দফা সামরিক একনায়কতন্ত্রের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। আবারও ডিজিএফআই এক ভীতিকর সংস্থায় পরিণত হয়েছিল—তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ও অন্য নাগরিকদের তুলে নিয়ে যাওয়া শুরু করেছিল। গোপন তদন্তকক্ষে নির্যাতন চালানোর প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল।
অত্যন্ত পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খলভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলী ও শিক্ষার্থীরা অহিংস বিক্ষোভ ও মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ফিরিয়ে দেওয়া এবং রাজবন্দীদের মুক্তি দাবি করেন। তাঁদেরকে গভীর সাহস দেখাতে হয়েছিল। বিভক্ত সেনাবাহিনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে পিছু হটতে হয়েছিল।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট বন্ধুরা—যেমন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি—তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীকে বন্দীদের মুক্তিদান এবং আটক ব্যক্তিদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কয়েক মাস আমরা শঙ্কিত ছিলাম, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর আবার হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরীহ মানুষের ভয়ানক হত্যাযজ্ঞের ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। সেরকম কিছু ঘটলে তার শেষ যে কোথায় হতো, তা কেবল কল্পনা করা যায়।
তাই, আজ আমরা যেসব প্রশ্ন উত্থাপন করছি, সেগুলো নিছক একাডেমিক প্রশ্ন নয়। এ দেশের মানুষের জীবন ও নিরাপত্তার জন্য এগুলো জরুরি প্রশ্ন। বেসামরিক গণতন্ত্র টিকে থাকতে হলে তার বৈধতার ভিত্তি হতে হবে এমন কর্মসূচি, যা দেশের জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিয়ে আসবে; সেই জনগণের জন্য যারা দারিদ্র্য ও অনুন্নয়নের বিরুদ্ধে লড়াইরত।
সেই পথ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক, সমাজতান্ত্রিক কিংবা পুঁজিবাদী যা-ই হোক না কেন, রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগ ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল ‘আইনের শাসন’, বিনা বিচারে আটক না থাকার অধিকার এবং নিরপেক্ষ বিচার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে পারে। ফরাসি দার্শনিক ও গণিতবিদ ব্লেস পাসকাল একদা লিখেছিলেন, ‘ন্যায়বিচার ও ক্ষমতাকে একসঙ্গে আনা আবশ্যক, যাতে যা কিছু ন্যায়সম্মত তা-ই ক্ষমতাশালী হতে পারে আর যা কিছু শক্তিশালী তাই ন্যায়সম্মত হতে পারে।’
এটাই আগামীর চ্যালেঞ্জ। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাকির হোসেনের দেওয়া ২২ মার্চের রায় আমার মতে একটি সন্ধিক্ষণ ছিল। যদিও আদালতের রায় সামনের দিকে বিরাট এক পদক্ষেপ, তবু আরও অনেকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়ে গেছে; সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা দরকার, যাতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন টিকে থাকে, স্বৈরতন্ত্রের স্বপ্ন লালনকারী শক্তিগুলোর দ্বারা যেন আবারও আক্রান্ত না হয়।
২
আবু তাহেরকে স্মরণের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্রে এবার আমি দ্বিতীয়বারের মতো বক্তৃতা করার সুযোগ পেলাম। যখন আমার কথাগুলো কীভাবে সাজাই, তা যখন ভাবছিলাম, তখন আমার মাথায় ঘোরাফেরা করছিল একজন মহান আমেরিকানের কিছু কথা। আমার বেড়ে ওঠার সময়ে, তরুণ বয়সে মার্টিন লুথার কিং বেঁচে ছিলেন।
যে রাতে তিনি মারা গেলেন, মনে পড়ছে সেই রাতের কথা। মনে পড়ছে, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কীভাবে হোস্টেল ছেড়ে গিয়ে হাজির হয়েছিল নাগরিক অধিকার আন্দোলনে মার্টিন লুথার কিংয়ের সহযোদ্ধা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু রেভারেন্ড উইলিয়াম শ্লোয়ান কফিনের বাড়িতে। বিল কফিন ইয়েলের ধর্মযাজক ছিলেন। ড. লুথার কিংয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ইয়েলের ব্যাটেলি চ্যাপেলে আয়োজিত স্মরণসভায় রেভারেন্ড কফিন আলাবামা অঙ্গরাজ্যের বার্মিংহাম জেল থেকে লেখা লুথার কিংয়ের বিখ্যাত চিঠিটির কথা বলেছিলেন। লুথার কিংকে সেখানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি অহিংস প্রতিবাদের নেতৃত্ব দেওয়ার সময়।
যখন আমি এই মহান বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ভাবি, যে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য এ দেশের সংগ্রামের ইতিহাসে সমৃদ্ধ, তখন বারবার মনে পড়তে থাকে ১৯৬৩ সালে বার্মিংহাম কারাগার থেকে মার্টিন লুথার কিংয়ের লেখা এ কথাগুলো, ‘যেকোনো জায়গায় অবিচার সর্বত্রই ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি’।
মার্টিন লুথার কিং যা বলেছিলেন সে কথা আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসের চোরাপথে আমাদের দিশা দিচ্ছে, তাহেরের মামলার মতোই যার সুরাহা করতে দরকার জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার। তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ১৫ মাস পর এ দেশের কারাগারগুলোতে মৃত্যুর ঝড় বয়ে গিয়েছিল। আজ আমরা এ বিষয় নিয়ে কথা বলব।
সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণার আগে গত ১৪ মার্চ আমি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছি। জানুয়ারি মাসে যখন বুঝতে পারলাম আমার পক্ষে সে সময় সাক্ষ্য দিতে আসা সম্ভব হবে না, তখন হলফনামা পাঠিয়েছিলাম। হলফনামায় আমি বলেছিলাম, কীভাবে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মদ মঞ্জুর, যাঁর সঙ্গে আমার কয়েক বছরের জানাশোনা ছিল, আমাকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে জানতেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সাংঘাতিক বিচার-প্রক্রিয়া শুরুর আগেই তাহেরকে প্রাণদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।
এই তথ্যের আলোকে স্পষ্ট যে শুরু থেকেই ট্রাইব্যুনালের কর্মকাণ্ড শুধু জেনারেল জিয়ার মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার প্রক্রিয়া ছিল। পরবর্তী সময়ে মঞ্জুরের দেওয়া তথ্যটির সত্যতা সম্পর্কে আমি সেই সময়ে জিয়ার ঘনিষ্ঠ দুই সেনাসূত্রে নিশ্চিত হয়েছি।
আমার হলফনামা দাখিল করা ও সাক্ষ্য দেওয়ার পর বিএনপির কয়েকজন নেতা আমাকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করেন। তাঁরা দাবি করেন, জেনারেল জিয়ার ওপর কালিমা লেপনের জন্য সরকার আমাকে নিযুক্ত করেছে। আমি বিএনপির সমালোচনা করে একটি কথাও বলিনি। দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার অভিযোগ করেছেন যে, মরহুম জিয়াউর রহমানের চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে সরকার একজন বিদেশি সাংবাদিককে [লিফশুলজ] ভাড়া করেছে।’ এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার কয়েক দিন পর আমি এম কে আনোয়ারকে ফোন করে তাঁর সঙ্গে আলাপ করি।
আমি তাঁকে বলি, আমি সাংবাদিক। জেনারেল জিয়ার মর্যাদাহানির জন্য বর্তমান সরকার একজন বিদেশি সাংবাদিককে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর কাছে যে প্রমাণ রয়েছে, সে বিষয়ে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নিতে চাই। আমি বলি, এ সম্পর্কে তাঁর কাছে যে প্রমাণ ও তথ্য আছে আমি সেগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী। আমি তখনো ঢাকাতেই ছিলাম। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাইলাম। তিনি সময় দিতে অস্বীকৃতি জানালেন।
তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি তথ্যগুলো আমাকে টেলিফোনে জানাতে পারেন কি না। আমি তাঁর টেলিফোন-সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রস্তাব দিই। এমনকি আমি এও বলি যে, যাতে স্পষ্ট রেকর্ড থাকে সে জন্য কথোপকথন রেকর্ড করা হবে। আমাকে ভাড়া করা হয়েছে—এ অভিযোগের কী প্রমাণ তাঁর কাছে আছে, সে কথা আমাকে বলতে এম কে আনোয়ার সাহেব অস্বীকৃতি জানান। আমি বললাম, এটা তো খুব গুরুতর অভিযোগ; এটা আমাদের খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি আলাপ চালিয়ে যেতে কিংবা আমার সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানালেন। তিনি ফোন রেখে দিলেন।
মিনিট দশেক পর এম কে আনোয়ার সাহেব আমাকে ফোন করলেন। আমি বললাম, তাঁর ফোন পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি ভেবেছি, তিনি তাঁর মত পাল্টেছেন আর আমাকে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু তাঁর ফোনের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল আমার সঙ্গে প্রথম দফা আলাপের পর তিনি মাঝের ১০ মিনিট কোনো আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আনোয়ার সাহেব বললেন, তিনি স্পষ্ট করতে চান যে, তিনি যখন সরকারের বিরুদ্ধে একজন বিদেশি সাংবাদিক ‘ভাড়া’ করার অভিযোগ করেন, তখন তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি। যদিও ১৬ মার্চের দ্য ডেইলি স্টার লিখেছে, আনোয়ার সাহেব তাঁর ১৫ মার্চের সংবাদ সম্মেলনে ‘লিফশুলজ’ সম্পর্কেই বলছিলেন, তবু এম কে আনোয়ার আমার কাছে দাবি করলেন, তিনি কারও নাম নির্দিষ্ট করে বলেননি।
আমি আনোয়ার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, আগের দিন, ১৪ তারিখে সুপ্রিম কোর্টে আমার সাক্ষ্য প্রদান আর পরের দিন সরকার এক অনুল্লিখিত সাংবাদিককে ভাড়া করার ব্যাপারে তাঁর দাবি—এই দুইয়ের মধ্যেকার যোগসূত্রটা কি নিতান্তই আকস্মিক? আমি তাঁকে বললাম, বিদেশি সাংবাদিকটি যদি লিফশুলজ না হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি কার কথা বলেছেন? আমি বললাম, বিদেশি সাংবাদিকদের সরকার অর্থ দিচ্ছে, এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে আমি খুবই আগ্রহী। এখন তিনি যদি বলতে না চান যে, আমিই সেই সাংবাদিক, তাহলে ভালো হয় যদি তিনি প্রকাশ করেন যে কে সেই বিদেশি সাংবাদিক। কিন্তু এবারও তিনি আমাকে তা বললেন না। তিনি বেশ কয়েকবার একই কথা বললেন, ‘আমি কারও নাম বলিনি।’ [চলবে]
২১ জুলাই কর্নেল তাহেরের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত আলোচনা সভায় পঠিত প্রবন্ধ
লরেন্স লিফশুলজ: মার্কিনঅনুসন্ধানীসাংবাদিক।
৮| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:০১
মতিউর রহমান মিঠু বলেছেন: আরে আবাল নিজের পোষ্টে নিজেই মন্তব্য করো আবার নিজেই জবাব দেও তুমি কতোবড় আবাল!................... সামু শেষ আবাল দিয়া ভইরা গেছে............ধুর.......................
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:০৪
াহো বলেছেন:
লরেন্স লিফশুলজ >তাহেরের গোপন বিচার ,সুপ্রিম কোর্টে যা বলেছি
Click This Link
আমার নাম লরেন্স লিফশুলজ। পেশায় লেখক। ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ে আমি হংকংভিত্তিক পত্রিকা ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ-এর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সংবাদদাতা ছিলাম, পাশাপাশি বিবিসি ও গার্ডিয়ান-এর প্রদায়কও ছিলাম। গত জানুয়ারিতে এই আদালত কর্নেল আবু তাহের মামলা সম্পর্কে আমার জ্ঞাত তথ্য-প্রমাণ আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে অনুরোধ করেছিলেন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান এই আদালতে আমার হলফনামা পড়েছিলেন। গত জানুয়ারিতে আমি বাংলাদেশে আসতে পারিনি। কারণ, আমার পরিবারের এক সদস্য সম্প্রতি গুরুতর দুর্ঘটনায় পড়েছিল।
আজ এই আদালতে আপনাদের সামনে উপস্থিত হওয়াটা আমার জীবনে অন্যতম সম্মানজনক বিষয়। আদালত মামলাটির বিষয়ে রায় দেওয়ার শেষ প্রান্তে এসে দ্বিতীয়বারের মতো আমাকে হাজির হওয়ার অনুরোধ করেন। পরিস্থিতি পাল্টেছে, তাই আমি ঢাকায় এসে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
আমরা সবাই এখানে হাজির হয়েছি সভ্য সমাজের অন্যতম অপরিহার্য এক উপাদানের জন্য—তা হলো ‘স্মৃতি’। প্রায় ৩৫ বছর আগে এই নগরে কী ঘটেছিল, তা স্মরণ করতে আমরা এসেছি। সেই সময়ের কথা আমাদের কারও কারও ভালোই স্মরণে আছে। অন্যরা তখন সবেমাত্র শিশু। তবে আমরা এখানে হাজির হয়েছি, কেননা আমাদের অনেকে প্রত্যাখ্যান করেছি বিস্মৃতিকে। এটা স্মৃতির প্রতি আমাদের দায়।
৩৫ বছর ধরে আশা করেছিলাম, একদিন আমি আদালতকক্ষে দাঁড়াব, যেখানে জানব শিগগিরই তাহেরের বিচারসংক্রান্ত মামলার রায় হবে। আর সেই রায়ে ঘোষিত হবে তাহেরের বিচার ও ফাঁসি অবৈধ কি না এবং তা তাঁর সাংবিধানিক ও মানবাধিকারের মৌলিক লঙ্ঘন ছিল কি না।
আমি কয়েক মাস আগেও জানতাম না, এটা আপনাদের আদালতকক্ষে হবে। বিচারপতি শামসুদ্দিন ও বিচারপতি হোসেন যে এই আদালতের বিচারক, তা-ও আমার অজানা ছিল। আপনারা কি রায় দেবেন, সে বিচার আগেভাগেই আমরা করব না। তবে অনেকের মতো আমিও কয়েক দশক ধরে আজকের এই দিনের প্রতীক্ষায় ছিলাম। গত সপ্তাহে তাহেরের মেয়ে জয়া জানালেন, ‘আমি সারা জীবন ধরে এই মুহূর্তের প্রতীক্ষা করেছি।’ বাবার মৃত্যুর সময় জয়ার বয়স ছিল পাঁচ বছর। সুতরাং আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, জীবনব্যাপী অপেক্ষার পর আবু তাহেরের জন্য ন্যায়বিচার পেতে অনেকে এখানে এসেছেন।
আবু তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার এক বছর পর তাঁর স্বজন ও সাবেক সহকর্মীরা লন্ডনের কনওয়ে হলে একটি সভার আয়োজন করে। তাঁর মৃত্যুর মাত্র এক বছর পরই মানুষ তাঁর স্মরণে জড়ো হয়েছিল। আপনারা জানেন, ১৯৭৭ সালে ঢাকায় এ ধরনের সভা করা ছিল অসম্ভব। সম্ভাব্য অতিথিদের অনেকে তখন কারাগারে। আমাকে কনওয়ে হলে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য বলা হলো। সাংবাদিক হিসেবে এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। আমার স্বাধীনতা ও বস্তুনিষ্ঠতা কি প্রশ্নের মুখে পড়বে? ওই সময়ে আমি সভায় অংশগ্রহণকারীদের কাছে শেষ অবধি আমন্ত্রণ গ্রহণ করার বিষয়টি ব্যাখ্যা করি। সেখানে বলা কিছু কথা আজও অর্থপূর্ণ বলে মনে করি।
কনওয়ে হলের মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি সেদিন বলেছিলাম, ‘লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতার মাঝে আমি একটা পার্থক্য টানি। বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে কোনো আপস অথবা নিয়ন্ত্রণ চলবে না, নির্ভুলতার চেষ্টা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রেও কোনো আপস হতে পারে না, তবে আমি মনে করি, কিছু প্রশ্নে ‘নিরপেক্ষতা’ বলতে কিছু নেই। আর এ কারণে আমি তাহের স্মৃতি কমিটির আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি। গোপন বিচার ও গোপন ফাঁসির প্রশ্নে আমি নিরপেক্ষ নই। আমি এসবের নিন্দা জানাই। যার দ্বারাই সংগঠিত হোক, সে ফ্রাঙ্কো, স্ট্যালিন বা জেনারেল জিয়াউর রহমান যে-ই হোক, তাতে কিছু যায় আসে না। এক বছর আগে হঠাৎ করেই আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম, মামলাটি সবে শুরু হতে যাচ্ছে। মামলাটিতে মৃত্যু, বিশ্বাসঘাতকতা ও বিয়োগান্ত অবিচারের নানা মাত্রা ছিল...আমি জাতিগতভাবে আমেরিকান। আর আমেরিকার ইতিহাসেও অসাধারণ বিচারিক বিচ্যুতির এমন সব আলোচিত ঘটনা ঘটেছে, যেখানে আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘রাষ্ট্রের প্রয়োজনে’ অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আমেরিকার তেমন ঘটনার মধ্যে রোসেনবার্গদের, জো হিল এবং সাচ্চো ও ভ্যানজেত্তির ফাঁসির স্মৃতি সবচেয়ে জ্বলজ্বলে। আজ নিকোলা সাচ্চো ও বার্তোলোমেও ভ্যানজেত্তির কথা মনে পড়ছে। এই দরিদ্র অভিবাসীদ্বয় উন্নত জীবনের আশায় ইতালি ছেড়ে আমেরিকায় এসেছিলেন। কিন্তু তাঁদের অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়। আজ সাচ্চো ও ভ্যানজেত্তির নাম বললাম, কারণ তাঁদের ফাঁসির ৫০ বছর পর গত মাসে [জুন ১৯৭৭] ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের গভর্নর মিচেল ডুকাকিস ঘোষণা করেন, অঙ্গরাজ্যের সরকারি দৃষ্টিতে সাচ্চো ও ভ্যানজেত্তি নিরপরাধ। তাঁদের ভুলভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। গভর্নর আরও ঘোষণা করেন, প্রতিবছর ওই দুই ব্যক্তির মৃত্যুবার্ষিকীতে অঙ্গরাজ্যের জনগণ ‘সাচ্চো ও ভ্যানজেত্তি স্মৃতি দিবস’ পালন করবে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির কাষ্ঠে যা ঘটেছিল, তা ঠিক করতে বাংলাদেশের জনগণের এত দীর্ঘ সময় লাগবে কি না আমার সন্দেহ।’
এত সময় লাগবে, এটা কে জানত? সাচ্চো ও ভ্যানজেত্তির ক্ষেত্রে ৫০ বছর পেরোলেও এখানে এখনো পার হয়নি। যা হোক, আবু তাহেরের মৃত্যুর প্রায় ৩৫ বছর পার হয়েছে। বিষয়টি ন্যায়সম্মতভাবে মোকাবিলার সময় এসেছে। তাহের ও তাঁর সহকর্মীরা ‘বিচারের’ মুখোমুখি হয়েছিলেন—এ কথাও কি বলা যায়? ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ‘বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনাল-১’ স্থাপন করা হয়েছিল। আমি সেখানে ছিলাম। কারাগারের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কথিত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান কর্নেল ইউসুফ হায়দারের মতো বহু লোককে কারাগারের ফটকের ভেতর ঢুকতে লোকদের দেখেছিলাম।
তারা তাদেরকে লুকাতে আর মুখ ঢেকে রাখতে চেষ্টা করতে থাকলেও আমি তাদের ছবি তুলেছিলাম। তাৎক্ষণিক আমার ক্যামেরা ও ফিল্ম কেড়ে নেওয়া হয় এবং আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কোন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়, কখনো আমাকে জানানো হয়নি।
তবে এই ‘ভুতুড়ে’ ট্রাইব্যুনালের কোনো নথিপত্র আজ পাওয়া যায় না। তারা যা করেছে, তা লুকাতে চেষ্টা করছিল। মামলার নথিপত্র কোথায় গেল, তা শুধু জর্জ ওরওয়েলই হয়তো আমাদের ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
কর্নেল তাহেরের বিরুদ্ধে যারা এই অপরাধ করেছে, তারা এখানে হাজির হওয়া মানুষদের মতো নয়। তারা কেউ চায়নি, তাদের কৃতকর্ম কেউ ভবিষ্যতে মনে করবে কিংবা মনে করবে তারা কারা ছিল। নিজেদের অপরাধ গোপন রাখতে চেয়েছিল তারা। এই আদালত দেখেছে কোনো নথি নেই। নেই কোনো ট্রান্সক্রিপ্ট। মামলার কোনো ‘দাপ্তরিক নথিপত্র’ নেই। শুরু থেকেই তারা সবকিছু গোপন করতে চেয়েছিল।
সেই সব ‘ক্ষমতাবান মানুষেরা’ ভাবেনি এই ইতিহাস হারিয়ে যাবে না, এটি প্রকাশিত হবে। আমরা এখানে স্মরণ করতে এসেছি। আর বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট এখন স্মরণের এই প্রক্রিয়ার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে।
তখন কী ঘটেছিল সেই কঠিন সত্য উদ্ঘাটনের দুঃসাধ্য কাজ করছেন এই আদালত। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের আদালতে হাজির হওয়ার অনুরোধ এবং অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আমি আমার হলফনামায় ইঙ্গিত করেছিলাম, যা ঘটেছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিচার’ বলা যায়, এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। এটা এমনকি ‘লোকদেখানো বিচারও’ নয়। কারণ সামরিক সরকার এটাকে লোকচক্ষুর সামনে আনতে চায়নি। আইনসম্মতভাবে তৈরি আদালত ও মুক্ত গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে স্বাধীন বিচার হলে তার যে প্রতিক্রিয়া হবে সেই সম্পর্কে জেনারেল জিয়ার সরকার শঙ্কিত ছিল।
গত ৩১ জানুয়ারির হলফনামায় আমি জেনারেল মোহাম্মদ মঞ্জুরের সঙ্গে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুরুর এক মাস আগে তাঁর ক্যান্টনমেন্টের কার্যালয়ে কীভাবে সাক্ষাৎ করেছি, তার কিছু বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছি। ওই সময় মঞ্জুর ছিলেন চিফ অব জেনারেল স্টাফ। মঞ্জুরের সঙ্গে আমার কয়েক বছরের জানাশোনা। মঞ্জুর কীভাবে তাহেরের কথিত বিচারের বিরোধিতা করেছেন, তা আমি বর্ণনা করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছেন, কথিত বিচার-প্রক্রিয়া বন্ধ করতে সবকিছু করছেন।
স্পষ্টত মঞ্জুর সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছিলেন। কিছুদিন পরই তারা মঞ্জুরের পেছনে লাগে। তাহেরের ফাঁসির পর তিনি আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য দূত পাঠান। ওই সময়ে আমি ইংল্যান্ডে থাকতাম। তিনি আমাকে জানাতে চেয়েছিলেন যে, কর্নেল ইউসুফ হায়দারের কথিত ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরুর আগেই জেনারেল জিয়া ব্যক্তিগতভাবে তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
জানুয়ারির শেষে মওদুদ আহমদ (তাঁকে আমি তরুণ মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে জানতাম) আমার লেখা উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে বেশ কিছু বক্তব্য তুলে ধরেন, যার প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে ভুলভাবে উপস্থাপিত। তরুণ মওদুদকে যে আদর্শের ধারক বলে জানতাম, তা থেকে তিনি অনেক দূরে সরে গেছেন। ক্ষমতার সড়কে এটা বিরল নয়। তবে তাঁর একটি দাবি এই আদালতের বিচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মওদুদ আহমদ দাবি করেন, জিয়াউর রহমান ৪৬ জন ‘প্রত্যাবাসিত’ কর্মকর্তাকে জমায়েত করেছিলেন তাহেরকে কী সাজা দেওয়া উচিত, তা আলোচনার জন্য। এটা সবার জানা যে, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো সামরিক কর্মকর্তাই বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে কাজ করতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু জেনারেল জিয়ার প্রত্যাবাসিত কর্মকর্তাদের এই জমায়েত তাহেরের ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছে। তাঁরা তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়েছিলেন।
মওদুদ দাবি করেছেন, তাঁর দাবির সূত্র জেনারেল জিয়া নিজেই। তাহেরের বিচারের রায় কী হবে, সে ব্যাপারে জেনারেল জিয়া ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—এই জায়গাতে মওদুদের বর্ণনার সঙ্গে জেনারেল মঞ্জুরের বর্ণনা মিলে যায়। এরপর তিনি প্রায় ৫০ জন সামরিক কর্মকর্তাকে তাঁর সিদ্ধান্তের বৈধতা দিতে বলেন।
এ ব্যাপারে আমরা কী বলতে পারি? এটাকে ‘আইনসম্মত কার্যপ্রণালি’ বলার জন্য কত দূর পর্যন্ত কল্পনাশক্তির প্রসারণ ঘটাতে হয়? কোন কর্তৃত্ব অথবা আইনের বলে অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছু সেনাসদস্য বিচারক ও জুরির ভূমিকা নিজেদের হাতে তুলে নিলেন? সামরিক স্বৈরতন্ত্র নিজেরাই নিজেদের নিয়ম রচনা করে আর এ ক্ষেত্রে ঠিক তা-ই ঘটেছে।
১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকের পেছনে যা ঘটেছে, তাকে সবচেয়ে যথাযথভাবে বর্ণনার পথ আমার মনে হয় স্বীকার করে নেওয়া যে, যা ঘটেছিল, তা আসলে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের আয়োজনে একধরনের ‘বিনা বিচারে হত্যা’। কোনো বিচার হয়নি। বিচারের ছদ্মবেশ তৈরি করা হয়েছিল—বিচারের পোশাকি চেহারা দেওয়া হয়েছিল। তথাপি দ্রুত ছদ্মবেশটাও খসে পড়ল। যদি এটা বিচারই হয়, তবে তা কেন কোনো আদালতে হলো না? কারাগারে অনুষ্ঠিত হলো। কী ধরনের বিচার হয় কারাগারে? উত্তর হলো, সেই ধরনের বিচার, যা বিচারই নয়।
কর্নেল তাহেরের মেয়ে জয়া তাহেরের কাছে তাঁর বাবার প্রতি যা ঘটেছে, তার চরিত্র ‘হত্যাকাণ্ডের’। সেই হত্যাকাণ্ডের কার্যসাধন পদ্ধতি ছিল বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনাল নম্বর ১। হয়তো জয়া তাহেরের এই মত সত্যের সবচেয়ে কাছাকাছি।
তাহেরের মামলাটিকে সৈয়দ বদরুল আহ্সান ‘হত্যা ছাড়া কিছু নয়’ বলে অভিহিত করেছেন। ২০০৬ সালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘কর্নেল আবু তাহের সম্পর্কে এবং তাঁকে মেরে ফেলার (এটা হত্যা ছাড়া কিছুই নয়) ভয়ংকর কায়দা সম্পর্কে [লিফশুলজ] যখন কথা বলেন, তখন তিনি আমাদের মনের ভেতরকার সেই বেদনা ফিরিয়ে আনেন, সে বেদনা হয় আমরা খুব সযতনে এত বছর ধরে ঠেলে সরিয়ে রেখেছি, নয়তো এই দেশে অসত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে আমাদের তা অনুভব করতে দেওয়া হয়নি।’ (সৈয়দ বদরুল আহ্সান, ‘কর্নেল তাহের, লিফশুলজ অ্যান্ড আওয়ার কালেকটিভ গিল্ট’, দ্য ডেইলি স্টার, ২৬ জুলাই ২০০৬)।
বদরুল আহ্সানের এই মত অংশত সঠিক, তবে পুরোপুরি নয়। তাহেরের মামলাকে যখন তিনি ‘হত্যা ছাড়া কিছু নয়’ বলেন, তখন তাঁর বক্তব্যে ঘটনাটি যে পূর্বপরিকল্পিত কিংবা তাহের অনুমান করতে পেরেছিলেন—এই দিকগুলো বাদ পড়ে যায়। মওদুদ আহমদ আর যা-ই করুন না কেন, তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে জেনারেল জিয়া পূর্বপরিকল্পিত কায়দায় এই খুনসূচক কাজটি করেছিলেন। আর আইনের অধীনে থেকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের তাৎপর্য বিরাট।
এর মানে হলো, আপনি কী করেছেন, তা বুঝেশুনে করেছেন আর সেই অনুযায়ীই আপনার অপরাধকর্মের পরিকল্পনা করেছেন। অপরাধ-সম্পর্কিত আইনে পূর্বপরিকল্পিত খুন প্রথম স্তরের খুন হিসেবে গণ্য। (মওদুদ আহমদ কেন এই ব্যক্তির সহযোগী ছিলেন এবং তাঁর সরকারের মন্ত্রী ছিলেন সেই প্রশ্ন অন্যত্র আলোচনা করা যাবে)।
২০০৬ সালের প্রবন্ধে বদরুল আহ্সান বাংলাদেশে ‘অসত্যের দীর্ঘ যাত্রা’র কথা বলেছেন। পাঁচ বছর আগেকার পরিস্থিতির আলোকে তাঁর এ বক্তব্য সন্দেহাতীতভাবে সঠিক। তবে, এখন নতুন দশার সূচনা হয়েছে বলে মনে হয়। সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীকে সংবিধান-পরিপন্থী ঘোষণার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট পরপর দুটি সামরিক সরকার কর্তৃক তাদের অতীত কর্মকাণ্ড সব ধরনের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে অকার্যকর করে দিয়েছেন। আদালত দৃঢ়ভাবে বেশ কিছু বিষয় তুলেছেন, যা এক নতুন ও চ্যালেঞ্জিং সময়ের একদম কেন্দ্রীয় বিষয়।
এই সমাজের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এই আদালত; পরিবর্তনের সম্ভাব্য এক উপাদানও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ারেন কোর্ট বর্ণবৈষম্যের দ্বার ভেঙে ফেলেছিলেন—হয়ে উঠেছিলেন মার্কিন সমাজ পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসন ও স্বৈরতন্ত্রের ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছে বাংলাদেশ। আসলে অলঙ্ঘনীয় সংবিধান আর ‘আইনের শাসন’ এর কোনো অর্থ যদি থেকে থাকে, তাহলে বেসামরিক আদালতকেই হয়ে উঠতে হবে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর, সত্যিকারের কর্তৃত্বধারী।
স্বল্পসংখ্যক সামরিক কর্মকর্তা মিলে আর কোনো দিন যেন নিজেদের ‘বিচারক ও জুরি’ বানিয়ে নিতে না পারেন আর বেসামরিক আইনি কর্তৃপক্ষকে ডিঙিয়ে যেতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতেই হবে। এটা কেন্দ্রীয় বিষয়। প্রশ্নটা কেবল ‘শাসনের শাসনই’ চূড়ান্ত হবে কি না, তা-ই নয়, বরং বিচার বিভাগ তার সর্বোচ্চ অবস্থানের সুরক্ষা দেওয়ার শক্তি অর্জন করতে পারবে কি না সেটাও। পরিষ্কারভাবেই সে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট।
এই দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আবারও বিপন্ন হতে দিতে না চাইলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও অন্যান্য সামরিক স্বৈরতন্ত্রের ‘মানসিকতা’ ভাঙতেই হবে। গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে মজবুত করার ক্ষেত্রে আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী উল্টে ফেলে এক তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে—সশস্ত্র বাহিনীর কাছে দ্ব্যর্থহীনভাবে স্পষ্ট করা হয়েছে যে তারা যদি আবার কখনো তাদের সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং সশস্ত্র স্বৈরতন্ত্র কায়েম করে, তাহলে সংবিধান ও ‘আইনের শাসন’ লঙ্ঘনের জন্য তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
তাহেরের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সামনে চ্যালেঞ্জটি হলো, ‘বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনাল নম্বর-১’ কর্তৃক অনুসৃত কর্মপদ্ধতি কি কোনোভাবে আইনসম্মত কিংবা সাংবিধানিক কি না, তা নির্ণয় করা। যদি তা না হয়, তাহলে এর চরিত্র যথাযথভাবে নির্ধারণ করা উচিত।
তাহেরের পরিবারের জন্য এটা এক অপরিহার্য ব্যাপার। সংবিধানের আওতায় আইনি ভিত্তি নেই এমন এক ট্রাইব্যুনাল, যার দলিলপত্রাদি ‘নিরুদ্দেশ’ তার ‘রায়’কে কি টিকে থাকতে দেওয়া হবে, নাকি ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গোপন আইনি ব্যবস্থা উল্টে যাবে—অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষিত হবে? তাহেরের স্ত্রী ও তিন সন্তানের কাছে এটাই গুরুত্বের। বাকি সব বাড়তি পাওনা।
১০ দিন আগে তাহেরের মেয়ে জয়া আমাকে একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে লিখেছেন, ‘অধীর হয়ে বসে আছি রায়ের প্রতীক্ষায়।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘রায়ের ফলে বাবাকে ফিরে পাব না’ কিন্তু তাঁর বাবার হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলো তাতে থামবে—এত অল্প বয়সে তাঁকে ও তাঁর দুই ভাইকে হারাতে হয়েছে তাঁদের বাবা। অভিযোগ থেকে বাবার মুক্তি এবং যেমন মহান মানুষ ছিলেন তিনি, তেমন মানুষ হিসেবে স্বীকৃত হলে তাঁদের আত্মায় কিছুটা শান্তি আসবে। বিচারপতি শামসুদ্দিন ও বিচারপতি হোসেন, আপনারা তা সম্পাদন করলে একটি অত্যন্ত মহৎ ও উত্তম কাজ সম্পাদন করবেন।
আজ থেকে ৩৫ বছর আগে এ মাসেই আমি ‘আবু তাহেরস লাস্ট টেস্টামেন্ট’ লেখাটা শেষ করি। তখন ১৯৭৭-এর বসন্তকাল। আমি তরুণ। বয়স মাত্র ২৬। তাহেরের বিচার এবং বাংলাদেশ থেকে আমি বিতাড়িত হওয়ার পর এক বছরও পেরোয়নি। আমি ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজে বাস করছি। শেষ পৃষ্ঠা টাইপ করার সময়ের কথা মনে পড়ছে। লেখাটি আরেকবার পড়লাম। তারপর এক কপি খামে ভরলাম।
আমি তখন ক্লেয়ার স্ট্রিটের ছোট এক বাড়িতে থাকতাম। মনে পড়ছে, আমি হাঁটতে হাঁটতে কাছের ছোট এক ডাকঘরে গেলাম। ডাকঘরকর্মী আমার পরিচিত। প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্ট্যাম্প কিনলাম আর দুটি এয়ার মেইল স্টিকার। খামের গায়ে প্রেরকের নাম লিখলাম কৃষ্ণা রাজ। তিনি বোম্বের ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলির (ইপিডব্লিউ) সম্পাদক। তিনি লেখাটি ছাপবেন কি না, সংশয় ছিল। ডাকবাক্সে গলিয়ে দিলাম খামটা।
১৯৭৭ সালের আগস্টে ইপিডব্লিউ-এর বিশেষ সংখ্যায় লেখাটি ছাপা হলো। কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশবিষয়ক এক বইয়ের অংশ হয়ে গেল। বাংলাদেশে বইটি এক দশকের অধিক কাল নিষিদ্ধ থাকল। আমার প্রথম অভিপ্রায় ছিল, বাংলাদেশে পাণ্ডুলিপিটি প্রকাশ করা। তবে স্পষ্টতই তা সম্ভব ছিল না।
অবশ্য তাহেরস লাস্ট টেস্টামেন্ট লিখতে আমাকে বাধ্য করেছে গুরুত্বপূর্ণ দুই ঘটনা। যা যা ঘটেছে, সে বিবরণ কীভাবে লেখা যায়—এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করছিলাম। তখন ঘটনা দুটি ঘটল। বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে তাহেরের গোপন সাক্ষ্যের কপি আমার হাতে এল। লন্ডন থেকে কোনো এক ব্যক্তি ফোন করে জানিয়েছিলেন, ঢাকা থেকে আনা একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল তাঁরা আমাকে চিঠিতে পাঠাবেন। দলিলটি পাওয়ার পর পড়লাম। খুব আলোড়ন বোধ করলাম। অসীম সাহসী ও নিষ্ঠাবান এক মানুষের এক অসাধারণ বিবৃতি।
তারপর যা ঘটল, তাতেই আমার সংশয় কেটে গেল। তাহেরের স্ত্রী লুৎফা অক্সফোর্ডে অবস্থানরত তাঁর ভাইকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। সেটির অনুবাদ পেলাম। এটা আমার পড়া সবচেয়ে সুন্দর চিঠিগুলোর অন্যতম।
লুৎফার সে চিঠির অংশবিশেষ পাঠ করার মাধ্যমে আদালতে আমার সাক্ষ্য শেষ করতে চাই। আজ লুৎফা এখানে উপস্থিত আছেন।
‘প্রিয় বড় ভাইজান,
আপনাকে আজ কি লিখব, ভাবতে পারছি না। তাহের আর আমার সঙ্গে নেই—এটা আমি হূদয়ঙ্গম করতে পারি না। ভাবতে পারি না, আমার জীবনসঙ্গী চলে যাওয়ার পর আমি কিভাবে বাঁচব। আমাদের সন্তানেরা মনে হয় বিরাট সমস্যায়। এত ছোট শিশুরা কিছুই বোঝে না। নিতু বলে, ‘‘বাবা, তুমি মরে গেলে কেন? তুমি যদি এখানে থাকতে তাহলে তুমি বেঁচে থাকতে।”
সন্তানেরা বোঝে না তারা কি হারিয়েছে। প্রতিদিন তারা কবরে যায় ফুল নিয়ে। কবরে ফুল দিয়ে তারা প্রার্থনা করে, “আমি যেন বাবার মতো হই।” যিশু বলে, বাবা চাঁদের দেশে ঘুমায়...
আমি খুব ভাগ্যবতী...সে যখন বেঁচে ছিল, তখন আমাকে বাঙালি মেয়েদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছিল। তাঁর মৃত্যুতে সে আমাকে দিয়েছে বিশ্বের সম্মান। এত অল্প সময়ে আমার সব চাওয়া পূর্ণ করল সে। তাহেরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোদ্ধারা যখন আমাকে সমবেদনা জানায়, তখন আমি ভাবি: তাদের মাঝে বেঁচে আছে আমার তাহের, আর বেঁচে থাকবে তাদের মাঝেই। তারা আমার আপন মানুষের মতোই। আমি গর্বিত। সে মৃত্যুকে জয় করেছে। মৃত্যু তাঁকে পরাজিত করতে পারেনি...
যদিও চারপাশে শুধুই আঁধার আর আমি খুঁজে পাচ্ছি না নোঙর, হারিয়ে গেছি আমি, তবু জানি, এই দুর্দিনই শেষ কথা নয়। এরও আছে অবসান। যেদিন দেখব, তাহেরের আদর্শ হয়েছে সবার আদর্শ, সেদিন শান্তি পাব। আমার দুঃখ, সেই দিন যখন আসবে, তখন তাহের সেখানে থাকবে না।
আপনার আদরের,
লুৎফা’
১৪ মার্চ ২০১১
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব ও এ এইচ এম ইয়াসিন
লরেন্স লিফশুলজ: মার্কিন লেখক ও সাংবাদিক।
৯| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:০৫
সম্রাট হুমায়ুন বলেছেন: কুত্তালীগ কতজনকে মারছে জানস জ্বারজ কোথাকার?
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:০৭
াহো বলেছেন:
পাক সেনারা আমাদের ভাই, তারা জেহাদী চেতনায় উজ্জীবিত – মতিউর রহমান নিজামী – দৈনিক সংগ্রাম ৩রা আগস্ট, ১৯৭১
১০| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:২১
রাহি বলেছেন: ৭৫ এর মীরজাফর (জিয়া)
১১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:২৪
সম্রাট হুমায়ুন বলেছেন: মনে হচ্ছে তুমি যুদ্ধশিশু। বাপের উপর বেজায় রাগ। তোমার মা কত নাম্বার সেক্টরে ধর্ষিত হইছিল? দেখি পাকি গিয়ে তোমার বাপরে খুজে বের করা যায়নি.....
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:২৯
াহো বলেছেন:
জয় বাংলা স্লোগানে পূর্ব পাকিস্তানের আকাশ বাতাস কলুষিত হয়েছে। ধর্ম নিরপেক্ষদের ধর্ম বিরোধী অত্যাচার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানে রাজাকারদের ক্ষূদ্র অস্ত্র দিয়ে গুলী চালানোর ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে – দৈনিক সংগ্রাম – ১-৫ জুলাই, ১৯৭১
১২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৩৭
বিদ্রোহী কান্ডারী বলেছেন: জিয়া বেচে থাকলে আজ বেঈমানগুলো বাংলার নদী, মাটি, মানুষকে রক্তাক্ত করার সাহস পেতো না।
একজন নির্বাচিত ভোটচোর, বেঈমান, দূর্ণীতিবাজ, বিদেশী দালাল, জালিমের চেয়ে জিয়ার মত অভ্যুত্থানকারী সৈনিক অনেক ভালো।
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৪৫
াহো বলেছেন:
১৯৭৭ সালের সেই ‘বিদ্রোহের’ সময় আসলেই কী ঘটেছিল, আজ ৩০ বছরের বেশি সময়ের পরও সেটা এক জ্বলন্ত প্রশ্ন হয়ে আছে। অনেকে আমার সঙ্গে দ্বিমত করে বলেন, এটা আদতে কোনো বিদ্রোহই ছিল না। আসলে এটা ছিল সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে জিয়ার শত্রুদের ‘টোপ দিয়ে বের করে আনার’ গোয়েন্দা অভিযান। আনাড়ি হাতে অনেক ছড়িয়ে জাল পাতা হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, দেশের সামরিক বিচারের বিধিমালার লঙ্ঘন ঘটিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাইরে অজস্র মানুষের প্রাণ হরণ করা হয়েছিল।
২০০৬ সালে আমি প্রয়াত মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে ঢাকায় এক নৈশভোজে মিলিত হই। দুজন বিখ্যাত সাংবাদিক ও মইন চৌধুরীর বন্ধু সাবেক এক সেনা কর্মকর্তাও সেখানে ছিলেন। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি, লন্ডনে (বাংলাদেশ দূতাবাসের) সামরিক অ্যাটাশে থাকার সময় থেকে আমি তাঁকে চিনি। তখন প্রায়ই আমরা নৈশভোজে বসতাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তাঁর কাজ হলো আমার ওপর চোখ রাখা। আমিও বললাম যে ব্যাপারটা পারস্পরিক। তা হলেও মূলত তিনি আমার কাছ থেকে রাজনীতি ও ইতিহাস বিষয়ে কী পড়বেন, সে বিষয়ে পরামর্শ চাইতেন। আমার কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁকে বই ধার দেওয়া।
২০০৬ সালের ওই সন্ধ্যায় আলোচনা ১৯৭৭ সালের বিদ্রোহের ঘটনাবলি প্রসঙ্গে গড়াল। সে সময় জিয়ার অনুরোধে মইন লন্ডন থেকে ফিরে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হয়ে বসলেন। সিদ্ধান্তটা বিচক্ষণোচিত ছিল না।
সেই সন্ধ্যায় তিনি আমাদের বলেছিলেন, ২০০ জনের মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন তাঁর হাত দিয়ে হয়েছিল; কিন্তু প্রকৃতভাবে মোট কতজন সেনাকে হত্যা করা হয়েছিল, তা তিনি জানেন না। তাঁর হিসাবমতে, তাঁদের সংখ্যা শত শত। ওই সব মানুষের কেউই সুষ্ঠু বিচার পাননি বলে সেই সন্ধ্যায় মইন স্বীকার করেছিলেন। সেনাদের আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার থাকলেও তাঁদের তা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল আরজি করার অধিকারও ছিল। সেই অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল তাঁদের। এসব ঘটনায় নিজের ভূমিকার জন্য তিনি অনুতাপ প্রকাশ করেন।
সেই নৈশভোজের অল্প কিছুদিন পর আমি ঢাকায় তাঁর বাসায় দেখা করতে চেয়ে ফোন করি। আমাদের মধ্যে আরও বিশদ আলোচনা হয়। নৈশভোজে তিনি যা বলেছিলেন, তা-ই সেদিন আরও বিস্তারিতভাবে জানান। চলে আসার সময় আমি নিঃসন্দেহ হয়েছিলাম, ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালের সেই বিপর্যয়ের সময় সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে কৃতকর্মের জন্য তিনি সত্যি সত্যিই অনুতপ্ত।
সুতরাং, এখানে আমরা সেনাবাহিনীর সাবেক অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেলকে পেলাম। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে ফাঁসিতে অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা সব সেনাকে সেনাবাহিনীর বিচারবিধি অনুযায়ী প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ওপর তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। হুকুমদাতার ভূমিকায় ছিলেন জেনারেল জিয়া। মইন বলেছেন, জিয়া যা কিছু করেছেন, নিজের ইচ্ছামাফিক করেছেন।
আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের ইতিহাসের এই কালো অধ্যায়ের বিষয়ে সত্য ও ন্যায়বিচার কমিশন গঠন করা হলে জেনারেল মইন স্বেচ্ছায় সেখানে সাক্ষ্য দিতে আসতেন। আমার মতে, তিনি খোলামনে তাঁর ভূমিকার দায়দায়িত্ব স্বীকার করতেন এবং অনুশোচনা প্রকাশ করতেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসের এই অধ্যায়ের বিষয়ে আলোকপাত করেছেন এমন লেখক হাতে গোনা। আমার জানামতে, আতাউস সামাদই প্রথম এই গণপ্রাণদণ্ডের বিষয়ে লিখেছিলেন। তবে সবচেয়ে বিশদ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিলেন জায়েদুল আহসান পিন্টু। ঘটনার ২০ বছর পর ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে ভোরের কাগজ-এ তাঁর প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা তিনি আরও বিস্তৃত করে প্রকাশ করেন তাঁর বই একটি সেনাঅভ্যুত্থানের রহস্য: ফাঁসির দড়িতে সেনা।
জায়েদুল হাসান পিন্টু সারা দেশ ঘুরে বিভিন্ন জেলে যাঁদের প্রাণ হরণ করা হয়েছিল, সেই সব সেনার তালিকা সংগ্রহ করেন। তিনি সে সময় সেনা কমান্ডের সঙ্গে জড়িত অনেক উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারও নেন। কিন্তু এঁদের কেউ নিহত সেনাদের প্রকৃত সংখ্যাটি বলতে পারেননি। যা ধারণা করা হয়েছিল, সেটাই ঘটেছে। অনেকগুলো ঘটনা থেকে মনে হয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং সযত্নে সত্য আড়াল করার বন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছিল। তাই সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের ভাষ্য ও ঘটনার পরপরই তৈরি করা তালিকার মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই অসংগতি মিলতে থাকে।
যেমন: আহসানের কাছে কুমিল্লা কারাগারের এক জল্লাদ দাবি করেন, তিনি ৯৩ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের কাছে কোনো নথিপত্র নেই। আহসানের মতে, ১৯৭৭ সালের ২৬ অক্টোবর আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ বিভাগ (আইএসপিআর) থেকে প্রচারিত বক্তব্যে ‘বগুড়া সেনাবিদ্রোহের’ সঙ্গে জড়িত ৫৫ জন সেনাকে ফাঁসি দেওয়ার কথা বলা হলেও বগুড়া কারাগারে মাত্র ১৬ জনের নাম পাওয়া যায়। আহসানকে বলা হয়েছিল, বাকিদের হত্যা করা হয়েছিল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে। কিন্তু রাজশাহী কারাগারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সেখানে কোনো নথিপত্র নেই।
আহসানের ভাষ্যমতে, ১৯৭৭ সালে দুই হাজারেরও বেশি সেনাকে ৭ থেকে ২৬ অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ‘বিচারের মুখোমুখি’ করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়, বেশির ভাগ বিচার শুরু হয়েছিল ৭ অক্টোবর এবং প্রাণদণ্ড শুরু হয় ৯ অক্টোবর। এ দুই দিনের মধ্যে এসব মানুষকে নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করার কথা। আহসান আমাদের আরও জানান এবং জেনারেল মইনও আমাকে বলেছিলেন, এসব ছাড়াও জেনারেল জিয়া ৭ অক্টোবর নতুন বিধিমালা জারি করেন, যাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আত্মপক্ষ সমর্থনে আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া কিংবা প্রাণদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রহিত করা হয়। সামরিক বাহিনীর জন্য নির্ধারিত বিচারপ্রক্রিয়া লঙ্ঘিত হয় এতেও।
অবধারিতভাবে, সে সময় সামরিক বিধিমালার অধীনে যথাযথভাবে গঠিত কোনো ট্রাইব্যুনাল বাস্তবত ক্রিয়াশীল ছিল না। ১৯৭৭-৭৮ সালে প্রাণদণ্ডের শিকার হওয়া সেনাদের সংখ্যাটি আহসান পেতে পেরেছিলেন সেই সময়ে ঢাকার নবম ডিভিশনের অধিনায়ক জেনারেল মীর শওকত আলীর কাছ থেকে। নিহত সেনাদের বিষয়ে এটাকেই সর্বনিম্ন মাত্রা বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। এই সংখ্যাটি হলো এক হাজার ১৩০। আসল সংখ্যাটি আসলে কত? কেউ জানে না। আহসানের বিশ্বাস, শত শত সেনাসদস্যকে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছিল কোনো প্রমাণ না রেখে। মীর শওকতের দেওয়া সংখ্যার বাইরেও যেমন অনেকে থেকে যেতে পারেন, আবার সবাই হয়তো এর অন্তর্ভুক্ত হতেও পারেন।
আবু তাহেরের ‘বিচার’টি যদি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা ‘জাল, মিথ্যা ও বানোয়াট’ ঘোষিত হয়ে থাকে, তাহলে এটা কী?
হয়তো এম কে আনোয়ার অথবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে আমাদের জ্ঞান দিতে পারেন। তাঁরা কি বলবেন, এই সরকার দ্য সানডে টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সন ম্যাকব্রাইড ও লরেন্স লিফশুলজকে ভাড়া করেছে জেনারেল জিয়াউর রহমানের মর্যাদাহানি করার জন্য?
আনোয়ার ও আলমগীর অভিযোগ করবেন কি, ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় ‘বাংলাদেশ এক্সিকিউশনস: এ ডিসক্রিপান্সি’ (১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮) প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের যে কর্মকর্তা বিবেকের তাড়নায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অভ্যন্তরীণ নথি ফাঁস করেছিলেন, তিনিও ভাড়া করা দালাল ছিলেন? অথবা সেই ১৯৭৮ সালে এর পেছনে কোনো সংস্থা কাজ করেছিল?
সমস্যা এটাই যে সামগ্রিক কালপঞ্জি আনোয়ার ও আলমগীর সাহেবের অভিযোগের যুক্তিকাঠামোর পক্ষে ঠিকমতো যাচ্ছে না। কেন? কারণ, গণহারে প্রাণদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ প্রকাশিত হয়েছিল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে, ১৯৭৭-৭৮ সালে। তাহলে জনাব আলমগীর, ৩০ বছর আগে এসব মানুষ কীভাবে জিয়াউর রহমানের মর্যাদাহানির উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয়েছিলেন?
আনোয়ার কবীর নির্মিত শক্তিশালী প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে রক্তস্নানও কি আনোয়ার ও আলমগীর সাহেবের মতে বানোয়াট? প্রাণদণ্ডের সেই ‘মহাঝড়ের’ সময় নিখোঁজ সেনাদের পরিবারের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন কবীর। সেই সব পরিবার এখনো জানে না তাদের সন্তান, ভাই ও স্বামীদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল।
৫.
গত মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্টে সাক্ষ্য দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমি বাংলাদেশে আসি। তখন বেশ কিছু সংবাদপত্রের কর্মীদের সঙ্গে আমার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল। তাঁদের কাছে আমি একটা প্রশ্নই তুলতাম। আমি একদমই বুঝতে পারি না, এত বছর পেরিয়ে গেলেও মানুষের মধ্যে তাহেরের মামলা সম্পর্কে আগ্রহ এত তীব্র কেন, কেন তা থেকে এত কথা উঠে আসছে?
আলবত সুপ্রিম কোর্টের রায় মানুষের মধ্যে যে আলোচনা তুলেছিল এবং যে বাড়তি মনোযোগ কেড়েছিল, তাতে আমি খুশি হয়েছিলাম। ১৯৭৬ সালের মর্মান্তিক অবিচার এবং গুমরানো যন্ত্রণার এত মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার কথা আমার মনে বাজছিল। এসব স্মরণে রাখলে তাহেরের মামলার রায় উল্টে দেওয়া আসলেই ‘স্বপ্ন সত্যি হওয়ার’ মতো ঘটনা। তবু আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছিলাম না, এই মামলা কেন ও কীভাবে জনমানসকে আঁকড়ে ধরেছিল। ব্যাপারটা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। যাঁদেরই দেখা পেয়েছি, তাঁদের কাছেই আমি এর ব্যাখ্যা খুঁজেছি।
সবচেয়ে মনকাড়া জবাবটি আমি পেয়েছিলাম প্রথম আলোর বিরাট সভাঘরে মধ্যাহ্নভোজের সময়। পত্রিকাটির সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগ কর্মীই সেদিন সেখানে আলোচনার জন্য জমায়েত হয়েছিলেন। প্রথম আলোর তরুণ সাংবাদিকদের একজন ফারুক ওয়াসিফ যেভাবে প্রশ্নটির জবাব দিলেন, তাতে আমার চোখ খুলে গেল। তিনি বললেন, তাঁর প্রজন্মের চোখে বাংলাদেশের ইতিহাসজুড়ে ছিল অনেক অনেক ‘শূন্যস্থান’। যেসব আখ্যানের মধ্যে তিনি বেড়ে উঠেছেন, আবশ্যিকভাবেই সেসবের মধ্যে দেশটির ইতিহাসের অনেক পৃষ্ঠাই উধাও হয়েছিল। তাহেরের কাহিনি সেই ‘উধাও ইতিহাসেরই’ একটা যুগের ছবি তুলে ধরে।
সুপ্রিম কোর্টের সেই মামলার তলায় নিহিত অনিবার্য ইস্যুগুলোও ছিল সেই ‘উধাও’ ইতিহাসের অন্যতম। তাহেরের প্রাণদণ্ড এবং গোপন বিচার সমাধা করার জন্য যেসব বেআইনি পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে সেসবের পর্যালোচনা মানুষকে মনের দরজা খুলে অতীতের পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ দিয়েছে। মর্মবাণীর দিক থেকে সুপ্রিম কোর্টের এই অবদান কেবল একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় প্রদানের থেকে অনেক বেশি কিছু। আদালত এখানে ‘ইতিহাস পুনরুদ্ধারের’ কাজকে এগিয়ে দিয়েছে।
ওয়াসিফ আরও যা বলেছিলেন তা হলো, বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে তরুণতর প্রজন্ম স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত শ্রদ্ধা করার মতো খুব কম মানুষকেই দেখতে পায়। নিষ্প্রভ ব্যক্তিত্বরাই এ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ভারাক্রান্ত করে আছেন। ওয়াসিফের দৃষ্টিতে, পরিষ্কারভাবেই তাহের ছিলেন সেই মানুষ, যিনি এ দেশের ‘মঙ্গল করতে চেয়েছেন’। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এবং এর পরের দিনগুলোতে তিনি অটুট সাহস ও দারুণ নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছিলেন।
তাহের এখনো মহৎ আদর্শের প্রতীক হয়ে আছেন। তিনি সেই মানুষ, যিনি দরিদ্রদের মুক্তির জন্য ভয়কে জয় করেছিলেন। তাঁর মৃত্যু ছিল গরিমাময়। ১৯৭১-এ যেসব মহৎ আদর্শের জন্য তিনি লড়াই করেছিলেন, আমৃত্যু নিবেদিত ছিলেন সেসবের প্রতি। তরুণ প্রজন্ম যেমন মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে তাকাতে চায়, তিনি ছিলেন তেমনই এক মানুষ। আমার মনে হয় ওয়াসিফ এটাই বলেছিলেন। অনেকটা এ রকমই।
একটি শেষ কথা আমি বলতে চাই। তাহের হত্যাকাণ্ড বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের ২২ মার্চের রায়ের কাছে পৌঁছেছে যে পথ, সেই পথ রচনা করে গেছেন একদল সংকল্পবদ্ধ ব্যক্তি। তাহেরের প্রাণদানের ক্ষতির পর শুরুতে তাঁদের গভীর বেদনা সইতে হয়েছে, সইতে হয়েছে নিরন্তর নিঃসঙ্গতা। পরিণতিতে তাঁদের মনে জন্মেছে এক গোঁয়ার জেদ, দুই প্রজন্ম ধরে তা বহমান থেকেছে। আজ যা অর্জিত হয়েছে, তা কারও একার অবদান নয়। এই সফর শুরু করেছিলেন অল্প কিছু মানুষ, অন্যরা পথের মাঝে শামিল হয়েছেন। তাঁদের সংখ্যা অল্পই ছিল, কিন্তু তাঁরা ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।
আমি বিশ্বাস করি, আবু তাহেরের পক্ষে ন্যায়বিচারের জন্য যাঁরা বহু বছর ধরে সংগ্রাম করেছেন, তাঁরা বিখ্যাত নৃবিজ্ঞানী মার্গারেট মিড কথিত সেই পথেরই আগুয়ান প্রতিভূ, যা মানবসভ্যতার সামনে এগোবার একমাত্র পথ। ‘সন্দেহ রাখবেন না কখনো’ তিনি বলেছিলেন, ‘চিন্তাশীল, দায়বদ্ধ নাগরিকদের ছোট্ট একটি দলই দুনিয়াকে বদলে দিতে পারে। বাস্তবিকই, এটাই ঘটেছে সব সময়।’
[শেষ]
Click This Link
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৫৯
াহো বলেছেন: ১৯৭৭-৭৮ সালে প্রাণদণ্ডের শিকার হওয়া সেনাদের সংখ্যাটি আহসান পেতে পেরেছিলেন সেই সময়ে ঢাকার নবম ডিভিশনের অধিনায়ক জেনারেল মীর শওকত আলীর কাছ থেকে। নিহত সেনাদের বিষয়ে এটাকেই সর্বনিম্ন মাত্রা বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। এই সংখ্যাটি হলো এক হাজার ১৩০। আসল সংখ্যাটি আসলে কত? কেউ জানে না। আহসানের বিশ্বাস, শত শত সেনাসদস্যকে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছিল কোনো প্রমাণ না রেখে। মীর শওকতের দেওয়া সংখ্যার বাইরেও যেমন অনেকে থেকে যেতে পারেন, আবার সবাই হয়তো এর অন্তর্ভুক্ত হতেও পারেন।
Click This Link
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:০১
াহো বলেছেন:
লরেন্স লিফশুলজ
১৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:০৩
বিদ্রোহী কান্ডারী বলেছেন: ১৪ কোটি মানুষকে নিরাপদে রাখার জন্য যদি এইরকম শ দেড়েক বেঈমানকে মারতে হয় তাতে সমস্যা কি? জিয়ার সময় মানুষ সীমান্তে পাখির মত মরত না, ভার্সিটিতে ছাত্র মরতো না, মেয়েরা সরকারী দলের কর্মীদের দ্বারা ধর্ষিত হত না, বাংলাদেশ দূর্ণীতিতে ডুবে ছিলোনা, আমাদের নদীগুলোতে পানি ছিল।
কেউ যদি আমাদের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা, শিক্ষা, সুবিচার, খাদ্য, এসবের নিশ্চয়তা দিতে পারে আর বদলে হাজার খানেক বেঈমান ভারতীয় মারে আমার কোন আপত্তি নাই।
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:২৮
াহো বলেছেন:
বিদ্রোহী কান্ডারী বলেছেন
হাজার খানেক বেঈমান ভারতীয় মারে আমার কোন আপত্তি নাই
স্বাধীন বাংলা জিগিরের উদ্দেশ্য মুসলমানদের হিন্দু বানানো - দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদকীয়, ১০ অক্টোবর, ১৯৭১
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:২৯
াহো বলেছেন:
তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থকরা ইসলাম, পাকিস্তান ও মুসলমানদের দুশমন – গোলাম আযম – দৈনিক সংগ্রাম ১২ই আগস্ট, ১৯৭১
১৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৩৯
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: ++++++++++
১৫| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:২৬
হুমায়রা হারুন বলেছেন: ++++++++++++++++++
১৬| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৪৩
চায়না০০৭ বলেছেন: ++++++++++++++++++
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৪৭
াহো বলেছেন: জিয়াউর রহমান ১৯৭৬-এর ২৯শে নভেম্বরে প্রধান সামরিক শাসক সায়েমের বিরুদ্ধে ক্যু করে নিজে প্রধান সামরিক প্রশাসক
স্বাধীনতার সময় একজন মেজর থেকে ৩ বার পদোন্নতির পর ,১৯৭৫-এর ২৪শে অক্টোবরে সেনাপ্রধানকে পদচ্যুত করে উপসেনাপ্রধান থেকে সেনাপ্রধান।বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র ৪ মাস পর ,৭২এর ঘাতক দালাল আইন বাতিল।১৯৭৬-এর ২৯শে নভেম্বরে প্রধান সামরিক শাসক সায়েমের বিরুদ্ধে ক্যু করে নিজে প্রধান সামরিক প্রশাসক ,১৯৭৭এর ২১ শে এপ্রিলে আবার সায়েমকে সম্পূর্ণ কিকআউট করে রাষ্ট্রপ্রধান ,৩০শে আগস্ট সকল রাজনীতি নিষিদ্ধ ,৭৭ এ অবৈধ ঘোষিত ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অনুমতি।১৯৭৭-এর ২২ এপ্রিলে ১৯৭২ এর শাসনতন্ত্রের ৩৮ অনচ্ছেদের মূল পরিবর্তন এনে সংবিধানে সন্ত্রাস ,১৯৭৭-এর ৭ই মে তে খুনিদের ক'জনকে পদোন্নতি এবং পুনর্বহাল , ১৯৭৮-এর ৫ই এপ্রিলে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে ১৯৭১-এর ঘাতক দালালদের নাগরিকত্ব দানের জন্য মন্ত্রনালয়কে আদেশ , ৭৭-এর হ্যা না ভোট , ১৯৭৯-এর ৫ই এপ্রিল ৫ম সংশোধনীকে আইনে প্রণীত করে জেল ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দ্বার রুদ্ধ করতে বিষাক্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইন এবং নতুন নাগরিকত্ব আইনের আওতায় পাকিস্তানের পাসপোর্ট হাতে রাজাকার গোলাম কে দেশে ঢুকিয়ে এবং ইয়াহিয়ার মন্ত্রী গণহত্যার মাস্টার মাইন্ডার ,আব্বাসকে ৭৯তে জামাতের আমীর হতে দিয়ে ,দেশে মৌলবাদ এবং জামাতের স্বাধীনতা বিরোধী সকল কার্যকলাপকে সাংবিধানীক বৈধতা ,৭৫এর ৩১শে ডিসেম্বর ঘাতক দালাল আইন বাতিল করে ১১ হাজার যুদ্ধ অপরাধীর মুক্তি ,যাদের মধ্যে ৭৫২জন দন্ডপ্রাপ্ত।জেল ও বঙ্গবন্ধু হত্যার সব তদন্ত বন্ধ করে দিয়ে রাস্ট্রদ্রোহিতা মুলক কর্মকান্ড।ক্ষমতার এত জঘন্য দৃষ্টান্ত আর কার ?১৯৭২এর সংবিধানকে কেটে ছিরে নিজের ইচ্ছে মত সব
কিছুকে জায়েজ করার নগ্ন প্রচেষ্টা।