নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

াহো

াহো › বিস্তারিত পোস্টঃ

খাদিম হুসেন রাজা ---এক দাম্ভিক পাকিস্তানি সেনার চোখে একাত্তর

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:১৮





খাদিম হুসেন রাজা ---এক দাম্ভিক পাকিস্তানি সেনার চোখে একাত্তর









অন্য পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের চেয়ে খাদিম হুসেন রাজার দৃষ্টিভঙ্গিতে খুব পার্থক্য নেই। তার পরও তাঁর লেখা এ স্ট্রেনজার ইন মাই ওউন কান্ট্রি পাকিস্তান ১৯৬৯-১৯৭১ বইটি নিয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে কিছু সাহসী সত্য পাঠকের সামনে তুলে ধরার জন্য।

এর একটি হলো একাত্তরে পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডার জেনারেল এ কে নিয়াজির বক্তব্য। তিনি বলেছিলেন, ‘এই হারামজাদা জাতি জানে না, আমি কে? আমি তাদের জাত বদলে দেব।’ খাদিম হুসেন বিদায়ের মুহূর্তে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়াজিকে বোঝাতে গিয়েছিলেন, কীভাবে যুদ্ধ মোকাবিলা করা যাবে। জবাবে নিয়াজি তাঁকে বলেছিলেন, ‘বন্ধু, এসব নিয়ে শঙ্কিত হয়ো না, আমি পরিস্থিতি সামাল দেব। এখন তুমি আমাকে তোমার বাঙালি বান্ধবীদের টেলিফোন নম্বরগুলো দাও।’ কেবল তা-ই নয়, তিনি তাঁর অধীন সেনাদের বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন; যা শুনে একজন তরুণ বাঙালি সেনা কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছিলেন বলেও রাজা তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন।

অন্য মন্তব্যটি জেনারেল টিক্কা খানের। ২৫ মার্চের রাতে খাদিম হুসেন রাজা যখন বাঙালি নেতা শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে গোপন স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন, তখন টিক্কা খান তাঁকে বলেছিলেন, ‘এসবের কী প্রয়োজন? শেখ মুজিবকে ঢাকাতেই প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হোক।’ বেলুচিস্তানের কসাই একাত্তরে বাংলাদেশেও একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

নিয়াজি ও টিক্কা খানসহ অধিকাংশ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার বক্তব্য বা বিবৃতি নিষ্ঠুর ও বিকৃত মানসিকতারই পরিচায়ক। একজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে সশস্ত্র দস্যুর পার্থক্য পেশাদারি শৃঙ্খলা ও নৈতিকতাবোধ, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অধিকাংশ সদস্যের মধ্যে যার লেশমাত্র ছিল না। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষকে হত্যা নয়। কিন্তু সেই বাহিনীর সদস্যরা যখন একটি জনগোষ্ঠীর নিরস্ত্র ও বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা এবং নারীদের ইজ্জত লুণ্ঠনে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন, তখন আর তাঁরা পেশাদার থাকেন না, হয়ে পড়েন ঘাতক, সন্ত্রাসী ও ধর্ষক। এ কে নিয়াজিরই আরেক সহযোগী রাও ফরমান আলী তাঁর ডায়েরিতে লিখেছিলেন, বাংলাদেশের সবুজ জমিন লাল করে দিতে হবে। সবুজ জমিন তাঁরা লাল করলেও বাঙালির স্বাধীনতা ঠেকিয়ে রাখতে পারেননি।

একাত্তরে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারী পাকিস্তানের বেশির ভাগ সেনা কর্মকর্তা ছিলেন লোভী ও হিংস্র। তাঁরা নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছেন। ১৬ ডিসেম্বরের অনেক আগেই তাঁদের নৈতিক পরাজয় ঘটেছিল। তবে সব পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা খুনি ও ধর্ষক ছিলেন না। সবাই যুদ্ধও চাননি। যেমন সাহেবজাদা ইয়াকুব খান ও অ্যাডমিরাল আহসান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিয়েছিলেন। সামরিক সদর দপ্তরের সঙ্গে দ্বিমত করায় আহসানকে ঢাকা থেকে চলে যেতে হয়। ইয়াকুব খান সেনা অভিযানের দায় নিজের কাঁধে নেওয়ার চেয়ে পদত্যাগকে শ্রেয় মনে করেছেন।

খাদিম হুসেন রাজা মারা গেছেন ১৯৯৯ সালে। তাঁর বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১২ সালে, মৃত্যুর ১৩ বছর পর। ধারণা দেওয়া হয়েছে, এ বইয়ে এমন কিছু আছে, যা জীবিত অবস্থায় তিনি প্রকাশ করতে চাননি। কিন্তু টিক্কা খান ও নিয়াজির তিনটি মন্তব্য ছাড়া এ বইয়ে এমন কিছু নেই, যা অন্য সেনা কর্মকর্তারা বলেননি। বইয়ের ভূমিকায় মুহাম্মদ রেজা কাজিমি লিখেছেন, ‘ইতিহাস বিজয়ীরা লিখলেও একাত্তরের রণাঙ্গনে পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বই লিখেছেন।’ এসব সেনা কর্মকর্তা গণহত্যার পক্ষে যেমন সাফাই গেয়েছেন, তেমনি সব দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রাজা নিজেকে মনে করেছেন একজন আগন্তুক বা পরবাসী। পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা বরাবরই স্বদেশে আগন্তুক ছিলেন। দেশ বলতে তাঁরা সেনাবাহিনী বোঝেন, কোনো যুদ্ধে না জিতেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করেন।

১৯৬৯ সালের অক্টোবরে রাজা যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসেন, তখন তাঁর ভাষায় প্রদেশজুড়ে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে। এ কারণে তিনি বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দিয়ে সব রেজিমেন্টে বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের ছড়িয়ে দিতে বলেছিলেন। খাদিম হুসেনদের ধারণা, বাঙালিদের একত্রে রাখলেই বিপদ। তাদের বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। কিন্তু বাঙালি উপদেষ্টা জি ডব্লিউ চৌধুরীর পরামর্শে ইয়াহিয়া খান তাঁর সুপরামর্শ শোনেননি বলে আক্ষেপ করেছেন রাজা। তাঁর মতে, পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট না ভাঙলে শেখ মুজিব পশ্চিম পাকিস্তানের বালুচ, পাঠান ও সিন্ধ নেতাদের সমর্থন পেতেন না।

রাজা লিখেছেন ১৯৬৯-৭০ সালে আওয়ামী লীগ ছাড়া নাকি অন্য কোনো দল সমাবেশ করেনি। নির্জলা অসত্য বয়ান। সে সময় মুসলিম লীগ, পিডিপি, ন্যাপসহ সব দলই নির্বিঘ্নে সমাবেশ করেছে; ১৯৬৯ সালে ঢাকায় কেবল একটি সমাবেশই ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, জামায়াতে ইসলামীর। রাজার আক্ষেপ, ন্যাপ নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঢাকায় সমাবেশ করলেও মুজিবের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি। দিলে তিনি খুশি হতেন।

খাদিম হুসেন রাজা লিখেছেন, ঢাকায় এসেই তিনি বুঝতে পারেন, বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের ‘শালা পাঞ্জাবি’ বলে গাল দেয়, বিহারিদের ওপর অত্যাচার করে। কিন্তু পাঞ্জাবি বা পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর কী ধরনের আচরণ করেছে, তা বলেননি তিনি। কেবল এক জায়গায় রাজা পশ্চিম পাকিস্তানের বেসামরিক আমলাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতার কথা উল্লেখ করেছেন।

পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে বাঙালিদের সাংস্কৃতিক পার্থক্যের বিষয়টি বড় করে দেখেছেন রাজা। বাঙালি ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে গান গায় ও নাচে—এটি তাঁর কাছে আপত্তিকর মনে হয়েছে। তাঁর দাবি, ১৭ শতাংশ হিন্দু জনসংখ্যা বাঙালিদের চরিত্র নষ্ট করে দিয়েছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব জোরদার করেছে। পশ্চিম সীমান্ত খোলা থাকায় ভারত বাঙালিদের এই মনোভাবকে আরও উসকে দিতে পেরেছে। ১৯৬৯-১৯৭০ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত খোলা রাখা পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার উর্বর মস্তিষ্কের আবিষ্কার ছাড়া কিছু নয়।

একজন খাঁটি পাকিস্তানি হিসেবে ঢাকায় এসেই রাজা বাঙালিদের শায়েস্তা করার নানা নীলনকশা আঁটতে থাকেন। পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের মনোবল চাঙা রাখতে প্রতিটি সেনানিবাসে ঝটিকা সফর করেন। সর্বশেষ তিনি নিজেকে ২৫-২৬ মার্চ পরিচালিত নিষ্ঠুরতম সেনা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর অন্যতম প্রণেতা বলে দাবি করেন। এই একটি কারণে রাজা যুদ্ধাপরাধের দায় এড়াতে পারেন না।

বইটি স্ববিরোধিতায় ভরা। একদিকে তিনি সাহেবজাদা ইয়াকুব খানের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন যে পাকিস্তান সংকটের সামরিক সমাধান নেই, অন্যদিকে অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা আঁটেন। বিভিন্ন ঘটনা ও উদাহরণ টেনে তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন যে শেখ মুজিব মুখে পাকিস্তানের ঐক্যের কথা বললেও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। এ ব্যাপারে রাজা স্ট্যানলি উলপার্টের জুলফি ভুট্টো অব পাকিস্তান বইকে সাক্ষ্য মানেন, যাতে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। নির্বাচন শেষ হলে এলএফও (লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার) টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলব।’

আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবকে বছরব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে দেওয়াতেও রাজা ইয়াহিয়া সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। তিনি এবং তাঁর সতীর্থরা চেয়েছিলেন, ইয়াহিয়া একটি যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতা নিজের হাতেই রাখুক। তাতে সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব অটুট থাকবে। আসলে রাজারা বরাবর জনগণকে নয়, বন্দুককে ভরসা করেছেন। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনো মানুষ এ ধরনের উদ্ভট চিন্তা করতে পারেন না।

খাদিম হুসেন রাজা পাকিস্তান বাহিনীর কর্মদক্ষতার যেসব চিত্র তুলে ধরেছেন, তা বুমেরাং হয়েছে। যেমন: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ ইয়াহিয়া খানকে এই বলে আশ্বস্ত করেছিল যে নির্বাচনে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানেও আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলে তাঁকে ধারণা দিয়েছিল। কারণ হলো, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আওয়ামী লীগবিরোধী মুসলিম লিগ, নেজামে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীকে প্রচুর অর্থ দিয়েছিল। রাজা লিখেছেন, বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট আরও বেড়ে যায়। তাঁর ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে ৭৫ শতাংশ আসন পাবে। কিন্তু পেয়েছে প্রায় ৯৮ শতাংশ। পাকিস্তানের ধীমান ও চৌকস সেনা কর্মকর্তাও বাস্তবতার ধারেকাছে যেতে পারেননি!

বইয়ে বহু অসংগতি ও গোঁজামিল আছে। আছে তাঁর দৈবে বিশ্বাসের কথাও। কালাচাঁদ নামের এক জ্যোতিষী তাঁকে বলেছিলেন, সসম্মানে তিনি দেশে ফিরে যাবেন। সে কারণেই নাকি সহকর্মীদের মতো তাঁকে ভারতে যুদ্ধবন্দী হতে হয়নি।

খাদিম হুসেন রাজা লিখেছেন, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী কট্টর কমিউনিস্ট এবং ছাত্রনেতারাই পাকিস্তান ভাঙায় অগ্রণী ভূমিকা নেন। ৭ মার্চের জনসভার আগে কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। ৬ মার্চ এক বাঙালি ভদ্রলোক নিজেকে শেখ মুজিবের বিশ্বস্ত সহযোগী বলে দাবি করে তাঁর কাছে গিয়ে নাকি বলেছেন, তিনি (শেখ মুজিব) দেলের কট্টরপন্থী ও ছাত্রনেতাদের দ্বারা কঠিন চাপে আছেন। তাঁরা ৭ মার্চ একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে তিনি পাকিস্তান ভাঙার দায় নিতে চান না। এর পরিবর্তে তাঁকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হোক। (পৃষ্ঠা-৬০)। তিনি ওই লোককে জানিয়ে দেন, ‘তাঁর ভাষণের সময় সেনানিবাসে ট্যাংক ও অন্যান্য সমরাস্ত্র প্রস্তুত থাকবে। আমি নিজেও রেসকোর্স ময়দানে থেকে সরাসরি তাঁর ভাষণ শুনব। শেখ মুজিব যদি দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেন এবং একতরফা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তাহলে আমি অভিযান চালাতে দ্বিধা করব না।’ তিনি এ-ও লিখেছেন, ‘সংঘাত এড়াতে শেখ মুজিবের উচিত আলোচনার দ্বার খোলা রাখা।’

পাকিস্তানের একাধিক সেনা কর্মকর্তা লিখেছেন, ৭ মার্চের জনসভাকে কেন্দ্র করে সেনাসদর বেশ বিচলিত ছিল।

খাদিম হুসেনের মন্তব্য, ‘ত্রয়ীর’ (ইয়াহিয়া খান, শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো) অনমনীয় মনোভাবের কারণে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছে। শেখ মুজিব যদি অনমনীয় মনোভাব দেখিয়ে থাকেন, তা দেখিয়েছেন গণরায় বাস্তবায়ন করতে। আর ইয়াহিয়া ও ভুট্টো করেছেন একটি জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। এখানে রাজা আক্রমণকারী ও আক্রান্ত ব্যক্তিকে একই পাল্লায় মাপতে চেষ্টা করেছেন।

খাদিম হুসেন রাজা উপসংহারে লিখেছেন, কোনো ভূখণ্ডকে গায়ের জোরে দখল করা যায় না। যেমন: সোভিয়েত ইউনিয়ন পারেনি আফগানিস্তানকে, তেমনি পাকিস্তানও পারেনি। এটিই সম্ভবত বইয়ের একমাত্র খাঁটি কথা। আর সবই আত্মপক্ষ সাফাইয়ের চেষ্টা।



প্রথম আলো

Click This Link

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:২৩

াহো বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনাসদস্যদের বাঙালি নারীদের ওপর লেলিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন পাকিস্তানের লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজি। শুধু তাই নয়, বাঙালি জাতিগোষ্ঠী পরিবর্তিত হয়ে নতুন জাতিগোষ্ঠী সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত বাঙালি নারীদের ওপর সেনাদের নির্যাতন চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রয়াত মেজর জেনারেল খাদিম হুসেন রাজা তাঁর লেখা এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি: ইস্ট পাকিস্তান, ১৯৬৯-১৯৭১ শীর্ষক বইয়ে এসব কথা লিখেছেন। সে সময় খাদিম রাজা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৪তম ডিভিশনের দায়িত্বে ছিলেন। খাদিমের লেখা এ বিষয়গুলো সত্য ঘটনা বলেই সম্ভবত তিনি তাঁর মৃত্যুর পর তা বই আকারে প্রকাশ করতে বলেছিলেন। পাকিস্তানের দৈনিক দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ৮ জুলাই ওই বই নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ৭ জুলাই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস বইটি প্রকাশ করে।
মেজর জেনারেল খাদিম হুসেন রাজা লিখেছেন, ‘আমরা সেই চরম ঘটনার মুখোমুখি হলাম। জেনারেল নিয়াজি তাঁর কোমরবন্ধে থাকা খাপের মধ্যে নিজের পিস্তল ভরতে ভরতে আমাদের ঘরে ঢুকলেন। তিনি বাঙালিদের উদ্দেশে একটানা গালিগালাজ করতে থাকেন। ভাঙা ভাঙা উর্দুতে নিয়াজি বলতে থাকেন, আমি বাঙালি জাতিগোষ্ঠী পাল্টে দেব। তারা আমাকে কী মনে করেছে।’ এ সময় নিয়াজি বাঙালি নারীদের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের লেলিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। তাঁর এমন মন্তব্যে ওই কক্ষে পিনপতন নীরবতা নামে। এক পর্যায়ে নিয়াজি খাদিম রাজার কাছে তাঁর বাঙালি নারীবন্ধুদের ফোন নম্বরও চান। উর্দুতে নিয়াজি বলেন, ‘আপনার বাঙালি নারীবন্ধুদের ফোন নম্বর আমাকে দিন।’ খাদিম রাজা লিখেছেন, পরদিন তাঁরা মন খারাপ করা এক খবর পান। তাঁর ডিভিশনের সদর দপ্তরে মেজর মুস্তাক নামের একজন বাঙালি কর্মকর্তা শৌচাগারে ঢুকে নিজের পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন।
মেজর খাদিম লিখেছেন, জেনারেল টিক্কা খান আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকায় জনসমক্ষে ফাঁসি দিতে চেয়েছিলেন। মেজর জেনারেল রহিম খান সম্পর্কে খাদিম রাজা লিখেছেন, জেনারেল রহিম তাঁর বন্ধু ছিলেন। কিন্তু সুযোগ পেলেই রহিম তাঁর (খাদিম রাজা) ও ঢাকার সেনা কমান্ডারদের সমালোচনা করতেন। জেনারেল রহিমের মতে, বাঙালিরা কাপুরুষ। অনেক আগেই তাঁদের শায়েস্তা করা উচিত ছিল।
দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, একমাত্র জেনারেল নিয়াজির কারণেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান কলঙ্কিত হয়েছে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সেই জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শেষ গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসক।

প্রথম আলো
Click This Link

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৪৪

তৃষিত নয়ন বলেছেন: এটাইতো পাকিস্তানীদের চরিত্র। মৃত্যুর পরও মিথ্যা যায়না। বইটি মিথ্যা আর দম্ভে ভরপুর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.