নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তির মাঝেই সমাধান খুঁজি।

উড়ন্ত বাসনা

জীবন কে ভালবাসি।

উড়ন্ত বাসনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি : পরিবহন ও নিত্যপণ্যের বাজারে নৈরাজ্য দেখা দেবে

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪২

পরিবেশ দূষণ থেকে নগরীকে রক্ষার জন্য ২০০০ সালে সরকারি উৎসাহে পরিবহন খাতে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস ( সিএনজি) ব্যবহার শুরু হয়। বাড়তে থাকে সিএনজি স্টেশন, কনভার্সন সেন্টার এবং তেল থেকে গ্যাসে রূপান্তরিত পরিবহন সংখ্যা। বর্তমানে সারা দেশে ৫৯০টি সিএনজি স্টেশন রয়েছে। রূপান্তরিত গাড়ির সংখ্যা তিন লাখেরও বেশি। শুরুর দিকে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম ছিল ৭ টাকা ৪৫ পয়সা, বাড়তে বাড়তে দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকায়। এ দাম বাড়িয়ে ১ মার্চ থেকে ৩৮ এবং ১ জুন থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। যদিও কোর্ট না বাড়াতে রায় দিয়েছে।

দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বছরে অন্তত চার হাজার ১৮৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে। এই রাজস্বের ৮১ শতাংশই সরকারি কোষাগারে জমা হবে। বাকি ১৯ শতাংশ যাবে বিতরণ কোম্পানি পেট্রোবাংলা এবং উৎপাদনকারীদের পকেটে। এর আগে কমিশন দাম বৃদ্ধির সময় বিদ্যুৎ খাতকে বাইরে রেখেছিল। এবার বিদ্যুৎ খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিশন মনে করছে এখন অন্তত ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিরাট এই অংশ দাম বৃদ্ধির বাইরে থেকে গেলে সার্বিকভাবে রাজস্ব আদায় কমে যাবে। যদিও এই দাম বৃদ্ধি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকেরা এমনিতেই মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে চান না। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে সিএনজিচালিত বাস মালিকদের বিরুদ্ধে। এমন একটি পরিস্থিতিতে গৃহস্থালি ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের পাশাপাশি গাড়িতে ব্যবহার্য রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে গণপরিবহনে নৈরাজ্য আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা। প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম বর্তমান ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ মার্চ থেকে ৩৮ এবং ১ জুন থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ১৬ বছরে সিএনজির দাম বেড়েছে ৫৩৭ শতাংশ।বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকা শহরে বর্তমানে ৮৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় কোনো গন্তব্যে যেতে রাজি হন না। চালকগণ যাত্রীর পছন্দের জায়গায় যেতে অস্বীকার করে। বাধ্য হয়ে যাত্রীদের চালকের দাবি করা ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। মিটারের চেয়ে ২০ থেকে ১০০ টাকা বেশি ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষই কার্যকর উদ্যোগ নেয় না।

অতীতে যখনই জ্বালানি তেল ও সিএনজির মূল্য বেড়েছে, তখন যানবাহনের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সরকার যে পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধি করে, সেই হারে পরিবহনের ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এমতাবস্থায় নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় সর্বস্তরের মানুষ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। কারণ ভাড়া বৃদ্ধি পেলে আবারো পরিবহন ও নিত্যপণ্যের বাজারে নৈরাজ্য দেখা দেবে। সরকারের উচিত জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়া। কোনো বিশেষ কোম্পানির স্বার্থকে নয়। দেড় বছর পর দু’ধাপে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ায় বিনিয়োগ কমার আশংকা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে বিনিয়োগকারীরা নতুন শিল্প স্থাপনে নিরুৎসাহিত হবেন। উৎপাদন খরচ বেড়ে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পসহ স্থানীয় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। ফলে বিশ্ববাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। কেননা গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়বে পুরো জীবনযাত্রায়। বিশেষ করে গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি, খাদ্যসামগ্রীর ঊর্ধ্বমূল্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে ভোক্তাদের। যা নিু আয়ের মানুষের ভোগান্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এটি জন-অসন্তোষ সৃষ্টি করবে।

সিএনজি খাতে দেশের মাত্র ৫ শতাংশের কম গ্যাস ব্যবহার করে সরকারকে ২২ শতাংশের বেশি রাজস্ব দিচ্ছে স্টেশনগুলো। দফায় দফায় সিএনজি মূল্যবৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গণপরিবহন আবার তরল জ্বালানিতে ফেরত যাচ্ছে। বায়ু দূষণ রোধের যে লক্ষ্য নিয়ে সিএনজির প্রচলন করা হয়েছিল তা আজ ব্যর্থ হতে চলেছে, মূল্যবৃদ্ধি পেলে এর ব্যবহার কমে যাবে এবং তরল জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে বায়ুদূষণের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছবে।

ঘাটতির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি চালিকা শক্তি। চলতি অর্থ বছরে এর প্রভাব আরো বেশ বেশি দেখা দিয়েছে। কমে যাচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। রাজস্ব আদায়ে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের ঘাটতি। পরিস্থিতিকে অশুভ লক্ষণ বলে চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই আশংকাজনকভাবে কমছে আয়। দেশে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া সেই সাথে রফতানি পণ্যের কাংঙ্খিত দাম না পাওয়া। তাছাড়া যেভাবে জ্বালানির দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আগামীতে এই রফতানি আয়ের ওপর আরো বিরূপ প্রভাব ফেলবে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। অন্যান্য ক্ষেত্রে যেভাবে স্বেচ্ছাচারিতা হচ্ছে, এখানেও একই অবস্থা হয়েছে। এতে সরকার বছরে বাড়তি লাভ করবে ৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আর জনগণের ক্ষতি হবে ৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ও বাসদের এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন- দেশী-বিদেশী সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ও মুনাফা নিশ্চিত করতে দফায় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গ্যাস বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ১৬ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার মোট ৮১ দশমিক ১০ শতাংশ নিয়ে নিয়েছে। যার অর্থমূল্য দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শিল্পে প্রয়োজনীয় গ্যাস সংযোগ দিতে পারছে না সরকার। শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পরও অনেকে বসে আছেন গ্যাসের অভাবে। উপরন্তু যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে সংযোগ আছে সেখানে গ্যাসের চাপ প্রায় সময়ই কম থাকছে। এ অবস্থায় নতুন করে দাম বাড়ানোর ফলে শিল্প নতুন সংকটে পড়বে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে বিনিয়োগের ওপর। বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উৎসাহ হারাবেন। ফলে সরকারের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
মাত্র ১৫ মাস আগে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন সিএনজির যে দাম রয়েছে, তা এ খাতের জন্য সর্বোচ্চ। তাই দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন বা যৌক্তিকতা ছিল না। তার পরও দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে। ফলে প্রকৃতপক্ষে সাধারণ জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকার দাম বাড়িয়ে পরোক্ষভাবে সিএনজি ব্যবহার বন্ধ করার চেষ্টা করছে।

লেখাটি ০৪/০৩/১৭ একটি জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.