নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তির মাঝেই সমাধান খুঁজি।

উড়ন্ত বাসনা

জীবন কে ভালবাসি।

উড়ন্ত বাসনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সোনালি আঁশের দেশ তার কৃষককে ভুলে গেলো কী করে?

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৩

ছয় মাস আগে ধান নিয়ে মিডিয়া পাড়াগুলো বেশ সরব ছিলো, ন্যায্য মুল্য না পেয়ে কৃষক মনে দুঃখ নিয়ে সোনাঝরা পাকা ধান ক্ষেতেই আগুন লাগিয়ে দেয়। এমন ছবি ছাপা হয় জাতীয় পত্রিকাগুলোতে। ক্ষোভ আর কষ্টের খবরগুলি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে তেমন করে না আসলেও প্রিন্ট মিডিয়াতে আসে। এ ছাড়া ছবিগুলি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে ভাইরাল হয়।

বেশিরভাগ খবর ছিলো টাঙ্গাইল ভিত্তিক। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কান্না সরকারের কানে আসেনি, কৃষিমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা এই বিষয়গুলি এক পর্যায়ে অস্বীকার করে বলেছেন, অন্যদেশের ছবি এগুলো। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এসব প্রচার করা হচ্ছে।
খবরে জানা যায়, এখনো ধানের দাম মণপ্রতি ৪৫০ টাকা। আর্দ্রতার দোহাইয়ে ধান নেয়নি খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ। আমরা এখন আগের অবস্থানে নেই, মধ্যম আয়ের দেশ। এটা অবশ্যই গৌরবের বিষয়, কিন্তু এটাও সত্য সরকারের সব ধরনের ধান কেনার সামর্থ্য নেই! এই কি কৃষিতে আমাদের গত বারো বছরের অর্জন?

চামড়া নিয়ে আগেও কলাম লিখেছি, কি লঙ্কা কাণ্ড ঘটে গেলো। এই খবরটিও সংবাদমাধ্যমগুলিতে চাউর ছিলো। আজ আবারো বলতে হচ্ছে। চলমান বাজারে লাখ টাকার পশুর চামড়ার দাম ২০০ থেকে তিন’শ টাকা হলেও একটি মানিব্যাগের দাম এক হাজার টাকা! চামড়ার বেল্ট কিনতে গেলে গুনতে হবে ১২’শ থেকে দেড় হাজার টাকা! আর জুতা সে তো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। পচিশ’শ টাকা এক জোড়া চামড়ার স্যান্ডেলের দাম!

রাস্তার পাশে চাতাল দেখা যায়, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে চাতাল চোখে পড়ে। এ ছাড়াও উত্তর বঙ্গে এর সংখ্যা আরও বেশি। পত্র-পত্রিকা পড়ে জানা যায় চাতাল থেকে চাল কেজিপ্রতি ৩২ টাকা হয়ে বেরোয়। দাম নির্ধারণের ক্ষমতা ধান উৎপাদনকারী জমির মালিক তথা কৃষকের কিন্তু নেই।

রমজানে ও পরবর্তী কোরবানি ঈদ পর্যন্ত বানের পানিতে ডুবেছে দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা। ধানের ন্যায্য দামের দগদগে ক্ষত না শুকাতেই বন্যায় বিপর্যয়ে পড়লো খেটে খাওয়া গরীব মানুষেরা।

এবারের বানের পানিতে কুড়িগ্রামের চিলমারীর কয়েকটি চরের গ্রামের ভেতর দিয়ে বাড়িঘর উধাও করে দিয়ে ব্রহ্মপুত্র বয়ে গেছে। রেলসড়ক ও বাঁধ ভেঙেছে। রমনার ভট্টপাড়ায় বাঁধ ভেঙে গভীর ‘হ্রদ’ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের ত্রাণের কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়ার মতো ছিলো না। যা ছিলো প্রতিশ্রুতির মাঝেই সীমাবদ্ধ। ত্রাণ মন্ত্রীর তৎপরতায় গাফলতি দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আমরা তা দেখেছি সহজেই। একটি ভিডিও কয়েকদিন ঘুরছিলো ফেসবুকের বিভিন্ন ওয়ালে, এক বৃদ্ধার ক্ষুধার যন্ত্রণার কান্না, নিচে পানি সে বসে আছে চৌকিতে! স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তৎপরতা ছিলো না বললেই চলে।

এবার আসি আরেকটি বিষয়ে, জাতীয় অর্থকারী ফসল পাট নিয়ে। আশির দশকে পাটের বাজার পুরোদমে ভালোই ছিলো। নব্বই দশকের অবস্থাও মোটামুটি ভালো বলা যায়, তবে শেষের দিকে ধস নামে এই খাতে। সোনালি আঁশ হারায় তার মর্যাদা। পৃথিবীর বৃহত্তম পাটকল হারায় তার ঐতিহ্য, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে বাধ্য হয়ে আদমজীকে ইপিজেড-এ রূপান্তর করে। যদিও এ নিয়ে এখনও ক্ষমতাসীনরা সমালোচনা করে। কিন্তু পাটের দাম নিয়ে ওদের মাঝে চিন্তার রেখা দেখা যায় না।

প্রতিবছর পাট সপ্তাহ উৎযাপন করে সরকার, কোটি টাকা ব্যায়ে করা হয় সেমিনার আর প্রদর্শনী। তিন তারকা হোটেলে হয় পাটের ইতিহাস চর্চা ও পাট মন্ত্রাণালয়ের কর্মকর্তাদের ভোজন আয়োজন, তবে সেখানে নেই পাট চাষি বা পাট ব্যবসায়ীরা!

জোড়গাছ হাট, যাত্রাপুরহাট হচ্ছে ব্রহ্মপুত্রপাড়ের সব হাট। হাজারো নৌকা আর ট্রাক এসে ভিড়ছে হাটে। হাটের মধ্যে বিশাল বিশাল পাটের ঢিবি। গত বছর আবাদ কম ছিলো বলে দাম বেশি ছিলো। সেই আশায় এবার কৃষকও আবাদ করেছেন বেশি।
খবরে দেখা যায় এখনো জমিতে জমিতে পাটগাছ দাঁড়িয়ে আছে। সুযোগসন্ধানী আড়তদারেরা তো আছেনই। কৃষক তাই হাটে এসে শোনেন, পাটের দাম নেই। একেক হাটে যান আর পাটের দাম কমে। অন্যদিকে আমন লাগাতে হবে, তার জন্য পুঁজি চাই।

এক বিঘা (৬৩ শতক) জমিতে পাট উৎপাদনের হিসাব সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা। হাজারখানেক পাটখড়ি বাদ দিলে থাকে ৩৩ হাজার ৫০০। এক বিঘা জমিতে গড়ে পাট মেলে ২০ মণ। মানে মণপ্রতি খরচ প্রায় ১ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু হাটে দাম চলছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

প্রথম আলো পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, ১১৩ দশমিক ৩ একর আয়তনের খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিল। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল। শতভাগ আবাসিক শ্রমিক ছিলেন ১২ হাজার, এখন ৩ হাজার স্থায়ী শ্রমিক মাত্র। আগে দৈনিক ১২০-১৩০ টন পণ্য উৎপাদিত হতো। আজও সক্ষমতা আছে ৯০ টনের মতো। কিন্তু কাঁচামালের অভাবে হয় ৩০ টনের মতো। সরকারি পাটকলের সংখ্যা ছিল ৭৭, আছে ২৫টি। অথচ এখন বেসরকারি পাটকলের সংখ্যা ১৭০।

জাতিসংঘ ২৫ বছরের মধ্যে পৃথিবীকে প্লাস্টিকশূন্য করার ঘোষণা দিয়েছে। প্লাসিকে ভরে গেছে পুরো দুনিয়া। মাথার চিরুনি থেকে শুরু করে চশমার ফ্রেম, জামার বুতাম হয়ে জুতা পর্যন্ত প্লাস্টিক! সাগরে মরা তিমির পেটে পাওয়া যায় টনে টনে প্লাস্টিক! প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে এখন ঠাই করে নিয়েছে পাট। প্লাস্টিকের কাঁচামালের বিপরীতে ব্যবহার করা যায় পাট। কয়েকদিন আগে বিবিসি বাংলা তার অনলাইন পোর্টালে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে পাটের ব্যবহার নিয়ে, সেখানে একজন পাট দিয়ে সাইকেল বানিয়েছে যেটা ভিও হয়েছে প্রায় কয়েক লাখ, দুই বছর সময় নিয়ে মাত্র হাজার খানেক টাকা ব্যায়ে তৈরি করা হয়েছে বাইসাইকেলটি।
পাটের মতো প্রাকৃতিক তন্তুর চাহিদা আবার ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এটা খুশির কথা বটে। কিন্তু আমাদের দেশের কৃষকেরা তার ফল পাচ্ছেন কই?

বাবারা চাচারা দাদাদের পাটের টাকা দিয়ে শহরে পড়তে গেছেন, বড় ঘরে কনেকে বিয়ে দিয়েছেন ধুমধাম করে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের অর্থনৈতিক ভিত্তিই ছিলো পাট। মাত্র ৫০ বছর পর কি তারা নাই হয়ে গেলেন?

দেশের নিপীড়িত মানুষ কৃষকরা, এটা বুঝে জাতীয় কবি তাদের দুঃখ নিয়ে লিখেছেন কবিতা, আবু ইসহাক-এর জোঁক গল্প এভাবেই আসেনি কাব্যে। এ বছর ধানে লোকসান গুনছেন কৃষক, বান এসে ভাসালো। সরকারের পাট নিয়ে চিন্তার ধারা শুধু খবরেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবে আলোর মুখ আর দেখে না। এবার পাটে তথৈবচ। কৃষি কৃষকের হাতে না থাকলে কৃষক তো শ্রমিক হয়ে যাবেন, নাই হয়ে যাবেন। সোনালি আঁশের দেশ তার কৃষককের ভুলে গেলো কী করে?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০১

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের হিসাবে অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে ৩৯৫ কোটি টাকা লোকসান করেছে।

২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৭

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: দুর্বৃত্তের কবলে দেশ !
কে ভাবে দেশের পাঠের কথা, চাষার কথা !
উড়ন্ত বাসনা , আপনার লিখাটি দুইবার এসেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.