নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তির মাঝেই সমাধান খুঁজি।

উড়ন্ত বাসনা

জীবন কে ভালবাসি।

উড়ন্ত বাসনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনা হানা না দিলে জানা যেতো না দেশের স্বাস্থ্যখাতের গলদ

১৬ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৪১

সাধারণ মানুষ হয়তো জানতো না করোনা মহামারী না এলে দেশের স্বাস্থ্যখাতের চলমান অবস্থার কথা। এই খাতটি কতোটা দুর্বল ও নাজুক এর আসল চেহারা খুলে দিয়েছে চলমান পরিস্থিতি। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বলতে গেলে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে।
মানুষ করোনার চিকিৎসা পাচ্ছে না, পর্যাপ্ত আইসিইউ নেই সরকারি হাসপাতালগুলোতে। যদি বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এর নেপথ্যে কারণ কী? উত্তর শুধু সাধারণ চোখে কম বাজেটই এর কারণ মনে হতে পারে, কিন্তু কি আসলে তাই? কিছুটা সত্য হলেও বৃহৎ অংশ কিন্তু না, এই খাত নিয়ে যারা ভাবেন বা সামান্য ঘাঁটাঘাঁটি করেন তারা আরো অনেক কারণ খুঁজে পান। সবার কাছ থেকেই একটি কথা ‘কমন' শোনা যায়, আর তা হলো দুর্নীতি।

চলতি জাতীয় বাজেটে এই খাতে বৃহৎ পরিমাণে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও মানুষের মনে আশা জাগছে না! চিন্তা একটাই যদি বালিশ-পর্দার মতো এই বরাদ্দ দুর্নীতির পেটে চলে যায়, তবে বাজেট বাড়িয়ে ফয়দা কি? বিভিন্ন বেসরকারি গবেষণা ও গণমাধ্যমের কাছ থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বলছে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন বরাদ্দের শতকরা ৮০ ভাগই দুর্নীতির পেটে চলে যায়।
আমাদের দেশে প্রায় ৩০ হাজারের মতো সরকারি ডাক্তার আছেন, সব মিলিয়ে নিবন্ধিত ডাক্তারের সংখ্যা এক লাখের মতো। সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীর হিসেব ধরলে সব মিলিয়ে এক লাখ ৩০ হাজার। আর যদি হাসপাতালের হিসাব করা হয় তবে তা সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট হাসপাতালের সংখ্যা সাত হাজার ৩১২টি। সরকারি হাসপাতাল দুই হাজার ২৫৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ।
এবার একটু হিসাব নিকাশ করা যাক, দেশে সরকারি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল ২৫৪টি। সরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৫২ হাজার ৮০৭টি। আর বেসরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৯০ হাজার ৫৮৭! দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ মতো। বাংলাদেশে এখন এক হাজার ৫৮১ জনের জন্য একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক আছেন, এটা মোটামুটি আশার বাণী।

বাজেট কম হওয়ায় স্বাস্থ্যখাতের এই চিত্র এটা যেমন সত্য, তেমনি দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্যখাতের এই করুণ দশা এটা অস্বীকার করা যাবে না। এই খাতের পরিকল্পনা লেজগুবরে অবস্থা! ফলে স্বাস্থ্যখাতের কোথায়, কী প্রয়োজন তার সঠিক পরিকল্পনা হয় না।

গত মাসের ২১ তারিখ জার্মানভিত্তিক বাংলা ভাষায় অনলাইন নিউজ মাধ্যম ডয়েচ ভেলে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে একটি বড় প্রতিবেদন করে, সেখানে দেশের এই খাতের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে উঠে আসে গত বছরের বিভিন্ন দুর্নীতির চিত্র। দুদক স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির ১১টি খাত চিহ্নিত করে৷ সেখানে চিহ্নিত হয়- কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহ খাতে। দুর্নীতি করার জন্য অনেক অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হয় এমন চিত্র দুদকের অসুসন্ধানে উঠে আসে, অবাক করার বিষয় হচ্ছে এমন যন্ত্রপাতি কেনা হয় যা পরিচালনার লোক নেই ৷ ওইসব যন্ত্রপাতি কখনোই ব্যবহার করা হয় না। জানা যায় দুদক দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশ করে। তদন্তে বেড়িয়ে আসে দুর্নীতির কারণেই স্বাস্থ্যখাতের করুন অবস্থা। পরবর্তীতে তদন্তপত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি কয়েকটি পয়েন্ট সারা দেশবাসী অবলোকন করেছে গেলো বছরে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে স্বাস্থ্যখাতের যন্ত্রপাতি কেনায় ! ২৭টি সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেনাকাটার তথ্য নিয়ে সংবাদমাধ্যম দুর্নীতির এই চিত্র প্রকাশ করে। মনে আছে নিশ্চই? সেই পর্দা ও বালিশের কথা? যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১৮৬ গুণ বেশি দাম দেখানো হয়েছে। এনিয়ে একটি লেখা লেখেছিলাম পত্রিকায়।

এক সেট পর্দার দাম দেখানো হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা মনে আছে সেই কাণ্ড? স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিন্তু এই দায় থেকে রেহাই পেতে পারেন না, পদত্যাগও করেনি। যদিও আমাদের দেশে দুর্নীতির দায়ে প্রমাণিত হয়েও পদত্যাগের রেওয়াজ নেই। পত্রিকায় আসলো গত বেশ কয়েকদিন আগে জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হয়েছেন পরে আবার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করে। ১৭৫ কোটি টাকার নিম্নমানের যন্ত্রপাতি কেনা হয় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য! রংপুর মেডিকেল কলেজে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও চার কোটি টাকার সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি কেনা হয়, যা কখনোই ব্যবহার করা হয়নি! এতে বলা যাবে না বাজেট কম বা আশাব্যঞ্জক নয়। এই করোনার মধ্যে চিকিৎসকদের জন্য পিপিই এবং এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারির কথা সবার জানা। এখনো তদন্তই চলছে, ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। হবে কিনা জানা নেই।

২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য স্বাস্থ্যখাতে মোট ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট বাজেট বরাদ্দের ৭.২ ভাগ এবং জিডিপির ১.৩ ভাগ। করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যখাতের বাজেট বাড়ানো হয়েছে ১৩ শতাংশেরও বেশি। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি কোনো চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটে।
স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় কিছু বলেননি, এটা একটা দুর্নীতি সহায়ক। বরাদ্দ বাড়লেই যে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন হবে তা আশা করা যায় না।

এবার হিসাব নিকাশ ছেড়ে একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কিছু বলবো না ভেবেছিলাম, যেভাবে মন্ত্রণালয় চালাচ্ছে চালাক; চলতে থাকুক। কিন্তু আর না, অদক্ষতার একটা সীমা থাকে। সরকার না দেশ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে চরম ভাবে, তার কারণে দেশ বিপদে পড়ছে কঠিনতম সময়ে। দীর্ঘকালীন সময়েও জাতিকে আশার বাণী শুনাতে পারেননি তিনি, হুট করে আসতেন প্রেস ব্রিফিং করে চলে যেতেন।
এখনতো তাকে দেখাই যায় না! দেশবাসী কিংবা চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন না। মিডিয়ায় তাকে নিয়ে সমালোচনা ও লিখালেখি হলে ব্রিফিং কমিয়ে দেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এখন তার কাজটি করে দিচ্ছেন, একজন মন্ত্রী ক্যামেরার সামনে আসবেন, দেখে দেখে পড়বেন এটা মন্ত্রী হিসেবে মানায় না। তবে এখন স্বাস্থ্য বিভাগের যে লোকজন ব্রিফিং দিচ্ছে তা নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি।

একটা সত্য কথা কি তিনি ভালো বলতে পারেন না, তবে জাতিকে বুঝাতে চেষ্টা করেন সাধ্যমতো। তিনি ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন মেধাবী অবশ্যই। মাঝে মাঝে বলতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেন। লড়াইয়ে সব সময় দরকার দক্ষ সৈনিক আর কমান্ডার। যুদ্ধ হবে, আবার সাধারণ মানুষকে আস্থায় রাখতে হবে। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের যুদ্ধ। কঠিন যুদ্ধের সেনাপতিরা হচ্ছেন-চিকিৎসক, নার্সসহ সব স্বাস্থ্যকর্মী।

ডিসেম্বরে চীনের উহানে দেখা দিলো এই করোনার প্রাদুর্ভাব, আমাদের হুঁশিয়ার করা হলো সতর্ক ও প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য। বিষয়টি গোপন রাখা হলো, মার্চের মাঝামাঝিতে জানানো হলো; তখন সব শেষ! বলা হলো চিন্তার কারণ নেই, আমাদের ব্যপক প্রস্তুতি আছে। আমরা তা প্রতিরোধ করবো, কিন্তু বাস্তবে কী পেলাম?

পরামর্শ ভিত্তিক কাজ করলে এতো সংকট তৈরি হতো না। স্বাস্থ্যকর্মীদের চোখে জল থাকতো না। চিকিৎসক আর তাদের অনেকে হাসপাতাল ছেড়ে যেতো না। কাজ করতে সাংগঠনিক দক্ষতা লাগে। এই দুর্যোগের শুরু থেকেই কোনো উদ্যোগ মানুষকে আশ্বস্ত করতে পারেনি। এই ব্যর্থতা আসলে কার? কোনো এক দেশের মন্ত্রী আত্মহত্যা করেছে এমন পরিস্থিতি দেখে! অনেক মন্ত্রী কেঁদেছে সাহায্য চেয়েছে আকাশের মালিকের কাছে, আর আমরা?

এ সময়টা নিয়ে রাজনীতি কেন হবে? সময়টা মানুষের জন্য কাজ করার। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনার র‍্যাপিড কিট নিয়ে যা হয়ে গেলো এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক খেলা ছাড়া আর কিছু না। দেশের অর্জনকে রাজনৈতিক ভাবে মেরে ফেলার চিন্তা!

www.facebook.com/mr.mehedi72

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: সরকারি সব খাতেই দূর্নীতি হয়। তবে স্বাস্থ্যখাত হলো দূর্নীতির চ্যাম্পিয়ন। এরা কি শেখ হাসিনাকে ভয় পায় না?

২| ১৬ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:০৩

একে৪৭ বলেছেন: কোন ক্ষাতটি ঠিক আছে???
বড় কোন দুর্যোগ এলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভালো পাওয়া যায়/যাবে?
বিচার ব্যবস্থা?
সড়ক ব্যবস্থা?
শিক্ষা ব্যবস্থা?
পরিবহন?
বাজার???
.
.
.
অবশ্য এখনকার আলোচ্য বিষয় স্বাস্থ/চিকিৎসা, বাকিগুলোর অবস্থা উপযুক্ত সময় এলে আলোচনা করা হবে। :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.