![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীতে পানির মাত্র ২.৫ শতাংশ মিঠাপানি। এ মিঠাপানির ৩০.১ শতাংশ পানি থাকে ভূগর্ভে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি মাঠ-ঘাট, রাস্তা, জলাশয় ভেদ করে মাটির নিচে জমা হয় ও সারাবছর আমাদের পানির চাহিদা মেটায়। সূক্ষ বালিকণা ভেদ করে মাটির নিচে জমা হয় বলে এ পানি হয় বিশুদ্ধ। গভীর নলকূপের পানি তো এতটাই নিরাপদ যে তা না ফুটিয়েই খাওয়া যায়।
তবে বর্তমানে দুশ্চিন্তার বিষয় এই যে দেশে ক্রমাগত ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানীতে ভূ-গর্ভে পানি জমা হওয়ার যে হার তার চেয়ে অধিক পরিমাণে পানি উত্তোলনের ফলে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত চাহিদা ছাড়াও আর ও বিভিন্ন কারণে পানির অপ্রাপ্যতা দেখা দিয়েছে। অপরিকল্পিত নগররায়নের ফলে ঢাকা ও এর আশেপাশে জলাশয়ের পরিমাণ কমে গেছে। দিনে দিনে রাজধানী হয়ে উঠছে কংক্রীটের শহর, যার ফলে পানি মাটি ভেদ করে পৌঁছাতে পারছে না। এছাড়া এক গবেষণায় দেখা যায়, রাজধানীতে উপরিভাগে যত পানির উৎস আছে তার ৯২ শতাংশই দূষণের শিকার। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ এবং বালু নদীর পানি প্রায় এক শ'ভাগই দূষিত। আর পানির দূষণের কারণ হিসেবে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী করা হয়েছে শিল্প বর্জ্যকে। গবেষণায় বলা হয়, রাজধানীতে সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও কঠিন বর্জ্য ফেলে নদীতে। এর ফলে ধীরে ধীরে ভূ-গর্ভই পানির একমাত্র নিরাপদ উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপদ গুণগত মানের কারণে প্রথম পছন্দ হিসেবে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহারে নগরবাসীকে আকৃষ্ট করছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ২ থেকে ৩ মিটার করে নিচে নেমে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা না হলে ৫ বছর পরে প্রতিবছর ১০ মিটার করে পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। রাজধানীতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে সঙ্কট দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমেও ওয়াসার পাম্প গুলোতে পানি উৎপাদন অনেক কমে গেছে। যে পাম্পে প্রতি মিনিটে আড়াই হাজার লিটার পানি উৎপাদন হতো, এখন সেই পাম্পে দেড় হাজার লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে। এ হিসাব থেকেই বোঝা ঢাকা মহানগরীর অবস্থা কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ওয়াসার এক হিসাবে দেখা যায়, ওয়াসার সরবরাহ করা পানির ৮৭ শতাংশই তোলা হচ্ছে মাটির নিচ থেকে। এর পরিমাণ প্রতিদিন ১৭৪ কোটি লিটার। এছাড়া ভূ-গর্ভের পানি তোলা হচ্ছে অবৈধ গভীর নলকূপের মাধ্যমেও। সত্তরের দশকে যেখানে ভূ-গর্ভস্থ পানিতল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে এক মিটারেরও কম গভীরতায় ছিল, বর্তমানে তা সর্বোচ্চ ৭০ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে। বর্তমানে ঢাকার কেন্দ্রে জনবহুল মিরপুর, মণিপুর, সবুজবাগ, তেজগাঁও ও বাসাবো এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানিতল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে যথাক্রমে ৬৬, ৬৩, ৬৬ ও ৬৩ মিটার নিচে নেমে গেছে, যা নদীতীরবর্তী মোহাম্মদপুর, গেণ্ডারিয়া ও হাজারীবাগ এলাকায় যথাক্রমে ৩৬ দশমিক ৫, ২১ ও ৩৩ মিটার।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। প্রতিদিন সেচ কাজে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। ২০০১-০২ অর্থবছরে দেশে মোট সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ ছিল ৪৮ লাখ হেক্টর, যা ২০১১-১২ সালে ৭৪ লাখ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। বিএডিসি জানায়, দেশের প্রায় ১৭ লাখ শ্যালো টিউবওয়েল (শ্যালোমেশিন) দ্বারা সেচের জন্য পানি উত্তোলন করা হয়। কিন্তু ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে প্রায় ৪ লাখ শ্যালো টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। কারণ শ্যালোমেশিন মাটির ওপর থেকে ২৬ ফুট নিচ পর্যন্ত পানি তুলতে পারে। আর পানির স্তর আরো নিচে চলে গেলে শ্যালো টিউবওয়েল তুলতে পারে না। পানির স্তর অব্যাহত নিচে নামতে থাকলে একসময় শ্যালো টিউবওয়েলে পানি উঠবে না। সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার না করে বিকল্প উৎস ব্যবহার করতে হবে।
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। দৃশ্যত মরুকরণ প্রক্রিয়ার দিকে এগুচ্ছে এ অঞ্চলের সার্বিক আবহাওয়া। যা এ অঞ্চলের কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। খরা মৌসুমে রাজশাহীর নিকটবর্তী পবা উপজেলায় ১৯৮৫ সালে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ছিল গড়ে ২০ ফুট ৬ ইঞ্চি। ১৯৯৫ সালে ৩০ ফুটের নিচে ও ২০১০ সালে পানির স্তর নেমে দাঁড়ায় প্রায় ৬৬ ফুটে। বরেন্দ্র অঞ্চল, বিশেষ করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলায় পানির স্তর প্রতি মাসে দশমিক ০০৪ থেকে দশমিক ০২৮ হারে নিচে নামছে। বর্ষাসহ বছরজুড়ে পরিমিত বৃষ্টিপাতের অভাব দেখা দিয়েছে এ অঞ্চলে। আবার সেচের জন্য ভূ-গর্ভের পানি উত্তোলনে পানির স্তর নিচে নামার গতিকে আরো সঞ্চারিত করছে। এছাড়া, কক্সবাজারে ও ভয়াবহ পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। জেলার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সঙ্কট।
ভূ-গর্ভস্থ পানির বিকল্প ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তরণের আর কোন পথ নেই। ভূ-গর্ভস্থ পানির বিকল্প হিসেবে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে, পুকুর, লেক বা নদী বৃদ্ধি করে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে হবে। অতিমাত্রায় পানি তুললে এই উৎসটি আর নবায়ন যোগ্য থাকে না। তাই অতিমাত্রায় পানি তোলা বন্ধ করতে হবে।
সূত্রঃ
১. “মহানগরী : ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যাপক উত্তোলন” উপ-সম্পাদকীয়, কালের কণ্ঠ- ১৭ জুন ২০১০
২. “বরেন্দ্র অঞ্চলে আশঙ্কাজনকহারে নিচে নেমে যাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর” http://www.dainikdestiny.com।
৩. “ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে পানির স্থর ক্রমাগত নিচে নেমে যাচ্ছে : সিটি মেয়র” http://bdn24x7.com/?p=64607
৪. “ভূ-গর্ভস্থ পানির তীব্র সংকট: বিকল্প নিয়ে কি কেউ ভাবছেন?” Mizanur Rahman Sohel's blog
৫. “রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভে নামছে পানির স্তর” http://www.dailynabaraj.com
৬. https://www.facebook.com/notes/moin-uddin
৭. “ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে”
Click This Link
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৫
ফৌজিয়া রিনি বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩০
রিফাত হোসেন বলেছেন: ++
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৭
ফৌজিয়া রিনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪১
হ্যাঁ এবং না বলেছেন: সম্ভবত আরেকটি সমস্যা হল, পানির স্তর নেমে যাওয়ার জন্য বিল্ডিং বা অনন্যা স্থাপনার ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়।
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪২
ফৌজিয়া রিনি বলেছেন: ভূমিকম্পে ক্ষতির সম্ভাবনা ও বেড়ে যায়।
৪| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪২
নতুন বলেছেন: আমাদের সচাতনতা না বাড়ালে অনেক বড় সমস্যায় পড়তে হবে... এই বিষয়ে কারুরই খেয়াল নেই..
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৮
ফৌজিয়া রিনি বলেছেন: সেটাই। এ বিষয়টা নিয়ে কেউই ভাবছে না।
৫| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৪
জাদিদ বিন হাবীব বলেছেন: অনেক ইনফরমেটিভ একটা লেখা
ভালো লিখেছেন
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫০
ফৌজিয়া রিনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। চেষ্টা করেছি।
৬| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৫
*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে, পুকুর, লেক বা নদী বৃদ্ধি করে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে হবে। অতিমাত্রায় পানি তুললে এই উৎসটি আর নবায়ন যোগ্য থাকে না।
সুন্দর পোষ্ট। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর প্রধান চ্যালেঞ্জ সুপেয় পানি প্রাপ্তির চ্যালেঞ্জ
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৩
ফৌজিয়া রিনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি ভালো কথা বলেছেন।
৭| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৩
কলমের কালি শেষ বলেছেন: খুব সুন্দর এবং জরুরী বিষয়ে পোষ্ট দিয়েছেন । +++
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৪
ফৌজিয়া রিনি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৮| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২২
নুরএমডিচৌধূরী বলেছেন: যথেষ্ট পজেটিভ একটি পোষ্ট
পোষ্টে++++
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৪
ফৌজিয়া রিনি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৩
সকাল রয় বলেছেন:
ভালো লেখা।
তবে ঘটনা হলো এই জাতীয় লেখার ব্লগাররা একটুস কমই পড়ে