নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foyaz chowdhury

foyaz chowdhury › বিস্তারিত পোস্টঃ

দৃষ্টিভঙ্গি

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৫৬

নাহিদ খুব চিন্তিত ও বিষণ্ণ অবস্থায় ৪র্থ সিগারেটটি ধরাল। ভাবনার সাগরে ডুবে থাকা নাহিদের চোখে জমে থাকা জলে সৃষ্টি হয়েছে এক জলাধার। তার এই কষ্টের কারণ তার সৎ মা।
দুবছর আগে নাহিদের মা মারা যায়। নাহিদ তার বাবার একমাত্র আদরের সন্তান। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে নাহিদ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। পড়া-লেখা থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছে। ঘরে গেলেই মায়ের কথা মনে পড়ে তাই যতটা সময় সম্ভব বাহিরে আড্ডা দিয়েই কাটায়। নাহিদের এই অবস্থা দেখে তার বাবা প্রায় বাধ্য হয়েই নাহিদের জন্য একজন নতুন মা নিয়ে আসেন। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান না হয়ে সমস্যা বাড়তে লাগল। নাহিদ তার মায়ের আসনে অন্য কাউকে সমাসীন করতে পারল না। নতুন মায়ের ভালো কথাও তার গায়ে কাঁটার মত বিঁধে। এখন নাহিদ ৯ম শ্রেণীতে পড়ে। গত পরীক্ষায় ফেল করার কারণে আজ তার মা তাকে বকেছে। তাই এত সিগারেট আর চোখে এত জল।

আসলেই কি নাহিদের সৎ মা খুব খারাপ??
সৎ মা, সৎ বাবা বলতে কি পৃথিবীর নিকৃষ্টতম মানুষদেরই বুঝায়??

নাহিদের সৎ মার বয়স ৩৩ বছর। গত পাঁচ বছর আগে তার স্বামীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তার ১টি ছেলে ও ১টি মেয়ে ছিল। তার পূর্বের স্বামী তার দু'সন্তানকে রেখে দেয়।
তিনি নাহিদের বাবকে বিয়ে করেন শুধু মাত্র নাহিদের জন্য, নাহিদের মা হওয়ার জন্য। তার মনে নাহিদের প্রতি ভালবাসা কোন অংশেই কম ছিল না। সন্তান হারা মায়ের কোন সন্তানের প্রতি ভালোবাসা কম থাকতে পারে না। কিন্তু যার মুখে মা ডাক শোনার জন্য ২য় বার বিয়ে করলেন, সে গত দেড় বছরে একবারও তাকে মা ডাকে নি বরং বাড়ির ঝি-চাকরের মত ব্যবহার করেছে।

আসলেই কি নাহিদ খুব খারাপ??
সৎ ছেলে-মেয়েরা কি পৃথিবীর নিকৃষ্টতম সন্তান হয়??

আমাদের দেশের মানুষরা বহু বছর যাবৎ সৎ পিতা-মাতা ও সৎ সন্তানের প্রতি একটি খারাপ ধারণা মনে বহন করে আসছে। এই ধারণা ধ্বংস করে দিচ্ছে লক্ষ লক্ষ জীবন। ধ্বংস করে দিচ্ছে হাজার হাজার পরিবার।
এই ধ্বংসের কারণ কোন সৎ মা-বাবা কিংবা সৎ সন্তান না। এই ধ্বংসের কার তাদের চারপাশের সৎ মানুষগুলো।
কেননা যখন আপনি ছেলে/মেয়ের কাক-কাকী, মামা-মামী, ফুফা-ফুফু, খালা-খালু, বন্ধু ইত্যাদি তখন আপনি ছেলেটিকে তার সৎ মা/বার বিরুদ্ধে ফুসলাবেন।
আবার যখন আপনি সৎ মা/বাবার কাক-কাকী, মামা-মামী, ফুফা-ফুফু, খালা-খালু, বন্ধু ইত্যাদি তখন আপনি মা/বাবাকে তার সৎ সন্তানের বিরুদ্ধে ফুসলাবেন।

নাহিদ তার সৎ মাকে মায়ের স্থানে বসাতে না পারার কারণ তার ওই আত্মীয় ও বন্ধুরা যারা প্রতিনিয়ত তাকে সৎ মায়ের বুরুদ্ধে ফুসলেছে। মাত্র ১৪বছর বয়সে মা হারিয়ে দ্বিতীয়বার ফিরে পাওয়া মাকে সৎ মা নামক পৃথিবীর নিকৃষ্টতম মানুষের স্থানে বসিয়ে তার ভালোবাসা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে নিজের সঙ্গি করে নিয়েছে নেশা নামক মরণব্যধিকে।

আজ নাহিদ ব্যর্থ হয়েছে কাল অন্য কেউ ব্যর্থ হবে পরশু কোন সৎ বাব/মা ব্যর্থ হবে। যার দোষে দুষি হবে কারো দৃষ্টিকোণ থেকে সৎ মা/বা আবার কারো দৃষ্টিকোণ থেকে সৎ সন্তান।
এভাবে ব্যর্থতা বাড়তেই থাকবে যতদিন না তাদের চারপাশের মানুষগুলো ঠিক হয়।

তাই আসুন, আমরা সৎ মা/বাবা/সন্তান- এর এই সৎ-কে step না বলে honest বলি। দেখবেন পরিবর্তন হয়ে যাবে অনেক পরিবার, বেঁচে যাবে অসংখ্য প্রাণ। আপনার আমার পরিবর্তনেই পরিবর্তিত হবে সমাজ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.