নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি চিন্তা করি....সুতরাং আমি অস্তিত্বশীল

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল

একজন সাধারণ মানুষ

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন,কুসংস্কার এবং বাস্তবতা

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৭

অতি প্রাকৃত কোনো ঘটনা কিংবা অলৌকিকতা কখনই আমার কাছে পাত্তা পায়নি। এই বিষয় গুলো সম্পর্কে আমার যথেষ্ঠ কৌতুহল মাঝে মাঝে কাজ করলেও কখনো অভিজ্ঞতা হয়নি বলে এগুলোর অস্তিত্ব আমি বিশ্বাস করতাম না।

কার্যকারণ খুঁজতে গিয়ে আমি ইদানিং এসকল অলৌকিকতার মাঝে এমন ভাবেই নিপতিত যে নিজেকে বেশ অসহায় ই মনে হচ্ছে। মুরব্বিদের প্রচলিত ধারণা/কথন যা কিনা কুসংস্কার হিসেবেই গন্য করে আসছিলাম তা-ই কিনা আমার কাছে চরম বাস্তব রূপে প্রতিয়মান !

বেশ কিছুদিন আগে আমি স্বপ্নে দেখলাম - 'একটি বিশাল আম গাছ। ঝাঁক বেধে আম ধরে আছে। এমনকি আমের কারণে গাছের পাতাও যেন অদৃশ্যমান। আমি একটা ঢিল ছুড়লাম, আর অমনিতেই টপাটপ কিছু আম মাটিতে পড়ে গেল এবং আমি এর মধ্যে একটি কুড়িয়ে নিয়ে খেতে শুরু করলাম। '

স্বপ্নটিকে আর দশটা স্বপ্নের মত ধরে নিয়েও টের পেলাম যে - এই স্বপ্নে কিছুটা ব্যতিক্রম অনুভুতি কাজ করছে আমার মাঝে। তারপরও স্বপ্নটিকে গুরুত্ব দিলাম না।
এর পরদিন আমি আবার স্বপ্নে দেখলাম - ' একটি বড় পেয়ারা গাছে উঠে আমি পাঁকা পাঁকা পেয়ারা পেড়ে খাচ্ছি। ' স্বপ্ন বলতে অনেকটা এতটুকুই , কিন্তু স্বপ্ন টা আমার মধ্যে একটা অস্থিরতা দিয়ে গেল। আমি পর পর দুই দিন দেখা দুটি স্বপ্নের মাঝে সামঞ্জস্য খুঁজতে লাগলাম। দু-একটি সামঞ্জস্য খুঁজে বেরও করে ফেললাম, যেমন : দুটো স্বপ্ন-ই কেমন যেন একটু বেশি-ই আলোকোজ্জল , মস্তিষ্কে যেন বেশ গভীর ভাবেই গেঁথে আছে।

আমার বড় একজনের সাথে শেয়ার করলাম বিষয়টি। বলার সাথে সাথেই প্রচলিত কুসংস্কারের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে তিনি আমাকে বললেন যে "পরিবারের মুরব্বি মারা যাবেন "..
কথাটি শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে পরলাম। আমার স্তম্বিত চেহারা দেখে সাথে সাথেই তিনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন যে - এসব কথা কুসংস্কার। আমিও তা-ই মেনে নিলাম এবং প্রায় ভুলেই গেলাম।

দুই-তিন দিন পর আব্বুর হার্ট এর সমস্যা বেড়ে গেল। একদম বিছানায় পড়ে যান নি , কিন্তু সহ্য করার মত অবস্থায় আর নেই বলে জানান তিনি। গত তিন-চার বছর ধরে যাকে কোনো ভাবেই হার্ট এর বাইপাস অপারেশনের জন্য রাজি করানো যাচ্ছিলনা , তিনি-ই কিনা স্বেচ্ছায় ট্রিটমেন্ট করাতে চাচ্ছেন !
বুকের ভিতর অসুখটাকে পুষে রাখুক , সন্তান হিসেবে তা চাইনি বলেই আমরা ভাই-বোন সবাই মিলে উদ্যোগী হলাম , আব্বু ভর্তি হলেন হাসপাতালে।

বাইপাস অপারেশন এর পর থেকে একটির পর একটি জটিলতা যেন আব্বু কে ঘিরে ধরছিল, এমনকি ব্লিডিং হওয়ার কারণে এক দিনে দুই বার অপারেশন করাতে হয়েছিল ! আমিও রাতে হাসপাতালে থাকতাম। সেখানেই আমি প্রথম রাতে স্বপ্নে দেখি - 'অনেক গুলো পাকা কাঁঠাল পরে আছে', দ্বিতীয় দিন আবার স্বপ্নে দেখলাম -'অনেক গুলো পাকা পাকা জাম নিচে পরে আছে '.. স্বপ্ন গুলো ঠিক আগের স্বপ্নের মতই উজ্জল !

যাই হোক- আব্বুর জ্ঞান ফেরার পর একবার আব্বুকে দেখতে যাওয়ার পর উনি আমাকে জানালেন - বেশ কিছু লোক, যারা কিনা আব্বুর পরিচিত , ওনারা নাকি আব্বুকে দেখতে এসেছেন। আসার সময় অনেক উপহারও নাকি এনেছেন। একজন তো নাকি খুব সুন্দর একটি কোট/ব্লেজার নিয়ে এসেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো - এক্ষেত্রে উনি যার যার নাম বললেন তাঁরা সবাই-ই ছিলেন মৃত ! এবার আমি বেশ ভেঙ্গে পড়লাম। এর অর্থ কি - তা বোঝার জন্য প্রচলিত কুসংস্কারের যে হাতে পায়ে ধরতে হয়না তা অন্তত বুঝতে পারলাম। তার চার দিন পর-ই আব্বু মারা যান।

এখানে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে - আব্বু মারা যাওয়ার পর ওনার মুখমন্ডল ছিল হাস্স্যজ্জল! ওনার হাসি মাখা মুখ দেখে মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি এলো , আমি যেন জেনে গেলাম যে - আমার আব্বু ইনশাল্লাহ জান্নাতি হবেন। কিন্তু ঐ যে কুসংস্কার !!!!! বেশ কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ বলে উঠলেন : হায় হায় ! এই পরিবারের তো আরও একজন মারা যাবে শীঘ্রই! লাশ নাকি হাসি মুখ থাকলে এমনটি হয়। ....

আব্বু মারা যাওয়ার পর থেকে প্রায় ই আব্বুকে স্বপ্নে দেখা শুরু করলাম।এমনকি এক রাতে একাধিক বার। স্বপ্নে উনি কিছু বলতেন না - তবে সবগুলো স্বপ্নের প্যাটার্ন অনেকটা এক-ই রকম। যেমন : স্বপ্নে দেখতাম আব্বু আবার ফিরে এসেছেন। উনি অসুস্থ , ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। স্বপ্নেই অবাক হতাম এবং নিজেকে প্রশ্ন করতাম "আব্বু না মরে গেছেন"? মজার ব্যাপার হলো - আমরা সকল ভাই বোন এক টাইপ এর স্বপ্ন-ই দেখতে লাগলাম।

এই স্বপ্ন গুলোর বিভিন্ন বৈশিষ্ট নিয়ে গুগলের সহায়তায় ড্রিম এনালাইসিস শুরু করলাম। খুব ভালো কিছু পেলাম বলে মনে হলো না। আধুনিক ড্রিম এনালাইসিস যেন প্রচলিত কুসংস্কারের সাথে সমান্তরাল পথেই চলমান।

এরই মাঝে একদিন হঠাৎ স্বপ্নে দেখলাম - এক ঝাঁক লিচু পেড়ে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি , বাসার কাছে যাওয়ার পর সামনের একটা গাছ থেকে একটা ডাব পড়ল। ঘুম ভাঙ্গার পর আমি ভীষণভাবে চিন্তিত হয়ে পরলাম। ফল পাড়ার স্বপ্নতো আমি আগেও দেখেছি। যদি কুসংস্কার বিশ্বাস করি , তবে নিশ্চিত - সামনে কোনো কঠিন সময় আসছে।

একদিন সন্ধ্যায় বাসার অনেকেই বসে চা খাচ্ছিলাম।আম্মার মোবাইলে ছোট চাচার ফোন এলো। ফোনের ঐ পাশ থেকে ভীষণ কান্নাকাটির শব্দ। সংবাদ হলো : আমার মেজ চাচা মারা গেছেন। হার্ট এট্যাক হয়েছে ওনার। আমার বাবার মৃত্যুর তিন মাস পর আমার বাবার ইমিডিয়েট ছোট ভাই - আমার চাচাকে হারালাম।

কুসংস্কার আর বাস্তবতার এক ভয়ংকর সংমিশ্রন যেন উল্টে পাল্টে দিচ্ছিলো আমার পৃথিবী। পরবর্তিতে মুরব্বিদের কাছ থেকে জানতে পারলাম - মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর একটা টাইম ফ্রেম রয়েছে। এই মৃত্যু নাকি হয়ে থাকে একজনের মৃত্যুর - তিন মাস -ছয় মাস - নয় মাস - এক বছর ...এর মধ্যে।আমার হতভাগ্য চাচা , যিনি কি-না আব্বু মারা যাওয়ার পর পরম মমতায় আমাদের বুকে টেনে নিয়েছিলেন, তিনি প্রথম কিস্তিতেই চলে গেলেন।

এখন আমার মনে প্রশ্ন : এতদিন যা প্রচলিত কুসংস্কার বলে ধরে নিচ্ছিলাম , তা কি কঠিন বাস্তব নয় ? স্বপ্ন , কুসংস্কার এবং বাস্তবতার এমন মিশ্রন কিভাবে সম্ভব ?

একটি হতাশাজনক খবর জানিয়ে আমার কথাগুলো শেষ করব। চাচা মারা যাওয়ার পর সাত দিন হয়ে গেল , আব্বুকে নিয়ে আর কোনো স্বপ্নে দেখিনি। কিন্তু গতকাল ই আব্বুকে নিয়ে স্বপ্নে দেখলাম , যে স্বপ্ন কিনা প্রচলিত কুসংস্কারের বেড়াজালে দু:সংবাদ বয়ে আনার জন্য যথেষ্ঠ।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর কাছে একটাই চাওয়া - অতি শীঘ্রই যেন কঠিন কোনো পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। আমীন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৬

কল্লোল পথিক বলেছেন: জগৎ বড় রহস্যময় আপনি ও
না হয় রহস্যের একটা অংশ হয়ে রইলেন।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০০

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: আমি শিহরিত এই রহস্যময়তার অংশ হয়ে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.