নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি চিন্তা করি....সুতরাং আমি অস্তিত্বশীল

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল

একজন সাধারণ মানুষ

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুশোচনা

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৪



ছোট্ট বেলার অনেক অনুশোচনা জাগানো ঘটনা আমাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দেয়। যখন সে সব ঘটনা মনে পড়ে যায় - নিজের অজান্তেই আফসোসে কম্পিত হই।

ঘটনা :১

তখন হয়ত ক্লাস ফাইভ কি সিক্স এ পড়ি। একটা কুকুর পুষতাম। নাম ছিল বুলু। প্রভুভক্ত প্রাণী হিসেবে তার বিশেষণের যথার্থতা এই কুকুরটির কাছ থেকে পাওয়া যেত। যখন ই ডাকতাম কাছে পাওয়া যেত। কিছুদিন পর আরো একটা কুকুর এসে বুলুর সাথে জুটি বাঁধলো। টকটকে লাল সেই কুকুরটাকে ডাকতাম "লালু " বলে।
লালু ও বেশ বাধ্যগত ছিল।

একদিন অলস দুপুরে, বাসার সবাই ঘুম। আমি দুষ্টামি করে বেড়াচ্ছি। বাসার সামনের রাস্তায় হাটছি। এমন সময় খেয়াল করলাম - একটি গুইসাপ হেলে দুলে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি যদিও আমার কোনো ক্ষতি করেনি, তথাপি কি খেয়াল হলো। .......ডাক হাঁকলাম: "বুলু আয় ,...বুলু ছু : ছু :,........." আর অমনি বাধ্যগত বুলু ঝাপিয়ে পড়ল গুইসাপ টির উপর। সাথে যোগ দিল লালু ও। দুটি কুকুর মিলে দু এক বার কামড়ে ও দিল গুই সাপ টা কে। প্রথম প্রথম গুইসাপ টা লেজ নাড়িয়ে প্রতিরোধ গড়তে চেষ্টা করছিল। কিন্তু দু এক কামর খেয়ে দৌড়ে গিয়ে একটা কড়ই গাছে উঠে গেল। কুকুর দুটি নিচ থেকে ঘেউ ঘেউ করছিল সেটার দিকে তাকিয়ে।
হয়ত কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলেও যেত কুকুর দুটো। কিন্তু ,........

আমার ঘাড়ের উপরে তখন যেন শয়তান ভর করলো। ইটের টুকরা হাতে নিলাম। ছুড়ে মারতে লাগলাম গাছে চড়ে হাফ ছেড়ে বাঁচা গুই সাপটার দিকে। প্রথম ঢিল টা লাগলো লেজ এ , তাতে সেটি একটু সড়ে গিয়ে গাছের সাথে লেপ্টে রইলো , আমার দ্বিতীয় ঢিলটি গুই সাপটির একদম পিঠে আঘাত করলো। ধুপ করে পড়ে গেল ,...আর তাতেই কুকুর দুটি আবারও ঝাপিয়ে পড়ল। এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। কুকুর দুটির কামড়ে বেঘোরে প্রাণটা দিতে হলো গুই সাপ টার। আমি হাসলাম তৃপ্তির নিকষ কালো হাসি।

ঘটনা :২

স্কুল ছুটি হয়ে গেছে সকাল ১১ টায়। বাসায় এসেই হালকা নাস্তা খেয়েই বেরিয়ে পরলাম দুরন্তপনায়। বাড়ি থেকে অদুরেই একটি খোলা মাঠের পাশের একটি পেয়ারা গাছে উঠে পেয়ারা খাচ্ছিলাম।

আমার বাল্যকালের এক বন্ধু শামীম তার গরু টা নিয়ে সেই মাঠের দিকেই এগিয়ে আসছিল। গরুকে চড়তে দিয়ে আমরা পেয়ারা গাছে উঠে পেয়ারা খাচ্ছিলাম। মনের মাঝে নানা দুষ্টামি ভর করছিল। শামীম বলল - তুই কি কখনো গরুর কাঁচা দুধ খেয়েছিস? আমি বললাম - "না" .... সে বলল চল খাই। যেই কথা সেই কাজ। তার গরুটার কাছাকাছি আমি গেলাম আর সে গরু হতে দুধ টেনে দিল , আর আমি হা করে কিছুটা খেয়ে নিলাম। খুব মজা পাচ্ছিলাম দুষ্টুমিতে।

কাছেই এক বিদ্যুতের পিলারে ফিঙে পাখির বাসা।আমি কেন জানি সেটার প্রতি বিশেষ আগ্রহ বোধ করলাম। শামীম নিশ্চিত করলো - সেখানে পাখির বাচ্চা ও আছে। মাথায় শয়তান চাপলো।আমি জিদ ধরলাম পাখির বাচ্চা পুষবো।যেই কথা সেই কাজ। আমি আর শামীম মিলে পাখির বাসা লক্ষ্য করে ঢিল মারা শুরু করলাম।

মা পাখিটি বাসায় ছিল না। কয়েক ঢিলেই দুটি বাচ্চা ভূপতিত হলো। আমি একটা আর শামীম নিল আরেকটা। ততক্ষণে মা পাখিটা উপস্থিত। পাখির বাচ্চাটা হাতে নিয়ে দিলাম দৌড়- লক্ষ্য আমার বাসা। আমার মাথায় প্ল্যান হলো : বাসায় পরিত্যক্ত কবুতরের ঘর আছে , সেটাতেই পুষবো পাখির ছানা। অনেকটা দৌড়ে, মাথায় মা পাখিটার ঠোকর খেয়ে অবশেষে আমি সফল। কবুতরের খোপে রাখলাম পাখির ছানা টা। মা পাখিটা আসে পাশেই উড়া উড়ি করছিল।তার আর্তনাদ / আকুতি শোনা আমার কাছে গৌন ই মনে হলো। মুখ্য কাজ হলো পাখি পোষা , আর সেই লক্ষেই আমি পাখির বাচ্চাটার সামনে চাল এনে দিলাম। আমি খেয়াল ই করিনি যে ফিঙে পাখি পোকা মাকর খেয়ে বাঁচে। বাচ্চাটা কিছু খাচ্ছেনা দেখে কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। আসলে কিছুটা মায়া ই লাগলো তখন। খোপের দরজা বন্ধ করলে পাখির ছানা টা না খেয়ে মরবে , আর খোলা রাখলে বিড়াল নিয়ে যেতে পারে। উভয় সংকটে পরলাম আমি। অনেকক্ষণ চিন্তার পর দরজা টা খোলা ই রাখলাম। ভাবলাম মা পাখিটা যেহেতু আশেপাশেই উড়ছে , হয়ত বাচ্চাটাকে নিয়ে যেতে পারবে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। মা পাখিটা ছানাটির কাছে একটু পর পর উড়ে আসতে লাগলো। কিন্তু নিয়ে যেতে পারছিল না। আমার তখন সেদিকে খেয়াল করার সময় নাই , লাটিম ,ডাঙ্গুলি খেলায় ব্যস্ত হয়ে পরলাম।

পরদিন সকাল বেলা। হটাথ মনে হলো পাখির ছানাটির কথা : গিয়ে দেখলাম কবুতরের খোপ টি খালি। আশেপাশে তন্ন তন্ন করে খুজলাম। নাহ ,.. পেলাম না। বেড়ার ওপারে হটাথ চোখ গেল। দেখলাম পাখির ছানাটির পালক এক জায়গায় জড়ো হয়ে পরে আছে। আমার বুঝতে বাকি রইলো না - ছোট্ট পাখির ছানাটির কি পরিণতি হয়েছিল।মন খারাপ লেগেছিল।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------

আমি বুঝতে পারিনি কতটা নির্দয় ছিল আমার ১১/১২ বছরের কোমল হৃদয়। তবে এখন উপলব্ধি করি আর অনুতপ্ত হই। এটি শুধুমাত্র দুটো নিম্ন শ্রেনীর প্রাণীর (কুকুর এবং গুইসাপ) মারামারি কিংবা নিতান্তই একটি পাখির ছানার মৃত্যুর কোনো ঘটনা নয়। এ ছিল আমার ই দ্বারা সংঘটিত ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞ। দৃষ্টিভঙ্গি হোক কিংবা ভেতরকার অনুভূতির পরিবর্তনের মাধ্যমে হোক - আমার মধ্যে পাপ উপলব্ধি জাগ্রত হয়েছে।মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৫

কল্লোল পথিক বলেছেন: চমৎকার হয়েছে।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫১

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৩

বিদ্যুৎ বলেছেন: ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য। আমারও ছোটবেলার এমন অনেক ঘটনা বা স্মৃতি আছে। আমার মনে হয় আমার আপনার মত গ্রামে বেড়ে ওঠা প্রায় সবার শৈশবেই কমবেশি এমন ঘটনা আছে। সত্যিই এখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। আপনার সুন্দর লেখাটি পড়ে আবার মনে পড়ে গেলো সেই সব দিনের নানা দুষ্টামির কথা। তখন আমরা না বুঝে এসব করেছি, প্রার্থনা করি মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবার অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৪

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: আমীন

৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অনুশোচনা পাপ খন্ডায় :)

+++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.