নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, উইকিপিডিয়ান, শখের পরিব্রাজক আর সৌখিন লেখক এই মোর পরিচয়।

এফ রহমান

নিজেকে সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক ভাবি। পড়িই বেশী। মাঝে মাঝে লেখার ব্যর্থ চেষ্টা করি।

এফ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্রুজ - মধ্যপ্রাচ্যের একটি ধর্ম

২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৪৮

দ্রুজ ( আরবী-درزي, দারজি অথবা দুরজি, বহুবচন دروز, দুরুজ; হিব্রু: דרוזים, "দ্রুজিম") একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম এবং সামাজিক সম্প্রদায়। দ্রুজদের আবাসভূমি সিরিয়া, লেবানন। ইসরাইল, এবং জর্ডান│জর্ডানে। দ্রুজ ধর্মকে আলাদা ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় না। কারণ এই ধর্মের ভিত্তিমূল ইসলাম। দ্রুজ ধর্ম মূলত শিয়া ইসলামের একটি শাখা। দ্রুজদের ধর্ম বিধানে ইব্রাহিমীর ধর্মসমূহের পাশাপাশি নিওপ্লাতিনিক এবং পিথাগোরীয় মতবাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। দ্রুজগণ নিজেদেরকে “আহলে তাওহীদ” (একেশ্ববাদী মানুষ বা একতাবদ্ধ মানুষ) অথবা “আল মুয়াহিদুন” বলে পরিচয় দেয়। লেভান্ত বিশেষ করে লেবাননের ইতিহাস গঠনে দ্রুজদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুজদের সামাজিক রীতিনীতি মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের থেকে ভিন্ন।



বসবাসঃ

দ্রুজ অনুসারীগণ প্রধানত সিরিয়া, লেবানন, জর্দান এবং ইসরাইলে বসবাস করে। ‘‘ইনস্টিটিউট অফ দ্রুজ’’ এর গবেষণা থেকে জানা যায় ৫০-৫৫% দ্রুজ সিরিয়ায়, ৪০% লেবাননে, ৬-৭% ইসরাইলে এবং ১-২% জর্দানে বাস করে।

মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুজ অনুসারীগণ বাস করে। দ্রুজগণ আরবীতে কথা বলে এবং প্রাচ্যীয় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সামাজিক রীতিনীতি অনুসরণ করেন। পৃথিবীতে দ্রুজ অনুসারীগণের সংখ্যা দশ লাখেরও বেশী।



নামের উৎস

দ্রুজ নামটি এসেছে মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল নাশতাকিন আদ-দারাজীর নাম থেকে। দারাজী শব্দটি ফারসি। আদ-দারাজী ছিলেন প্রাক দ্রুজ যুগের একজন সাধু ও প্রচারক। দ্রুজগণ আদ-দারাজীকে ধর্মগুরু মানে এবং নিজেদেরকে দ্রুজ বলে পরিচয় দেয়।



প্রথম দিকে আদ-দারাজী গোপনে তার মতবাদ প্রচার করতেন। তিনি প্রচার করতেন সৃষ্টিকর্তা মানুষের মাঝে বিরাজ করেন। বিশেষ করে হযরত আলী (রাঃ) এবং তার বংশধরদের মাঝে। তৎকালীন খলিফা আল-হাকিম বি-আমর আল্লাহ’র মাঝেও সৃষ্টিকর্তা আছেন বলে প্রচার করেন। আদ দারাজী নিজেকে ‘বিশ্বাসের তরবারি’ ঘোষণা করেন।



১০১৬ সালে আদ দারাজি এবং তার অনুসারীগণ প্রকাশ্যে তাদের বিশ্বাস প্রচার করতে শুরু করেন এবং জনসাধারণকে তাদের এই ধর্মমত গ্রহণের ডাক দেন। কায়রোতে তাদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা শুরু হয়। এই কারণে প্রায় বছরখানেক আদ-দারাজীর কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

১০১৮ সালে আদ-দারাজী আততায়ীর হাতে নিহত হন। কোন কোন উৎস দাবী করে যে তিনি আল-হাকিম বি-আমর আল্লাহ’র হাতে নিহত হন।



আবার কারো কারো মতে দ্রুজ শব্দটি এসেছে আরবী দারেশাহ(যিনি শিক্ষাগ্রহণ করেন) থেকে।[১৬] একমাত্র আরব ঐতিহাসিক খ্রিস্টান মনিষী ‘এন্তিওখ এর ইয়াহিয়া’ খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে স্পষ্টভাবে মত প্রকাশ করে গেছেন দ্রুজ সম্প্রদায় আদ-দারাজীর হাতে তৈরী হয়। বেঞ্জামিন টুডেলা একজন ইহুদি ভ্রমনকারী প্রথম ইউরোপীয়ান হিসেবে ১১৬৫ সালে লেবানন অথবা এর আশপাশ অতিক্রম করার সময় দ্রুজদের দেখা পান। তিনি দ্রুজদের দগজিইন নামে সম্বোধন করেন। তিনি বর্ণনা করেন দ্রুজরা পাহাড়চারী একেশ্বরবাদী জাতি যারা পরমাত্মায় বিশ্বাস করে।



প্রাক ইতিহাস

দ্রুজ বিশ্বাস ইসমাইলি মতবাদের সংস্পর্ষে এসে আন্দোলনে রূপ নেয়। ইসমাইলি মতবাদ গ্রীক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত এবং সেই সময়ের অনেক ধর্মীয় এবং দার্শনিক মতের বিরোধীতা করতো। ইসমাইলি মতের একজন সমর্থক হামজা ইবনে-আলী ইবনে-আহমাদ এই বিশ্বাস প্রচার শুরু করেন। তিনি ১০১৪ সালে ইউরোপে আসেন এবং আল-হাকিম মসজিদের নিকটবর্তী রিদান মসজিদে তিনি মনিষী এবং নেতাদের জমায়েত করেন। ১০১৭ সালে হামজা আনুষ্ঠানিকভাবে দ্রুজ বিশ্বাস এবং ইউনিটারিয়ান মতবাদ প্রচারণা শুরু করেন। হামজা ফাতিমিয় খলিফা আল-হাকিমের সমর্থন লাভ করেন। তিনি ধর্ম প্রচারের স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি ডিক্রি জারী করেন।



আলহাকিম দ্রুজ বিশ্বাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে পরিণত হন। যদিও তার নিজ ধর্মবিশ্বাস নিয়ে শিক্ষাবিদদের মাঝে মতদ্বৈততা আছে। জন এসপোসিতো বলেন, আল হাকি বিশ্বাস করতেন, তিনি শুধু মাত্র দৈবভাবে ধর্মীয়-রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নিযুক্ত নন, তিনি মহাজাগতিক শক্তি যিনি ঈশ্বরের সাথে যুক্ত। অনেক দ্রুজ এবং অদ্রুজ স্কলার যেমন সামি সোয়াদ এবং সামি মাকারেম বলেন প্রাক ধর্ম প্রচারক আদ-দারাজীর ভূমিকা ছিলো ধোঁয়াশাপূর্ণ। আল-হাকিম আদ-দারাজীর দৈবত্বকে প্রত্যাখান করনে। এবং হামজা ইবনে আলীকে সমর্থনের মাধ্যমে তিনি নিজের মত প্রকাশ করেন।



একরাতে সান্ধ্যকালীন ভ্রমণে বেরিয়ে আল-হাকিম নিখোঁজ হয়ে যান। ধারণা করা হয় তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন। খুব সম্ভবত তার বড় বোন সিত্তাল-মুলক এই হত্যাকান্ডের পেছনে ছিলেন। হামজা ইবনে আলীর পরে দ্রুজ আন্দোলন আল মুক্তানা বাহাউদ্দিনের নতুন উদিয়মান নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।





বিশ্বাসের সমাপ্তি

আলহাকিম নিখোঁজ হওয়ার পরে তার অপ্রাপ্তবয়স্ক পুত্র সন্তান আলী আজ-জহির সিংহাসনে উপবেশন করলে ফাতিমিয় খিলাফাতের সমর্থনে চলমান দ্রুজ মুভমেন্ট আজ-জহিরকে খলিফা হিসেবে মেনে নেয় কিন্তু হামজাকে ইমাম (নেতা) হিসেবে অনুসরণ করা শুরু করে। নাবালক খলিফার অভিভাবক সিত্তাল-মুলক ১০২১ সালে সেনাবাহিনীকে এই আন্দোলনকে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। একই সময়ে হামজা বিন আলী বাহা আদ-দ্বীন আস-সামুকি কে ইউনিটারিয়ান মুভমেন্টের নেতৃত্ব প্রদান করেন। পরবর্তী সাত বছর দ্রুজ অনুসারীগণ চরম নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যার শিকার হন। নতুন খলিফা জহির এই বিশ্বাসকে মুছে ফেলতে চেয়েছেন।এটা ছিলো ফাতিমিয় সাম্রাজ্যে ক্ষমতার যুদ্ধের ফলাফল। কারণ দ্রুজ অনুসারীগণ আলী আজ-জহিরকে তাদের ইমাম হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। অনেক গুপ্তচর বিশেষ করে আদ-দারাজীর অনুসারীগণ ইউনিটারিয়ান আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়। গুপ্তচরগণ মূলত বিভিন্ন ঝামেলার সৃষ্টি করে দ্রুজ মতবাদের সম্মানহানীর চেষ্টা করতো।



নতুন খলিফা এরই সূত্রধরে দ্রুজ সম্প্রদায়ের উপর সেনা লেলিয়ে দেন। এন্তিওখ থেকে আলেক্সান্দ্রিয়া পর্যন্ত ফাতিমিয় সেনাবাহিনীর হাতে প্রায় দশহাজার দ্রুজ অনুসারী নিহত হয়। বৃহত্তম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয় এন্তিওখে। সেখানে ৫০০০ দ্রুজ ধর্মীয় নেতাকে হত্যা করা হয়। এর ফলে দ্রুজ অনুসারীগণ আত্মগোপন করে। যারা ধরা পড়তো তাদেরকে বলপূর্বক ধর্মত্যাগে বাধ্য করা হত অথবা হত্যা করা হত। দক্ষিণ লেবানন এবং সিরিয়াতে কিছু দ্রুজ টিকে থাকতে সমর্থ হয়। আজ-জজিহের মৃত্যুর দুই বছর পরে ১০৩৮ সালে দ্রুজ আন্দোলন আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।



পরিশিষ্টঃ

লেবানন, সিরিয়া এবং ইসরাইলে দ্রুজগন আলাদা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে স্বীকৃত। দেশের প্রতি দ্রুজদের আনুগত্য এবং ভালোবাসা প্রবল। নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি দ্রুজগণ খুবই সহমর্মী। দেশে বিদেশে যেখানেই হোক দ্রুজগণ একে অন্যের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে। দ্রুজদের ক্ষমতার ইতিহাস আছে। এবং লেভান্তে বসবাসকারী অন্য সম্প্রদায়ের তুলনায় দ্রুজরাই সব থেকে বেশী স্বাধীনতা ভোগ করেছে। দ্রুজদের ধর্মগ্রহন্থের নাম কিতাব আল হিকমাহ বা রাসাইল হিকমাহ (আরবীঃ رسـائـل الـحـكـمـة, বাংলাঃ জ্ঞানের বই)।



দ্রুজ সম্পর্কিত নিবন্ধটি এখনো লিখে শেষ করতে পারিনি। উইকিপিডিয়াতে লেখাটির ঠিকানাঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/দ্রুজ



আমার ওয়েবসাইটঃ http://www.frahaman.com



কেমন লাগলো জানাতে ভূলবেন না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৩০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভালই। ইন্টারেস্টিং লেখা।

২১ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:০৭

এফ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ প্রফেসর সাহেব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.