![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছেলেটি উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ছাত্র। উচ্চ-মধ্যবিত্ত ছাত্র বলতে বোঝানো হচ্ছে ফার্স্ট-সেকেন্ড নয় তবে মিডিয়ামের চেয়ে একটু ভালো। ক্লাস ফাইভে ওঠার পরে ছেলেটিকে বলা হলো, এই বছরটা জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়। খেলাধুলা, কার্টুন-সিনেমা সব একবছরের জন্য বাদ দিতে হবে; যথারীতি ছেলেটি সব বাদ দিলো। ঝলক, স্টার, গ্যালাক্সি তিনটা বৃত্তি গাইড ব্যাগে নিয়ে ছুটতে থাকলো দিন-রাত। ক্লাস ফাইভ পার হলেও ছেলেটির ছোটা শেষ হল না। বলা যায় শুরু হল মাত্র।
ক্লাস সিক্সেও একই উপদেশ, ক্যাডেটে ভর্তি হলেই জীবন পরিষ্কার। অনেক বন্ধুরা যখন পড়াশোনার চেয়ে খেলায় সময় দিত বেশি, ছেলেটি তখন মুখস্ত করেছে মাদার তেরেসার আসল নাম কি, হিমালয়ের গঙ্গোত্রী নামক হিমবাহ থেকে কোন নদীর উৎপত্তি, চৌধুরী এন্ড হুসেইনের বইয়ের ইংরেজী গ্রামার।
যেহেতু আমরা গল্প লিখছি তাই নিজেদের ইচ্ছে মত আমরা ছেলেটিকে বিশ্রাম দিতে পারি। ধরি ক্লাস সেভেন ছেলেটির মোটামুটি আরামেই কাটলো। তবে আসল দৌড় শুরু হলো ক্লাস এইট থেকে।
ক্লাস এইটঃ সামনে বৃত্তি পরীক্ষা। সব বাদ। শুধু পড়া।
ক্লাস নাইনঃ সামনে এসএসসি। সব বাদ। মেয়ে থেকে সাবধান।
ক্লাস টেনঃ প্রিটেস্ট, টেস্ট, মডেল টেস্ট, কোচিং, প্রাইভেট ইত্যাদি।
একাদশ-দ্বাদশ-ভর্তি পরীক্ষাঃ এসএসসি কিছুই না। ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হলেই সফল। মেয়ে থেকে সাবধান।
ধরি এবার ছেলেটি ভালো কোথাও চান্স পেয়ে গেছে। শুভাকাঙ্খিদের পরামর্শমত তখন ছেলেটির আরামের দিন শুরু হওয়ার কথা। প্রেম, আড্ডা সব কিছুর সময় তো ভার্সিটিতেই। কিন্তু গল্পটিকে আর বড় করার জন্য আমরা ছেলেটিকে আরও একটু বাজিয়ে দেখতে চাই।
ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পড় ছেলেটির কাছে তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের দাবি, এবার তাকে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হয়ে টিচার হতে হবে।
যথারীতি ছেলেটি আবার দৌড় শুরু করলো। পরে অবশ্য ছেলেটি বুঝতে পেরেছিল তার মত সবাই দৌড় দিয়েছে।
যাই হোক এরপর ছেলেটির পড়া শেষ। চাকরি পেতে হবে। ব্যাচমেটদের মাঝে সবার আগে চাকরি দরকার। আবার ভালো চাকরিতো বটেই। ধরি, ছেলেটি এবার ভালো একটি চাকরি পেল এবং তার পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।
গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারত...............।
আবার এই ভাবেও শেষ হতে পারত.........
জীবনের ম্যারাথনে দৌড়াতে দৌড়াতে ব্যস্ততা জিনিসটি ছেলেটি এতদিন না বুঝলেও এবার ঠিকই টের পেলেন। পকেটে টাকা আছে অথচ বাবাকে স্যান্ডেল কিনে দেওয়ার সময় নাই, মোবাইলে ব্যালেন্সের অভাব নেই অথচ প্রিয়জনদের একমিনিট ফোন করা হয় না। স্ত্রীর সিজারের সময় ছেলেটির আফিসে জরুরী কাজ থাকে।ইত্যাদি, ইত্যাদি।
ছেলেটির কি এমন জরুরি কাজ থাকে যে, জ্বরের মধ্যেও অফিস করতে হয়; ছুটি নেয়া যায় না?
ছেলেটির কি এমন জরুরি কাজ থাকে যে, অপারেশান থিয়েটারে স্ত্রী কে রেখে তাকে ল্যাপটপ কাধে নিয়ে ছুটতে হয় অফিসে?
এই প্রশ্নগুলো তার পরিবারের বাকি সদস্যদের মনে দানা বাধতে থাকে।
শুধু দানা বাধে না। মাঝে মাঝে বিস্ফোরণ ঘটে।
ছেলেটির বাবা হয়ত একদিন আক্ষেপ করে বলে, "এত কষ্ট করে ছেলেকে জজ ব্যারিষ্টার বানিয়ে কি হলো, অমুকের ছেলে মুদির দোকানদার হলেও বাবা-মা'কে পুজো করে, আমার ছেলে আমার সাথে বসে ভাত খাওয়ার ও সময় পায় না "
অথচ কেউ বুঝলো না যে, এই হাজার হাজার সফল অমুকের ছেলের মত হতে গিয়েই তার ছেলে আজ সিস্টেমে বন্দি।
ছেলেটির স্ত্রী হয়ত একদিন ফেসবুকে হতাশামাখা স্ট্যাটাস দিয়ে বলবে, " এত টাকার আমার দরকার ছিলো না, আমার স্বামী যদি আমাকে আরেকটু সময় দিত"
অথচ বিয়ের আগে যদি ছেলেটির এই বড় চাকরিটি না থাকত তবে এই মেয়েই, ছেলেটিকে হয়ত বিয়েই করতো না।
আসলে তাদেরও দোষ নেই। তারাও সিস্টেমে পড়ে গেছে।
বাবা-মা চায়- তার সন্তান সবার সেরা হোক।
স্ত্রী চায়- তার স্বামী সেরা হোক।
সন্তান চায়- আমি যেন আমার বাবা-মা ও পরিবারকে সুখে রাখতে পারি।
কিন্তু আমরা সবাই সিস্টেমে পড়ে গেছি। কর্মক্ষেত্রে আপনি যত বড় পজিশনে আছেন আপনার দায়িত্ব তত বেশী। তাই ব্যস্ততাও বেশী।
এটা আমাদের সিস্টেম। সিস্টেমের এই জাল থেকে বের হতে পারেনাই এই প্রজন্ম, তার আগের প্রজন্ম, হয়ত সহজে বের হতে পারবেনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মও।
তবে আমাদের প্রত্যাশা আমরা দ্রুত এই জাল থেকে বেরিয়ে আসব।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০০
বিজন রয় বলেছেন: তবে আমাদের প্রত্যাশা আমরা দ্রুত এই জাল থেকে বেরিয়ে আসব।
তাই হোক।