নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেউ না জানুক।

নূরূল ইমরান

বেবাক বিবাগী

নূরূল ইমরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিংক সিটিতে একদিন !

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৬



“বাড়ির কাছে আরশী নগর
সেথা পড়শী বসত করে-
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”

লম্বা একটা ঘুম দিয়ে সন্ধ্যার আগে আগে উঠলাম। মোবাইলে দেখি Vodaphone এর ম্যাসেজ; ওয়েলকাম টু Vodaphone, রাজস্থান। কেউ বলেনি, কোথাও পড়িনি, কারো কাছে শুনিনি, তবুও কিভাবে কিভাবে যেনো জানতাম, রাজস্থানে মরুভুমি আছে। আমি গরমে চরমে অতিষ্ঠ হয়ে মাইন্ড সেট করে রেখেছিলাম ঘুম থেকে উঠে মরুভুমি দেখব। কোথায় কি? উঠে দেখি চারপাশে মলিন সবুজের মেলা। এক সপ্তাহের বৃস্টি পেলেই গা ধুয়ে উঠবে। সবুজ কেটে বানানো আঁকাবাঁকা রাস্তা। সবচেয়ে যে বিষয়টা বেশি আকর্ষণ করলো, সেটা হলো চারপাশে কেমন একটা গোমট দীনতার ছাপ। রাজকোট, আহমেদাবাদ এর ঝলকানো তকমা ছেড়ে এই মন খারাপ মার্কা মলিনতায় মনটা কেমন ইয়ে হয়ে গেলো। শহরের নাম, সিরোহী – এ রয়াল সিটি।

পাওভাজি আর চা দিয়ে ডিনার সেরে শহর নিয়ে পড়লাম ঘন্টাখানেক। নবাবের মতন ডাবল স্লিপারে হেলান দিয়ে রিডিং লাইট নিভিয়ে, চার্জার আর ওয়াইফাই দিয়ে বেমানান মাংসাশী প্রাণীর মতন সবুজ চিরে চলছি আজমীর শরীফ। রক্সটার মুভির কিছুটা বাকি আছে এখনো। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে আটটার মত বাজে। আজমীর পৌছাতে রাত ১টার মতন বাজার কথা। বাজেট ভাই তার মানসম্মান বাচানোর জন্য হোটেল না নেবার জন্য খুব করে বলেছিলো। গতরাতের বৃস্টি আর আজকের সারাদিনের হাটাহাটি তে শরীর সে কথা শুনবে বলে মনে হচ্ছে না। রাজকোটে শুনেছিলাম ৩০০ রুপিতে দরগাহর আশেপাশে এসি রুম পাওয়া যায়। পেলে ভালো, না হলে আজকের রাতটাও বাইরেই কাটাতে হবে। ওরশ ছাড়া নরমালি রাত ১০ টায় দরগাহ বন্ধ করে দেয়।

গামছায় মাথা ঢেকে ফের ঘুমিয়ে পড়লাম দুইদিনের ক্ষিদা নিয়ে। দোতলার স্লিপারে বাসের জানালায় মাথা গুজে। বাইরে পিচ ঢালা অন্ধকার, কুচকুচে, নিকষ। মাঝে মাঝে দূরে দুই একটা বাতি চোখে পড়ছে। জেগে জেগে ঘুমের ঘোরে কেমন খাপছাড়া ভাবনার ভীড়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম। আজমীর শরীফ যাবার জন্য হাইওয়ের মাঝখানে একটা ক্রসিং এ বাস যখন দাঁড়ালো, বাইরে তখন মুশুল বৃস্টি। মোবাইলে রাত ১২ টার বেশি বাজে তখন। এখান থেকে অটোতে দরগাহ তে যাওয়া যায় অথবা এখানেই কোনো একটা হোটেলে রাতটা থাকা যায়। বাসের চতুর হেলপার পরামর্শ দিয়েছিলো, “মাত যাও, ঊধার তুমকো লুট লেগা”। কি মনে করে তাই আর বাস থেকে ক্লান্তিতে নামলাম না। মন সায় দিচ্ছিলো না। বাকি পথ টা বাসের সামনেই হেলপার, সুপারভাইজার দের সাথে আলাপ করে কাটিয়ে দিলাম। কেউ বলেছিলো, আজমীর শরীফ গেলে আমার জন্য দোয়া কইরো। আজমীর শরীফ আর যাওয়া হলো না, দোয়া করা হলো মনে মনে।

আমার যাত্রা শুরু হয়েছিলো রাজকোট থেকে। ওখান থেকে রাতের বাসে আহমেদাবাদ। এরপর সারাদিন-সারারাত আহমেদাবাদের পথে, সবরমতী নদীর ঘাটে আর বাপুজীর আশ্রমে কাটিয়ে পরদিন দুপুর নাগাদ এই জয়পুরগামী বাসে উঠি। গন্তব্য ছিলো আজমীর শরীফে নেমে যাবো। এখন আর হচ্ছে না বিধায় সরাসরি জয়পুর যাওয়া হচ্ছে। জয়পুরে পৌছালাম রাত ৩টার দিকে। একটা ফ্লাইওভারের নিচে নামিয়ে দিলো বাস। ডানে বামে তাকিয়ে বুঝলাম এটাই বাস টার্মিনাল। দুই দিনের অভুক্ত থাকায় সোজা খাবারের দোকানের দিকে গেলাম। নন-ভেজ কিছুই পেলাম না। আশে পাশের সব বাসের ড্রাইভার, হেলপার, অটোয়ালা, রিক্সায়ালা, নিশিকন্যারা হঠাৎ করেই যেনো আমাকে হোটেল সাধার জন্য তৎপর হয়ে উঠলো। দুইএকজনকে কিছুতেই পিছু ছাড়াতে পারছিলাম না। এক প্যাক গোল্ডফ্লাক আর এক কাপ চা নিয়ে বৃস্টি সাটকে গুগল ম্যাপস নিয়ে বসলাম এক কাঠের বেঞ্চিতে, পাশেই সেই হোটেলের দালাল। গভীর মনোযোগ দিয়ে আমার প্রতিটি কার্যালাপ পর্যবেক্ষন করছে। উপলদ্ধি করলাম আরেকবার এত ভীড়ের মধ্যেও আমি কতটা একা। নিজের ক্ষুদ্রতা আর অসহায়ত্বটাকে ব্যাপকভাবে উপলদ্ধি করছিলাম।

ফেসবুক খুলে চেকইন মারতেই ইনবক্সে এক পরিচিত বাংলালিংক সহকর্মীর ক্ষুদেবার্তা আর সতর্কবানী পেলাম। চায়ে চুমুক দিতে দিতে শুনলাম কিভাবে উনার ফ্যামিলির সামনেই বছর কয়েক আগে ঠিক এখান থেকেই উনার পাসপোর্ট, মোবাইলসহ ব্যাগ ছিনতাই হয়েছিলো। শুনে আরাম পেলাম খুব; পাশের জন তখনো আমাকে শেষ মুহুর্তের হোটেল গছানোর চেস্টায় ব্যাস্ত। ঘুরে বসলাম, একটা গোল্ডফ্ল্যাক তাকে সেধে আমার গল্পের ভান্ডার খুলে বসলাম তাঁর সাথে। কন্যা তখন আমস্টারড্যাম থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট হয়ে জুরিখের পথে, আর আমি পিংক সিটি খ্যাত জয়পুরে। হোটেল তবুও নিচ্ছিনা দেখে লোকটা বিরক্ত হয়ে চলে গেলে একটু অবসর মিললো। রোমটুরিও, ট্রিপএডভাইজার আর লোনলিপ্লানেট ঘেটে ভোর হবার আগেই সারাদিনের প্ল্যান ঠিক করে ফেললাম। টং দোকানের মামার পরামর্শও অনেক কাজে লাগলো। ঠিক হলো সবার প্রথমে সেখানেই যাবো যেটা সবচেয়ে দূরে।

জয়পুর নিয়ে ঘাটাঘাটি আমার এই প্রথম, আর প্রথম ঘাটাঘাটিতেই নজর কাড়লো আমীর ফোর্ট। দোকানী মামা নিজেই একটা অটো ৪০০ রুপীতে ঠিক করে দিলেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে আমীর ফোর্ট খোলে। আমি ৭টা নাগাদ পৌছে যাবো। গুগল বলছিলো, জয়পুরের যেখানে আছি, সেখান থেকে আমীর ফোর্ট ১১ কিমি। নিশ্চিত হবার জন্য তাই অটোয়ালা ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম আমার বিশ্বজয়ী হিন্দিতে। শুনলাম আমীর ফোর্ট ৩০-৪০ মাইল দূরে। পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম এবার। কেলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম হেঁটে যেতে কতক্ষন লাগবে? অটোয়ালা বললো হেঁটে যেতে পারবো না, সকাল ৭ টার দিকে ২ নাম্বার বাস যায়। ঐ বাসে যেতে ১৫ রুপী লাগবে। কিছু খাবার কিনে গুগলের দেখানো পথে রওনা দিলাম পায়ে হেঁটে।

আলো তখনো ফোটেনি।



পুনশ্চঃ
আমীর ফোর্ট থেকে নাহারগড় ফোর্টে যাবার জন্য দুই কিমি একটা গোপন টানেল আছে। মেয়েদের মহলের পেছনে, যেটা মাঝপথে বন্ধ। মশালের আলোর অন্ধকারে মাটির নিচের এই পথ দিয়ে আমীর ফোর্ট থেকে নাহারগড় ফোর্টে একটা সময় যাওয়া যেতো। বিপদে, যুদ্ধে জরূরীভিত্তিতে নারী-শিশুদের পলায়নের জন্য হয়তো এই পথ এককালে ব্যাবহৃত হতো। আমার বিশ্বাস মাটির নিচ দিয়ে অন্ধকারে যেতে যেতে ধীরে ধীরে পাহাড়ের চুড়ায় নাহারগড় ফোর্ট দিয়ে বের হওয়াটা ঐ যুদ্ধের সময়েও সমান উপভোগ্য ছিলো। এই টানেলের ব্যাপারটা আমি সেদিন জানতাম না। আমার প্রিয় আফসোসগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। বছরদুয়েক আগে আমীর ফোর্ট থেকে জয়গড় ফোর্টে যাবার ৩২৫ মিটার দৈর্ঘের একটা ওপেন এয়ার টানেল ভ্রমনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

ছবিঃ ইন্টারনেট

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লাগল।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২০

নূরূল ইমরান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: একদমই আলাদা স্বাদের ভ্রমন গল্প
ভালোলেগেছে +++++

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩১

নূরূল ইমরান বলেছেন: ধন্যবাদ মনিরা আপা। অনেক বছর লিখলাম। আপনার কমেন্ট পেয়ে ভালো লাগছে। পরিচিত মুখ।

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৬

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: এমন ভ্রমণ পোষ্টে অনেক ছবি না থাকলে ভালোলাগে না, পিংক সিটি যাওয়ার অপেক্ষায় আছি।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

নূরূল ইমরান বলেছেন: ভালো বলেছেন সাদা ভাই। আমার ক্যামেরা নেই, পাওয়ার ব্যাংক নেই। মোবাইলে চার্জ বাচিয়ে বাচিয়ে ব্যাবহার করেছি শুধু পথের নির্দেশনার জন্য। তাই ছবি খুব একটা তুলতে পারিনি। ভ্রমনসঙীও কেউ ছিলোনা। ইনশাআল্লাহ পরের বার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.