![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৩১ জুলাই, ২০১১। বিশিষ্ট্য ইসলামী চিন্তাবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য হযরত মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ. এর ইন্তেকালের ৩ বছর পূর্ণ হবে। ২০০৯ সালের ৩১ জুলাই এই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে, আমাদের ছেড়ে পরকালের সফর শুরু করেন আমাদের সকলের প্রিয় নি:স্বার্থ, নিরহংকারী দ্বীনের এই মহান দায়ী। গত দুই বছরের ন্যায় এবারও হয়তো অনেকটাই নীরবে, নিভৃতে কেটে যাবে আমাদের সকলের প্রিয় এই শাইখের মৃত্যু বার্ষিকী।
হযরত মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ. ১৯৪৪ সালে কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে কিশোরগঞ্জ জামিয়া ইমদাদিয়া থেকে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করে মাওলানা সনদ লাভ করেন। শিকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু। রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটেছিল বাংলাদেশ নেযামে ইসলাম পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকেটে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন। কওমী মাদ্রাসা শিাবোর্ড বেফাকের ভাইস চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
শাইখের সাথে আমার পরিচয়ের সূত্রপাত ২০০৪ সালে। আমি সে বছর মাদ্রাসায়ে দারুল উলূম, মিরপুর-৬ এ জামাতে জালালাইন এ পড়ার জন্য ভর্তি হই। তিনি তখন অত্র মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল। এই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে জানতে পারি সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মুহতামিম পদ নিয়ে অনেক ঝামেলার পর শেষ পর্যন্ত কমিটি ও সকল শিক সর্ব সম্মত হয়ে শাইখকে অত্র মাদ্রাসার দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য বিনীত নিবেদন করেন। কোন ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ইলেক্টেড হয়ে নয়, তিনি ছিলেন সকলের সিলেক্টেড প্রিন্সিপ্যাল। এখানকার বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা নিরসনের জন্য সকলে তাকে বিনীত অনুরোধের মাধ্যমে সসম্মানে মুহতামিম হিসেবে তাকে নিয়ে আসেন।
ছাত্র জীবনে অনেক মাদ্রাসা থেকে ইলম হাসিলের সুযোগ হয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক দূর্বলতার কারণে সব সময়ই আমি শিক্ষকদের থেকে একটি দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম। কিন্তু এখানে ভর্তি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আমার সারা জীবনের চলমান একটি ধারায় যেন ছন্দ পতন ঘটে। এই শায়খের মাঝে বেশ কিছু বিশেষ গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য আমার চোখে পড়লো। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো সপ্তাহে একদিন মাদ্রাসার মসজিদে শায়খের তাফসির পেশ করা। গতানুগতি সুরেলা ওয়াজ কিংবা কিচ্ছা-কাহিনী নির্ভর আলোচনার পরিবর্তে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শায়খের তত্ত্ব ও তথ্যবহুল পান্ডিত্যপূর্ণ আলোচনা সত্যিই অবাক করার মতো ছিলো। বলতে দ্বিধা নেই, আমার চিন্তা শক্তির দুয়ার উন্মোচন এবং গতানুগতিক ভাবনার বাইরে নিজ বিবেককে আরো সম্প্রসারিত করার ক্ষেত্রের প্রিয় শায়খের এক একটি আলোচনা অত্যন্ত রেখাপাত করে। এভাবে ধীরে ধীরে এক সময় আমার অজান্তেই নিজ মনের গভীরে, সম্মান ও মর্যাদার শীর্ষ চূড়ায় শায়খের অবস্থান অনুভব করি। এরপর শায়খের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক ছিলো অনেক দিন। একেবারে ইন্তেকালের কিছুদিন র্পূব পর্যন্ত।
এক সময় মাদ্রাসায়ে দারুল উলূম, মিরপুর ৬ -এর এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে আসেন শায়খ। যা ছিলো অত্যন্ত দু:খজনক একটি অধ্যায়। এই ঘটনার পেছনের অনেক ঘটনা শায়খ আমাকে সরাসরি বলেছিলেন। কিন্তু শুধু আফসোস আর দু:খ করা ছাড়া কিছুই করার ছিলো না। তার অনেক ভবিষ্যতবাণীও বাস্তবে প্রতিফলিত হওয়া স্বচক্ষে অবলোকন করেছিলাম। মূলত: যার কারণে শায়খ তার প্রিয় এই প্রতিষ্ঠান হতে রাগ করে চলে আসেন, তিনিও কিন্তু বেশি দিন ছিলেন না। মাত্র অল্প দিনের ব্যবধানে তিনিও চলে যান পরপারে। কিন্তু আফসোস! পার্থিব এই জীবনের ক্ষণস্থায়িত্বের চিন্তা মানুষের প্রত্যাহিক কর্মেক্ষেত্রে অনেক সময়ই প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
সর্বদা সদালাপী ও নরম হৃদয়ের অধিকারী এই মহামানবের সান্নিধ্যে আসলে খুব অল্পতেই যে কেউ মুগ্ধ হতো যেতো। হৃদয়স্পর্শী, তত্ত্ব ও তথ্য বহুল তার আলোচনা বিমোহিত করতো দর্শক-শ্রোতাবৃন্দকে। ইসলামের বিভিন্ন বিষয় অত্যন্ত সহজ ও সাবলীলভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রের তার কোন তুলনা ছিলনা। তার মতো মহান হৃদয়ের ও উদার মনের মানুষ খুব কমই চোখে পরে। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু কারণে কেউ কেউ তাকে বাঁকা চোখে দেখলেও তার মহানুভবতা ও অনস্বীকার্য গুনাবলীর কথা সকলেই অকপটে স্বীকার করতো।
উম্মাহ্র কল্যাণ ও উলামায়ে কিরামের ঐক্যের ব্যাপারে আমরণ সীমাহীন পরিশ্রম করে গেছেন তিনি। তার আমরণ একটি আন্তরিক ইচ্ছা ছিলো, সকল উলামায়ে হককে একটি প্লাটফরমে নিয়ে আসা। কিন্তু তার জীবদ্দশায় এটি সফল হয় নি। জানি না, কবে উলামায়ে কিরাম জাতিকে একটি বৃহৎ ঐক্য উপহার দিতে পারবেন।
দীনের এমন একজন অকান্ত দায়ী, আলেম সমাজের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহান এই শায়খের শূন্যতা অনন্তকাল পর্যন্ত অনুভূত হতে থাকবে। আমরা মহান আল্লাহর কাছে তার আত্মার মাগফেরাত ও জান্নাতে তার মাকাম ও মর্যাদা আরো উচ্চ করার বিনীত নিবেদন জানাই। আমীন।
২| ২৯ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ১১:০৮
স্বপ্ন কথক ২০৩০ বলেছেন: খান ভাই, সামুতে আপনাকে দেখে খুব ভাল লাগছে। ধন্যবাদ চালিয়ে যান।
৩| ২৯ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ১২:১৬
poloy বলেছেন: খুব ভাল লাগল পড়ে
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ১০:৫০
শিক্ষানবিস বলেছেন: আমিও শাইখের একজন ভক্ত। বরিশাল মাহমূদিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে বার্ষিক মাহফিলে উনার ওয়াজ শুনেছিলাম। সে তো ওয়াজ নয় আকাবিরে দেওবন্দের হৃদয়গ্রাহী ইতিহাসের দরস।
আমি প্রার্থনা করি আল্লাহ তাকে নাবিয়্যিন সিদ্দীকীন শুহাদা আর সালেহীনদের সাথে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন।
তার সম্পর্কে এ পোষ্ট দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খাইরান ।