![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১. হো চি মিন্হ সিটি
বড়ো শহরের ফ্যান হলে, হো চি মিন্হ সিটিতে না গেলে ভিয়েতনাম সফর পুরোটাই বৃথা যাবে। এই ব্যস্ত নগরীটাই ভিয়েতনামের বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখানকার রাস্তাগুলো সবসময়ই মোটরবাইক ও গাড়িতে পরিপূর্ণ থাকে। রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফেগুলো সবসময়ই থাকে স্থানীয় ও বিদেশী পর্যটকে ভর্তি। ভিয়েতনামের সবচেয়ে সেরা শপিং সেন্টারগুলোও রয়েছে এখানে। দং খাই শহরেই রয়েছে এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভ্রমণস্থানগুলো। দং খাই’এ যাওয়া খুবই সহজ। শহরের পুরো গল্প জানতে চাইলে দং খাইয়ে থাকা হো চি মিন্হ সিটি মিউজিয়ামে ভ্রমণই সবচেয়ে সেরা উপায়।
মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে থাকা আর্টিফেক্টস এবং শিল্পগুলো যেন পুরো শহরের গল্পই ব্যক্ত করার জন্য অপেক্ষা করছে। এছাড়াও শহরে রয়েছে উনিশ শতকের শেষে নির্মিত হওয়া গ্র্যান্ড নটর ডেম ক্যাথেড্রাল। কাছাকাছিই দা কাও শহরে রয়েছে এখনো বেঁচে থাকা ফরাসি উপনিবেশকালের কিছু স্থাপত্যশিল্প। এছাড়াও রয়েছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ও তাওবাদীদের বিখ্যাত জেড এম্পেরর প্যাগোডা। ইতিহাসপ্রেমী হলে এখানকার হিস্টোরি মিউজিয়ামেএকবার উঁকি দেওয়া আবশ্যক।
তবে শহরের মূল দুটি আকর্ষণই রয়েছে শহরের কেন্দ্রের কিছুটা বাইরে, এনগুয়েন থি মিন্হ খাই স্ট্রিটের ধারে। একটা হলো রিইউনিফিকেশন প্যালেস। ইন্ডিপেন্ডেনেন্স প্যালেস নামেও পরিচিত। দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের আবাসস্থল ছিল এটা। ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল এখানে দক্ষিণ ভিয়েতনামের যুদ্ধ ট্যাঙ্কগুলো থেমে গিয়েছিলো বলে এই প্যালেসটা বিখ্যাত। অর্থাৎ ভিয়েতনাম যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছিল এখানেই।
এর কাছাকাছিই রয়েছে দ্বিতীয় আকর্ষণ ওয়ার রেমেনেন্টস মিউজিয়াম। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়কালে আমেরিকান সৈন্যদের নৃশংস ও বর্বর অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই জাদুঘরের প্রদর্শনীতে।
২. মি সান
জঙ্গলঘেরা পর্বতাবৃত ধ্বংসপ্রাপ্ত শহর মি সান। চাম যুগের এই মন্দির শহরটির গোঁড়াপত্তন হয়েছিলো চতুর্থ শতকের দিকে। প্রাচীন হিন্দুধর্মীয় এই শহরটি সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত বেশ ব্যস্ত নগরীই ছিল। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে মানুষজন সরে যেতে শুরু করে শহর থেকে। ত্রয়োদশ শতক থেকে এটি পুরোপুরিই পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হয়ে যায়। শহরটিতে এখনো প্রায় বিশটির মতো মন্দিরের কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে। সবগুলোই স্থাপনাই তৈরি করা হয়েছিলো ইট বা বালির ব্লক দিয়ে।
স্থাপত্যশিল্পে এশিয়ার বিভিন্ন সাম্রাজ্যের ছাপই লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ভারত এবং মালয় সাম্রাজ্যের ছাপই বেশি। জেনে রাখা ভালো, শহরের গ্রুপ বি শ্রেণিভুক্ত কাঠামোগুলো সবচেয়ে পুরনো। একসময় গ্রুপ এ শ্রেণিভুক্ত কাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভ ছিল, তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমেরিকানরা কাঠামোটি গুড়িয়ে দেয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরটা আসলে যেন একটি জাদুঘর! প্রাচীন চাম যুগের অনেক তথ্যই ছড়িয়ে আছে ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরের কাঠামোগুলোতে।
৩. হোয়-অ্যান
ভিয়েতনামের সবচেয়ে বিশুদ্ধ শহর হোয়-অ্যান। পুরোটা শহর জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এখনো দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক স্থাপত্যশিল্প। ওল্ড টাউন কোয়ার্টারের দৃশ্যগুলোই সবচেয়ে বেশি মোহনীয়। পঞ্চদশ শতকের দিকে এই জায়গাটাই ব্যবহৃত হতো জাপানিজ ও চাইনিজ ব্যবসায়ীদের সাক্ষাতস্থল হিসেবে। এটাই ছিল সেই সময়কালের সবচেয়ে বৃহৎ মিটিং সেন্টার।
শহর জুড়ে এখনো সেই সময়কার ব্যবসায়ীদের বাসস্থল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটা সাধারণ জনতার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে গেলে নিশ্চিতভাবেই সেই সময়কার একটা স্বাদ পাওয়া যাবে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো মোহনীয় স্থাপত্যকলা ও আকর্ষণীয় সাজসজ্জায় নির্মিত ট্যান কি হাউজটি।
হোয়-অ্যানের সবচেয়ে বড় চিহ্ন হলো ট্র্যান ফু স্ট্রিটের পশ্চিমপ্রান্তের জাপানিজ ব্রিজটি। এছাড়া এর কাছেই দাঁড়িয়ে আছে ফুজিয়ান চাইনিজ কংগ্রেগেশনের অ্যাসেম্বলি হলটি। এটি হলো ওল্ড টাউনের সবচেয়ে সুসজ্জিত মন্দির। এটি ছাড়াও শহর জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোটোখাটো প্যাগোডা এবং মিউজিয়াম। তবে হোয়-অ্যানের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি দেখতে পাওয়া যায় ওল্ড টাউনের রাস্তাগুলোতে। শহরের দালানকোঠার সুসজ্জিত প্রবেশমুখগুলো দেখার মতো!
৪. হ্যানয়
ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়। পুরো জাতির প্রতিচ্ছবির কেন্দ্র। শহরটা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে যতটা ধাঁধাঁময়, ঠিক ততটাই মুগ্ধকর। মোটরবাইকের আধিক্য, দূষণ, ফুটপাতের পাশে বিক্রেতাদের অনবরত হাকডাক কিছু পর্যটকের কাছে অসহ্যকর লাগতে পারে, তবে ভিয়েতনামের জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে হ্যানয় শহরই সবচেয়ে সেরা জায়গা। ক্ষয়প্রাপ্ত, জীর্ণ ওল্ড টাউন কোয়ার্টারগুলো যেমন সাধারণ পর্যটকদের মুগ্ধ করবে, তেমনি ইতিহাসপ্রেমিদের মুগ্ধ করার জন্য হ্যানয়ে রয়েছে অসংখ্য মিউজিয়াম।
ভিয়েতনামের বিচিত্র শিল্পকলা ও কারুকার্যের দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য রয়েছে মিউজিয়াম অফ এথনোলজি (জাতিবিদ্যার জাদুঘর) এবং ভিয়েতনাম ফাইন আর্টস মিউজিয়াম নামের দুটো বিশ্বমানের জাদুঘর। এছাড়াও রয়েছে হো চি মিন্হ মুজোলিয়াম (হো চি মিন্হ সমাধিমন্দির)। আধুনিক ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠাতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নিমিত্তে তৈরি করা হয়েছে এই সমাধিমন্দিরটা।
আমাদের বিভিন্ন প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে ঘুরে আসতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইট থেকে
৫. হুই
ভিয়েতনামের সবচেয়ে ঐতিহাসিক শহরগুলোর একটি হুই। শহরের পুরোটা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এনগুয়েন সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ। নৈসর্গিক পারফিউম নদী তীরে গড়ে ওঠা দেয়ালাবদ্ধ ইম্পেরিয়াল এনক্লোজারের দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মতো। শহর ভ্রমণে গেলে সুসজ্জিত এনগো মন গেট আর থাই হোয়া প্যালেস না দেখলে ভ্রমণটাই বৃথা হয়ে যাবে! ডিয়েন থো রেসিডেন্স ছিল একসময় রাণীমাতার আবাসস্থল। আর হল অফ মান্দারিনটা বিখ্যাত এর সিলিংয়ে থাকা চিত্রশিল্পের জন্য। শুধু ইম্পেরিয়াল এনক্লোজারই নয়, এর বেষ্টনীর বাইরেও রয়েছে দেখার মতো অনেক মোহনীয় দৃশ্য।
শহরটিতে ভ্রমণের সবচেয়ে সেরা উপায় হলো পারফিউম নদী দিয়ে নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে। দিনের বেলা নৌযানে করে বেরুলে বেশ কিছু রাজকীয় সমাধির দেখা পাওয়া যেতে পারে, সেই সাথে কিছু প্যাগোডাও। যদি হাতে সময় কম থাকে তাহলে টু ডক সমাধিমন্দির দেখাই শ্রেয়। এই এলাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্যাগোডা হচ্ছে থিয়েন মু প্যাগোডা। এই প্যাগোডার টাওয়ারের উচ্চতা প্রায় ২১ মিটারের মতো উঁচু।
©somewhere in net ltd.