নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গিন্নী কয়েকমাস আগে বাড়ির ছাদে কিছু ফুলের টব, গামলা লাগিয়েছিলেন এবং ধীরেধীরে ছাদটি দেখি সুন্দর পরিচ্ছন্ন একটি বাগিচায় পরিণত হয়েছে।
আজ ছাদে গিয়ে দেখি, গামলাগুলোয় চমৎকার ফুল ফুটেছে। ছোট নেবু গাছে দুটো ছোট নেবু ধরেছে আর দেখি দু চারটে কাঁচা লংকা ঝুলছে, টকটকে লাল রঙের।
গত সপ্তাহে গিন্নী যে ছোট গোলাপ গাছের চারাটা পুঁতেছিলেন, সেই টব খানি দেখি টেনে নিয়ে অন্য টবগুলোর পাসে করছেন।
আমি শুধাই, "এই ভারী টব কেন তুমি টানা হেঁচড়া করছ..?"
গিন্নী বলেন, "এই ছোট গোলাপ গাছটা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই এটাকে টেনে অন্য গাছগুলোর কাছাকাছি করে দিচ্ছি।"
আমি মুচকি হেসে বলি, "গাছ শুকোচ্ছে তো খাদ দাও, জল দাও। অন্য চারাগাছের কাছে নিয়ে গেলে আর কি হবে..??"
গিন্নী জবাবে বলেন, "অন্য গাছগুলোর কাছে নিয়ে গেলে দেখবে এই শুকনো গাছ আবার কেমন জীবন্ত হয়ে উঠবে। একলা, এক কোণে পড়ে আছে বলে, শুকিয়ে যাচ্ছে।"
অদ্ভুত যুক্তি..!! কিছুই মাথা মুন্ডু বুঝিনা, কিন্তু চোখের সামনে পরপর কয়েকটা ছবি ভেসে ওঠে।
ঠাকুর্দার মৃত্যুর পরে, ঠাকুমা একদিনেই বুড়ি, অনেক বেশী বুড়ি হয়ে গিয়েছিলেন। যদিও ঠাকুর্দার মৃত্যুর পরেও উনি অনেক বছর বেঁচে ছিলেন, কিন্তু ঠিক একটা ঠকঠকে শুকনো গাছের মতন। ঠাকুর্দার জীবিত অবস্থায় যে ঠাকুমাকে দেখেছি সদা হাস্যমুখী, সেই ঠাকুমা একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলেন।
হ্যাঁ, গিন্নীর কথায় এবার আমি বিশ্বাস ধরছিল। মনে হচ্ছিল, সত্যিই, চারাগাছ একলা পড়ে গেলে হয়ত শুকিয়ে যায়।
ছেলেবেলায় দেখেছি, একওয়েরিয়ামের শক ছিল ছোট মামার। বাজার থেকে একওয়েরিয়াম কিনে তাতে ছোট রঙিন একটা মাছ ছাড়া হয়েছিল। মাছটা সারাদিন দেখতাম মনমরা হয়ে কাঁচের বাক্সের একধারে স্থির হয়ে থাকত। খাবার দিলে সেগুলো না খেয়ে এদিক ওদিক চুপচাপ অলস ভঙ্গিতে ঘুরে বেড়াত। ধীরে ধীরে বাক্সে ছাড়া খাবার গুলো বাক্সের তলায় জমা হতে থাকে। এভাবে দুদিন কাটার পর তৃতীয় দিন সকালে দেখি, ছোট্ট মাছটা জলের ওপর উল্টো হয়ে ভেসে আছে।
ছোট ওই রঙিন মাছটার কথা আজ খুব মনে পড়ছে।
ছেলেবেলায় অতশত জানতাম না। যদি সেদিন কেউ আমায় বোঝাত, ঠিক ছোট মামাকে বলে আরও চার-পাঁচটা মাছ কিনে কাঁচের বাক্সে ছেড়ে দিতে বলতাম, তাহলে ওই ছোট্ট মাছটা হয়ত একাকীত্বের মৃত্যু থেকে বেঁচে যেত।
ছেলেবেলায় মা'র কাছে শুনেছিলাম, বাড়ির দেওয়ালে প্রদীপ রাখার জন্যে যে কুলুঙ্গি করা হয়, সেটা করা হয় অন্ততপক্ষে দুটো। মা বলতেন, একটা কুলুঙ্গি সংগী না পেলে মনমরা হয়ে যায়।
আমার মনে হয়, এই পৃথিবীতে একাকীত্ব কারুরই পছন্দ নয়। সে মানুষ হোক বা গাছ, প্রত্যেকের কোন না কোন সাথীর প্রয়োজন হয়।
নিজের আশেপাশে উঁকি দিয়ে দেখুন। যদি কাউকে একাকী দেখতে পান, তাকে সংগ দিন। তাকে অকালে ঝরে পড়া থেকে আপনি বাঁচাতে পারেন। ঈশ্বর সে সামর্থ্য দিয়েছেন, আমাদের সবাইকে।
যদি নিজেকে মনে করেন একলা, আপনিও কারুর সংগ নিন, নিজেকে তাজা, হাসিখুশি রাখতে।
একাকীত্ব সংসারে বিরাট এক সাজা। ফুলের টব, গামলা আমরা টেনে নিয়ে গিয়ে অন্য ফুলের পাশে করে দিতে পারি বটে কিন্তু মানুষকে কাছাকাছি আসতে হলে, বুঝতে হবে অপরের মানসিকতা, চেষ্টা করতে হবে অন্যের মনের কাছে আসার।
মনের কোন কোণায় যদি কখনো মনে হয় জীবনের রস, জীবনিশক্তি শুকিয়ে যাচ্ছে, সেখানে তখন সম্পর্কের ও ভালবাসার বারিধারা ঢালুন। জীবন রসের পুণঃসঞ্চার হবেই হবে।
হাসুন। আনন্দে থাকুন। যদি ভুল করে কোন সম্পর্ক থেকে দূরে সরে এসেছেন কিংবা বঞ্চিত হচ্ছেন, তাকে কাছে পাবার চেষ্টা করুন এবং হয়ে যান আবার আগেকার মতন পল্লবিত।
২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:৪৬
সনেট কবি বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।
৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:২৪
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: দারুণ লিখেছেন।
সে গাছটা কি বেঁচেছিল। অদরকারী প্রশ্ন। তাও জানতে ইচ্ছে করছে
৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:২২
রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:০৪
বনসাই বলেছেন: বেশ ভালো লিখেছেন, মানুষের ভরসাস্থল হতে হবে প্রত্যেককে।