নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাত্রপক্ষ আসবে বলে বাড়িতে বেশ একটা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠান ভাব তৈরি হয়েছে ।
মা ,কাকিমা,জেঠিমারা মিলে সকাল থেকেই বেশ গুছিয়ে রান্না করে চলেছে ।রান্নার গন্ধে পাড়া মাতোয়ারা ।
এ বাড়ির একমাত্র মেয়ে মৌবনীর পাকাদেখা বলে কথা। হ্যাঁ ,প্রথম দেখাই এক্ষেত্রে পাকা দেখা। কারণ ছেলেটিকে বাতিল করার কোনো কারণ নেই মৌবনীর ।সুগত যাকে বলে বিয়ের বাজারে কোহিনুর হীরে ।পেশায় ডাক্তার ,রীতিমত হ্যান্ডসাম আর মৌবনীদের পাল্টিঘর ।তাছাড়া ঠিকুজি কুষ্ঠীও মিলে গেছে সুগত আর মৌবনীর ।সুগত আসলে ছোট কাকিমার দাদার প্রানের বন্ধুর ছেলে ।
মৌবনী খেয়াল করেছে বিয়েটা ঠিক হবার পর থেকেই মা ছোটকাকিমাকে একটু বেশিই আদর করে কথা বলে চলেছে ।মৌবনী যে একটা মানুষ ,তারও যে একটা মতামত আছে সেটা যেন কেউই বুঝতে চাইছে না।যৌথ পরিবারের মাথায় বসে আছেন মৌবনীর ৭৮বছরের দাদু ।তিনি তো আবার ঠিকুজি মেনে ,জন্ম নক্ষত্রের হিসেবে দেখেন ।মৌবনীর জেঠুর ছেলে এখনকার ছেলে হয়েও মানসিকতাতে পুরো আটাত্তরের দাদুর মত ।বাড়ির মেয়ে আদরে মানুষ করো ,কাজকর্ম শেখাও তারপর সকলে দেখে বিয়ে দিয়ে দাও ।দাদাভাই বিশ্বজিৎ এখন রেলে চাকরি পেয়েছে ।
মৌবনী বলেছিলো ,দাদাভাইয়ের আগে বিয়ে দিতে ।ওর সবে বি এড কমপ্লিট হয়েছে ,দু একটা চাকরীর পরীক্ষায় বসুক তারপর নাহয় বিয়ে করবে ।দাদাভাই শুনেই বলেছে , মৌ !বাড়িতে বিবাহযোগ্যা মেয়ে থাকলে দাদারা কখনো আগে বিয়ে করে না ।
কাকার ছেলে রণিত এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে ।সে তো আবার আরেক সিন্ধুসভ্যতার আমলের ছেলে ।তারমতে ছেলেরা চাকরি করবে ,মেয়েরা সংসার করবে ।এটাই নাকি সমাজের নিয়ম।
মৌবনীর বাবা চেয়েছিলো ..মৌ আরেকটু পড়ুক ,জবের ট্রাই করুক ।কিন্তু দাদু ,জেঠুর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তর্ক চালিয়ে যাওয়ার শিক্ষা বাবা পায়নি ।
এমনকি কাকুরও মত ,মৌ ঢের পড়েছে এবার বিয়ে দেওয়া উচিত ।পাড়া প্রতিবেশী বলেও তো একটা কথা আছে ।তাছাড়া রানাঘাটের মত মফস্বল শহরে ওদের মুখোপাধ্যায় পরিবারের যথেষ্ট সুনাম । সেই বাড়ির মেয়েকে বাসে ট্রেনে ঝুলতে ঝুলতে রোজকার করতে পাঠালে বাড়ির সম্মান বলে আর কিছুই থাকে না ।
জেঠিমা আড়ালে বলছিল ,তাছাড়া মৌ যদি দীপালির মত কোন প্রেম ট্রেম করে বসে তাহলে তো ...
মা ,জেঠিমার মুখে হাত চাপা দিয়ে বলেছে ,ও বড়দি চুপ কর ।আমার ঐ একটাই মেয়ে ।ওকে ছাড়া আমি থাকবো কি করে ?
দীপালি নামটা এবাড়িতে কাউকেই উচ্চারণ করতে শোনে না মৌ ।তবে পাড়ার দু একজনের মুখে শুনেছে দীপালি বলে নাকি ওর এক পিসি ছিল ।সে নাকি কোন অব্রাহ্মনকে বিয়ে করেছিল পালিয়ে গিয়ে ।তাই দাদু সকলের কাছে বলেছিলো ,তার মেয়ে বেড়াতে গিয়ে রেলে কাটা পড়ে মারা গেছে । মৌবনী কোনোদিন সেই পিসির কোনো ছবিও দেখেনি বাড়িতে ।
ঠাকুমাকে একবার বলতে শুনেছিল ,আজ দীপালির জন্মদিন ,আজ যেন কেউ ঝাঁটা কিনে এনো না ।
দেখা গেলো দাদু সেদিন নিজেই বাজারে গিয়ে ইচ্ছা করে একটা নারকেল কাঠির ঝাঁটা হাতে ঝুলিয়ে বাড়ি ঢুকলো । সেই পিসির কোনো ঠিকানাও এবাড়ির লোকজন রাখেনি ।
ঠাকুমা সেটা দেখে কেঁদে ফেলেছিল ।
মৌবনীর মনে হয় এটা 2017 নয় ওদের বাড়িটা বোধহয় 1947 এর আগের কোনো বাড়ি ।
ওর এই মর্ডান মৌবনী নামটাও ওর বাবাই বোধহয় দিয়েছিলো ।আসলে ওর দাদু নাকি ও জন্মের পর নাম রেখেছিলো নয়নতারা ।বাবা নাকি দাদুকে এসে বলেছিলো ,নার্সিংহোমের নার্স ওর বার্থ সার্টিফিকেটে ভুল করে মৌবনী লিখে দিয়েছে আর বোধহয় পাল্টানো যাবে না ।দাদু রাগে গড়গড় করে বলেছিলেন,যত অপগন্ডএর দল ।ভুল নাম লেখে কি করে !!
মৌবনী বড় হয়ে বুঝেছিল ওটা ওর বাবারই কীর্তি ।
কেন জানে না বাড়ির মধ্যে একমাত্র বাবাকেই ওর আপন মনে হয় ।মা তো সর্বদা ভয়ে জড়সড় ।নিজের মতামত বলতে কিছুই নেই ।সে যে শুধু মুখোপাধ্যায় বাড়ির মেজবৌ নয় ,একটা পৃথক মানুষ সেটাও বোঝার উপায় নেই ।
সর্বদা ফিসফিস করে কথা বলছে ,এদিক ওদিক তাকাচ্ছে ,এই বোধহয় কেউ ফাঁসি দিয়ে দেবে ভাব ।
বাবাকে বরং একটু অন্যরকম লাগে মৌবনীর ।একটু নির্লিপ্ত ।নিজের অফিস আর বইপত্র নিয়েই ব্যস্ত ।মাঝে মাঝে মৌবনীর পড়ার টেবিলে ভ্রমণ ,অভিযানের কিছু বই রেখে বাবা বলতো ,সময় হলে পরে দেখিস ।রানাঘাটের বাইরের জগৎটাকে চিনতে পারবি ।
বাবা নাকি বিয়ের পর পুরী যাবার টিকিট কাটতে চেয়েছিলো ।নতুন বৌকে নিয়ে হানিমুন টাইপের আরকি ।ঠাকুমা বলেছিলো ,তাহলে সকলেরই টিকিট কাটিস ।আমারও বহুদিনের শখ জগন্নাথ দর্শন করার ।
বাবা সকলের টিকিট কেটে দিয়েছিলো ।শুধু নিজের আর মায়ের বাদ দিয়ে ।বাবা ঐ সময়ে কোনোভাবেই অফিসে ছুটি ম্যানেজ করতে পারেনি ।
তাই ফাঁকা বাড়িতে তখন মা আর বাবা ।নিশ্চয় বাড়িতেই পরাধীনতার বাঁধন কাটিয়ে স্বাধীন ভাবে মধুচন্দ্রিমা যাপন করেছিল বাবা ।
মৌবনী অনেক আশা নিয়ে আস্তে আস্তে বাবার ঘরে ঢুকলো ।বাবা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পার্থিব পড়ছিল ।ওকে দেখে বললো ,কি রে তুই এখনো রেডি হোস নি ।সুগতরা এসে যাবে তো ।
মৌবনী বলেছিলো ,বাবা বিয়েটা করতেই হবে !!
ছলছলে চোখের মৌবনীর দিকে তাকিয়ে বাবা বলেছিলো , বাড়ির সকলের পছন্দ সুগতকে ।বিশেষ করে তোর দাদু পছন্দ করেছে ,কথা দিয়েছে সুগতর বাবাকে । এখন বিরোধিতা করতে গিয়ে লাভ নেই।
মৌবনী কোনো আশার আলো না দেখেই নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো ।
অফিসের টেবিলে ফোনটা রেখে ওয়াশরুমে গিয়েছিলো অরণ্য ।ফিরে আসতেই দেখে গোটা চারেক মিসকল ।এইটুকু সময়ের মধ্যে চারটে মিসকল !!এতটা অস্থির তো মৌ কোনোদিন হয়না ।
রিং ব্যাক করতেই চাপা কান্নার আওয়াজ ।
একটু সময় দিলো অরণ্য ।
মৌ বললো ,আজ আমার বিয়ের পাকা কথা ।মাস খানেকের মধ্যেই বিয়ে হবে ।
অরণ্য বললো ,এটা তো আমরা জানতাম মৌ ।তোমার বাড়ি থেকে যে কায়স্থ ছেলে মেনে নেবেনা সেটাও তুমি জানতে ।আমরা এটাও জানতাম আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো ।আমার বাবা মা তো তোমাকে বৌ হিসাবে মেনেই নিয়েছে ।তাহলে তুমি কেন ঐ ডাক্তারের সামনে নিজের প্রেসার মাপতে বসতে যাচ্ছ !
আজ ই বেড়িয়ে এসো ।ঐ হরপ্পা সভ্যতার ভগ্নস্তূপ থেকে ।
মৌবনী তখনও ফুঁপিয়ে চলেছে ।অরণ্য অফিসের নিজের কিউব থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো ।
এমনিতে ও একটু মাথাগরম তবে মৌ এর ব্যাপারে ও সবটা সহ্য করে ।
শোনো মৌ ,শান্ত মাথায় ভাবো ।তোমার ঐ আটাত্তর বছরের দাদুর গোয়ার্তুমি সহ্য করে সুগতর মত অপরিচিত একজনকে বিয়ে করবে নাকি আমাদের গত তিনবছর সম্পর্কের মূল্য দেবে ?
মৌবনী বললো ,কিন্তু আমি যদি পালিয়ে যাই তাহলে আর কখনো এ বাড়িতে ঢুকতে পারবো না যে অরণ্য ।পিসিমনিও পারেনি ।বাবা মা কারোর সাথে আর দেখা হবে না ।
অরণ্য বললো ,তাহলে এক কাজ করি ,আমি আমার বাবাকে নিয়ে তোমাদের বাড়িতে গিয়ে তোমার ঐ হিটলার দাদুর কাছে বলি আমাদের তিন বছরের সব মুহূর্তের কথা ।তাহলে নিশ্চই তোমার দাদু ....
মৌবনী কথাটা শেষ না করতে দিয়েই কঁকিয়ে উঠে বললো ,খবরদার নয় ।আমি চাইনা আমার জন্য আঙ্কেলকে কোনোভাবে অপমানিত হতে হোক ।
অরণ্যের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে ।আজ ফরেন ডেলিগেটসদের সাথে ওর একটা মিটিং আছে ।তার প্রেজেন্টেশনটা আরেকবার চেক করার দরকার ।কোম্পানি ওর ওপর অনেকটা নির্ভর করে ।এমনি এমনি তো আর ঊনত্রিশ বছর বয়সেই এতো বড় একটা পোস্ট হোল্ড করছে না অরণ্য ।এর জন্য ওকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে ।
তারমধ্যে মৌবনী এসব কি শুরু করেছে !!
এগুলো কি ছেলে মানুষী নাকি !!তিনবছরের লাখ লাখ কথা ,প্রতিটা নিশ্চুপ মুহূর্ত, প্রতিটা অস্তগামীসূর্যের প্রতিশ্রুতির মতোই ভাস্বর ।আজ হঠাৎ মৌবনী বলছে ,ওর বাড়ি থেকে পালানো সম্ভব নয় !!
এখন কি মৌবনীর জায়গায় অন্য কোনো মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে ভাবতে পারবে অরণ্য ?
মৌবনী কি পারবে অরণ্যের সব প্রশ্রয় ভুলে অন্য কারোর হতে ।
অরণ্য গম্ভীর ভাবে বললো ,তাহলে আমাকে কেন ফোন করেছো মৌ ?
তোমার বিয়ের পিঁড়ি ধরতে যাওয়ার জন্য ?
মৌ বললো ,আর কখনো ফোন করবো না এটা বলার জন্য ।
অরণ্য কিছু বলার আগেই ডিসকানেক্ট হয়ে গেছে ফোনটা ।
অরণ্যের ইচ্ছে করছে এসব মিটিং ছেড়ে ঐ সুগত বলে ছেলেটা যখন যাবে মৌদের বাড়িতে তখন সকলের সামনে গিয়ে বলতে ,যে ওরা দুজন শুধু দুজনের ।
বরাবরই ওদের প্রেম পর্বে মৌ একটা কথাই বলতো ,হয়তো বাড়ি থেকে মেনে নেবে না আমাদের সম্পর্ক !হয়তো আমরা কখনো ই একসাথে জীবন কাটাতে পারবো না !
তখন অরণ্য খেলার ছলেই বলেছে ,তোমার বাড়ি থেকে তোমাকে তুলে নিয়ে আসবো ।
মৌ কোনোদিন ওর বাড়িতে অরণ্যের কথা বলে উঠতে পারে নি ,অথচ মৌবনীকে কয়েকবারই অরণ্য নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছে ।অরণ্যের বাবা মায়ের সাথে মৌবনীর রীতিমত বন্ধুত্ব হয়ে গেছে ।এমন কি অরণ্যের নতুন তিনতলার ঘরের কি রং হবে সেটাও বাবা মৌকে জিজ্ঞেস করে ঠিক করেছিল ।
এতো কিছুর পর অরণ্যের জন্য কোনো অনুভূতিই নেই মৌবনীর !!
মা এসে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে ।কি রে শাড়ি পরা হলো !ওরা এসে যাবে এখুনি ।
হয় বাবা মা এই বাড়ি নাহলে অরণ্য যে কোনো একজনকে ছাড়তেই হত মৌবনীকে ।
মৌ জানে অরণ্য কি ভীষণ কষ্ট পাবে !!কষ্ট কি মৌ পাচ্ছে না ?
অরণ্যের চেনা নিঃশ্বাসটা ছাড়া অন্য কাউকে ভাবতেই তো দমবন্ধ হয়ে আসছে ওর !!
যদি সুইসাইড করে তাহলে ?
মুখোপাধ্যায় বাড়ির বদনাম হবে ?দাদুর উঁচু মাথাটা নিচু হয়ে যাবে ?
সুগতকে যদি রিকোয়েস্ট করে ,এই বিয়েটা না করতে তাহলে ??আদৌ কি শুনবে সুগত !সুগতর বাবাকে বলে দিলেই তো সেটা এটোম বোমার মত এসে পড়বে মৌবনীর বাড়িতে !2017 তে দাঁড়িয়ে শুধু কাস্টের জন্য অরণ্যকে পাবে না মৌবনী !!
ছোট কাকিমা দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললো ,এই মৌ এই শাড়িটা পরে নে !
ও কি শাড়ি পরবে সেটাও যখন বাড়ির লোকেরা ঠিক করে দিচ্ছে তখন সত্যিই বড় ভুল হয়েছে নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে অরণ্যকে আঘাত দেওয়া ।
চোখের জল মুছে ছোট কাকিমার দেওয়া পিকক গ্রীন পিওর সিল্ক পরে রেডি হলো মৌবনী ।
এক ঘর লোকের সামনে সুগত কোনটা সেটা বুঝতেও সময় লাগলো ।কারণ সুগতর খুড়তুতো ভাই ,পিসতুতো ভাইদের ভিড়ে হারিয়ে যাবার উপক্রম ।শুধু ছবিটা আগে দেখেছিল তাই কোনোমতে উদ্ধার করলো ওর আগামী দিনের চব্বিশ ঘন্টার সঙ্গীকে।
বিয়ের দিন ধরা হয়ে গেছে ।মাঝখানে মাত্র আঠেরো দিন বাকি ।
পরের মাসে নাকি সুগতর জন্মমাস তাই জন্মমাসে বিয়ে দিতে নেই শুনে দাদুই পাঁজি দেখে এ মাসের ২০ তারিখে দিন নির্ধারণ করলো।
মৌবনীর যেহেতু এখন ইউনিভার্সিটি নেই। তাই সকলের নির্দেশে ও এখন ঘরবন্দি ।হলুদ ,চন্দন, ব্যাসমের প্রলেপে নিজেকে জোকারের মত মনে হচ্ছে ।
ইচ্ছে হচ্ছে ওর এডুকেশনাল সার্টিফিকেটগুলো একসাথে জ্বালিয়ে দিতে ।
সুগতর সেদিন দুটো টুকরো কথা মৌ শুনতে পেয়েছিল ।সুগত ওর পিসির ছেলেকে বলছে ,পছন্দ অপছন্দের আর কি আছে ! একটা মেয়েকে বিয়ে করবো তো !সেটা যেই হোক অসুবিধার তো কিছুই নেই ।মোটামুটি যেন পাশে নিয়ে চলা যায় আরকি !! নিজের প্রফেশন সামলে কতক্ষনই বা বাড়িতে বৌয়ের কাছে থাকবো !!
সেটা শুনে মা ,জেঠিমা বললো ,কি সাদা মাটা ছেলে !অতবড় ডাক্তার তাও কোনো খুঁত ধরলো না মেয়ের !
কারোর একবারও মনে হলো না ,সুগত ঘুরিয়ে মৌবনীকে কিছুটা যেন অবজ্ঞার ছলে অপমান করলো ।যেকোনো মেয়ে আর মৌবনীর মধ্যে কোনো তফাৎই নেই সুগতর কাছে ।
তফাৎ ছিল ,অরণ্যের কাছে পার্থক্য ছিল ...আর পাঁচজন আর মৌবনীর মধ্যে যে মৌ স্পেশাল সেটা অরণ্য সবসময় বুঝিয়ে দিত ওর ভালোবাসা দিয়ে ।
বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে ।মৌবনী একেবারেই চুপচাপ ।যে কথার কোনো মূল্য নেই সেই কথা বলেই বা কি হবে !!
ফাঁসি দেবার আগে ফাঁসির আসামির শেষ ইচ্ছে জানার মত বোকা বোকা প্রশ্ন আর হয়না ।
প্রতিটা আত্মীয়ের বাড়িতে আইবুড়ো ভাত খেতে যেতে হচ্ছে ওকে ।
সেদিন মামার বাড়ি যাওয়ার পথেই অরণ্যের মা ফোন করেছিল ।আন্টি ধরা গলায় বলল ,হ্যারে মৌ আমাদের আদরে কি কমতি ছিল ?তাহলে আমার ছেলেটাকে এতটা কষ্ট কেন পেতে হচ্ছে ।
একটা কথারও কোনো উত্তর দিতে পারেনি মৌবনী।
ওর ইউনিভার্সিটির বান্ধবী ঈশিতা আর দেবযানী তো শুনেই অবাক যে মৌবনীর সাথে অরণ্যের নয় অন্য কারোর বিয়ে হচ্ছে !!
ফোনের সিমটা খুলে ফেলে দিয়েছে মৌ ।আর কি হবে এই ফোনের ,এর প্রয়োজন নেই ।তখন ফোনটা ভাইব্রেটএ রাখতো কারণ কখন অরণ্য ফোন করে তাই ।
বিয়ের দিন সন্ধ্যে বেলায় নিজর ছোট্ট বাক্সটার সব কিছু খুলে বসেছে মৌ ।অরণ্যের দেওয়া সব ছোট্ট ছোট্ট জিনিস ।ওর পরানো প্রথম ফ্রেন্ডশীপ ব্যান্ডটা পর্যন্ত যত্ন করে রাখা আছে ।
মৌ বলেছিলো ,তুমি কি আমার বন্ধু ?
অরণ্য বলেছিলো ,বন্ধুই তো ,তোমার সব থেকে কাছের বন্ধু যে তোমার পাশে নয় মনে মিশে থাকবে ।
রক্তের প্রতিটি কণায় যার অস্তিত্ত্ব অনুভব করা যায় সেই তো প্রকৃত বন্ধু । সব থেকে বিপদের দিনে ,সব থেকে দুঃখের দিনে যাকে কিছু না বললেও যে মনের সব ক্ষতের খবর জেনে যায় সেই তো বন্ধু।
আজ তো ফ্রেন্ডশীপ ডে ,আবার আজ মৌয়েরও বিয়ের দিন । অরণ্যের দেওয়া ব্যান্ডটা নিজের অনেক সোনার গহনার ভিড়ে হাতে পরে নিলো ।ব্যান্ডের ওপরে মোটা চূরটা দিয়ে ঢেকে দিলো মৌ ।
ছোট্ট বাক্সর সব জিনিস গুলোতে হাত বুলিয়ে আবার চাবি দিয়ে রেখে দিল ও ।
বাইরে একটি ভীষণ চিৎকার ।
চমকে উঠেছে মৌবনী ।বর এসেছে এই আনন্দএর অভিব্যক্তি অন্তত এটা নয় ।
দাদুর গলা ,কিছু মহিলার কান্না কাটির আওয়াজ ।
মৌ আস্তে আস্তে বাইরে বেরোলো ...
দাদু লাঠি মেঝেতে ঠুকে আওয়াজ করছে ।ভেবেছে কি সুগতর বাবা !বিয়ের পাঠানো গাড়িতে বর ওঠার পর বরের গাড়ি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে !!আমার নাতনি অপয়া মানে টা কি ?
বর আনতে গিয়েছিলো ,বাবার খুব কাছের বন্ধু সুনির্মল কাকু ।তাকেও নাকি ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না ।এদিকে বর যাত্রীর গাড়ি এসে উপস্থিত ।
সুগতর বাবা রাগী মুখে বলেছেন ,অপয়া মেয়ে ...নিশ্চয় আমার ছেলের কোনো একসিডেন্ট ঘটেছে ।
ভাইরাল ফিবারের মত গোটা রানাঘাটে ছড়িয়ে পড়েছে যে মুখোপাধ্যায় বাড়ির মেজকর্তার মেয়ে অত্যন্ত অপয়া বলেই বরের গাড়ি একসিডেন্ট ঘটেছে ।
জ্যেঠু ,কাকু সকলেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পরেছে ।
দাদু গর্জে চলেছে ...
সুগতর বাবা বর যাত্রীর গাড়ি নিয়ে ফিরে গেছে ।ছেলের খোঁজ করতে হয়তো থানা পুলিশ করতে হবে ।
এর পর বোধহয় মৌবনীর বেঁচে থাকাটাও পাপ ।
এতটা অপয়া ও !!তবে যে অরণ্য বলতো মৌ ওর লাকি ।যে কোনো ডিলের আগে মৌয়ের মুখ দেখে যেত অরণ্য !তাহলে !!
ভিতরে সব কষ্টগুলো গুলিয়ে গিয়ে মোচড় দিচ্ছে ।
মা ,জেঠিমা ,ঠাকুমা সুর করে কাঁদছে ।
দাদুও এতক্ষনে তার প্রতাপ কমিয়ে মেঝেয় বসে পড়েছে ।
হঠাৎ মৌ দেখলো বাবা অরণ্যের হাত ধরে ঢুকছে ।পিছনে অরণ্যের বাবা-মা ।
বাবা বাড়িতে পা দিয়েই বললো , আমার বন্ধুর ছেলে ।সব পয়া অপয়া তুচ্ছ করেই ওরা আমাদের সাহায্য করবে বাবা । এই অরণ্যের সাথে এই লগ্নেই বিয়েটা দিয়ে দাও ।
এই মুহূর্তে কায়স্থ-ব্রাহ্মন ভেবে আর লাভ নেই ।এখন যদি মৌ আত্মহত্যা করে তাহলে !
মা আরেকটু জোরে কেঁদে উঠলো ।দাদু সজল চলে আঙ্কেলের হাত দুটো ধরলো ।অরণ্যকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে দাদু ।
অরণ্যের চোখ দুটো শুধুই মৌকে খুঁজছে ।
মৌকে দেখতে পেয়েই রকবাজদের মত পট করে একটা চোখ মারলো অসভ্যটা।
সিঁদুর দান সবে মাত্র মিটে গেলো । মৌবনীর দুগালে লালের আভা । ভরাট মুখে খুশি উপচে পড়ছে ।
সুগতকে যে আনতে গিয়েছিলো সেই সুনির্মল কাকু এতক্ষনে বাড়ি ফিরেছে ।বিদ্ধস্ত চেহারা ...বরের গাড়িটা নাকি রাস্তা হারিয়ে চলে গিয়েছিল অন্য কোথাও । সুনির্মল কাকু বললো ,আসলে ঐ হাইরোডের ধারে কতগুলো গুন্ডা আমাদের কাছ থেকে মোবাইল ,টাকা সব নিয়ে আটকে রেখেছিলো ।
বাবা চুপিচুপি জিজ্ঞেস করলো ,ওরা মারেনি তো তোদের?
সুনির্মল কাকু বললো ,মারবে কি রে ওরা তো আমাদের ক্লাবের ছেলে ।তবে শোন, ওদের কিন্তু একদিন পেট ভরে খাইয়ে দিতে হবে ।সুগতকে বাড়িতে নিশ্চিন্তে নামিয়ে দিয়ে এসেছে সুনির্মল কাকু ।
মৌবনী বাবাকে ইশারায় ডেকে বললো ,অরণ্যের কথা তুমি কি করে জানলে ?
বাবা বললো ,তিনদিন কৃষ্ণনগর কলেজের সামনে ,দুদিন পার্কস্ট্রিটে আর চারদিন বিগ বাজারে তোদের একসাথে দেখে আমি লুকিয়ে পড়েছিলাম ।খোঁজ নিয়ে জানলাম ছেলেটার বাড়ি কলকাতায় ।ভালো চাকরি করে ,শুধু কায়স্ত জেনেই তোর দাদুর মুখটা মনে পড়ে গিয়েছিল ।
মৌ হাসছে ,অরণ্য বললো ,আঙ্কেল কালই আমাদের বাড়িতে গিয়ে বাবার সাথে বসে গোটা প্ল্যানটা সাজিয়ে ফেলেছিল ।সুনির্মল কাকুও তো সঙ্গে ছিল ।একটু দূরে দাঁড়িয়ে কাকু হাসছে ।
লাঠির আওয়াজে বাসর ঘরের সকলেই সচকিত ।
দাদু ঢুকছেন। নিজের হাতে বেশ মোটা একটা সোনার চেন নাতজামাইকে পরিয়ে দিয়ে বললেন ,নিজের নাতনি বলে বলছি না ,আমি আমার নাতনিকে কখনো কোনো ছেলের সঙ্গে মিশতে অব্ধি দিই নি । আমার নাতনির জীবনে তুমিই প্রথম পুরুষ অরণ্য ।
অরণ্য মুচকি হেসে বললো ,আমিও সেটা জানি দাদুভাই ।আমিই ওর জীবনের একমাত্র পুরুষ ।
ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছে সকলে ।হঠাৎ নিজের হাতে চেনা স্পর্শ পেয়ে জেগে উঠলো মৌবনীর বাবা ।
মৌ কিছু একটা বেঁধে দিচ্ছে বাবার হাতের কব্জিতে ।
বাবার কানের কাছে মুখ রেখে মৌ বললো ,হ্যাপি ফ্রেন্ডশীপ ডে বাবা ।জীবনে এতো বড় বন্ধু আমি আর কাউকে পাবো না ।নার্সের নাম ভুল করা থেকে শুরু করে সুগতর বাবার অপয়া বলা সবেতেই যে আমার এই প্রানের বন্ধুর হাত আছে ।তুমি আমার মনে মিশে থাকবে বাবা ।
বাবা মুখে আঙুল ঠেকিয়ে বললো ,চুপ কর ।শেষ বয়সে কি তুই আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করাবি !!
ভোরের আলোয় বাবা আর মেয়ের চোখের জল আর মুখের হাসি মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে ।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:১৮
গেছো দাদা বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ জানাই ।
২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:৩৬
বর্ণা বলেছেন: শেষের দিকে তুই কি আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করবি কথাটা পড়েই হেসে দিয়েছি।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২০
গেছো দাদা বলেছেন: সত্যিই তাই । এই লাইনটি লিখতে লিখতে আমিও হেসেছি ।
৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:২২
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ!
গল্পটা শেষ হয়ে গেল - - মুগ্ধতা টুকু রয়েই গেল।
+++
২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২১
গেছো দাদা বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৩৩
শায়মা বলেছেন: চোখে পানি পানি এসে যাওয়া গল্প ভাইয়া!!!!!
এক্সসেলেন্টো!!!!!!
আহা সব বাবারাই যদি এমন হতো!!!!
২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২৩
গেছো দাদা বলেছেন: আপনার মন্তব্য আমাকে আরো সুন্দর গল্প লিখতে উৎসাহ দেবে । ধন্যবাদ দিদি ।
৫| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:১৪
বনসাই বলেছেন: বাবারা যেন আজীবন মেয়ের বন্ধু থাকে।
খুব গতি ছিল গল্পে, ভালো লেগেছে।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২৩
গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ ।
৬| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:১৪
জাহিদ অনিক বলেছেন:
বাহ !!! গল্পের দুইটা দিক, মৌবনী আর অরণ্য এবং মৌবনী ও তার বাবা।
প্রেম ছাপিয়ে যেন বাবা-মেয়ের বন্ধুত্ব্বটাই বেশী ফুটে উঠেছে- চমৎকার
শুধুমাত্র গল্পের নামটা ঠিক যেন নাম হলো না-
২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২৫
গেছো দাদা বলেছেন: এটা আমারো মনে হয়েছে । কি নাম দিলে ভালো হতো দাদা ?
৭| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫২
মাহের ইসলাম বলেছেন: খুব ভালো লেগেছে।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২৬
গেছো দাদা বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ জানাই ।
৮| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২৭
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: শেষটা একটু বেশি নাটকীয়। আরেকটু বাস্তবতা দিতে পারতেন।
গল্পে, মৌ এর বাবাকে শীর্ষেন্দুর বই পড়তে দেখেই কেন যেন মনে হয়েছিল, শেষটা মিলনাত্মক হবে। তার উপর শিরোনামে লিখেছেন মিষ্টি প্রেম! মিলনাত্মক না হয়ে যায় কোথায়!
২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:৪৬
গেছো দাদা বলেছেন: আপনাকে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ । একটি মন ভালো করা মিস্টি প্রেমের গল্প লেখার চেষ্টা করেছি । কাজেই মিলনাত্মক করতে হয়েছে । আর শেষটা কিভাবে শেষ করলে ভালো হতো এব্যাপারে আপনার মতামত চাচ্ছি দাদা ।
৯| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:৫৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: জানি না। তবে আরেকটু বাস্তব। আপনি লেখক মানুষ, ঠিক পারবেন।
আর শিরোনাম এমন হওয়া উচিত নয়, যেটা দেখে বোঝা যায় গল্পের শেষে কী হতে চলেছে।
১০| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: বড্ড অগোছালো লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:১৯
ওমেরা বলেছেন: গল্পের শেষটুকু খুব ভাল লাগল ।