নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার জন্য ভালোবাসা।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : অন্য শিবরাত্রি

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:৩৪


প্রতিবছর সারাদিন উপবাসী থেকে ভক্তিভরে শিবরাত্রি পালন করা মেয়েটি এবার ম্রিয়মাণ হয়ে বসে আছে এককোণে। সে রজঃস্বলা। মা বলেছেন, এ অবস্থায় ভগবান ভক্তি নেন না। মেয়েটির নিজের উপর রাগ হতে থাকে। এইসময়টাতেই হতে হল? তার নিজেকে অশুচি মনে হতে থাকে। কোমরের পাশ দিয়ে ওঠা খুব চেনা বিশ্রী যন্ত্রণাটা ছাপিয়ে গলার কাছটা ব্যাথা করে ওঠে। অহৈতুকী ভক্তি বিদ্রোহ করে নিজের নারীত্বের বিরুদ্ধেই। মেয়ে হয়ে জন্মানোই কি.....
হোয়াটসঅ্যাপে শব্দ হয়। একবার। দুবার। বারবার।
হরমোনের জাঁতাকলে পড়া বিচ্ছিরি মুড নিয়ে মেয়েটি হোয়াটসঅ্যাপ খোলে। কড়াভাবে কিছু একটা বলবে সে। জানাবে যে সে বিরক্ত, এবং চায় না এখন কথা বলতে...
স্ক্রীণে ছেলেটির মেসেজ, "কি রে?... উঠেছিস?... খবর কি?"
মেয়েটি লিখল, "ডিস্টার্বড আছি। ভালো লাগছে না কিচ্ছু। পরে কথা হবে।"
রেখে দিতেই চেয়েছিল মেয়েটি। কিন্তু ছেলেটি টাইপিং... কি বলবে ও? কৌতুহল স্ক্রীণে আটকে রাখল মেয়েটিকে।
"হয়েছে কি? বলবি আমাকে? দাঁড়া ফোন করছি। খুব চাপ থাকলে কেটে দিস, বিরক্ত করব না।"
এবং ফোন...
মেয়েটি রিসিভ করতে চায়নি। কিন্তু তবু রিসিভ হয়ে গেল। সে জানে ছেলেটি তাকে ভালোবাসে। কল না রিসিভ করলে সে হয়তো আর ফোন করবে না, তবু মনে মনে টেনশন করবে। জানে মেয়েটি।
- "হ্যালো.. কি হয়েছে রে? সকাল সকাল উঠে ঝামেলা করেছিস কাকীমার সাথে?
- না।
- তবে?
- শুনে কি করবি?
- কিছু করব না। জাস্ট শুনব।
- কি হবে শুনে? আমার পিরিয়ডস হয়েছে। এতে শোনার কি আছে?
ওপাশে সামান্য নীরবতা।
- শরীর খারাপ লাগছে খুব? ডাক্তার দেখাতে যাবি?
- না।
- আচ্ছা।
মেয়েটির দ্রুত পরিবর্তনশীল মেজাজ তাকে হঠাৎ বলল, শিবকে যখন হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না, বা পাওয়া গেলেও ভক্ত হিসাবে তাকে যখন কিছু বলতে পারবে না সে, তখন তার প্রতিনিধিস্বরূপ এই ছেলেটার উপরই রাগটা ঝেড়ে দেওয়া যাক।
- শোন, আমাকে আপাতত কদিন ফোন করবি না।
- কেন?!
- কেন আবার, জানিস না এইসময় মেয়েরা অশুচী আর নোংরা থাকে? ভগবান পর্যন্ত তাদের ছোঁয়া নেন না। সেখানে তুই কোথাকার কে? করবি না ফোন।
কটাস করে কেটে দেয় মেয়েটি।
এক মিনিট, দু মিনিট... একা ঘরে জড়োসড়ো হয়ে বসে মোবাইলের স্ক্রীনে আড়চোখে তাকায় মেয়েটি। আবার ফোন করলে আরো কড়া জবাব দেবে বলে নিজেকে তৈরী করতে থাকে সে। পাঁচ মিনিট... সাত মিনিট... কিন্তু তাই বলে ছেলেটি আরেকবার ফোন করল না? মেয়েটির কাঁদবার ইচ্ছাটা পেয়ে বসতে থাকে। ছেলেটি এরকম করতে পারল? তার ভক্তিই বিষিয়ে উঠে জানান দিতে লাগল শিবলিঙ্গটি পাথরের। আর পাথর প্রাণহীন।
মা দিদি সকলেই গেছে মন্দিরে। ফাঁকা ঘরে ফুঁপিয়ে উঠল মেয়েটি। শিবরাত্রি পালন না করলে কি হবে তা সে জানে না, কিন্তু তার যে ভালো লাগত....
ফোন বাজছে.. ছেলেটির ফোন...
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফোনটা ধরল মেয়েটি। সে ঠিক করে নিয়েছে ছেলেটিকে সে গালিও দেবে না, কথাও বলবে না। হাঁ হুঁ করে ছেড়ে দেবে।
- হ্যালো...
- বল...
- বাইরে আসবি একবার?
- বাইরে?! মানে?!
- তোদের বাড়ির গেটের বাইরে। দাঁড়িয়ে আছি।
- কিন্তু!.... কি করব গিয়ে?!
- আয় না একবার বাবা। দুমিনিটের বেশী নেব না।
মেয়েটি বিস্মিত হয়। সে বুঝে উঠতে পারে না ব্যাপারটা। তবে একটা গোপন ভালো লাগা মিশে যায় হঠাৎ এতক্ষণের প্রচুর খারাপ লাগার সাথে। সেই ভালো লাগার পরিমাণ খারাপ লাগার তুলনায় অপাঙক্তেয় ধরণের কম হলেও ছেলেটি যে তাকে উপেক্ষা করেনি, এটা ভালো লাগে তার।
দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেটের কাছে আসে সে। একটা কোঁচকানো না কাচা শার্ট আর ট্র‍্যাকস্যূট পরে এক হাতে সাইকেল ধরে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটি। আরেক হাতে কি যেন একটা...
মেয়েটি কাছে আসতেই ছেলেটি সেটা এগিয়ে দেয় তার দিকে।
- এ... এটা কি?! আমি তোকে বললাম না যে আমার পিরিয়ডস...
- হ্যাঁ বললি তো।
- তাহলে ঘটি কি করতে এনেছিস? মা বলে গেছে আমি এবার মন্দিরে জল ঢালতে পারব না। এটা দিয়ে করবটা কি?
.
ছেলেটি দাঁত বার করে হেসে মাথাটা নামিয়ে বলে "এবার আমার মাথায় ঢাল। পরেরবার নাহয় মন্দিরে ফেরত যাস। ভগবান উঁচুতলার লোক। অনেক ফ্যাকড়া আছে। আমি সামান্য মানুষ। এই ফাঁকে চান্স পেয়েছি। আবার কবে পাব তার নেই ঠিক। তুই ঢাল তো..."
.
মেয়েটি কি বলবে না বুঝে হতভম্বের মত ঘটিটা হাতে নেয়। আরেকবার কান্না পেতে থাকে তার।
এবারের কান্নাটা কেমন যেন অন্যরকম বলে সন্দেহ হতে থাকে তার।
,,
সৌজন্য : দীপ্তরুপ দা ।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: এক জীবনে মেয়েদের অনেকবার কাঁদতে হয়।

০৬ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:০১

গেছো দাদা বলেছেন: আর ছেলেদের কাঁদতে হয় না বুঝি ??

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৫৩

মা.হাসান বলেছেন: গেছো ভাই, অনেক দিন দেখিনি, কোন গাছে ছিলেন? মানবতায় ভরা এ লেখাটা আমার চোখে আপনার অন্য লেখাগুলোকে অতিক্রম করেছে। অনেক প্লাস, একটা লাইক (এর বেশি দেবার সুযোগ রাখেনি admin)।++++

০৬ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:০৪

গেছো দাদা বলেছেন: আপনাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ , কৃতজ্ঞ । দাদা আমি নিজস্ব কাজে ব্যস্ত ছিলাম। সময় একদম পেতাম না।

৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:২০

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: কত দিন পর আপনার পোষ্ট পেলাম।

পড়ে ভালো লাগলো।

০৬ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:০০

গেছো দাদা বলেছেন: আপনাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ , কৃতজ্ঞ ।

৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:১৫

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক জোরালো ম্যাসেজ বহন করা গল্পে লাইক এন্ড +++

তবে শেষে যুক্ত করা, সৌজন্য: দীপ্তরুপ দা এর অর্থ কি? গল্পটা কি উনার লেখা?

ভাল থাকুন।

০৬ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:৫০

গেছো দাদা বলেছেন: গল্পের প্লট টা ওনার দেওয়া ।

৫| ০৫ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১:৩৬

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গেজো দাদা, গল্পতো ভালোই লেগেছে কিন্তু সৌজন্য: দীপ্তরুপ দা কেনো!

০৬ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:৫১

গেছো দাদা বলেছেন: গল্পের প্লট টা ওনার দেওয়া ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.