নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত বাড়তে বাড়তে কখন যে একটার ঘরে চলে গেছে খেয়াল করি নি। খেয়াল করলাম মোবাইলে মেসেজ দেখতে গিয়ে। যে নাম্বারটা থেকে আমার জন্য মেসেজ এসেছে আমি সেই নাম্বারটা চিনি না। এক সময় এমন অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ আসলে উতলা হয়ে যেতাম৷ ফোন করে শুনতে ইচ্ছা করত ওপারে কোন নারীর সুন্দর মিহি গলা। তখন কি করে যেন নিশ্চিত হয়ে যেতাম। নিশ্চিত কথাটা মনে পরতে মনে হলো নিশ্চয়তার বিশ্বাস যদি কেটে গিয়ে গলাটা কোন ছেলের গলা হত ভীষন ভাবে রেগে যেতাম। আজকাল আর কোন কিছুতেই তেমন একটা রাগ ওঠে না। এমনকি জানতেও ইচ্ছা করেনা মেসেজের উৎস। বরং নিয়মিত মেসেজ আসলে ভালো লাগে। কেন জানিনা মনটা আবার খারাপ হয়ে যায় যখন মনে হয় সময়ের সাথে সাথে এখন আর কেউ অচেনা কাউকে মেসেজ করেনা।
হঠাৎ আবার মনে হচ্ছে এসব কি সব পাগলের মতো লিখছি। এর থেকে ভালো চুপচাপ শুয়ে থাকতাম৷ অনেকে আছে যারা চুপচাপ শুয়ে থাকতে পারেনা। আমি পারি। ঘন্টার পর ঘন্টা এমন কি সমস্ত রাত এটা ভেবেই কাটিয়ে দিতে পারি, আমি ফুটপাতে শুয়ে থাকা কোন ভিক্ষুক। সারাদিন ভিক্ষা করে এখন শুয়ে আছি একটা রাস্তায়। এই রাস্তাটা আমার। মাথার উপর আকাশটাও। আমি এর ভাগ কাউকে দেব না। নিজেকে ভিখারী ভাবতে ভালোলাগছে। কেন লাগছে তা হয়ত জানি না, আবার এমনটাও হতে পারে জানি কিন্তু বলব না। বলব না বলব না করতে গিয়ে একটু দূরে শুয়ে থাকা আর এক ভিখারী কে ডাকলাম। ওর নাম কি রাখা যায় একটু ভেবে নেই। জবা। না জবা নামটা পুরানো হয়ে গেছে। এমন একটা নাম রাখতে হবে যে নামটা আগে কোনদিন পৃথিবীর মানুষ রাখেনি। কি রাখা যায়, কি রাখা যায় চিন্তা করতে করতে মাথায় এলো ভোরের সকাল। বাহঃ। চমৎকার নাম। এই নামটাকে রাখা যায়। একটু গলা খাকরানি দিয়ে বললাম, শুনছিস। ও কোন উত্তর দিলো না। বোধহয় ঘুমাচ্ছে। কিন্তু ঘুমালে তো চলবে না। আমাকে এখন কথা বলতে হবে। তাই উঠে পরলাম নিজের রাজকীয় বিছানা থেকে। পকেটে বিড়ি আছে। ঝোলার ভেতর দেশলাই। কিন্তু তাতে কাঠি নেই৷ ধ্যাৎ। এই রাত্রে আর আগুনের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে ভালোলাগছে না। তারথেকে ভালো ওকে ডাকি।
-এই শুনছিস..?
কথাটা বললাম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে।
-হ্যাঁ বল।
-ঘুমাচ্ছিস.?
-আ মরন। শালা ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে জানতে চাইছিস ঘুমাচ্ছে কিনা.? তোর মরন হয় না।
-না। কি করলে মরা যায় বলত?
-বিষ খা।
-ইঁদূর মারা.?
-খেতে পারিস। তবে ওতে বোধহয় মানুষ মরে না, বরং মোটা হয়। তুই খেতে পারিস, মোটা হবি।
কথাটা বলতে বলতে ও আমার কোলে মাথা রাখে। আমি কপালে একটা চুমু দেব কিনা ভাবতে থাকি। ভাবতে গিয়ে মনে পরে আমি তো ওর একটা নাম রেখেছি।
-এই শোন।
-বল।
-আমি না তোর একটা নাম রেখেছি।
-কি নাম.?
-ভোরের সকাল।
কথাটা শেষ হতেই হো হো করে হাসতে থাকে ও। আমি চুপ করে থাকি। ইচ্ছা করে আমার আকাশটা থেকে ওকে একটা তারা উপহার দেই। দিতে পারিনা। কেন দেব.? আমি তো প্রতিজ্ঞা করেছি আমার আকাশটাকে আমি ভাঙতে দেবনা। থাক। তার থেকে বরং ওর হাসি দেখি।
মিনিট পাঁচেক হয়ে গেছে বোধহয়। ও হাসি থামায়। বলে,
-নামটা মন্দ না। কিন্তু এর সাথে মিলিয়ে তোর ও একটা নাম রাখ।
-রেখেছি।
-কি.?
-শেষ বিকেল।
কথাটা শেষ করেই আমি ওর মুখ চেপে ধরি। হাসতে দেই না। বলি,
-তুই বড়লোক না গরিব.?
-এমন দার্শনিক প্রশ্ন শুনে ভোরের সকাল অবাক হয়। আমার কপালে হাত দিয়ে বলে,
-জ্বর টর হলো নাকি তোর.? এভাবে ভুল বকছিস কেন.?
-ভুল বকছি না। শোন তোকে একটা কথা বলি। জীবনে যদি কোনদিন বড়লোকও হোস তাও নিজেকে গরিব ভাববি৷ কেন জানিস.? কারণ নিজেকে গরিব ভাবা ভালো। গরিব সারাদিন পরিশ্রম করে। পরিশ্রম করলে তাদের খিদে পায়। খিদে পেলে চোখের সামনে সমস্ত কিছুকেই খেতে ইচ্ছা করে। খাওয়া হলে ঘুম৷ গরিব অত দুঃখ করার সময় পায়না। আর তাই তারা আজো খোলা আকাশের নীচে নিশ্চিন্তে ঘুমায়। যেটা আমি কিনবা তুই পারিনা।
-পারিনা মানে.? এই তো পারছি। খোলা আকাশের নীচে শুয়ে আছি। প্রেম করছি।
-না। করছি না। আমার একটা বাড়ি আছে। সেখানে একটা বিছানা আছে। আমি তার উপর শুয়ে ছিলাম। ঘড়িতে একটা বাজছিল। হঠাৎ ইচ্ছা হলো কিছু লিখি। তাই এসব লিখছি। সেই লেখাতেই তুই এলি। তুই হলি আমার কল্পনা।
আমি কল্পনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে আসি। ঘরের ভেতর শুয়ে আছি। বাইরে বড় রাস্তাদিয়ে বোধহয় বড় একটা ট্রাক চলে গেলো। একটা কুকুর করুণ সুরে ডাকছে। সন্ধ্যায় অফিস ফেরত কে যেন বলছিল ও ওর বাচ্চা গুলোকে খুঁজে পাচ্ছেনা। আহারে মায়ের মন। এই রে, আবার বোধহয় জ্ঞান দিতে শুরু করলাম। লেখালেখি ছাড়ছি একটু একটু করে। সময় পাইনা। যখন নিয়মিত লিখতাম ভালো লাগত। ভালোলাগতো লোকে ভালো বলত তাই না, অন্তত বুক ঠুকে বলতে পারি কোনদিন কোন গল্পই কারো ভালোলাগাতে লিখিনি। এমন কি এই পাগলামি ভরা লেখাটাও না। আবেগ বেশি হয়ে যাচ্ছে। বেশি হয়ে যাচ্ছে ঘরময় ছড়ানো ব্যস্ততা। ওসব এখন থাক। বহুদিন পরে আজ আবার রাত জাগবো৷ কতদিন হয়ে গেলো ভোরটা কিছুতেই দেখা হয়না। আগে দেখতাম নিয়মিত। শেষ রাতে জানালা খুলে দিয়ে বিষন্ন বাতাস গায়ে জড়ানো যে কতটা প্রিয় হতে পারে তা বলে বোঝাতে পারব না। কিনবা ইচ্ছা করেই বলব না।
সব ভালোলাগার কথা বলতে হয়না। সব ভালোলাগার কথা বলে দিলে একদিন ভালোলাগাটা ফুঁরিয়ে যায়। ঠিক যেমন ভালোলাগার মানুষটাকে খুব ভালোকরে চিনতে যেতে নেই। চিনে ফেললে একটা মৃত্যু হয়। মৃত্যু হয় ভালোলাগার। মৃত্যু হয় ভালোবাসার। তখন আর কিছুতেই কিছু ভালোলাগেনা।
২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৫
হাবিব বলেছেন: ভালোবাসা মরবে কেন? টিকে থাক!
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: আসলে ভালো লাগা বা ভালোবাসার কথা বলতে হয় না। এটা হলো অনুভবের ব্যাপার।
কেউ যদি কানের কাছে সারাদিনে ১০০ বারও বলে ভালোবাসি, ভালোবাসি। লাভ নেই।
ব্যাপারটা তো আমাকে অনুভব করতে হবে। মুখের কথার দাম নাই।