নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লোকটাকে খুব হ্যান্ডসাম দেখতে। মাথার পেছনে একটা বাল্ব জ্বললে যেমন আলো বেরয়, সেইরকম বেরচ্ছে। জ্যোতি? আর গা দিয়ে ছাড়ছে ভুরভুর করে চন্দনের গন্ধ। মুখটা কেমন চেনাচেনা। কোনও দেবতা নয়তো? ক্যালেন্ডারে এমন মুখ খুব দেখা যায়।
সোমেশ্বর প্রণাম করল হাত জড়ো করে। অমনি হাতটা উঠে গেল আশীর্বাদ দেওয়ার ভঙ্গিতে। এ নির্ঘাত ভগবান।
সোমেশ্বর হাত জড়ো করেই বলল,"বড় প্রবলেম প্রভু। বউটা একদম ডেঞ্জারাস, যাকে বলে ভয়ংকরী। কী ঝগড়ুটে কী বলব। দিনরাত আমায় গাল পাড়ে হ্যাটা করে। আপনি ওকে ওই কী যেন বলে, হ্যাঁ নম্রস্বভাবা, মানে খুব কোমল কোমল করে দিন না প্রভূ।"
লোকটা "তথাস্তু" বলে চলে।
.
ঘুম ভাঙতেই সোমেশ্বর দেখল তার খান্ডারনি বউ এক গলা ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে উঠতেই প্রণাম করল। প্রণাম করে বলল, "আপনি মুখ ধুয়ে আসুন। আপনার জন্য মৌরি-মিছরির সরবত করে দেব। খুব গরম পড়েছে।"
সোমেশ্বর কিছুক্ষণ হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইল। একটা বড় সাইজের মশা মুখে ঢুকে পড়ল। তাও মুখ বন্ধ হল না।
বলল, "আপনি? মানে? আমি আবার আপনি হলাম কবে?"
ওদিক থেকে উত্তর এল, "স্বামী তো গুরুজন তাঁকে তো আপনি করেই বলা উচিত।"
.
দশ বছরের বিবাহিত জীবনে আজই প্রথম তাদের মধ্যে ঝগড়া হল না। এত মোলায়েম এত নরম করে কথা বলছে সীমা যে বিস্ময়ে সোমেশ্বরের চোখ ছানাবড়া হয়ে যাচ্ছে। এই তার সেই দজ্জাল বউ?
এই দু হাজার সতেরো সালে এমন অলৌকিক কান্ড হয়! অভাবনীয়।
মনটা প্রসন্ন হয়ে গেল সোমেশ্বরের। উড়তে উড়তে অফিস গেল সে।
.
সীমার ভয়ে এ বাড়িতে পাড়ার কেউ ঘেঁষত না।
সন্ধ্যাবেলায় অফিস থেকে বাড়ি ফিরে সোমেশ্বর দেখল, তাদের ড্রইংরুমে পাড়ার কিছু মাঝ বয়েসি লোক বসে আছে।
ঘরে পা দিতেই, চরিত্রের দোষের জন্য পাড়ায় যার খ্যাতি আছে সেই দেবুদা বলল,"আর বোলো না সামু। তোমার ওয়াইফ যে এত ভাল জানতামই না। সবাই ভুল ভাবতাম ওঁকে। আজ জানো দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারপর যাঁকেই দেখছেন তাঁকেই বাড়িতে চা খেয়ে যাওয়ার জন্য ডাকছেন। আহা হা, এমন আন্তরিক ডাকে সাড়া না দিয়ে কি থাকা যায়?"
অবাক হওয়ার তখনও বাকি ছিল। বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখল, ভেতরের বারান্দায় গোটা চারেক বস্তির গাঁজাখোর ছোকরা জমিয়ে বসে তাস খেলছে।
.
কিচেনে বড় একটা কেটলিতে চা হচ্ছে।
সোমেশ্বর চেঁচিয়ে উঠল,"এসব কী হচ্ছে? বাড়িতে সার্কাস চলছে নাকি?"
সীমা তাড়াতাড়ি তার দিকে ঘুরে,মাথায় ঘোমটা টেনে বলল,"ও আপনি এসে গেছেন? হাত-পা ধুয়ে নিন। চা দেব আর সবার জন্য পাকোড়া করছি আপনাকেও দেব।"
সোমেশ্বর হুঙ্কার দিয়ে উঠল,"না এসব এ বাড়িতে চলবে না। সবাইকে আগে তাড়াও।"
ঝপ করে সীমা সোমেশ্বরের পা ধরে বলল,"এমন বলবেন না দয়া করে, এরা সবাই খুব ভাল। আমিই এদের ডেকেছি। বেচারা ছেলেগুলো একটু তাস খেলার জায়গা পায় না। এখানেই এরা নিশ্চিন্তে খেলুক। আর কিছু প্রতিবেশীকে ডেকেছি একটু চা খাওয়ানোর জন্য। কত্ত খুশি হয়েছেন মানুষগুলো।"
সোমেশ্বর গলা চড়িয়ে বলল,"না ন্যাকামি ছাড়। এক্ষুনি সবাইকে ভাগাও।"
হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল সীমা।
.
নাহ্ মস্ত ভুল হয়ে গেছে। ভগবানের কাছে অনেক হিসেব করে বর চাইতে হত। সীমা প্রচণ্ড পরিমাণে কোমল হয়ে গেছে। বরটা পুরো বুমেরাং হয়ে গেছে। এর চেয়ে তার পুরানো খান্ডারনি সীমাই ভাল ছিল।
এখন ভগবানকেই বা পাবে কোথায় আর বরটাই বা বাতিল করবে কী করে!
সোমেশ্বর এইসব ভাবছে এমন সময় শুনতে পেল,"আর কত বেলা অবধি শুয়ে শুয়ে ফাজলামি করা হবে? বাজার না গেলে না খেয়েই অফিস যেতে হবে।"
আহা এই তে সীমার সেই চিরপরিচিত খ্যারখ্যারে গলা। এতক্ষণ তাহলে স্বপ্ন দেখছিল!
ভাগ্যিস!
২৪ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৪
গেছো দাদা বলেছেন: হেহে )
২| ২৪ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: নির্বোধ বউ এর চেয়ে দজ্জাল বউ অনেক ভালো।
২৫ শে মে, ২০১৯ রাত ১২:৩৩
গেছো দাদা বলেছেন: হা হা হা ।
৩| ২৫ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:০৭
আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: হাহাহা খুব মজা পেয়েছি! বেচারা...
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৫০
আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: হেহে