নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার জন্য ভালোবাসা।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাতি মাছের ঝোল ও এক বিপ্লবীর গল্প।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:০৭


আমাদের মতো জাপানীরাও মাছভাত পেলে আর কিছু চায় না আর তাই টোকিওর রাজপথে চলতে চলতে দুপাশে দেখবেন অনেক ভাতের হোটেল । সব জায়গাতেই পাবেন মাছের ঝোল ভাত । ওরা বলে রাইসু কারি তবে স্বাদে বাঙালি ঝোলের ধারেকাছে আসেনা । ওদের এই কারিতে ফল ছাড়াও থাকে মধু, আর এরারুট মেশানো, কাজেই বাঙালি জিভ তা নেবেনা মোটেই । এরই মাঝে চোখে পড়বে এক রেস্তোরার সাইনবোর্ডে লেখা “authentic India curry”, দোকানের নামটা দেখে আবার চমকাবেন না যেন, #নাকামুরা .........মনে পড়লো কিছু ?

1915 সাল , রবীন্দ্র নাথের জাপান যাত্রার প্রাক্কালে তার আত্মীয় পি এন ঠাকুর পরিচয় দিয়ে ভারত থেকে পালিয়ে সেদেশে এলেন এক বিপ্লবী । পালাবেন নাই বা কেন, বড়লাট হার্ডিঞ্জের ওপর বোমা ফেলেছেন যে , ধরলেই ইংরেজরা ফাঁসিতে লটকে দেবে । জাহাজে চেপে এলেন কোবে , সাহায্য পেলেন জাপানের প্রখ্যাত এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্যান এশিয়ান আন্দোলনের নেতা মিৎসু তোয়ামা'র । এনারই সাহায্যে চলে এলেন টোকিওতে । এদিকে বৃটিশ পুলিশ খবর পেয়ে তাকে পাকড়াও করতে জানালো জাপানী পুলিশকে পাশাপাশি নিয়োগ করলো পেশাদার খুনী । বাধ্য হয়ে ঐ বিপ্লবী কিছুদিন তোয়ামা সাহেবের বাড়িতে লুকিয়ে থাকলেন । কিন্ত কাঁহাতক আর এক নেতার বাড়িতে লুকিয়ে থাকা যায়, সারাদিন ধরে নানান লোকজন আসছে । শেষে উনিই ব্যাবস্থা করে দিলেন সোমা নামে টোকিওর এক প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ীর বাড়িতে । বাড়িতে বলা ভুল হলো, ওনার পাঁউরুটি বিস্কুট তৈরির বেকারির বেসমেন্টে ।

এভাবেই দিন যায়, এর মাঝে বৃটিশ রণতরী কামান দেগে ডুবিয়ে দিল জাপানের এক বাণিজ্য তরী । ব্যাস জাপানের সাথে ইংল্যান্ডের কূটনৈতিক সম্পর্ক শেষ, সাথে বন্দী প্রত্যার্পণ চুক্তিও খতম ! তোয়ামা সাহেবের উদ্যোগে এবারে ওবাড়ির বড়মেয়ে তোশিকোর সাথে মালাবদল হয়ে গেল বিপ্লবীটির, সালটা ছিল 1918 । এই বিয়ের পাঁচ বছর পরেই উনি পেয়ে যান জাপানী নাগরিকত্ব । কিন্ত দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়লো না, দুটি সন্তানের জন্ম দেবার পর 1927 সালে নিউমোনিয়ায় মারা গেলেন স্ত্রী তোশিকো, যিনি এক পলাতক বিপ্লবীকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করে বেছে নিয়েছিলেন অনিশ্চিত জীবন......... ইতিহাস তাকে মনে রাখেনি ।
বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালন করলেও বিপ্লবী মানুষটি কিন্ত তার লক্ষ্য থেকে সরে আসেন নি । ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য জাপানের মাটিতে বসেই চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, তৈরি করেছেন ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লীগ । চিঠিপত্র ও বক্তৃতার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে জানিয়েছেন সাহায্যের আবেদন । এরই মাঝে একদিন খেতে বসে আবিষ্কার করলেন জাপানি মাছের ঝোলে ইউরোপিয়ান প্রভাব খুব বেশি । রান্নাবান্নায় উৎসাহতো ছিলোই , রেঁধে ফেললেন বিশুদ্ধ বাঙালি মাছের ঝোল । খেয়ে তো আত্মীয় পরিজন রা একদম মোহিত । মূলত তাদেরই চেষ্টায় 1928 সালে ঐ বেকারির ছাদে খোলা হলো রুফটপ রেস্তোরা, নাম #নাকামুরা_কাফে । ভারতীয় বিপ্লবীর তত্তাবধানে সেখানে রান্না হতো বাঙালি মাছের ঝোল ছাড়াও ভারতের অন্য প্রদেশের মাছ মাংসের হরেক পদ, মূলত কারি ।
টোকিওর আম জনতাকে এই কারি খাইয়েই উনি পরিচয় করাতে চাইলেন এদেশের সাথে ।

পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝেছেন কে এই বিপ্লবী ? টোকিও তে এসে এই নাকামুরা বেকারীতেই আশ্রয় পান মহান বিপ্লবী রাসবিহারী বসু । অচিরেই এই ভারতীয় কারি জাপানে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে । 1945 এ রাসবিহারী মারা যাবার পর এই রেস্তোরা টোকিওর অফিসপাড়া শিনঝাকু এলাকাতে সরিয়ে আনা হয় । আজও সেখানে তাঁর দেয়া রেসিপি মেনে ইন্ডিয়ান কারি বানানো হয় , প্রবেশ পথের মুখে শোভা পায় ধুতি ও কালো কোট পরিহিত মহান ঐ বঙ্গসন্তানের সস্ত্রীক বিশাল প্রতিকৃতি ।

আশেপাশের অন্যান্য রেস্তোরা থেকে বহুগুন দাম হওয়া সত্ত্বেও লাঞ্চ টাইমে এখানে টেবিল খালি পাওয়া মুশকিল । 2001 সাল থেকে সেই একই রেসিপি মেনে তৈরী হওয়া Ready-to-eat কারি বিপণন হচ্ছে সারা জাপান জুড়ে । দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা আশিটি শাখা যুক্ত নাকামুরা ফুড কোম্পানির 2016 সালে টার্নওভার ছিল মাত্র 2.6 বিলিয়ন ইয়েন !

রাসবিহারী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ আমাদের স্মৃতিতে আজ ধূসর, পরবর্তী প্রজন্মে আদৌ থাকবে কিনা জানা নেই । কিন্ত নাকামুরার ইন্ডিয়ান কারির মধ্যে দিয়ে কয়েক লক্ষ জাপান বাসীর মানসপটে আজও রয়েছে সেই মহান বিপ্লবীর উজ্জ্বল উপস্থিতি ।
প্রয়াণদিবসে রইল আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
......তথ্যসূত্র : আন্তর্জাল।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:২৩

শের শায়রী বলেছেন: পোষ্টে ভালো লাগা।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:১১

গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:২৭

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ব্রীটিষ রাজদের বিরুদ্ধে বার বার রুখে দাঁড়িয়েছিল মুলত বাংগালীরাই।
পাঞ্জাবী পাঠান রাজপুত সেনা কর্তা তথা চাপরাশিরা ছিল ইংরেজদের খেতাব সংগ্রহে ব্যাস্ত।
শিপাহি বিদ্রোহ বাংলা অঞ্চল থেকেই শুরু হয়েছিল।
খুদিরাম, সুর্যসেন, হাজি শরিয়তুল্লাহ, নেতাজি সুভাস বোস এরা সবাই বাংলার।
এই রাসবিহারী বসুও বাংলার।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:২৮

গেছো দাদা বলেছেন: একদম ঠিক ।

৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: বিপ্লবীদের বিয়ে করা উচিত নয়।
অনেকদিন পর আপনার পোষ্ট পেলাম।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৫

গেছো দাদা বলেছেন: হ্যাঁ । আসলে একটু ব্যস্ত হয়ে পরেছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪৪

পদ্মপুকুর বলেছেন: বাহ, আপনার পুর্ববর্তী রম্য থেকে সরে এসে নতুন লেখা, ভালো লাগলো।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৫

গেছো দাদা বলেছেন: মাঝে মাঝে মুখ পাল্টাতে ইচ্ছা করে।রসগোল্লা কি প্রতিদিন খেতে ভালো লাগে ?

৫| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪৮

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: রম্য থেকে সিরিয়াস বিষয়ে ! চাঁদগাজীর আসর পড়ে নি তো আপনার উপর ?

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৪১

গেছো দাদা বলেছেন: হা হা হা .....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.