নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার জন্য ভালোবাসা।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যরচনা : করোনা লকডাউন ও আমার দ্বিতীয় বিয়ে

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০৪

ঠিক সকালবেলাতেই জানতে পারলাম আমি আরও একটা বিয়ে করেছি। সকাল মানে এই সাড়ে দশটা নাগাদ।
.
কোরোনা লকডাউনের সময় ঘরে কেউ আসছেই না বলতে গেলে তাই কেউ আসা মানেই বিরাট ব্যাপার। সেদিন গ্যাস-সিলিন্ডারের ডেলিভারি বয়ের সঙ্গে বউ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের ভবিষ্যত, এই বিষয়ে আধ ঘন্টার বেশি সময় ধরে আলোচনা করল।
.
তো আজ সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ দরজায় ধাক্কা। বউই গিয়ে দরজা খুলল।
আমি ফেলুদা পড়ছিলাম। হঠাৎ শুনতে পেলাম আমার বউয়ের উত্তেজিত গলা, "এ সব কী বলছেন আপনি? আপনার হাসব্যান্ড এখানে থাকে? কী নাম তার?"
একটি মহিলা কন্ঠ বলল, " ঠিকই বলছি। আগে ওকে বেরোতে বলুন। টাকা দেয়নি কতদিন, কী কষ্টে আমি আর আমার ছেলে আছি!"
এ সব কী! কে হাসব্যান্ড? আমি?এ কোন গেরোয় পড়লাম রে বাবা! ভয়ে বুকের মধ্যে ড্রাম বাজতে লাগল।
.
বউ ডবল গলা চড়িয়ে বলল, "ইয়ার্কি পেয়েছেন নাকি? যা হোক তাই বললেই হল? এই ঘরে আপনার বর থাকে? ভালয় ভালয় চলে যান, নইলে পুলিশ ডাকব।"
পুলিশের কথায় একটুও ভয় পেল না মহিলা। বলল, "ডাকুন ডাকুন। নইলে আমিই ডাকব। তুমি তোমার প্রথম পক্ষের কাছে থাকো না বাবা, আমি কি বারণ করেছি? কিন্তু আমাকেও বিয়ে যখন করেছ একটা বাচ্চাও আছে, তখন খরচ-খরচা কে দেবে শুনি?"
আমি ঘরের ভেতর থেকে কম্পিত হৃদয়ে কথোপকথন শুনছি।
এখন মহা বিপদে পড়লাম তো! প্রমাণ করব কী করে যে আমি বিয়ে করিনি?
যাইহোক ঘরে তো আর বসে থাকা যায় না। আমি মাস্ক পরে বেরিয়ে পড়লাম।
বউ বলল, "দ্যাখো দ্যাখো কী বলছে! এই ঘরে নাকি ওর হাসব্যান্ড থাকে। মানে তুমি নাকি ওর বর!"
মেয়েটির মুখে ওড়না জড়ানো। সঙ্গে একটি বছর পাঁচেকের বাচ্চা। আমাকে দেখে বলল, "হ্যাঁ এই তো, এই আমার বর। কী গো তুমি আমায় চিনতে পারছ না? তোমার সোমলতাকে চিনতে পারছ না? তোমার বেটুকে চিনতে পারছ না?"
বউয়ের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব চলছে। আমি পড়লাম মহা মুস্কিলে। কী করি এখন?
বউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে টলটল করছে জল। বলল, "কিছু বল এবার?"
আমি মাস্ক খুলে ফেললাম। করোনা হয় হোক! বললাম, "এবার ভাল করে দেখে বলুন, আমিই কী আপনার বর?"
মহিলা অর্থাৎ সোমলতা ভাল করে দেখে দু-দিকে ঘাড় নেড়ে বলল, " না না ইনি নয়। আমার বরের এমন গোঁফ নেই।"
যাক বাবা বাঁচা গেল! গোঁফের জন্য এ যাত্রায় দ্বিতীয় বিয়ে থেকে বেঁচে গেলাম।
বউও ফর্মে ফিরে এল। বলল, "বলেছিলাম তো আমার ঘরে আপনার বর নেই। যার তার ঘরে গিয়ে বর- বর করছে! যাও যাও, মানে মানে বিদেয় হও এবার।"
সোমলতা বলল, "একবারই দেখেছিলাম বাড়িটা। ইচ্ছে করেই ভুল বাড়ি দেখিয়ে দিয়ে ছিল নাকি কে জানে! পুরুষগুলোকে কিচ্ছু বিশ্বাস নেই! আমি না হয় দুদিন না খেয়ে আছি, অসুবিধা নেই কিন্তু এইটুকুনি বাচ্চা কি না খেয়ে থাকতে পারে?"
বউ বলল, "তুমি ঘরে যাও।"
.
আবার বই খুলে বসলাম। কিন্তু এক পাতাও পড়তে পারছি না। খানিকক্ষণ পরে বউ এ ঘরে এল। আমার পাশে বসে বলল, "বাব্বা ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। আমি অবশ্য সিওর ছিলাম তোমার এত সাহস হবে না।"
আমার 'হতে পারত দ্বিতীয় পক্ষ'র জন্য সত্যি বলতে কী একটু খারাপই লাগছে! বেচারা এখন তার স্বামীকে কোথায় খুঁজে পাবে! বাচ্চাটাও না খেয়ে আছে!
বললাম, "ওর স্বামীকে খুঁজে পাবে নাকি কে জানে! খারাপ লাগছে জানো? সত্যিই যদি টাকা পয়সা না থাকে!"
বউ বলল, "সে আমিও ভেবেছি। বাচ্চা আছে একটা। তার কী দোষ! দিয়েছি দু হাজার টাকা। অন্তত খেতে পাবে কটা দিন। আর তোমার মতোই কেউ তো এই কীর্তি করেছে। একটা কথা ঠিকই বলেছে মেয়েটা, পুরুষদের কিচ্ছু বিশ্বাস নেই।"
তারপর নরম গলায় বলল, "রোজ সেই একই খাওয়া! ফ্রিজে একটু মাংস আছে, আজ বের করে করি।"
আমি বুঝলাম, সতিন হতে হতে না হওয়ায় বউ হেব্বি খুশি হয়েছে।
.
.
পুনশ্চ - বিকেলে খবর পাওয়া গেল, ওই মহিলা এই লক ডাউনের সুযোগে আমাদের এ পাড়ায় আরও অন্তত তিনটে বাড়িতে গিয়ে এই একই নাটক করে কিছু কিছু টাকা হাতিয়েছে।
বউ ডুকরে উঠল, "হায় হায়....আমায় পুরো মুরগি বানিয়ে দিল!"
আমি বললাম, "তাহলেই বোঝো। শুধু পুরুষদের নয় মেয়েদেরও বিশ্বাস নেই।"
দু'হাজার টাকার শোকে কাতর বউ কোন উত্তর দিল না...

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৩০

বিভ্রান্ত পাঠক বলেছেন: হা হা,

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:২৫

গেছো দাদা বলেছেন: হুমমম।।।।।

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৩২

বিষাদ সময় বলেছেন: হায় কপাল .....আরেকটা বউ পাওয়ার চান্স এবং টাকা দুটোই গেল :)

ভাল লাগলো তবে আসলেই এ রকম সময়ে উদ্ভাবনী মেধা সম্পন্ন প্রতারক চক্র থেকে সাবধান থাকা দরকার।

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৩৭

গেছো দাদা বলেছেন: একদম ঠিক কথা বলেছেন। হা হা হা ।

৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:০৭

মা.হাসান বলেছেন: গেছো দাদা অল্পের উপর দিয়ে বেঁচে গেলেন। মাস্ক খোলার পর মহিলা যদি দাবি করতেন-ইনিই তিনি, তখন কি করতেন? ভাবি কি আপনার কথা বিশ্বাস করতো?

বিপদের দিনে আপনার এই লেখা প্রিন্ট করে বাসায় এক কপি রেখে দেয়া সকল পুরুষের কর্তব্য । এমনকি যারা অপকর্ম করেছেন তারাও বেচে যেতে পারবেন B-))

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:০৯

গেছো দাদা বলেছেন: ভাগ্যিস অল্পের উপর দিয়ে গেছে । নাহলে যে কি হতো !!

৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৪৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এই করোনা দিনে বিয়ে করোনা । মজা পেলাম।

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৩৩

গেছো দাদা বলেছেন: এই করোনা দিনে প্রেমও করোনা। এককথায়, দিওনা নিওনা করোনা ....

৫| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:১৩

ইসিয়াক বলেছেন: হা হা হা .....চমৎকার লাগলো ।

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৪৯

গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৬| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:১০

মেটালক্সাইড বলেছেন: খুব জোরে হা হা হ---

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৫১

গেছো দাদা বলেছেন: খুব আস্তে থ্যাঙ্কিউ ....ভালো থাকুন দাদা।

৭| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: ঘটনা কি সত্য না বানোয়াট?

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৫৬

গেছো দাদা বলেছেন: এইধরনের ঘটনা আমার এলাকায় ঘটেছে। ঘটনা টিকে আমার কল্পনার রঙ দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি। কাজেই এটিকে বলা যেতে পারে.... "সত্য হলেও গল্প"।

৮| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৯

ক্ষুদ্র খাদেম বলেছেন: সুপার আইডিয়া =p~ B-)) B-)

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৫৭

গেছো দাদা বলেছেন: বেচতে চাই।খরিদ্দার আছে ? হা হা হা ... । ধন্যবাদ দাদা।

৯| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:০৯

জুন বলেছেন: হা হা হা গেছো দাদা আপনার জীবন নিয়ে লেখা রম্যগুলো খুবই উপভোগ্য। গোফের জন্য এই যাত্রা বেচে গেছেন। এখন থেকে গোফের যত্ন নিন সকাল বিকাল =p~ আমারও মনে হয়েছিল মহিলাটি একটি প্রতারক।
+

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৩৬

গেছো দাদা বলেছেন: গোঁফের আমি গোঁফের তুমি .... গোঁফ দিয়ে যায় চেনা !!

১০| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:১৫

ইফতি সৌরভ বলেছেন: এজন্যই তো বলে, যার গোঁফ নেই, সে পুরুষ ন নয় । ঘরবন্দি জীবনে এমন বিনোদে বিনোদিত ।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৫২

গেছো দাদা বলেছেন: শুধু গোঁফ থাকলেই কি পুরুষ হওয়া যায় ? হা হা হা । ধন্যবাদ ।

১১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৪

পুলক ঢালী বলেছেন: হা হা হা দ্বিতীয় বৌটা হাতছাড়া হয়ে গেল? যত দোষ ঐ সজারুর কাঁটা মার্কা গোঁফের। গোঁফের বংশ সাফ করে ফেলুন ;) :D
বাই দ্যা বাই গোঁফ রক্ষা করতে না পারলে বাচ্চার ডিএনএ টেষ্ট পর্যন্ত যে যাওয়া লাগেনি সে জন্য সবাইকে ট্রিট দিন :D
লেখা খুবই চমৎকার হয়েছে।
ভাল থাকুন।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:০১

গেছো দাদা বলেছেন: আমার দ্বিতীয় বৌটার জন্য দুয়া কইরেন ভাইজান !!

১২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৬

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: হা হা হা হা হা

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৯

গেছো দাদা বলেছেন: হাসছি মোরা হাসছি দেখো হাসছি মোরা আহ্লাদী .....।

১৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: রম্য ভালো লেগেছে।

১৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৪৫

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: দাদা এখন গোঁফে তৈলমর্দন করুণ কেননা গোফ আপনাকে বাঁচিয়েছে মহাবিপদ থেকে। হা হা হা.........

১৫| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৫৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আহা, দাদার খায়েশটা মিটলনা !!
একটুর জন্য হাত ফসকে বেরিয়ে গেল !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.