নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
.
সকাল ছটায় টোটোয় করে স্টেশন চত্বরে পৌঁছাল পরেশ। টোটো থেকে চটপট নামিয়ে ফেলল মালগুলো। দুটো বড় হাঁড়ি, একটা ড্রাম, গোটা দুয়েক বালতি, হাতা, প্লাস্টিকের টুল ইত্যাদি। তাতে আছে ছশো পরোটা, আলুর দম, শশা-পেঁয়াজ কুঁচি, কাগজের প্লেট...
স্টেশন চত্বরেই একটা শেডের নীচে জিনিসগুলো সাজিয়ে নিল। আধ ঘন্টা লাগল সব গোছাতে। ততক্ষণে খদ্দেরের লাইন লেগে গেল।
মাল শেষ না হওয়া অবধি সে এখানেই দাঁড়িয়ে বিক্রি করবে। টুল একটা আছে কিন্তু বসা হয় না। এই এলাকায় পরেশের পরোটা আর আলুর-দমের বিশাল খ্যাতি। ঘন্টা চারেকেই শেষ হয়ে যায় বেশির ভাগ দিন। খুব বৃষ্টিবাদলায় স্টেশনে লোকজন কম থাকলে একটু বেশি সময় লাগে। সেও কালেভদ্রে।
প্রতিদিন ভালই লাভ হয়। বছর পনেরোর বিজনেস। প্রথমে এত চলত না। পরেশের মনে আছে প্রথম প্রথম পঞ্চাশটা পরোটাও বিক্রি হত না। আস্তে আস্তে ব্যবসা জমতে শুরু করল। তার পরোটা আর আলুর-দমের স্বাদ লোকে পছন্দ করতে লাগল। দেখতে দেখতে এখন পরোটার সংখ্যা ছশোতে দাঁড়িয়েছে। এক একদিন অতি দ্রুত শেষ হয়ে যায়। সামান্য দেরি করে এলেই খদ্দের পায় না। রেগুলারের খদ্দের রাগ করে বলে, "পরেশদা মাল বাড়াও। কত দূর থেকে তোমার পরোটা খেতে আসি, না খেয়েই ফিরব?"
কিন্তু বাড়াও বললেই হল নাকি! এত পরোটা বেলা, ভাজা, সে কী কম হ্যাপার কাজ! লোকে আর কী বুঝবে!
আর কটা বছর এভাবে চালাতে পারলে বাড়িটা হয়ে যাবে। জায়গা কেনা হয়েছে। অনেকটা জায়গা। এখন খুব কষ্ট করে থাকতে হয়। ছোট্ট দু কামরার ঘর। মা, বউ আর সে। ঘরের বারান্দা হল রসুইঘর। বড় বড় হাঁড়ি, কড়া, চাকি-বেলনা, তেলের টিন, ময়দার বস্তা, আলুর বস্তা ইত্যাদি মিলে বারান্দাটা দখল করে নিয়েছে।
.
আজ স্টেশন চত্বর একটু ফাঁকা। কীসের যেন ছুটি আজ। তাই অফিসের ডেলি প্যাসেঞ্জার কম। তাতেও পরেশের পরোটার বিক্রিতে কোনও কমতি নেই। ঘন্টা খানেকেই দুশো পরোটা উঠে গেল। এক প্লেট মানে দুটো বড় পরোটা, আলুর দম আর দু-টুকরো শশা পেঁয়াজ। সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা তো আছেই। অবশ্য দুশোর মধ্যে আশিটার মতো পার্সেল।
এই সময় ক্যামেরা ট্যামেরা নিয়ে একজন ফুড ভ্লগার হাজির হল। এই হয়েছে এখন এক জ্বালা। গাদাই ভ্লগার। অবশ্য এদের জন্যই তার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এরাই তাকে ভাইরাল করে দিয়েছে। রোজ কত সুন্দর সুন্দর ছেলে-মেয়ে আসে দূর-দূরান্ত থেকে। পরোটা খায় তারপর পরেশের সঙ্গে সেলফি তোলে, ভিডিও করে। সেই সব ছবি-ভিডিও আবার ফেসবুকে পোস্ট করে!
তাই আর নোংরা অপরিচ্ছন্ন থাকতে পারে না পরেশ। ফিটফাট থাকতে হয়। মাঝে মাঝেই নতুন জামা-প্যান্ট কিনতে হয়। সেলুনে গিয়ে ফেসিয়াল-টেসিয়াল করতে হয়। গায়ে ডিও লাগাতে হয়।
সেদিন নতুন জামার একটা প্যাকেট নিয়ে ঘরে ঢুকতেই তার মা বলল, "এই সেদিনই তো একটা জামা কিনলি? আবার? কখনো বউমার জন্য তো একটা শাড়ি আনতে দেখি না?"
মাথা গরম হয়ে গেল পরেশের। এই গবেট মেয়েগুলো বিজনেসের কিছুই বোঝে না!
.
ভ্লগার বলল, "আপনি তো রীতিমতো সেলিব্রিটি মশাই! সারা বাংলায় আপনার পরোটার সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে!"
পরেশ হেসে বলল, "লোকে নামটাই দেখে, এর পেছনে খাটুনিটা দেখে না। আমার কোনো কাজের লোক নেই। নিজের হাতেই যত্ন করে সব বানাই! কতদিন ভাল করে ঘুমাইনি, জানেন?"
ভ্লগার বলল, "সারা রাত জেগে রেডি করতে হয় নাকি?"
পরেশ বলল, "নাহলে রোজ এই সকাল ছটায় গরম পরোটা, আলুর দম, স্যালাড নিয়ে হাজির হই কী করে, বলেন?"
ভ্লগার ঘাড় নেড়ে বলল, "তা ঠিক।"
ভ্লগার পরোটা আলুর-দম খেয়ে ফিদা হয়ে গেল! বলল, "আপনার হাতে জাদু আছে! আহা কী অসাম টেস্ট! এই জন্যই এত নাম! কুর্নিশ আপনাকে..."
তারপর ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলল, "আজ আপনাদের দেখাব পরেশদার হাত, যে হাত দিয়ে প্রতিদিন ছশো সাতশো পরোটা বেলা হয়, ভাজা হয়, দেখুন দেখুন সেই হাত! সবাই পরেশদার তুলতুলে পরোটা আর সুস্বাদু আলুর দম দেখায় আর আমি দেখাচ্ছি সেই পরোটা আর আলুর দম যে হাত দিয়ে তৈরি হয় সেই হাত, এক রন্ধনশিল্পীর হাত। দেখুন আর লাইক দিন, শেয়ার করুন!"
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেল পরেশের। বাথরুম যেতে হবে। বারান্দায় তখন তার ছেষট্টি বছরের বৃদ্ধা মা পরোটা ভাজছে, আর তার বউ বেলে দিচ্ছে। ওদিকে আর এক উনুনে আলুর দম হচ্ছে।
বাথরুমে যেতে যেতে পরেশ বলল, "দেখো না আর শ-দুয়েক পরোটা বাড়ানো যায় কি না?"
রাত জাগা পরিশ্রান্ত মা হেসে বলল, "ঠিক আছে রে, রাত দুটোয় শুরু করি, কাল থেকে নাহয় একটাতেই লেগে পড়ব, কীরে বউ পারবি তো?"
পরেশের বউ ঘাড় নেড়ে বলল, "পারব মা।"
২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:২০
গেছো দাদা বলেছেন: আমাদের আসেপাশের প্রবাহমান জীবন হতে নেয়া।
২| ২৫ শে জুন, ২০২৪ ভোর ৬:২৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: জননী ও জায়ার যৌথ প্রয়াস, অন্ততঃ ঐ হাতটা দেখানোর পেছনের কর্মযজ্ঞের ব্যাপারে। কিন্তু কৃ্তিত্ব সবই পুত্রধনের।
খুবই অল্প কথায় একটি পারিবারিক (সামাজিকও বটে) অবিচারের চিত্র তুলে ধরেছেন এ ছোটগল্পের মাধ্যমে। অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী হয়েছে, অন্ততঃ আমার কাছে।
আপনাকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ।
২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:২১
গেছো দাদা বলেছেন: আপনাকও অসংখ্য ধন্যবাদ ।
৩| ২৫ শে জুন, ২০২৪ সকাল ৮:৪৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: চমৎকার হয়েছে গল্প।
২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:২২
গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ২৫ শে জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২৩
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ব্লগে আসি না।
আজ এসে আপনার গল্পটি পড়ে মুগ্ধ হলাম।
শুভ কামনা রইলো।
২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৩
গেছো দাদা বলেছেন: আপনাকেও শুভ কামনা ও ধন্যবাদ জানাই।
৫| ২৫ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ২:২৮
শেরজা তপন বলেছেন: তবে বাইরের খাটুনিটাও কম নয়। প্রোডাকশন যতই চমৎকার বা নিখুঁত হোক ও তার পিছনে যত শ্রমই থাক না কেন, তার বাজারে যদি কোন চাহিদা তৈরি না হয় সেলসম্যানশিপ যদি ভালো না হয় তাহলে এটা মূল্যহীন।
সে একটু মিথ্যা কথা বলছে কিছুটা সেলফিস টাইপের লোক বটে তারপরও তো পরিবারের প্রতি সে দায়িত্বশীল নিশ্চিত। সে বাইরে খাচ্ছে পরিবারের লোক ঘরে খাচ্ছে বড় বাড়ি করছে এদের জন্যই তো। তাদের খাটুনির যোগ্য মূল্যায়ন হচ্ছে না এটাও ঠিক। কিন্তু এই ব্যবসাটাই যদি না হত তাহলে কি হতো?
আপনি এ ধরনের লেখা লিখুন খুব ভালো লেখার হাত আপনার তা আগে থেকেই জানি আমরা।
২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৪
গেছো দাদা বলেছেন: একমত। ধন্যবাদ ।
৬| ২৫ শে জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৪
জুন বলেছেন: গল্প হলেও কাহিনী সত্যি গেছো দাদা। পুরুষ মানুষ কেন জানি যে কোন কৃতিত্বের ভাগ যাতে অন্যরাও যেমন আপনার গল্পের মত মা বোন বা স্ত্রী জড়িত তাদেরকে দিতে ভীষণ কার্পণ্য করে থাকে।
এমন গল্প আরো লিখুন।
+
২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬
গেছো দাদা বলেছেন: লেখার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ১২:৫৩
জটিল ভাই বলেছেন:
সুন্দর গল্প। এটা কি আপনার জীবন হতে নেয়া?