নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
—‘নাদু! অ্যাই নাদু।’
—‘এই তো। বলো’
—‘থাকিস কোথায়? ডেকে ডেকে সাড়া পাওয়া যায় না।’
—‘রান্নাঘরে ছিলাম মামা।’
—‘রান্না ঘরে কী করছিলি?’
—‘বাতাসার কৌটো খুঁজছিলাম। মুড়ি দিয়ে খাবো।’
—‘মুড়ি বাতাসা! ছ্যা ছ্যা।’
—‘আর কী করব বলো। মামীকে বললাম, পরীক্ষা তো শেষ। আজ রাতে একটু লুচি আলুর দম হোক। কেমন যেন খেঁকিয়ে উঠল।’
—‘আর লোক পেলি না? শেষে মামীকে? দেখিস না, একটু ভালমন্দ খাওয়ার কথা বললে আমাকেই কেমন মুখের তোড়ে ভাসিয়ে দেয়। আমি নিতাই সামন্ত, ঘোড়াডাঙা স্কুলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ ডাকসাইটে হেডমাস্টার, বেয়াড়া ছাত্ররা আমার নাম শুনলেই প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে। ব্যাকরণ ক্লাসে আমি যখন প্রত্যয় সমাস জিজ্ঞাসা করি, ফার্স্টবয় পর্যন্ত ভয়ে তোতলা হয়ে যায়। সেই আমাকেই তোর মামী খাওয়া নিয়ে কেমন খ্যাঁকখ্যাঁক করে দেখিসনি?’
—‘সেতো তোমার ডিসপেপসিয়া আছে। খেয়ে হজম করতে পারো না বলে।’
—‘থাম। গুরুজনের মুখেমুখে তক্ক করিসনে। ডিসপেপসিয়া তুলে খোঁটা দিবি না বলে দিলাম! তাহলে তোর একদিন কী আমার একদিন। তোর মতো বয়সে আমি বাংলায় ছেচল্লিশ পাইনি কখনও। তুই পেয়েছিস। ছ্যা ছ্যা ছ্যা। বাংলায় কেউ ছেচল্লিশ পায়?’
—‘ইয়ে আসলে আমার বানানটা একটু নড়বড়ে। জানোই তো।’
—‘বাংলার মাস্টারের ভাগ্নের বানান নড়বড়ে। লোকে কী বলবে? কী বাংলা, কী খাওয়া–দাওয়া— দু’দিক থেকেই নরানাং মাতুলঃ ক্রম ফর্মুলাটা ফেল মেরে গেল রে।’
—‘বাংলাটা নিয়ে বলতেই পারো। তবে খাওয়ার ব্যাপারে কিন্তু আমি তোমার মতোই অনেকটা।’
—‘থাক! গপ্প ফাঁদতে হবে না। গেলবার ভাইফোঁটায় দেখিনি যেন আমি। তোর মা যখন লুচি ভেজে খাওয়াচ্ছিল, তুইও তো আমার পাশেই বসে ছিলি। মাত্র ১৬টা লুচির পরেই হাঁপিয়ে গেছিলি। ওরে তোর মতো বয়সে আমি দু’দিস্তে লুচি দিয়ে ওয়ার্ম আপ করতাম রে। এখনও যদি তোর মামী লুচি ভাজতে বসে, তাহলে ৩০–৩৫টার নীচে কথাই বলি না।’
—‘সে আর দেখার সৌভাগ্য হল কই? লোকে বলে মামার বাড়ি ভারী মজা। আর আমার কপাল দেখো এখানে এসে ইস্তক চারাপোনার ঝোল গিলে যাচ্ছি। একটু লুচি–টুচি যদি না পাই...’
—‘আহা এত উতলা হলে চলে?’
—‘হবো না, বলো? আমারও তো ইচ্ছে করে মামার বাড়িতে কব্জি ডুবিয়ে খাই।’
—‘বটে? তা কী কী ইচ্ছা করে শুনি।’
—‘এই ধরো সকালে লুচি। দুপুরে পাঁঠা। রাতে বিরিয়ানি...’
—‘পড়া না জানা ফাঁকিবাজ ছাত্রের মতো উপর উপর অ্যানসার দিস না নাদু। নাম্বার কেটে নেবো।’
—‘গুছিয়ে বলতে হবে?’
—‘ইয়েস।’
—‘অ্যাঁ...সকালে লুচি।’
—‘সকালে লুচি? ওরকম ইমপালসিভ ডেসক্রিপশনের কোনও মানে হয় না। ডিটেলিং চাই।’
—‘মানে লুচি আর ছোলার ডাল।’
—‘ছাগল! শুধু ছোলার ডাল বললে হয়?’
—‘ছোলার ডাল ফুল অফ নারকোল কুচি।’
—‘আর কিসমিশ?’
—‘হ্যাঁ হ্যাঁ কিসমিশ।’
—‘ছাড় তোর দ্বার হবে না। আমি বলছি, তুই লেখ।’
—‘বেশ।’
—‘লেখ, দিন রবিবার। সময় সকাল সাড়ে আটটা। লোক বলতে আমি তুই আর মামী।’
—‘উমম সাড়েএএ আটটাআআআ।’
—‘লিখেছিস? এবার লেখ, ফুলকো ধবধবে সাদা লুচি। গায়ে জবজবে তেল নেই। আলতো টোকা দিলে ওপরের নরম চামড়া ফেটে ভুস করে গরম হাওয়া বেরিয়ে আসবে। কম করে ১৬টা।’
—‘আহা। তারপর?’
—‘পাশে বাটিতে ছোলার ডাল। তাতে থিকথিক করছে নারকোল কুচি। কাজু–কিশমিস।’
—‘খাসা। ডালের বাটিতে একটা তেজপাতা থাকাটা মাস্ট। ডাঁটি ধরে টেনে তুলে চেটে ফেলে দেবো।’
—‘সাবাশ ভাগ্নে। তারপরে লেখ বেগুন ভাজা। চারটে। লম্বা খোসাওয়ালা। তেল চুঁইয়ে পড়া।’
—‘নোটেড।’
—‘কালাকাঁদ। চারটে। কড়কড়ে রকমের কড়াপাকের।’
—‘গোলাপজাম থাকবে না মামা?’
—‘অবভিয়াসলি। একেবারে ধোঁয়াওঠা, গরম।’
—‘তারপরে?’
—‘লাঞ্চ। ঘড়ি ধরে দুপুর দেড়টায়।’
—‘বলো। রেডি।’
—‘সোনামুগের ডাল।’
—‘মাছের মাথা দিয়ে?’
—‘নেভার। ডালের মধ্যে মেছো গন্ধ একদম ভাল লাগে না।’
—‘আচ্ছা। তারপর?’
—‘মনে রাখবি, সৌরভের সঙ্গে যেমন সচিন। আর ডি–র সঙ্গে যেমন কিশোর, তেমনই সোনামুগের ডালের সঙ্গে হল আলুভাজা। কড়া, শক্ত, ঝিরঝিরে করে কাটা। তাতে মেশানো থাকবে হাল্কা বাদামকুচি আর সামান্য কারিপাতা।’
—‘চালটা দেরাদুন রাইস তো?’
—‘অবভিয়াসলি। আচ্ছা এর সঙ্গে লেখ শুক্তো। বেশি ঝোল ঝোল নয়। একটু টাইট করে রাঁধতে হবে। তারপরে আসবে ইঁচড়–চিংড়ি।’
—‘আহাহাহা... মন কী বাত মামা, মন কী বাত বলে দিলে একদম।’
—‘তারপরে চিংড়ি মালাইকারি আর পাবদা মাছ। পাবদার ল্যাজা আর মুড়ো থালার বাইরে বেরিয়ে যাবে। গায়ে মাখামাখা থাকবে গ্রেভি।’
—‘তার মানে গাবদা পাবদা। বুঝে গেছি।’
—‘হুম। এবার হল গিয়ে পাঁঠার মাংস। ৮ পিসের কম খেলে পুলিসে ধরে। ছোটবেলায় শিখিয়ে ছিলাম। মনে আছে তো?’
—‘না না মামা তোমার তো রেড মিট খাওয়া বারণ। হার্টের কী সব যেন আছে না?’
—‘হ্যাং ইওর হার্টের কীসব। জীবনের মহামন্ত্র কী জানিস? খেয়ে মরব, মরব খেয়ে। যতদিন শ্বাস ততদিন গ্রাস।’
—‘হেঁ হেঁ প্রাউড অফ ইউ মামা।’
—‘দাঁড়া এখনও তো খেজুর আমসত্ত্বের চাটনিটাই বললাম না। চাটনি হতে হবে মধুর মতো ঘন। লিকার চা–র মতো লালচে। খেজুর কাজু আমসত্ত্ব বিলানোয় কিপটেমি করলে চলবে না।’
—‘উঁ... এরপর কিন্তু মিষ্টি দই চাই।’
—‘ বেশ তো, হবে হবে। দই আসবে মাটির ভাঁড়ে। ওপরে লালচে আস্তরণ পড়ে থাকবে ডালডার। সেটাকে আগে কড়ে আঙুলের ডগা দিয়ে তুলে নিবি।’
—‘জল চলে আসছে মামা, জিভে জল চলে আসছে।’
—‘তারপরে ছানার জিলিপি।’
—‘নেক্সট?’
—‘মিঠে পান। বরফের ওপরে শোওয়ানো। ভিতরে কিশমিস আচার কাজু ঠাসা। মুফে পোরার সময় রস গড়িয়ে পড়বে ঠোঁটের কোণ দিয়ে। টিস্যুতে হাল্কা মুছে নিতে হবে। দ্য এন্ড।’
—‘আহা। শেষ হয়ে গেল মামা?’
—'আবার কী? আর কতো?'
—‘তাহলে সন্ধেবেলা থলি নিয়ে বেরিয়ে পড়ো মামা। চলো, সঙ্গে আমিও যাই?’
—‘কোথায়?’
—‘বাজারে। কিনতে হবে তো এতকিছু। কালই তো রবিবার।’
—‘থাম, মেলা বকবক করিস না।’
—‘অ্যাঁ! খাওয়াবে না? এই যে বললে রবিবার। ফর্দ করালে আমাকে দিয়।’
—‘হুহ্ আমি কী এসব খেতে পারি রে? ডিসপেপসিয়ার রোগী।’
—‘মানেটা কী! তাহলে আমাকে দিয়ে এসব লেখালে কেন।’
—‘বাংলা বানান, মাই ডিয়ার ভাগ্নে বাংলা বানান। বানান ঠিক করার প্রাইমারি ফর্মুলা জানিস না, যা ভালবাসিস বানান লেখা সেগুলো দিয়েই প্র্যাক্টিস করতে হয়। তাতে হাতের লেখাও ভাল হয়। আর হ্যাঁ শোন, যাওয়ার সময় টেবিলের ওপর থেকে জোয়ানের আরকের শিশিটা দিয়ে যাস। পেটটা কেমন আইঢাঁই করছে।’
—‘হয় আমি এর শোধ তুলব, নয় মামার বাড়ি ছেড়ে দেবো।’
—‘কুল ডাউন ভাগ্নে, কুল ডাউন। আচ্ছে দিনের গল্প এরকমই হয়। পেটে কিছু ঢুকুক না ঢুকুক এই যে লাস্ট দশ মিনিট তুই স্বর্গসুখের ফিলিং পেলি। সেটা কম কীসের?’
২৬ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪
গেছো দাদা বলেছেন: মা্য়াময় জগত ! কত লীলাখেলা চলছে চারিদিকে। বাদ দ্যান ভাইজান, আপনি মুমিন, এসব বুঝবেন না।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১১:০৪
শেরজা তপন বলেছেন: ~ এই বাসু মুখার্জি কি আপনি? যদি আপনি হয়ে থাকেন তো সমস্যা নেই। যদি আপনি না হয়ে থাকেন তাহলে আগের লেখাটা (পরেশ দার পরোটা) এই লেখার 'কপি পেস্ট' সেখানে আপনার তার রেফারেন্স দেয়া উচিত ছিল।