![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু জানার চেষ্টা থেকে ব্লগে আসা। সাহিত্য চর্চা করতে চাই।
সুযোগ
------------------
(১)
রবিনের প্রস্তুতি নেয়া শেষ। এই বুধবারেই কাজটা সেরে ফেলা হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গত চার মাসে সযত্নে বাড়িয়ে তোলা দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে সে আরেকবার পুরো পরিকল্পনাটাকে ঝালিয়ে নিলো। নাহ্ কোন ফাঁক দেখা যাচ্ছে না।
আলখেল্লাটা যোগাড় হয়েছে, চাপাতিটা কালকে সকালে আনবে। খুঁজে পেতে পুরনো একটা চাপাতি কিনে ধার করাতে দিয়ে এসেছে। সাথে আরো দু’একটা ছোরা আর চাকু। যাতে কারো মনে কোন সন্দেহ তৈরি না হয়। মাস তিনেক ট্রেইনিং নেয়াটা বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার এটাই সময়।
সে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ঘুম আসছে না। আরেকবার শুরু থেকে পুরো পরিকল্পনাটা ঝালিয়ে নিলো। নাহ্, কোন ফাঁক নেই।
(২)
ঐশী জেগে আছে। তারও ঘুম আসছে না। পাশে শুয়ে থাকা কামরুলের দিকে তাকালো। নাক ডাকার সুরে সুরে ভুঁড়িটা যেন উঠছে আর নামছে। তার জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিয়ে এত আরামের সাথে ঘুমায় কী করে লোকটা?
আসছে বুধবারে যে নাটকটা তার বাসায় মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে তাতে তাকে একটা বড় চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। রিহার্সেল দেয়া হয়নি, কিন্তু পুরো ঘটনাটা যেন সে চোখে দেখতে পারছে। রবিন ছেলেটা বড় একরোখা। বার বার বলতে বলতে কখন যে তাকে রাজি করিয়ে ফেলেছে সে নিজেও বুঝে উঠতে পারেনি। এ ছাড়া যা চলছিলো তাতে তার আপত্তি ছিলো না। রবিন শিখিয়েছে তাকে পরিকল্পনা করা, শিখিয়েছে নিজের জীবন নিজের মত করে গুছিয়ে নেয়া, শিখিয়েছে নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা।
এখন আর ফিরে যাবার পথ নেই। তীর ছোঁড়া হয়ে গিয়েছে – এখন আর ফেরানোর উপায় নেই।
(৩)
এই রবিন ভাইকে দেখলে রহমতের কেন যেন ভয় ভয় লাগে। প্রথম প্রথম যখন রবিন ভাই ম্যাডামের কাছে যাওয়া আসা শুরু করে তখন তার দায়িত্ব ছিলো গেট পাহারা দেয়ার। যখন স্যার থাকতো না তখন মাঝে মাঝে সে ম্যাডামকে রবিন ভাইয়ের ধানমণ্ডির বাসাতেও দিয়ে আসতো। ম্যাডাম তাকে অনেক পয়সা দিত চুপ থাকার জন্য। সেও নীরবে তার কাজ করে যেত – কী দরকার এইসব বড়লোকদের ঝামেলায় নাক গলানোর।
তবে এবার যে প্ল্যানটা রবিন ভাই করেছে – হ্যাঁ উনাকে স্যার না ডেকে ভাই ডাকার নির্দেশ উনি নিজেই দিয়েছেন – তাতে এই তিন জনের জীবনেই অনেক বড় একটা পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। রহমত জানে তাকে কী করতে হবে। তার কাজের অংশটা বেশ কঠিন। কিন্তু জীবনে সোজা কোন কাজ কি আদৌ আছে? রবিন ভাইয়ের মাথাটা কিন্তু খুব পরিস্কার। একেবারে নিখুঁত পরিকল্পনা।
(৪)
মসজিদ থেকে ফিরে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে হাই তুলতে তুলতে কামরুল সাহেব ভাবলেন এই সব জিনিসগুলো উটকো যন্ত্রনা ছাড়া আর কিছুই না। সামাজিক চাপে পড়ে এইসব করতে হয়। তা নাহলে কী দরকার এসব ঝামেলা নেয়ার। সারা বছর ধর্ম কর্ম কিছুরই পাত্তা নেই এই সময় এসে শুধু শুধু এই কষ্ট করার মানেটা কী? এমন তো না এই টুকু পূণ্য করে সোজা বেহেশ্তের টিকেট পেয়ে যাবেন। যত্তসব!
তার কাজের সুবাদে সারাক্ষণই ঢাকা চট্টগ্রাম দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। ঐশী একাই থাকে। এমনিতে গুলশানের এই দোতলা বাসাটায় বেশি মানুষ পছন্দ করে না তাঁর স্ত্রী ঐশী। মাত্র একটা কাজের লোক – এই রহমত মিয়া। গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে ঘরদোর পরিস্কার আর বাজার করা পর্যন্ত সব কাজ একহাতে করে। শুধু রান্নাটা ঐশী হয়তো নিজেই সামলে নেয়।
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কামরুল দেখলেন ছেলেটা ইতমধ্যেই চলে এসেছে। মাদ্রাসার ছেলে, এরা এই সময় এলাকাতেই ঘোরাফেরা করে। রহমতকে ডেকে মানা করতে বলে দিয়ে ঘরে গিয়ে বসতেই ঐশী চিনি ছাড়া লেবুর শরবতের গ্লাসটা এনে দিলো। ডায়েবেটিসের কারণে মিষ্টি খাওয়া অনেক আগে থেকেই মানা। ঢক ঢক করে তিনি পুরো গ্লাসটা শেষ করে ফেলার সাথে সাথে মাথাটা যেন চক্কর দিয়ে উঠলো। ব্যাপার কী? বুকের ভেতরটা কেমন যেন জ্বালাপোড়া করছে। কেমন যেন হাঁসফাঁস লাগছে। উঠে দাঁড়িয়ে বাথরুমের দিকে রওনা হতেই মনে হল সারা পৃথিবীটা যেন দুলছে। মাথাটা আবার চক্কর দিয়ে উঠতেই হোঁচট খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন তিনি।
তিন জন মিলে যখন তাকে বাথরুমের মেঝেতে শুইয়ে দিল, তখনো তিনি অতটা অবাক হননি। তিনজনের চোখে মুখে উত্তেজনা দেখেও তিনি অতটা অবাক হননি। কিন্তু, ধারালো ছুরিটা নেমে আসতে দেখে তিনি বিস্ময়ে অভিভূত হলেন। হচ্ছে কী? মাথা ঘুরিয়ে ঐশীকে দেখার চেষ্টা করলেন – চারদিক ঝাপসা হয়ে আসলো।
(৫)
মনে মনে একটু আফসোস লাগে রবিনের, রহমত মিয়াকে রেখে দিলেই হতো। কিন্তু এতো বড় ঝুঁকি নিতে মন সায় দেয়নি। রবিন কামরুল সাহেবের দায়িত্ব নিয়েছিলো, আর রহমত মিয়া ঐশীর। পিস পিস করে কেটে বস্তায় ভরা বেশ পরিশ্রম সাধ্য একটা কাজ। কামরুল সাহেবের ধড়ফড়ানি শেষ হবার পর তার আলমারিটা খুলে এক হাজার টাকার নোটে ষাট লাখ টাকা বের করে একটা ট্রাভেল ব্যাগে ঢোকায় ঐশী। আচমকা পেছন থেকে রহমত মিয়ার দড়ির ফাঁসটা মাথার ওপর দিয়ে নেমে আসায় ঐশী যতটা না অবাক হয়েছিল, তার চেয়ে হয়তো কয়েকগুন বেশি অবাক হয়েছিল রহমত মিয়া যখন পেছন থেকে রবিন তার ঘাড়ের ওপর চাপাতির প্রথম কোপটা মারে। তারপর রবিনকেই বাকি কাজটা শেষ করতে হয়।
মাথা তিনটা একসাথে রাখাটা ঠিক হয়নি এটা রবিন জানে। কিন্তু, এই ঝুঁকিটা একবারের বেশি সে নিতে চায় না। ঠিক দূপুর দু’টায় সিটি কর্পোরেশনের ট্রাকটা এসে দাঁড়াবে সামনের বড় রাস্তার মোড়ে। তাতে এই শেষ বস্তাটা উঠিয়ে দিতে পারলেই কাজ শেষ।
হঠাৎ করে একটা পুলিশের জীপ এসে ব্রেক কষলো গলিটার মুখে। রবিনের ভ্রুঁ কুঁচকে গেলো। কোন রকম সন্দেহ করবে না তো। রবিনের সাদা পাঞ্জাবিটা রক্তে মাখামাখি। বস্তাটা থেকেও চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত। হাঁটার গতি এতটুকুও না কমিয়ে রক্তাক্ত চাপাতিটা ডান হাতে নিয়ে আর বস্তাটা বাঁ কাঁধে ঝুলিয়ে গলির মুখের কাছাকাছি এসে পড়লো সে। এটাই শেষ শিপমেন্ট। সারাদিন বড় ধকল গেলো, আর নিতে পারছে না। পরিকল্পনাটা নিঁখুত ছিলো, এখন কাজটা ভালোয় ভালোয় শেষ হলেই হয়।
পুলিশটা সোজা তাকিয়ে আছে কেন?
(৬)
কনস্টেবল মোতালেবের মেজাজ এমনিতেই খারাপ। এই দিনেও ডিউটি করা লাগতেসে। আর এই অফিসারটা যেন একটা হারামির বাচ্চা। চাকর বাকরের মতো ট্রিট করে। বাবুর শখ হয়েছে সিগারেট খাবেন, এখন দোকান খুঁজে সিগারেট আর ম্যাচ নিয়ে আসতে হবে। ধুত্তোরি!
এরকম একটা সময়ে সে গলির ভেতর থেকে লোকটাকে বের হয়ে আসতে দেখলো। মনটা একটু কেমন যেন করে উঠলো। শুধু সে-ই না, এরাও আজকের দিনে পরিবার পরিজন ছেড়ে কর্মমূখর দিন কাটাচ্ছে। লোক না বলে অবশ্য ছেলেই বলা উচিৎ। দাড়িওয়ালা, সাদা টুপি-পাঞ্জাবি পড়া, সারা শরীর রক্তে মাখামাখি।
লোকটা কাছাকাছি আসতেই মুচকি হেসে মোতালেব বলে উঠলো- “ঈদ মোবারাক মোল্লা সা’ব!”
উত্তর এলো- “ঈদ মোবারাক!”
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫
গেন্দু মিয়া বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ বস্!
২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮
ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
ভাল লিখসেন ||
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৫
গেন্দু মিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ!
৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪
দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: বেশ ভালোই লেগেছে!
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬
গেন্দু মিয়া বলেছেন: আমিও লিখে মজা পেয়েছি।
৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৮
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ভালো লাগলো!
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭
গেন্দু মিয়া বলেছেন: থ্যাঙ্কস এ লট!
৫| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭
বশর সিদ্দিকী বলেছেন: ভাল লাগছে।
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:০১
গেন্দু মিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই!
৬| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:০৯
সাসুম বলেছেন: জোশ
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৪
গেন্দু মিয়া বলেছেন: তাই নাকি?
অনেক ধন্যবাদ!
৭| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৩
সোহানী বলেছেন: ভয় পেলাম বাট চলুক ++++
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৫
গেন্দু মিয়া বলেছেন: চলুক!
আরো বেশি বেশি ভয়ের গল্প বলুক!
৮| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৭
শুঁটকি মাছ বলেছেন: ভালা হইছে কিন্তু!!!!!!!!!
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:২০
গেন্দু মিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ ভায়া!
৯| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:০২
অহন_৮০ বলেছেন: ভাল লিখসেন
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:২০
গেন্দু মিয়া বলেছেন: থ্যাঙ্কস!
১০| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৯
সাব্বির ০০৭ বলেছেন: আইসালা! অসাম সালা!! সিরাম ভাল লাগল!!!
+++++....................................................
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫০
গেন্দু মিয়া বলেছেন: থ্যাঙ্কস ভাই!
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:২১
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
দারুণ, একেবারে এবার সাইকো থ্রিলার +++++++++++++++ রইল।