নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Superior by Nature

ইউ আহমেদ

জেনারেল

Superior by Nature

জেনারেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

'রক্ত করবী'

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ১১:০২

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের 'রক্ত করবী' নাটকের রচনাকালে পৃথিবীর মানচিত্রে ঘটে চলে বড় ধরনের এক পরিবর্তন ৷ একদিকে বণিক পুঁজির উদ্ভব ও বিকাশে সামন্ত সমাজের অবসান ৷ অন্যদিকে বিকশিত বণিক পুঁজির পরিণত-পর্যায়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের উত্থান ৷ সেই ক্রম যথাযথভাবে ভারতবর্ষে বাস্তবায়িত না হলেও বিপ্লবের সামুদ্রিক ঝাপটা তার বুকে তুলেছে এক স্বপ্নীল দোলন ৷ ওই দোলনের মাঝখানে বসা ভারতবর্ষের ডান হাত টেনে ধরে সামন্ত সমাজের অবশিষ্ট মূল্যবোধ; বাঁ হাত বাঁধা পড়ে গতিরুদ্ধ বণিক পুঁজির শিকলে ৷ টানাটানির এই গুমোটের রুদ্ধশ্বাস খাঁচায় 'রক্ত করবী'র আবির্ভাব ৷ সে-আবির্ভাবে ভারতের ডান হাত যারা ধরে থাকে তারা ভাবে 'রক্ত করবী'র জয়টিকা পড়েছে তাদের কপালে; বাঁহাতিরা ক্ষুণ্ন এটা ভেবে যে, পক্ষপাতিত্বের মালাটা শেষ পর্যন্ত ঝুলে রইল ডানহাতিদের গলায় ৷



আমরা দেখি এই নাটক আমাদের সামনে মেলে ধরে পুরো পৃথিবীর এক সহজ স্বচ্ছ চিত্ররূপ ৷ যার মধ্যে একদিকে পরিস্ফুট ভারতীয় মানস ও তার মৌলিক দ্বন্দ্ব; অপর দিকে প্রকাশিত গোটা পৃথিবীর এক অভিনব মৌল দিক নির্দেশনা-যা ধাবমান আগামীর আগমনী গানের সঙ্গে, বর্তমানের অমীমাংসিত দ্বন্দ্বের চলমানতায় ৷



বৈষয়িকতাকে অতিক্রমের মধ্য দিয়ে মানুষ বিস্তৃতি ঘটায় তার আকাশমণ্ডলের ৷ একমাত্র তখনই সে পায় জীবনের প্রকৃত আনন্দ ৷ সে-আনন্দের কোন সংজ্ঞা নেই ৷ সে-আনন্দ স্বর্গসুখ উপভোগের আনন্দ ৷ সেই আনন্দ, সেই স্বতঃস্ফূর্ত উন্মাদনা তার ওই বিস্তৃত আকাশ-মণ্ডলেরই আলোকবর্তিকা ৷ সেখানে সে ব্যক্তি 'আমি' থেকে সমষ্টি 'আমি'তে রূপান্তরিত ৷ এইটেই মানুষের যথার্থ রূপ ৷



অথচ ধনবাদী ব্যবস্থার তীব্র চাপে, ভোগবাদী সংস্কৃতির উগ্র আগ্রাসনে পরিবেষ্টিত আজ মানবমনের সমস্ত আকাশমণ্ডল ৷ শুভ ইচ্ছা সত্ত্বেও এই পরিমণ্ডল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে মানুষ আজ আপাততঃ অক্ষম ৷ তথাপি মানুষের সহজাত মানবতাবোধের প্রকাশ দেখা যায় দুঃখে, বিপদে, বিদ্রোহে ও বিপ্লবে৷ সেখানে সব মানুষ মিলিত হতে পারে ৷ একত্রিত হতে পারে ৷ জীবন উত্‍সর্গ করতে পারে গভীর আনন্দে ৷ সেই মুহূর্তে ঘটে তাদের বৃহত্‍ 'আমি'তে উদ্বোধন ৷



নন্দিনী এক সঙ্গে পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলের সেই আনন্দ-জয়গান নিয়ে হাজির হয়েছে যক্ষপুরীতে ৷ আলোহীন, তাপহীন, রংহীন দীর্ঘ অন্ধকারের জীবনযাত্রায় নন্দিনী আচমকা আলো নিয়ে, তাপ নিয়ে, রং নিয়ে, রূপ নিয়ে এসে হাজির হয়েছে ৷ দীর্ঘ অনভ্যস্ততার ফলে সে-আলোয় হঠাত্‍ করে সকলের চোখ ধাঁধিয়ে উঠেছে ৷ ক্লান্তিকর, যন্ত্রণাকর একঘেয়ে জীবনের ঢিমে তালে এক ঝলক আনন্দের ঝর্ণা স্রোত বয়ে এনেছে নন্দিনী ৷ একটু একটু করে প্রায় সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে পেতে নন্দিনী কারো কারো একেবারে কাছের মানুষ হয়ে উঠছে ৷ ইতিপূর্বেই যার আকাশমণ্ডলের মৃত্যু ঘটে গেছে, সেও হচ্ছে আকর্ষিত, কিন্তু হিসেবে মিলছে না দেখে সে চটে উঠছে ৷ রেগে উঠছে ৷ সর্দার, গোকুল ও চন্দ্রা চরিত্রে ভিন্ন ভিন্ন রূপে তার প্রকাশ দেখা যায় ৷ অন্যদিকে কিশোর, অধ্যাপক, ফাগুলাল ও প্রচণ্ড প্রতাপশালী রাজা পর্যন্ত তাকে ভালবাসছে; ভিন্ন ভিন্ন রূপে ৷ ভিন্ন ভিন্ন মেজাজে ৷ এ ভালবাসার অর্থ জীবনকে ভালবাসা, প্রাণকে ভালবাসা, প্রাণের স্পন্দনকে ভালবাসা৷ কঠিন বস্তুপিণ্ডকে নয় ৷



নন্দিনীর আলোতে বিশুপাগল তার আকাশমণ্ডলের আলোকে চিনেছে ৷ তার জীবনবোধের নিভে-যাওয়া অবশিষ্ট আলোটুকু উদ্ভাসিত হয়েছে নন্দিনীর সংস্পর্শে ৷ তাই সে অম্লান বদনে নন্দিনীকে বলতে পেরেছে- "তোর সেই কিছু না দেওয়া আমি ললাটে পরে চলে যাব ৷ অল্প কিছু দেয়ার দামে এ গান আমি বিক্রি করব না ৷"



শিশুর হাসি যেমন স্পর্শ করে মানুষকে, তেমন আর কিছু নয় ৷ অথচ কোনো শিশু জানে না তার হাসি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ ৷ যেমন চাঁদ বোঝে না তার বিপুল সৌন্দর্যরাশিকে ৷ সূর্য জানবে না তার অফুরন্ত বৈভবের কথা ৷ তেমনি নন্দিনী জানে না কি শক্তি, কি আনন্দ, কি প্রেম নিয়ে সে এই সংসারে এসেছে ৷ সে জড় নয়, সে জীবন্ত প্রাণ৷ খণ্ড নয়, পূর্ণ মাত্রায় সে প্রকাশিত ৷ তাই সকলকে প্রাণের বন্যায় ভাসিয়ে ডুবিয়ে নিয়ে চলেছে এক মহান লক্ষ্যে ৷ সেই মহান লক্ষ্যকে সত্যে রূপ দিতে এগিয়ে এসেছে রঞ্জন ৷ রঞ্জনের জয়যাত্রা তাই নন্দিনীর হৃদয়ের মধ্য দিয়ে ৷ যে-হৃদয় চিরশিশু, চিরকিশোর, চিরনবীন ও চিরকালের ৷ এই সত্যকে অমিতপ্রতাপ রাজাকেও মানতে হয়েছে তার দার্শনিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ৷



শোষিত মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে দুর্বার আন্দোলনেই ঘটেছে রবীন্দ্রনাথের এ-নাটকের পরিসমাপ্তি ৷ যদিও তার ভেতরে ছিল কৃষিনির্ভর সভ্যতায় ফিরে যাবার আকাঙ্ক্ষা; তবু সে-আকাঙ্ক্ষায় ছিল না সামন্ততন্ত্রের আবেদন ৷ তাতে ছিল প্রকৃতির প্রাকৃতিক সরলতায় ফিরে গিয়ে মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশ সাধনের অঙ্গীকার ৷

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৫/-২

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ১১:৪০

অচেনা বাঙালি বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষণ।
মনে পরে গেল অনেক কাল আগের বিটিভিতে প্রচারিত রক্ত করবী নটকের কথা(দেখেন নাই বোধ হয়)। বিটিভির অন্যতম প্রযোজনা। নন্দিনী চরিত্রে দিলরুবা নামের এক অভিনেত্রী অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন।

২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ১১:৫১

ফাহমিদুল হক বলেছেন: ভালো লাগলো এই বিশ্লেষণে। অনেক দিন পরে রক্তকরবীর দার্শনিক ব্যাখ্যা পড়ে ভালো লাগলো। বিটিভির রক্তকরবী দেখেছিলাম অনেক ছোট বয়সে। নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের 'রক্তকরবী' দেখেছেন কি কেউ?

৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ১১:৫৩

জেনারেল বলেছেন: আমি দেখেছি কয়েকবার

৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ১১:৫৮

মনিটর বলেছেন: বিটিভিরটার কথা মনে আছে।
ইউটীউবে পাইলে ভাল হৈত।

৫| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ দুপুর ১:১৯

চে বলেছেন: ভাল বিশ্লেষন, জেনারেল। ৫

৬| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:১০

রাশেদ বলেছেন: ৫

৭| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:১০

তারিক হাসান খান নিপু বলেছেন: অনেক আগে টিভি মঞ্চনাটকে দেখেছিলাম ,
অদ্ভুত , এখনও মনে আছে

সম্ভবত অপি করিম করেছিল
খুব দেখতে ইচ্ছা করে আবার

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.