নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ginipig bolchi

my country creat me a ginipig

গিনিপিগ

গিনিপিগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে তথাকথিত 'আদিবাসী' প্রচারণা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ প্রশ্নসাপেক্ষ

২৯ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৪





বাংলাদেশে তথাকথিত 'আদিবাসী' প্রচারণা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ প্রশ্নসাপেক্ষ

ড. খুরশীদা বেগম

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

৪. আদিবাসী তত্ত্ব ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্ন

জাতিসংঘের ঘোষণার অনুচ্ছেদ ৩০ জানুয়ারি 'আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি কিংবা ভূখণ্ডে সামরিক কার্যক্রম হাতে নেওয়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না উপযুক্ত জনস্বার্থের প্রয়োজনে যুক্তিগ্রাহ্য হবে, অন্যথায় যদি সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠী স্বেচ্ছায় সম্মতি জ্ঞাপন বা অনুরোধ করে।...রাষ্ট্র সামরিক কার্যক্রমের জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি বা ভূখণ্ড ব্যবহারের আগে যথাযথ পদ্ধতি ও বিশেষ করে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কার্যকর আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।'

এর আগে উলি্লখিত জাতিসংঘ ঘোষণার অসংগতির সূত্রগুলো এখানে দৃশ্যমান। যেমন 'উপযুক্ত জনস্বার্থের' সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা কী? 'যুক্তিগ্রাহ্য'-এর মাপকগুলো কী? 'স্বেচ্ছায় যদি সম্মতি জ্ঞাপন' না করে তারা? যদি কোনো নৃগোষ্ঠী বহির্বিশ্বের কারো সঙ্গে কোনো অশুভ আঁতাত করে? যদি বহির্বিশ্বে থেকে ওই অঞ্চল আক্রান্ত হয়, সরকার কি সামরিক কার্যক্রম গ্রহণে নৃগোষ্ঠী কারো সম্মতির অপেক্ষায় নিষ্ক্রিয় থাকবে? যদি নৃগোষ্ঠী নেতৃত্ব সম্মতি না দেয়?

আবার প্রশ্ন, বাংলাদেশে কম-বেশি ৫০টি নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব 'মালিকানাধীন' ভূমি থাকলে এবং সেই ভূমি-ভূখণ্ড ব্যবহারে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ওপর এত বিধি-নিষেধ থাকলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের কী হবে? প্রশ্ন, ১৯৭১ সালে দেশবাসী স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিল কি তথাকথিত আদিবাসী তত্ত্বে বিভাজিত অর্থহীন 'ঝাঝড়া-সার্বভৌমত্বের' জন্য? এর বিষক্রিয়া অনুধাবন করা কি খুবই কঠিন? সর্বোপরি, সার্বভৌমত্ব কখনো বিভাজিত হতে পারে না। যদি হয়, সেটিকে রাষ্ট্র বলা যায় না। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঘোষণায় এ ধরনের আরো নির্দেশনা আছে, যা বাংলাদেশের বাস্তবতায় রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য প্রযোজ্য নয়।

৫. বাংলাদেশের ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীভুক্ত নাগরিকরা 'আদিবাসী' নন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নৃগোষ্ঠীগত রাজনীতি প্রবৃষ্টকরণের যে প্রয়াস চলছে, তারই আঙ্গিক নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে 'আদিবাসী' পদটি। অথচ এটি সত্যাশ্রিত নয়।

প্রথিতযশা সর্বজনশ্রদ্ধেয় ঐতিহাসিক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আলাপচারিতাকালে তিনি বলেন যে বাংলাদেশের ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীভুক্ত নাগরিকরা 'আদিবাসী' বা 'ভূমিজ' নয়। তাঁর এই সত্যনির্দেশ বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও নীতিনির্ধারকদের জন্য জাতীয় স্বার্থে এক্ষণে অপরিহার্য।

ইতিহাসের আলোয় মানব প্রজাতির বহুধা জীবনবৈচিত্র্য নৃবৈজ্ঞানিক অন্বিষ্ট হলেও জীবনের পরম মাঙ্গলিক পরিণতি রাজনৈতিক প্রয়াসসিদ্ধ বটে। এই প্রয়াস অবিকৃত ঐতিহাসিক সত্যের শক্তি দ্বারা নিষিক্ত যদি না হয়, যদি বিকৃত-ইতিহাসনির্ভর হয়, মহামতি অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের ভাষায়, সেসব রাজনীতি 'অন্তর্বর্তীকালীন নাটিকা' সময়ে যা শেষ হয়ে যায়। তবে এর ক্ষতির ভার শোষিত-নিঃশেষিত জীবনকেই টানতে হয়।

বাংলাদেশে নৃগোষ্ঠীগত রাজনীতি উসকে দেওয়ার প্রবণতা অনুধাবনে নৃবিজ্ঞানের বেশ কিছু দেশি-বিদেশি গ্রন্থ পাঠ ও পর্যালোচনায় মনে হয়েছে, বেশির ভাগ আলোচনায় পারিভাষিক যে দুটি শব্দ প্রায় জড়িয়ে গেছে, তা আদিম বা আদি মানুষ ও আদিবাসী। প্রথমটি রক্ত-উৎসভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রাচীন পরিচিতি, দ্বিতীয়টি কোনো অঞ্চলে অধিবাসকালিক পরিচিতি। খুব সংক্ষেপে, পৃথিবীর ভূ-প্রকৃতির বহুরূপ ওলটপালট ও মানব প্রজাতির নানা আবর্তন-পরিবর্তন-বিবর্তনের ধারায় মানুষের মধ্যে রক্তমিলন বা মিশ্রণ যেমন ঘটেছে, তেমনি বসবাসের স্থানও পরিবর্তন হয়েছে। তবে নিয়ত রূপান্তরিত সময়ের মধ্যেও যে ছোট ছোট নৃগোষ্ঠী আজতক যতটুকু যা রক্ত-স্বাতন্ত্র্য আদিকালের ভাষা-সমাজ-সংস্কৃতি-অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য দ্বারা নিজস্ব গোত্রজ সীমানা (Boundary) বজায় রেখেছে, তাদের গোত্রজ নৃগোষ্ঠী বলা যেতে পারে। কিন্তু তাদের আদিম বা আদিমানুষ বলার কোনো সংগত কারণ নেই। আদিকালের মানুষের মতো আজকের পৃথিবীতে উলঙ্গ বা নরমুণ্ডু শিকারি, বা কাঁচা মাছ-মাংসভুক নরগোষ্ঠী অপসৃয়মাণ। আজ বিশ্বায়নের তোড়ে মানুষে মানুষে সদৃশীকরণের অবিরুদ্ধ প্রবহমানবতায় ছোট নৃগোষ্ঠীগুলোর গোত্রজ সীমানা আপনি সংকুচিত (Boundary reduction) হচ্ছে।

বাংলাদেশের সাঁওতাল, হাজং, গারো, কোচ, মাহালি, চাকমা, তঞ্চঙ্গা ইত্যাদি প্রায় অর্ধশত নৃগোষ্ঠীর জন্যও এ কথা প্রযোজ্য। তাদের ছেলেদের পরনে লেংটির পরিবর্তে ইউরোপীয় প্যান্ট-শার্ট, মেয়েদের মধ্যে ক্রমবিস্তৃত শাড়ি-সালোয়ার-কামিজ, ঘরের আসবাব, প্রয়োজন অনুযায়ী গোত্রবহির্ভূত ভাষা শিক্ষা, শিশু পরিচর্যার উপকরণ, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান, নন্দনকলায় আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব ইত্যাদি গোত্রজ সীমানা সংকোচনের দৃষ্টান্ত। একদিকে আধুনিক শিক্ষা-প্রশিক্ষণ-স্বাস্থ্যসেবা, প্রশাসনিক চাকরি-বাকরি ইত্যাদির প্রতি দুর্নিবার আগ্রহ ও দাবি, অপরদিকে গোত্রজ সীমানা রক্ষার পিছুটান- এই দুয়ের টানাপড়েনে এক ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বব্যাপী সব ছোট নৃগোষ্ঠীর গোত্রজ জীবনে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই দোলাচলের মধ্যে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মরণপণ সংগ্রামে ইতিহাস-মথিত বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রচণ্ড আবির্ভাব ও নির্ধারক ভূমিকা ছোট নৃগোষ্ঠীগুলোর রাজনৈতিক মানস কাঠামোতে গোত্রজ সীমানা অতিক্রান্ত ভূ-রাজনৈতিক (Geo-political realities) বাস্তবমুখিনতা অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। এখানে উল্লেখ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিশাল বাঙালি নৃগোষ্ঠীর যে একটি রাজনৈতিক 'দর্শন' তা কেবল বাঙালির স্বার্থগত নয় এ অঞ্চলের অধিবাসী সব নৃগোষ্ঠীর স্বার্থে নিবেদিত। এক কথায়, এটি সংকীর্ণ নয়, মানবমুক্তির অভীপ্সাগত একটি সর্বজনীন রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মকৌশল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য জনগণকে প্রস্তুত করে নেওয়ার কালে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে তাই 'বাঙালি-নন বাঙালি' ভ্রাতৃত্ববন্ধনের নির্দেশনা ছিল এবং যুদ্ধচলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত উর্দুতে প্রচারিত অনুষ্ঠানে এ অঞ্চলের উর্দুভাষী অভিবাসনকারীদের যুদ্ধে যোগদানের জন্য আহ্বান থাকত। অর্থাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাঙালি জীবন ও মানস উৎসগত হলেও বাঙালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যাঁরা বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ধর্মীয় মৌলবাদিতার অনুরূপ সংকীর্ণ বলে মনে করেন তাঁদের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ মেনে নেওয়া কঠিন।

বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতিবাদী বাঙালির রাজনৈতিক ডাকে (Political Declaration/Political Clarionet) সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীর মুক্তিযোদ্ধা জনগণ দ্বিধাহীন যুদ্ধ করেছেন, অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, শহীদ হয়েছেন। অর্থাৎ এর আগে উলি্লখিত ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাবোধে ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীগুলো নিজ আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক উন্নয়নের অভীপ্সাসহ জন্মভূমি ও মানবতার মুক্তির জন্য বিশাল বাঙালির শক্তি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের দর্শনকে কৌশল হিসেবে গ্রহণ করতে কুণ্ঠিত হয়নি। এখানেই পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জনগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র একটি অংশের (সব চাকমা নয়) সীমাবদ্ধতা লক্ষণীয়, যা পরে আলোচনা করা হয়েছে। জানা যায়, ১৯৬০-এর দশকে চাকমা ও বাঙালি শিক্ষার্থীরা এক সঙ্গে দেশের মুক্তির লক্ষ্যে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলেছিলেন।

ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে গড়ে ওঠা এই সম্প্রীতিঘন নাগরিকতার মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করে আদিবাসিত্ব প্রচারসূত্রে এ 'টার্ম'-এর ব্যাখ্যা আবশ্যক।

আদিবাসী পদটি একটি স্থানিক ও কালিক যোগসূত্রগত ভাষ্য। যে জনগোষ্ঠী আদিকাল থেকে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাস করে আসছে, তারা সেই অঞ্চলের আদিবাসী (Indigenous people)। স্পষ্টত আদিম বা আদিমানুষ ও আদিবাসী সমার্থক নয়। কোনো অঞ্চলের বিশেষ নৃগোষ্ঠীভুক্ত আদিমানুষ ওই অঞ্চলের 'আদিবাসী' না-ও হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার আদি মানুষ বা গোত্রজ ব্যক্তি আমেরিকায় বসবাস শুরু করতে পারেন; কিন্তু তিনি আমেরিকার আদিবাসী নন। তা ছাড়া একটি দেশে একের অধিক নৃগোষ্ঠীর কার কতকালের অধিবাস, সেই ঐতিহাসিক তথ্য-রেকর্ডসূত্রেও প্রাচীনতম অধিবাসীই 'আদিবাসী'। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশে চাকমাসহ অন্য ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীভুক্ত নাগরিকদের আগমন ও অধিবাস কয়েক শ বছরের মাত্র। এই ঐতিহাসিক সত্য নির্দেশ করছে ছোট নৃগোষ্ঠীগুলোর 'আদিবাসী' পদ লাভের জন্য অসত্যে আসক্তি ও তাদের নেতৃত্বের অসততা বা অসচেতনতা।

৬. বাংলা ও বাঙালি

ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীর আগমনের হাজার হাজার বছর আগেও বাংলা ভূখণ্ডে বাঙালির আদিজীবন-বসতি প্রসঙ্গে জানা যায় তাদের অস্ত্রপাতি, কৃষি উপকরণ, ব্যবহার্য পাত্র, অলঙ্কার ইত্যাদি আবিষ্কারের মাধ্যমে। ইতিহাসের তথ্যসূত্রে 'বাংলাদেশে প্রত্নপ্রস্তর যুগের যে কয়েকটি শিলা নির্মিত অস্ত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহার সবগুলিই দেশের ভিন্ন ভিন্ন সীমান্তে পাওয়া গিয়াছে। বাংলাদেশ পলিমাটির দেশ। ভারতবর্ষের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইহা বয়সে নবীন। কিন্তু এই নবীন দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অতি প্রাচীন ভূমি আছে। এই সকল প্রদেশেই বাঙালাদেশের প্রত্নপ্রস্তর যুগের পাষাণ নির্মিত আয়ুধ আবিষ্কৃত হইয়াছে। দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে চট্টগ্রামের পার্বত্য প্রদেশের যে সমস্ত অস্ত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহা আকারে প্রত্নপ্রস্তর যুগের ন্যায় হইলেও ভূতত্ত্ববিদ পণ্ডিতগণের মতানুসারে অপেক্ষাকৃত আধুনিক।... বাঙ্গালাদেশের যে প্রদেশে প্রত্নপ্রস্তর যুগের অস্ত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে, সেই প্রদেশেই নব্যপ্রস্তর যুগের অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গিয়াছে।...উত্তর-প্রস্তর যুগের দান বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতিতে অপরিমেয়।...তাম্রস্মর যুগের বাঙালি শ্বেতবর্ণে চিত্রিত কৃষ্ণ লোহিত বর্ণের মৃৎপাত্রসমূহ, ক্ষুদ্রাস্মর আয়ুধ, কৃষ্ণবর্ণে চিত্রিত রক্তবর্ণের পাত্র এবং বাদামী রংয়ের পাত্র ব্যবহার করিত। একটি পালিশযুক্ত পাষাণ কুঠারও পাওয়া গিয়াছে।...' (রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলার ইতিহাস, ১ম খণ্ড)

বাংলা ভূ-অঞ্চলের সঙ্গে বাঙালি নৃগোষ্ঠীর-অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক নির্দেশ করে বলা প্রয়োজন যে মিশ্র রক্তজাত বাঙালির উৎপত্তি এই বাংলা ভূখণ্ডেই এবং তা হাজার হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলার ইতিহাস (প্রথম খণ্ড) থেকে ছোট্ট আর একটি উদ্ধৃতি, 'ঐতরেয় আরণ্যকে বঙ্গ শব্দের সর্বপ্রাচীন উল্লেখ পাওয়া গিয়াছে।... যে সময়ে ঐতরের ব্রাহ্মণে বা আরণ্যকে আমরা বঙ্গ অথবা পুণ্ড্রজাতির উল্লেখ দেখিতে পাই সে সময়ে অঙ্গে, বঙ্গে অথবা মগধে আর্য্য জাতির বাস ছিল না।' পবিত্র ঋদ্বেদে একইভাবে এই অঞ্চলে বঙ্গ নামে জাতির উল্লেখ আছে এবং এইসব কম-বেশি তিন হাজার বছর আগের কথা।' মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচিত ‘Bengal, Bengalies, Their manners, customs and Literature' নামক অপ্রকাশিত প্রবন্ধ থেকে একটি উদ্ধৃতি দেওয়া যায়- 'বাংলার ইতিহাস এখনও এত পরিষ্কার হয় নাই যে কেহ নিশ্চয় বলিতে পারেন বাংলা Egypt হইতে প্রাচীন অথবা নূতন। বাঙ্গালা Ninevah ও Babylon হইতেও প্রাচীন অথবা নূতন। বাঙ্গালা চীন হইতেও প্রাচীন অথবা নতুন।...যখন আর্য্যগণ মধ্য এশিয়া হইতে পাঞ্জাবে আসিয়া উপনীত হন, তখনও বাংলা সভ্য ছিল। আর্য্যগণ আপনাদের বসতি বিস্তার করিয়া যখন এলাহাবাদ পর্যন্ত উপস্থিত হন, বাংলার সভ্যতায় ঈর্ষাপরবশ হইয়া তাহারা বাঙালিকে ধর্মজ্ঞানশূন্য পক্ষী বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন।'

সত্য এই যে বাংলা ভূ-অঞ্চলের নদী-নালা, অরণ্য-পাহাড়, সাগর-আকাশ, তৃণভূমি-শস্যক্ষেতের মিলনভূমিতে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-তুফান-বন্যা-খরার বর্ষা-বসন্তে নানা রক্তধারার মোহনায় যে জনগোষ্ঠীর উদ্ভব ও উদ্ভাস, তার নাম বাঙালি, বাংলা তার জন্ম-জন্মান্তরের অথবা আজন্মের ঠিকানা। সত্যশুদ্ধ বাঙালির অনিঃশেষ প্রেম এই বাংলাভূমি। 'আবার আসিব ফিরে... এই বাংলায়'- এ বোধ করি কবিতার চরণমাত্র নয়, এ তার নিয়ত অনির্বাণ রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক উপার্থন। সুতরাং বাঙালির আদিবাস-অধিবাস আর ব্যাখ্যা করার আবশ্যকতা নেই। (ক্রমশ)

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস : দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২৯ জুলাই, ২০১৩

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৩

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: সুন্দর তথ্যবহুল পোস্ট
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আদিবাসী বাঙালিরা তাদের দাবির সপক্ষে অনেক কথা বলেছেন ।।
আমরাও শান্তি স্থাপনের লক্ষ্য এদের মর্যাদা ফিরিয়ে
দেশ ও স্বাধীনতার গঠন মুলক সম্প্রীতি চাই ।।

২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:২২

মেদভেদ বলেছেন: নাক চ্যাপ্টা, চোখ ছোট, খর্বকায়, হলদে-বাদামী চামড়া ওয়ালা জনগোষ্ঠী- যারা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্রগ্রামে বসবস করছে, তারা এ ভূখন্ডে এসেছে ৩০০ থেকে ৩৫০ বছর আগে, আর বাঙালীরা এ ভূখন্ডে বসবাস করছে ২০০০ বছর বা তারও বেশী সময় ধরে, তো তারা কিভাবে আদীবাসি হয়?????

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.