নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানা ও জানানোর জন্যই বেচে থাকা। জীবন তো শুধুই কিছু মুহূর্তের সমষ্টি।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি আর কলেজ সময় থেকে বন্ধু ব্লগার মহিউদ্দীন রুবেল ডেল্টা এর সাথে ঘুরে আসলাম ড্রাগন রাজ্য ভুটান ও ভারতের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত কালিম্পং শহর। এই ব্লগ সিরিজে চেষ্টা করবো আমাদের ভ্রমন কাহিনি ও ভ্রমনে নানা সমস্যা ও পরিস্থিতি থেকে পাওয়া টিপসগুলোও পাঠকদের জানানোর।
আগের পর্বগুলো মিস করবেন না্
ড্রাগন রাজ্য ভুটানে গোপী-বাঘা (পর্ব-১)ঃ জটিলতা ও যাত্রাশুরু
ড্রাগন রাজ্য ভুটানে গোপী-বাঘা (পর্ব-২)ঃ ২৯ ঘণ্টার সফর > ঢাকা থেকে থিম্পু
ড্রাগন রাজ্য ভুটানে গোপী-বাঘা (পর্ব-৩)ঃ থিম্পু সফর
পারোর উদ্দেশ্যে যাত্রা
গতদিন থিম্পু বাস টার্মিনাল থেকে পরের দিনের সকাল সাড়ে ৮ ঘটিকার দুটো বাসের টিকেট অগ্রিম কিনে নিয়েছিলাম। সেই বুঝে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ব্যাগ গুছিয়ে হোটেল চেকআউট করে হাটা ধরি বাস কাউন্টারের দিকে। ক্লক টাওয়ার থেকে প্রায় ৫-৭ মিনিট হেটে গেলেই বাস টার্মিনাল পথে পরে থিম্পুর Archery Ground. সকাল সকাল অনেকেই দেখলাম তীর ধনুক নিয়ে নেমে পড়েছে। তীরন্দাজি তাদের জাতীয় ক্রীড়া। ব্রিজ দিয়ে নদী পাড় হয়ে বাস টার্মিনাল আসলাম। দেখি বাস আসলে ছাড়বে ৯টায়। সাড়ে ৮টা হচ্ছে রিপোর্টিং এর সময়। সামনে থেকে আমরা ভুটানের বিখ্যাত মাখনের চা খেলাম। যেমন রিভিউ শুনেছি তার বিপরীত কিছু পেলাম না। খুবই বিচিত্র রকমের চা, নোনতা। যারা মিষ্টি চা খেয়ে অভ্যস্ত তারা মনে হয় না দ্বিতীয় চুমুক নিতে পারবে। একেবারে কাটায় কাটায় ৯টায় বাস ছাড়লো থিম্পু থেকে পারোর উদ্দেশ্যে। সময় লাগবে আনুমানিক ২ ঘণ্টা।
পারো পৌঁছলাম
প্রায় দেড় ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম পারো শহর। শহর বললেও শহরের কোন চিহ্নই দেখছি না ওখানে। হাতে গুনা কিছু ট্যাক্সি-গাড়ি, বাড়ির সংখ্যা তিন অংকেও মনে হয় যাবে না। পারোর বিমানবন্দর দেখে একেবারে অবাক হলাম। যেকোন বিমানচালকের জন্য এই বিমানবন্দর একটা দুঃস্বপ্নের মত। চারিদিকে পাহাড়ের মাঝে সামান্য একটু সমান জায়গা,সেটাই বিমানবন্দর। গননা একটু এদিক সেদিক হয়ে গেলেই বিপদ। এ জন্যই মনে হয় একে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজনক বিমানবন্দর বলা হয়।
আমাদের আজকের গন্তব্য শুধু তাক্টসাং মনেস্ট্রি বা টাইগার নেস্ট। বিশাল পাহাড়ের উপরে একটি বুদ্ধমন্দির। ৩-৪ ঘণ্টা প্রায় খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠা লাগে সেখানে। থিম্পু থাকা অবস্থায়ই অনেক ভুটানি আমাদেরকে সতর্ক করেছিল। আমার আবার একটু পাহাড়ভীতি আছে, উঠার ভয় না; নামার ভয়। ডেল্টারও আবার বাঘার মত প্রস্থময় দেহ। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যদি বৃষ্টি হয় তাহলে পরিকল্পনা বাতিল
পারো থেকে শেয়ারড বাহন পেলাম না। তাই ট্যাক্সি নিয়ে ১৫০ রুপিতে গেলাম সেখানে। এরপর ৫০ রুপি দিয়ে লাঠি ভাড়ায় কিনলাম। এরপর শুরু করলাম হাটা।
পারো তাক্টসাং / টাইগার নেস্ট
১৬৯২ সালে তৈরি হয় এই মনেস্ট্রিটি। স্থানীয়দের মতে, তিব্বতীয় বুদ্ধগুরু পদ্মসমভব বাঘির পিঠে চড়ে তিব্বত থেকে এখানে এসেছিলেন, বুদ্ধের বার্তা এই স্থানের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। এখানে বুদ্ধধর্মের অনেক পণ্ডিতরা আসেন ধ্যান করতে। তারা এই স্থানকে অনেক পবিত্র মনে করে। আর ভুটানে বুদ্ধ ধর্মের প্রথম খুঁটি এখানেই ছিল।
পাহাড়ে উঠা শুরু করলাম প্রায় ১১টা নাগাদ। মাঝে পড়লো একটু ধর্না, সেই ধর্নার পানির স্রোতের শক্তি ব্যবহার করে একটা চক্র ঘুরছে অনবরত। পাহাড়ে উঠার সময় নানান দেশের মানুষের সাথে কথা হল। নেপালি, ভারতীয়, মার্কিন, পূর্তগিজ, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে ইত্যাদি আরও অনেক। তাদের সাথে কথা বলতে বলতে, একটু পর পর বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে উঠছিলাম পাহাড়ে। উল্লেখ্য যে আমি বাংলাদেশেও আগে কখনো পাহাড় চড়িনি। বাংলাদেশের সরচেয়ে উচু পয়েন্ট (প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ফিট) থেকেও এটা প্রায় ৩ গুন উচু (প্রায় ১০ হাজার ২০০ ফিট) । তাই ভয়টা আরও বেশি ছিল। কিছু অনেক নেপালি ৫০ বছরের বেশি বয়সের মানুষকে চড়তে দেখে আমরা একটা প্রেষণা পেলাম হাটার। সাড়ে সাড়ে ৩ ঘণ্টার পাহাড় চড়া শেষে কাছ থেকে দেখলাম টাইগার নেস্ট। কিন্তু মনেস্ট্রি ৩টার পর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশাহত হয়ে ফিরত আসতে হল।
বাস্তবতা ও ভুটানকে বিদায়
সেদিন ছিল ১৮ তারিখ। আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ২০ তারিখ। আমাদের পরিকল্পনায় আরও যুক্ত ছিল কালিম্পং। তখন আমরা পারো শহরে আসি তখন বাজে প্রায় ৪টা। ভেবেছিলাম আরও কিছু জায়গা ঘুরবো, কিছু পলিকল্পনা ঠিক রাখার জন্য বিসর্জন দিতে হল। আমরা দ্রুত ফুন্টশলিং এর শেয়ার ট্যাক্সি ধরে চলা শুরু করলাম। ভাড়া পড়লো ৬৫০ টাকা। সময় লাগলো প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা। পথে একটা গাড়ির দুর্ঘটনা হওয়ায় সময়টা একটু বেশি লেগেছিল। ততক্ষণে ইমিগ্রেশন অফিস বন্ধ আর ফুন্টশিলং এ হোটেলও অনেক খরুচে। তাই ভারত-ভুটান সীমান্ত দরজা পাড় হয়ে গেলাম। আর্মিরা ভারতীয় মনে করে কিছু বললো না। পড়ে জয়গাওতে একটা হোটেলে ৫৫০ টাকা দিয়ে রাতটা কাটালাম। পরের দিন যাবো কালিম্পং।
টিপসঃ তাক্টসাং যেতে হলে পারোতে আগের দিন রাতে থাকা উত্তম। আর সকাল সকাল বেড়িয়ে গেলে বিকেলে হাতে কিছু সময় থাকবে পারোর আরও কিছু জায়গা ঘুরে দেখার। থিম্পু থেকে পারো যাওয়ার জন্য বাসের টিকেট সবসময় অগ্রিম কিনে রাখবেন, আগেরদিন। কাউকে জিগ্যেস করলেই দেখিয়ে দিবে বাস টার্মিনাল কোথায়। থিম্পু থেকে পারো খরচ পড়ে জনপ্রতি ৫৫ রুপি। পারো আর পুনাখাতে বাস একটা নির্দিষ্ট সময় ছাড়া চলে না। তাই সময়সুচি খুবই ভাল করে জেনে নিবেন যখন পারো বা পুনাখাতে নামবেন। সেখানে বাস ষ্টেশন যাওয়ার সময় হাতে না থাকলে স্থানীয়দের জিগ্যেস করলেও একটা বেসিক ধারনা পেয়ে যাবেন।
ঘূর্ণকগুলো সবসময় ঘড়ির কাটার মত ঘুরাবেন, আর নিজে ঘুরলেই ঘড়ির কাটার মত ঘুরবেন। এটা স্থানীয় রীতি। মেনে চলতে ক্ষতি নেই। তাদের রীতিগুলোর সম্মান করুন। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না। তারা পরিচ্ছন্নতায় অনেক সচেতন। যত পারবেন তাদের সাথে কথা বলুন, তারা সবটা নিয়ে চেষ্টা করে যাতে আপনার যাত্রা পরিপূর্ণ হয়, আপনারও ভাল লাগবে।
আপনাদের ভুটান ভ্রমন সফল হউক সেই আশা রাখি। আমার সফর সঙ্গি ব্লগার মহিউদ্দীন রুবেল ডেল্টা সাহিত্যরস দিয়ে তার ভ্রমন কাহিনিগুলো লিখে থাকে, চাইলে তাকে অনুসরন করতে পারেন। শীঘ্রই ভুটান নিয়ে সে সাহিত্যরসে একটি সিরিজ লিখবে, সেখানে আমাদের ভ্রমনের ফাকে নানা মজার অভিজ্ঞতা ও মানুষের কথা বলা থাকবে। ধন্যবাদ সিরিজটি পড়ার জন্য। ভাল থাকবেন।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১০
জিএমফাহিম বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২২
মা.হাসান বলেছেন: সুন্দর বর্ননার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আশা করি কালিমপং এর বর্ননা ও পাবো।
ভুটান-ভারত সীমান্ত পার হতে কি কোনো ঝামেলা হবার কথা?
ভুটান যাবার জন্য বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের কি ভিসা প্রয়োজন?
ভুটানের কারেনসি ব্যবহার না করে ভারতীয় রুপি ব্যবহারে কোনো অসুবিধা হয় কি?
বাহিরে যাবার বড়ো সমস্যা খাওয়া। খাবার অপশন এবং দামের ধারণা দিলে আরো ভালো লাগবে।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৪
জিএমফাহিম বলেছেন: ভুটান-ভারত সীমান্ত পার হতে কি কোনো ঝামেলা হবার কথা?
না। ওখানে একেবারেই সহজ। একেবারেই ফাকা থাকে ইমিগ্রেশন অফিস। আর ভুটান গেটে এমনভাবে গাড়ি আর মানুষ চলাচল করছে দেখলে মনেই হবে না এটা অন্য দেশ।
ভুটান যাবার জন্য বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের কি ভিসা প্রয়োজন?
না। অন-এরাইভাল ভিসা দেয় ওরা। তবে অনেকে বাংলাদেশ থেকেই অবস্থানকালে ভিসা করিয়ে নেয়। যাওয়ার দিন সময় কম নষ্ট হয়।
ভুটানের কারেনসি ব্যবহার না করে ভারতীয় রুপি ব্যবহারে কোনো অসুবিধা হয় কি?
না। মুল শহরগুলোতে সহজেই রুপি ব্যবহার করা যায়। গ্রামের দিকে গেলে তখন নুলট্রাম্প দিয়ে যাওয়ায় শ্রেয়।
৩| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১১
মাদিহা মৌ বলেছেন: বর্ণনা সুন্দর হয়েছে।
পরের পোস্টগুলির জন্য অপেক্ষা …
৪| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৪
জাহিদ ২০১০ বলেছেন: ভ্রমন বিষয়ক ব্লগে বেশি করে ছবি দেওয়া উচিত এবং সাথে সাথে বর্ণনা। যাতে আমরা যারা ম্যাংগো পিপল আছি তারা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাতে পারি।
আশাকরি বিষয়টা বিবেচনা করতে পারেন। এন্ড হ্যাপি ট্রাভেলিং
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৫
জিএমফাহিম বলেছেন: ধন্যবাদ। সব শেষ হলে এডিট করে আরও কিছু ছবি যুক্ত করবো তাহলে
৫| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫২
অদৃশ্য বলেছেন:
মানেটা কি দাড়ালো! ডেল্টা ভুটান সিরিজের আগে এটা স্রেফ তার একটি প্রচারণা ভ্রমণ কাহিনী... ফাঁকের ঘটনাগুলো ডেল্টার জন্য রেখে দিয়ে আমাদের আগ্রহী করলেন সেদিকে ভেড়ানোর!... যাক কি আর করা, আপনার ব্যপাক শর্টকাট দেখে ভাবছিলাম প্রশ্ন করবো যে এভাবে ফ্রুত ফ্রুত করে শেষ করলেন কেন? সেটা আর করতে হচ্ছেনা... তারপরও সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে...
শুভকামনা...
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৭
জিএমফাহিম বলেছেন: আমার সিরিজের মুল উদ্দেশ্যই হচ্ছে যাতে পাঠকরা ভুটান যাওয়ার সময় তথ্যহীনতায় কোন প্রকার ভোগান্তিতে না পরে। তাই কোন দ্বিধাদণ্ড থাকলে এখানেই প্রশ্ন করবেন। মটুটা লিখবে সুড়সুড়ি দেয়ার জন্য , এই কাজ আমি আবার ভাল পারি না।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৮
ভ্রমরের ডানা বলেছেন: খুব সুন্দর ভ্রমন কাহিনী!