নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আরেকটা জীবন যদি পেতাম আমি নির্ঘাত কবি হতাম
বাবা,
যেদিন তোমার চাকরিটা চলে গিয়েছিল
দরিদ্রতাকে সেদিন আমি প্রথম দেখলাম আমাদের বাড়িতে অতিথি হিসাবে,
তখন আমার বয়স সাত কি আটের মাঝে,
দরিদ্রতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম মা আর তোমার ঠিক পিছনে ,
তখন সূর্য ডুবার সময়।
তোমাদের চোখে ভাসছিল জানালা দিয়ে আসা ডুবন্ত সূর্যের আলো,
আর দরিদ্রতার চোখে লজ্জার জল।
দরিদ্রতাকে তিন
বছরে মাথায় দেখলাম
বিছানা বালিশ নিয়ে আমাদের বাড়িতে নিজের বাড়ি মনে করে থাকতে এসেছে।
আমাকে আড়ালে ডেকে বললে,
‘কারো বাবাই চিরদিন থাকে না,
এখন থেকে আমি তোমাদের সংসারেই থাকবো।
বাবা,
তুমি একদিন শ্রেফ হারিয়ে গেলে,
আস্ত একটা মানুষ কিভাবে যে বাতাসে মিশে গেল!
পুলিশও কোনো কুল কিনারা করতে পারল না।
তুমি হারিয়ে যাওয়াতে দরিদ্রতার সাহস বেড়ে গেলো একদিনেই
সেদিন দারিদ্রতার কন্ঠে কোনো দরদই টের পেলেম না,
আর চোখে দেখলাম ভয়ংকর পরিহাসের হাসি।
বাবা,
তারপর থেকে দরিদ্রতা ‘নাই’ নামক এক ভয়ের গল্প চিৎকার করে শুনিয়েছে আমাদের দিনরাত,
একদিন বাসায় খাবার নাই
প্রায়ই মায়ের ঔষুধের টাকা নাই
মাসের শুরুতে বাড়ি ভাড়া জোগাড় করতে গিয়ে মায়ের রাতের ঘুম নাই
তোমার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালানোর ক্ষমতা তাদের মা’র নাই
ঈদে আমাদের ভাই বোনদের নতুন কাপড় পরার ক্ষমতা নাই।
আর দরিদ্রতার ভয়ংকর চেহারায় সারাদিন চুপ করে বসে থাকতো আমাদেরই অসহায়ত্বের ছায়া,
আর চোখে থাকতো মায়ের কান্নার জল।
বাবা,
মা আমাদের সব সময় বলে,
‘তোদের বাবা একদিন ফিরে আসবে,
আমাদের জন্য ফিরে আসবে।'
মাঝে মাঝে আমরা দরিদ্রতার অস্তিত্ব ভুলে যেতাম মায়ের হাসি মুখ দেখলে
শুধু মায়ের হাসি মুখ দেখলে।
বাবা,
একদিন তোমার পুরোনো একটা ডায়রী পেলাম আলমারিতে,
সেখানে শুধু প্রতিদিনের খরচের হিসাব,
মাসের বিশ তারিখ থেকেই খরচ ডায়রীর পাতা শূন্য হতে থাকে
মাসের শেষের দিকে শুধু কলমের অস্থির কাটাকুটি,
ডায়রীর শেষ কয়েক পাতায় বিক্ষিপ্ত ভাবে লেখা ছিল,
‘চাকরিটা চলে গেলো,-আমার কি দোষ!
আমার আরো সাহস দরকার ছিল
-মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াবার সাহস,
অর্থের কষ্ট আর সহ্য হয় না,
একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে- ঠিক হয়ে যাবেই।'
বাবা,
তোমার ডায়রী পড়েই আমরা বুঝতে পারলাম,
আমাদের মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতেই হবে
তারপর থেকেই আমরা বদলে গেছি,
আমাদের সাহস বেড়ে গেছে
আমরা দরিদ্রতাকে আর একটুও ভয় পাই না
আমরাই দরিদ্রতাকে দেখলে এখন পরিহাসের হাসি দেই,
তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করি দরিদ্রতাকে নিয়ে
ইদানিং আমাদের দেখলেই দরিদ্রতা বিষণ্ণতায় ভুগে।
বাবা,
লজ্জা শরমে দরিদ্রতা একদিন আমাদের ঘর থেকে বের হয়ে যাবেই,
দরজা খোলা আছে,
তুমি বাড়ি ফিরে আসো,
ভালোবাসা নিয়ো সবার।
———————
র শি দ হা রু ন
০৩/১০/২০২৩
মন্ট্রিয়াল, কানাডা
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৩ ভোর ৪:১৫
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ইনশাল্লাহ ভালো আছেন
২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ২:২৬
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: খুবই সুন্দর লেখনী। লেখাটা পড়তে পড়তে আমার বাবার কথাও মনে পড়ে গেল। আপনার বাবা ফিরে আসুন এটাই মন হতে চাই।
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৩ ভোর ৪:১৫
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ভালো থাকবেন
৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:৩১
মিরোরডডল বলেছেন:
দরিদ্রতাকে তিন
বছরে মাথায় দেখলাম
বিছানা বালিশ নিয়ে আমাদের বাড়িতে নিজের বাড়ি মনে করে থাকতে এসেছে।
আমাকে আড়ালে ডেকে বললে,
‘কারো বাবাই চিরদিন থাকে না,
এখন থেকে আমি তোমাদের সংসারেই থাকবো।
কি অসাধারণ কথাগুলো!
এভাবেও যে কেউ ভাবতে পারে, আবার সেটা কবিতার ভাষায় প্রকাশ করা , কি বলবো আমি স্পিচলেস!!!
আসলে, রশিদের লেখা পড়লে আমি সবসময় বাকরুদ্ধ হয়ে যাই!
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৩ ভোর ৪:১৬
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ভালোবাসা নিবেন
৪| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৮
ইসলামী জ্ঞান বলেছেন: আমিও বর্তমানে অনুধাবন করতেছি দরিদ্র কাকে বলে কতটা অসহায় হয় পরিমাণ মানুষ এই অবস্থায়।
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৩ ভোর ৪:১৭
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ভালো থাকবেন
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ২:১৫
বাকপ্রবাস বলেছেন: মনটা ভিজে গেল, কোথায় আছে বাবা, কেমন আছে জানতে ইচ্ছে করছে