নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আরেকটা জীবন যদি পেতাম আমি নির্ঘাত কবি হতাম
প্রায় তিনমাস হলো বাদল নতুন কেনা নিকেতনের এই ফ্লাটে উঠেছে। নয় তলা ব্লিডিং এর পাঁচ তলায় সে প্রায় বাইশো স্কয়ার ফিটের এই ফ্ল্যাটে বউ রিতা আর দুই সন্তান নীলা আর নিলয় কে নিয়ে থাকে।
সারাজীবনের সঞ্চয়ের বিনিময়ে এই নতুন ফ্লাট।
নতুন বিল্ডিং এর সবার সাথে এখনো ভালোভাবে পরিচয় হয়ে উঠেনি বাদলের।
হঠাৎ হঠাৎ দেখা হয় লিফটে কারো না কারো সাথে। বাদল আন্দাজ করেছে সবাই বোধহয় ফ্লাটের মালিক না,ভাড়াটিয়া ও আছে কয়েকজন, অনেকের সাথে এখনো কোন কথাই হয়নি, শুধু শূভেচ্ছা হাসি বিনিময় হয়েছে।
বিকেলে অফিস থেকে ফিরে বিল্ডিং এর লিফটের সামনে দাঁড়ৈতোই পাশেই এক ভদ্র মহিলাও এসে দাঁড়ালেন লিফটের অপেক্ষায়।
হঠাৎ করেই ভদ্র মহিলা বলে উঠলেন -
“আচ্ছা আপনি কি কখনো উত্তর যাত্রাবাড়ীতে ছিলেন?”
বাদল খুবই আশ্চর্য্য হয়ে বললো,
“জ্বি, ছিলাম ,সে তো প্রায়”
বলেই দেখলো হিসাব ভুলে গেছে,একটু হিসাব করা শুরু করলো মনে মনে ,
সে একুশ বছর বলার আগেই ভদ্র মহিলা বলে উঠলেন-
“একুশ বছর হবে,।”
বাদল আশ্চর্য হয়ে মহিলার চেহরা এক ঝলক ভালোভাবে দেখে নিলো, কিন্তু কোন মতোই কারো সাথে মিলাতে পারলো না।
বাদল নিজের স্মৃতি ক্ষমতার উপর কিছুটা হতাশ হয়েই বললো.
-“কলেজে পড়তাম তখন, দু’বছর ছিলাম, ওয়াশা গলিতে ছিলাম,বাসার নাম্বারটা মনে নেই, কেনো বলুনতো ?”
ভদ্র মহিলা কিছুটা আশাহত হয়ে বললো-
“ঠিক পাশের দোতলা বাড়ীটা ছিলো আমাদের, আমাদেরটা ছিলো আশি আর আপনি ছিলেন উনাশিতে,সিজারদের বাসায়”।
বাদল এবার সোজাসুজি ভদ্র মহিলার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছু সময়,
কোনো ভাবেই উনাকে পরিচত মনে হচ্ছে না তার, তবুও হাসি মুখে বাদল বললো,
“আমার স্মৃতিশক্তি খুবই দূর্বল, ক্ষমা করবেন, আপনার দেখি সব মনে আছে,
আসলে বাবার বদলি চাকুরী ছিলো, সারাজীবন অনেক জায়গায় থাকতে হয়েছে,
কলেজ শেষ করে আমরা সিলেটে চলে গিয়েছিলাম, আর আপনাদের তো নিজেদেরই বাড়ী?”
এইটুকু বলতেই লিফটা আবার নিচে নেমে আসলো।
ভদ্র মহিলার লিফটে উঠার কোনো লক্ষনই বাদল দেখলো না,অগ্যতা তাকেও দাড়িয়ে পড়তে হলো।
ভদ্র মহিলা বললেন -“আমি থাকি 7/A তে , আপনি?”
“আমি 5/D তে থাকি” বলেই বাদল লিফটের দিকে তাকালো। লিফট আবার ফিরে এসেছে।
“আপনি প্রায়ই হলুদ শার্ট পড়তেন, হলুদ আপনার প্রিয় রং, তাই না?” বলেই মহিলা ওর দিকে তাকালো।
বাদল এতোই আশ্চর্য্য হলো যে আবারও লিফট এসে কখন যে চলে গেলো সে বলতেই পারবে না।
বাদলের মনে পরে গেলো সেই হলুদ শার্টের কথা, তার বাবাকে কে যেনো হলুদ কাপড় এর একটা থান দিয়েছিলো। বাদলের ধারনা কোন কাজের ঘুষ হিসাবে এই কাপড়ে দিয়েছিলো কেউ তার কেরানী বাবা’কে।বিনে পয়সার কাপড় পেয়ে তার বাবা একসাথে তিনটা হলুদ শার্ট বানিয়ে দিয়েছিলো বাদলকে। কলেজের দু’বছর তাকে এই হলুদ রঙের শার্ট পরেই কাটাতে হয়েছিলো,। সে তখন প্রায়ই মা’র সাথে অনেক ঝগড়া করতো হলুদ শার্ট নিয়ে, বাবা’কে কিছু বলার সাহসই ছিলোনা তার কখনো ।
বাদল বললো, -“আপনার স্মৃতিশক্তি সত্যিই বলার মতো।”
ভদ্রমহিলার চেহারায় কিছুটা প্রসন্ন ভাব নিয়ে বললো- “ আমার একটাই ছেলে ,কলেজে পড়ে, আর স্বামী ব্যাবসায়ী, আমি গৃহিনী, আপনার?”
একথা বলেই বাদলের দিকে উত্তরের আশায় তাকালেন মহিলা-
“ আমার এক ছেলে, এক মেয়ে, বউ ডাক্তার,
আমি ও ব্যাবসা করি”
বলেই বাদল সাথে সাথে বললো
“আজ আসি”।
ভদ্র মহিলা খুবই মনঃক্ষুণ্ন হয়ে বললো,
“আমার নামটা ও জানতে চাইলেন না?, আমার নাম ‘রুমা”
বাদল খুবই অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
“ আমার নাম..”
উনি বাদলকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“থাক আর বলতে হবে না, আমি জানি আপনার নাম।”
বলেই রুমা লিফটের বদলে সিড়ি ভেঙে উঠতে লাগলেন,বাদল খুবই অপ্রস্তুত হয়ে তাকিয়ে থাকলো শুধু।
বাদলের আর দেখা হয়নি কয়েকদিন রুমার সাথে, একদিন আবার লিফটেই মধ্যেই দেখা দু’জনের। রুমার সাথে কিশোর বয়সের একটি ছেলে, বাদল রুমার দিকে তাকিয়ে পরিচিত মানুষের মতো সৌজন্য হাসি দিলো।
রুমা বাদলের দিকে তাকালোই না, দেখে মনে হচ্ছে এই জীবনে বাদলের সাথে রুমার দেখা হয়নি।
কিশোরটির পরনে হলুদ রঙেরএর একটি শার্ট । কিশোরটি কিছুটা বিরক্ত প্রকাশ করে নীচু স্বরে রুমাকে বললো,
“ মা’ হলুদ রং আমার একটুও পচ্ছন্দ না, তুমি সব সময় আমাকে জোর করে হলুদ রং এর কাপড় পরাও,আমি এখন বড় হয়েছি, কলেজে পড়ি, বন্ধুরা সবাই হাসাহাসি করে,
মা,আমার নিজের পচ্ছন্দ বলেতো কিছু আছে।”
বাদল কিশোরটির দিকে তাকিয়ে দেখলো হলুদ রঙের সার্ট পরাতে তাকে ভালোই মানিয়েছে।
লিফটে রুমা কিছুই বললেন না তার ছেলেকে। লিফট থেকে নামার সময় শুধু বাদলের দিকে নির্লিপ্ত ভাবে একবার তাকালো, ছেলেকে বললো,
এমন ভাবে বললে যেনো বাদল ও শুনতে পায়
-“ হলুদ রং আমারও পচ্ছন্দ না,
তুই বাসায় গিয়ে শার্টটা বদলিয়ে আয়,
হলুদ রঙে চোখে আজ কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে,দেখলেই শরীর গুলিয়ে উঠছে, আর কোনদিন আমার সামনে হলুদ রঙের কাপড় পরবি না, মনে হচ্ছে এখনি বমি করে দিবো”
বাদল খুবই আশ্চর্য হয়ে রুমার দিকে তাকালো, বুঝতেই পারলো না রুমা হঠাৎ এসব কেনো বলছে।
বাদল রুমাকে বললো -“ আপনার শরীর কি খারাপ লাগছে?”
রুমা মুখে একটু ম্লান হাসি এনে বললো- “ইদানিং হলুদ রঙ দেখলেই শরীর গুলিয়ে উঠে,মনে হয় ডাক্তার দেখাতে হবে”
বাদল আর কোন কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসলো অফিসের জন্য
————————————
রশিদ হারুন
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৪১
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫৫
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: উপন্যাস পড়ার ধৈর্য্য কিংবা মানসিকতা আমার কোনদিনও ছিলো না আজও নেই। তবে এই ধরনের ছোট গল্প আমার বেশ ভালো লাগে, আপনার লিখাও বেশ ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ জানবেন রশিদ ভাই।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৪২
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ভালো থাকবেন
৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:১১
বিজন রয় বলেছেন: ভালো ছোট হলেও।
কবিতা কিংবা গল্পে আপনি সমান পারদর্শী।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৪২
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ভালো থাকবেন
৪| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৩২
ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: ব্লগে কবিতা বেশী। গল্প নেই বললেই চলে। পাঠকের অভাবে গল্পকারেরা উৎসাহ হারাচ্ছেন। ব্লগে অনেক দিন পর ছোট গল্প পড়লাম।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৪২
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ভালো থাকবেন
৫| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর বাস্তব গল্প।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৪৩
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ভালো থাকবেন
৬| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:০৪
নীলসাধু বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
ভালো লাগলো।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৪৩
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ভালো থাকবেন
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪৫
প্রামানিক বলেছেন: গল্প ভালো লাগল