নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গাজী মুহাম্মদ শওকত আলী

গাজী মুহাম্মদ শওকত আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহীদী কাফেলা ইসলামী আন্দোলনের অনুপ্রেরণা কামারুজ্জামান

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪

শহীদী কাফেলা ইসলামী আন্দোলনের অনুপ্রেরণা কামারুজ্জামান

॥ গাজী মুহাম্মদ শওকত আলী॥
মৃত্যু এমনই এক ঘটনা যা প্রত্যেক প্রাণীর জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। সূরা আলে ইমরানের ১৪৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন, ‘কোনো প্রাণীই আল্লাহ তায়ালার অনুমতি ব্যতীত মৃত্যুবরণ করবে না, প্রত্যেক প্রাণীরই মৃত্যুর দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট ভাবে লিপিবদ্ধ আছে’। তবে কারো কারো মৃত্যু আমাদের কাছে দুঃখের বা শোকের হলেও কিছু কিছু মৃত্যু অবশ্যই সুখের বা আনন্দেরও হয়ে থাকে। শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার পর শহীদী কাফেলার একই সিঁড়ি বেয়ে আমাদের থেকে বিদায় নিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের এই বিদায় আমাদের কাছে তথা মুসলিম বিশে^র কাছে দুঃখ শোকের আর প্রশ্নবিদ্ধও বটে। কিন্তু শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের জন্য তার সফল জীবনের এই সার্থক মৃত্যু সুখের ও আনন্দের। কারণ তিনি দুনিয়ায় তার ওপর অর্পিত ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পার্থিব জীবনের ঝক্কি-ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে অনন্ত আবাসের ঠিকানার খোঁজে তার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে চলে গেছেন। সূরা আলে ইমরানের ১৪০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন, ‘আর আমি মানুষের মাঝে তাদের উত্থান পতনের দিনগুলো পালাক্রমে অদল-বদল করতে থাকি, যাতে করে আল্লাহ তায়ালা একথা জেনে নিতে পারেন, কে সত্যিকার অর্থে আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে এবং এর মাধ্যমে তোমাদের মাঝ থেকে কিছু ‘শহীদ’ও আল্লাহ তায়ালা তুলে নিতে চান, মূলত: আল্লাহ তায়ালা জালেমদের কখনো পছন্দ করেন না’। জালিমের জুলুমের শিকার হয়ে নিরন্তর প্রত্যাশিত শহীদের কাতারে সামিল হলেন ইসলামী আন্দোলনের নিখুত ‘পাঞ্জেরী’ ও আমাদের অনুপ্রেরণার প্রতীক শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান।

শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান গত ১১ এপ্রিল দিবাগত রাতে হিজরী তারিখ মোতাবেক ২২ জমাদিউস সানি রোববার রাত ১০-২০ মিনিটের সময় ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার পূর্বে সুস্পষ্টভাবেই বলেছেন যে, ‘আমি ১৯৭১ সালে ন্যূনতম কোনো প্রকার অপরাধের সাথে জড়িত ছিলাম না, আমি নির্দোষ, নিরপরাধ, আমাকে সম্পূর্ণই বিদ্বেষবশতঃ মিথ্যা অভিযোগ আর মিথ্যা সাক্ষীর ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে; আমি আল্লাহ তায়ালার দরবারে এর বিচার চাই’। যে যাই বলুক শহীদ কামারুজ্জামানের অপরাধ সম্পর্কে আল কুরআনের সূরা আল মায়েদার ৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘(হে রাসূল !) আপনি বলে দিন, তোমরা যে আমাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছো, তার কারণ এই যে, আমরা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান এনেছি এবং আমাদের ওপর আগে ও বর্তমানে যা নাজিল করা হয়েছে তার ওপরও বিশ^াস স্থাপন করেছি; আসলে তোমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই হচ্ছে ফাসেক’। সূরা আল বুরূজের ৮ নম্বর আয়াতেও এমনই কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর দ্বীনের শত্রুরা যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের তথা নবী রাসূলদের কাজে যেভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল, নবী রাসূলগণকে যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন আর নিপীড়ন করেছিল, হত্যা করেছিল, দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি আর ভবিষ্যতেও হবে না। তাই তো আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানের ১৪২ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করছেন, ‘তোমরা কি মনে করো এমনি এমনিই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ আল্লাহ তায়ালা একথা জেনে নেবেন না যে, কে আল্লাহর পথে জিহাদ করতে প্রস্তুত হয়েছে এবং কে বিপদে কঠোর ধৈর্য ধারণ করতে পেরেছে’। শহীদ কামারুজ্জামান এমনই এক ব্যক্তি যিনি আল্লাহর পথে জিহাদে (আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টায়) অগ্রনায়ক ও চরম ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে ইসলামী আন্দোলনের এই অনুকরণীয় ‘পাঞ্জেরী’ শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের জন্য সর্বোত্তম পুরস্কার কামনা করছি।

শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৫২ সালে ময়মনসিংহ বর্তমান শেরপুর জেলায় জম্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে ৪টি বিষয়ে লেটারসহ এসএসসি ও ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসিতে প্রথম বিভাগে পাস করেন। ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির গঠিত হলে, তিনি ঢাকা মহানগরীর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৮-১৯৭৯ সেশনে তিনি শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের শেষের দিকে তিনি ছাত্র জীবন শেষ করে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। ১৯৯২ সালে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। শাহাদাত বরণের সময় পর্যন্ত শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান উক্ত দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার পূর্বেও তিনি তার প্রাণপ্রিয় সংগঠনকে ভুলেননি। তার পরিবারের সাথে সাক্ষাতে তিনি তার প্রাণপ্রিয় সংগঠনের জন্য তিনটি পরামর্শ রেখে গেছেন, (১) আবেগ তাড়িত হয়ে যেন সংগঠন পরিচালনা করা না হয়, (২) সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীগণ যেন সর্বাবস্তায় ধৈর্য ধারণ করে, (৩) সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে যেন জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃন্ধি অর্জন করে।

শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ইসলামী আন্দোলনের জন্য যে কুরবানি পেশ করেছেন তা আল্লাহর দ্বীনের সৈনিকদের জন্য ইতিহাসে অনুপ্রেরণার অনুপম দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে বিশ^বিদ্যালয়ে সম্মানজনক ও লাভজনক পেশা শিক্ষকতা গ্রহণ না করে, কন্টকাকীর্ণ ইসলামী আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর কর্মময় জীবনে ১৯৮০ সাল থেকে ঢাকা ডাইজেস্টের নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক ও সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ১৯৮৫-৮৬ সেশনে তিনি ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন। শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ছিলেন একজন হাস্যোজ্জল ব্যক্তি, ইসলামীক স্কলার, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সংগঠক, তুখোর বক্তা ও একজন সুলেখক।

জামায়াত নেতা শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় শুধু বাংলাদেশ নয় মুসলিম বিশে^র সকল বিবেকবান মানুষসহ বিশ^ বিবেকের কাছে কিছু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, (১) ইন্টারমিডিয়েটের প্রথম বর্ষের ছাত্র ১৮/১৯ বছরের একজন কিশোর, কি করে তিনি জামায়াতে ইসলামীর মতো একটা সংগঠনের যোদ্ধা বাহিনীর (তথাকথিত আল বদর বাহিনীর) প্রধান বা কমান্ডার হতে পারেন? এটা আদৌ কি বিশ^াস যোগ্য বা বিবেকবান কেউ কি তা বিশ^াস করতে পরেন? (২) ১৮/১৯ বছরের একজন কিশোর, ১৯৭১ সালে (কথিত) শত শত নারীকে ধর্ষণের আর শত শত নিরীহ মানুষ হত্যা করার পর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি কি করে একই এলাকায় কলেজে লেখা-পড়া করে এইচএসসি পাস করলেন? (৩) যে ব্যক্তি ১৯৭১ সালে ৯ মাসেরও কম সময়ে অর্থাৎ সর্বমোট ২৬৫ দিনে এতোগুলো খুন আর ধর্ষণ করলেন পরবর্তী ৪৪ বছর অর্থাৎ ১৬,০৭১ দিনেও তার বিরুদ্ধে একটা খুন বা ধর্ষণের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি! এটাও কি কোনো বিবেকবান মানুষকে বিশ^াস করতে হবে? (৪) বলতে গেলে যার গোটা ছাত্র জীবনই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কলেজ আর বিশ^বিদ্যালয়ে কেটেছে, এ সময়ের মধ্যে ধর্ষণ তো দূরের কথা কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়েছেন এমন অভিযোগও কি কেউ করেছেন ? (৫) ১৯৭১ সালে শত শত লোক যে ব্যক্তি হত্যা করলেন তার পর থেকে ৪৪ বছরে হত্যা তো দূরের কথা তিনি কাউকে গালি দিয়েছেন এমন অভিযোগও কি করতে পারেন ? (৬) ১৯৭১ সালে যে লোক তথাকথিত আল বদর বাহিনীর প্রধান বা কমান্ডার হিসেবে শত শত খুন আর ধর্ষণ করেছেন, তার দল পরাজিত হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিগত ৪৪ বছরেও শেরপুর, ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কোথাও তার বিরুদ্ধে কোনো একটা মামলা অথবা জিডিও করা হলো না কেন ? (৭) শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের এলাকা শেরপুর নিবাসী বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী নারীবাদী লেখিকা ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী পক্ষের অন্যতম সাক্ষী মিনা ফারাহ লিখেছেন, ‘কামারুজ্জামান ধর্ষক হলে শেরপুরের মেয়ে হিসেবে সকলের আগে আমিই বিচার চাইতাম। যার কারণে তিনি সাক্ষী দিতে আসেননি। তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমি ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশেই ছিলাম, তখন তো তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে খুন আর ধর্ষণের কোনো অভিযোগ শুনিনী! ৪৪ বছর পর এখন এমন অভিযোগ কোত্থেকে আসলো ? (৮) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধ আইনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের নাম সেখানে ছিল না। ১৯৭৩ সালে গঠিত ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর খন্দকার মাহবুব উদ্দীন নিজেও ট্রাইব্যুনালকে একথা জানিয়েছেন। তা হলে বিচারটা কার হলো? আর কি বিচার হলো? এমন একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান শুধু যে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অনুপ্রেরণার প্রতীক তা কিন্তু নন, তিনি যে কোনো পরিবারের জন্য হতে পারেন একজন দিকদর্শী। শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান পাঁচ ছেলে এক মেয়ে, স্ত্রী ও অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। তিনি মৃত্যুর পূর্বে তার সন্তানদের প্রতি অসিয়াত করে গেছেন, (১) তোমরা সকলে অবশ্যই ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলবে, (২) পাঁচ ভাই একসাথে থাকবে, (৩) মায়ের সেবা করবে ও আদেশ মানবে, (৪) পরামর্শ করে যে কোন কাজ করবে, (৫) ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলদের ও আমার বন্ধুদের সম্মান করবে, (৬) কোন অবস্থাতেই হারাম পথে উপার্জন করবে না, (৭) রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়তা রক্ষা করবে, (৮) গরিব আত্মীয়দের সাহায্য করবে। আদর্শ পরিবার ও সমাজ গঠনে শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের এই নির্দেশনাগুলো যে কোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই ‘পাঞ্জেরীর’ মতো দিক নির্দেশা দিবে।

শিশুদের প্রতি শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মমত্ত্ববোধ এটাও যে কোনো মানুষের জন্য একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে তাঁর সাক্ষাতের কথা সকলেরই জানা। তিনি জানতেন তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দু‘টি শিশু আসবে। তাই তিনি জেল সুপারকে বলে আগে থেকেই দু‘টি চকলেট সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান তার দুনিয়ার জীবনে শিশুদের শেষ সাক্ষাতে তাদেরকে চকলেট দিলেন, আদর করলেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন আর তাদের জন্য দোয়া করলেন। তখনো তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ও হাসি-খুশি ছিলেন। তিনি তার পরিবারের সদস্যদেরকে স্বাভাবিক ও হাসি-খুশি অবস্থায় বিদায় দিলেন।

জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিচারকার্যে উল্লেখযোগ্যভাবে অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের অফিসের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এক বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় কার্যকর স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছিল। মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ স্থগিতে আহ্বান জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ‘গুরুতর ত্রুটিপূর্ণ’ মন্তব্য করে এই আহ্বান জানায়। যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ড এর সদস্য লর্ড কারলাইল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড স্থগিত করাসহ সরকারের কাছে ৫ দফা সুপারিশ পেশ করেছিল। তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে স্বাধীন তদন্ত করা, তা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ায় সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখা, সর্বোচ্চ দণ্ড হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুযায়ী সত্যিকার অর্থেই একটি আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সরকার কারো কোনো কথাই পাত্তা দেয়নি। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ অভিযোগ করে বলেন যে, ‘কামারুজ্জামান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার’। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘জামায়াতকে নিশ্চিহ্নের হীনউদ্দেশ্যেই কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যগুলো বিশেষ গুরুত্বের সাথে প্রচার করেছে। বিবিসি, রয়টার্স, এপি, আল জাজিরা, ইয়াহু নিউজ, এবিসি নিউজ, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, জি নিউজ, নিউজিল্যান্ডের এনজিহেরান্ড, অস্ট্রেলিয়ার ডেইলি টেলিগ্রাফ, মালয়েশিয়ার দ্য স্টার.কম, সংযুক্ত আরব আমিরাতের গালফ নিউজ। প্রায় সকল প্রচার মাধ্যমেই বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ আইনে বাংলাদেশের একজন শীর্ষ পর্যায়ের ইসলামী আন্দোলনের নেতাকে তথা জামায়াতে ইসলামীর নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ফাঁসির মঞ্চে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ছিলেন, ধীর, স্থীর ও নির্ভিক। স্বাভাবিক ভাবেই হেঁটে তিনি যখন ফাঁসির মঞ্চে যান তখন তার মধ্যে কোনো ভয়ভীতি কাজ করেনি। তার মধ্যে ছিল না কোনো অস্থিরতা। ফাঁসির মঞ্চে তিনি দোয়া ও কুরআনের আয়াত পাঠ করতে থাকেন। এভাবেই দোয়া পড়তে পড়তে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান স্বাভাবিক গতিতে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান। জেলসুপার তার হাত থেকে রুমাল ফেলে দেন, তখন ঠিক ১০টা ৩০ মিনিট। এরপর মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এভাবেই শাহাদাতের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।

শত সহস্র ছালাম ইসলামী আন্দোলনের ‘পাঞ্জেরী’ শহীদ এই বীরের জন্য। আসুন আমরা সাংগঠনিক ও পারিবারিক জীবনে শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের পরামর্শ ও নির্দেশনা মেনে রাসূল (স) এর আদর্শ অনুযায়ী যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করি আর তাঁর রূহের মাগফিরাতের জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে ফরিয়াদ করি যেন, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেন ও সর্বোত্তম পুরস্কার দান করেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.