নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কালের ইতিকথা

অনলাইন সিকিউরিটি কনসালট্যান্ট ও সফটওয়ার অ্যানালিস্ট । অপেক্ষায় আছি কখন সময় থমকে যায়....

গৌতম রায় তাপু

গৌতম রায় তাপু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতের জাতীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি

২০ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৮:৪১

আসন্ন দেশব্যাপী লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে তৎপরতা শুরু হয়েছে । নয়াদিল্লীর সাউথব্লকে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস হেভীওয়েট নেতাদের দেখা যাচ্ছে সরকারী কাজকর্মের তদ্বির করবার প্রয়োজনে । শেষবেলায় পিএমও অফিস থেকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর জরুরী বার্তা ও নির্বাচনী কর্মপদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন প্রাদেশিক দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃত্ব সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে নিজ নিজ প্রদেশের ভারপ্রাপ্ত দলীয় সভাপতির সঙ্গে সংযোগ সাধনে ব্যস্ত । ১০ নং জনপথ রোডে কংগ্রেসের সভানেত্রী ও ইউপিএ চেয়ারপার্সন মিসেস সোনিয়া গান্ধী তার কাছের নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব আহমেদ প্যাটেল, দিগ্বিজয় সিংহ, চিদাম্বরম ও এ কে অ্যান্টনি - প্রভৃতি নেতৃত্বের সঙ্গে প্রায়ই আলোচনায় বসছেন ।সরকারী কর্মপদ্ধতি নিয়ে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের নীচুস্তরের স্থানীয় নেতৃত্ব ও কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাধছে যা তাত্ত্বিকভাবে নিরসনের দ্বায়িত্ব নতুন সহসভাপতির দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত যুবরাজ রাহুল গান্ধীর । ইউপিএ ২ এর সময়ককালে কংগ্রেস একতরফা এমনকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে যার সাথে বেশকিছু প্রাদেশিক জোটসঙ্গী সহমত পোষন করেনি কিন্তু রাজনৈতিক জমি ধরে রাখতে, দূর্নীতিতে ফেঁসে যাওয়া কিছু নেতৃত্ব রাজনৈতিক পুনর্বাসনের প্রয়োজনে, ও জোট-রাজনীতির বাধ্যবাধকতার প্রয়োজনে আপাতত চুপচাপ । প্রয়োজনে এরাও ফোঁস করবে, নির্বাচনোত্তর নিরাপদ সময়ের অপেক্ষায় বসে আছেন এরা । লোকসভায় ইউপিএ ২ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন জানানোর পরিবর্তে কিছু অজানা ডিল ও সুযোগসুবিধা এরা আপাতত হজমে ব্যস্ত । কংগ্রেসের মুল তাস রাজীবতনয় শ্রীরাহুল গান্ধী পরবর্তী প্রোজেক্টেড প্রধানমন্ত্রী ( যদিও অনুচ্চারিত এখনও .. ) যিনি যুবরাজ পদে আসীন কংগ্রেস নেতা ও কর্মীদের মাঝে, তবে তাঁর নির্বাচন- বৈতরনী পার করাবার ট্র্যাকরেকর্ড মোটেও ভাল নেই । একার কাঁধে দ্বায়িত্ব নিয়ে এর আগে বিহার ও উত্তরপ্রদেশে আদাজল খেয়ে লেগে থেকে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেও তিনি কংগ্রেসকে জেতাতে পারেননি ।৪২ বছর হতে চলল তাঁর, এখন তিনি অনেক অভিজ্ঞ । কংগ্রেসের অভ্যন্তরে তিনি গড়ে তুলেছেন তাঁর বিশ্বস্ত তরুন তুর্কী গোষ্ঠী যার মধ্যে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, শচীন পাইলট, কাশ্মীরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, পশ্চিমবঙ্গের মালদার সাংসদ মৌসম বেনজির নূর সামিল । একমাত্র ওমর আবদুল্লা বাদে এদের কারোরই নিজ নিজ প্রদেশে লোকসভার নির্বাচনে লড়ে কংগ্রেসকে একক প্রচেষ্টায় জিতিয়ে আনা অসম্ভব । কংগ্রেসকে তাঁর চিরাচরিত ভোটব্যাঙ্কের ওপর কিছুটা ভরসা করতেই হবে । কংগ্রেস তার মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক অনেকটাই হারিয়েছে , মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট আপাতত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত যার একটি অবশ্যই উন্নয়নের পক্ষে যাবে , অন্যটির দাবীদার ঊত্তরপ্রদেশের সামজবাদী পার্টির মুলায়ম সিংহ । নতুন তরুন ভোটারদের মধ্যে বরং কংগ্রেসকে নিয়ে উৎসাহ কম । কংগ্রসের এটাও একটা মাথাব্যথার কারন । বিগত নির্বাচনে কংগ্রেস রাজীবতনয়া শ্রীমতি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে ( ইন্দিরা গান্ধীর উত্তরসুরী বলে খ্যাত ) ময়দানে প্রচারে নামিয়েছিল যুবাভোট লাভের আশায় কিন্তু রাহুল - প্রিয়াঙ্কা জুটি রীতিমত ফ্লপ ( কংগ্রেসী প্রার্থীদের প্রাপ্ত নীরিখে) ।

তার সাথে যুক্ত্ হবে কংগ্রেসী নেতাদের দূর্নীতি ও কেলেংকারী । একের পর এক ফাঁস হওয়া প্রায় গোটা ১২ কেলেংকারীতে ইউপিএ ২ সরকার কালিমালিপ্ত । বিদেশী ব্যাঙ্কে কালোটাকার উদ্ধারের প্রশ্নে সরকার কার্যকরী পন্থা অবলম্বনে ব্যর্থ । রামলীলা ময়দানে রামদেবের ওপর সরকারী নিপীড়ন একটা শ্রেনীর লোকেরা ভালভাবে নেয়নি । সরকার কোনোমতে আন্না হাজারের আন্দোলোনকে ধামাচাপা দিয়েছে । পেট্রল - গ্যাস - ডিজেল এ নিয়ন্ত্রন তুলে নেওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি লাগামছাড়া , দিল্লীর কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের " নাগরিকদের মাথাপিছু ৪ টাকায় প্রতিদিনের দিন গুজরানের তত্ত্ব ", এফ ডি আই ইস্যুতে কংগ্রেসের ভুমিকা - জনগন এগুলির হিসেব চাইলে ভোটের অনেক অঙ্কই উল্টে যেতে পারে ।

বিজেপি সাংগাঠনিক ভাবে দূর্বল । আরও বড় গন্ডোগোল দলটির উচ্চস্তরে দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতৃত্বের সাথে প্রথম প্রজন্মের অবশিষ্ট নেতৃত্ব শ্রীলালকৃষ্ণ আডবানী, মূরলী মনোহর যোশী - এদের দূরত্ব । আডবানী এখনও প্রধানমন্ত্রী হবার প্রার্থীর দাবীদার । লোকসভায় বিরোধী দলনেতৃ শ্রীমতী সুষমা স্বরাজ অন্যজন দাবীদার । তবে বিজেপির ট্রাম্পকার্ড হল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । উন্নয়নের রূপকার মোদী বিজেপির পোস্টারবয় । সাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি তার প্রধানমন্ত্রীত্ব দাবীর প্রধান অন্তরায় । উপরন্তু সংঘপরিবারের সঙ্গে তার দূরত্ব ক্রমবর্ধমান । এনডিএ জোটের অন্যতম শরিক - তাঁর মতই উন্নয়নের অপর এক সার্থক রূপকার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের সাথে তার দূরত্বও মোদীর বিপক্ষে যাবে । নীতিশকুমার নিজেও প্রধানমন্ত্রীর পদের যোগ্য দাবীদার । দক্ষিনভারতে একমাত্র কর্নাটক ছাড়া অন্যকোথথাও বিজেপির অস্তিত্ব নেই । গুজরাট বর্তমানে সবথেকে উন্নত রাজ্য । পর পর তিনবার তিনি জিতে এসেছেন , - সোনিয়া ও রাহুলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিরোধিতা সত্বেও । স্বয়ং গুজরাটী মুসলিমদের একটা অংশের কাছে গোধরাকান্ড এখন অতীত । তাদের উন্নতি - এই কয়েকবছরে মোদী জমানায় তাদের গড় আয় তিনগুন ছাড়িয়েছে । গোধরা পরবর্তী সময়ে তাদের ওপর আর অত্যাচারের কোনো ঘটনা ঘটেনি । মোদী নিজেও সচেতন তাঁর ভাবমূর্তি উদ্ধারে । পশ্চিমি দেশগুলির কাছে মোদী আর ব্রাত্য নন । তিনি মেসেজ দিয়েছেন তাঁর কাছে সাম্প্রদিয়কতার সংজ্ঞা হল " India First " আর তা ধর্মের ভিত্তিতে নয় । তবে সময়ই বলবে গুজরাটের বাইরে কতটা গ্রহনযোগ্য তিনি ।



এবার আসছি আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে যারা অনেক হিসাবনিকাশ উল্টে দিতে সক্ষম । উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান ও তামিলনাডু - এই রাজ্যগুলির দিকে লক্ষ রাখতে হবে । উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির মুখ , সামজবাদী পার্টি সুপ্রিমো মুলায়ম সিংহ যাদব এর পুত্র শ্রী অখিলেশ যাদব তার বিরোধীদল বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী বহেনজী কুমারী মায়াবতীর স্যোশ্যাল ইন্জিনিয়ারিং এর বারোটা বাজিয়ে তবে লক্ষ্নৌ এর তখতে বসেছেন । মুলায়ম বরাবরই কংগ্রেসের বিপদের বন্ধু । কংগ্রেস সিবিআই তদন্তের জুজু দেখিয়ে তাকে বাগে এনেছে । অখিলেশ তথা মুলায়ম এবং মায়াবতী - উভয়েই বিজেপি থেকে সমদুরত্ব বজায় রাখবে তাদের ভোটব্যাঙ্কের খাতিরে । ফলে উত্তরপ্রদেশ একটা ফ্যাক্টর । কংগ্রেসকে হয়ত মায়া- মূলা 2 জনেই সমর্থন করে বসল । একটা হিসাব পরিস্কার - কংগ্রেসকে এবার আর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হচ্ছেনা , কোয়ালিশন গভর্নমেন্ট খুব সম্ভব দেখতে চলেছি । তেমন হলে মূলায়ম নিজে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন কংগ্রেসের সমর্থনে । উত্তরভারতের রাজনীতিতে জাতপাত আজও একটা বড় ভূমিকা গ্রহন করে । পিছড়ে বর্গ, তফশিলী জাতি, যাদব, ঠাকুর, ব্রাহ্মণ - সব মিলিয়ে খিঁচুরী অবস্থা ! এক এক দলের ভোটব্যাঙ্ক এক একটা গোষ্ঠী যাদের আনুগত্য সময়ের সঙ্গে কখন ওঠানামা করে দেবা না জানন্তি । বাহুবলী মাফিয়ারাও এই অঞ্চলের ভোটে অন্যতম নির্নায়ক ফ্যাক্টর। এরা পলিটিক্সকে খুব ভালভাবে নিয়ন্ত্রন করেন, ভোটে দাড়ান এবং আশ্চর্যজনকভাবে জিতেও আসেন । গোটাটাই পর্দার পেছনে মাদারী কা খেল !

রাজস্থানে রানী বসুন্ধরা রাজে আজও হেভিওয়েট প্রার্খী , যিনি রাজস্থানে বিজেপিকে নিয়ে আসতে চান আবার কিন্তু কিছু শর্তের বিনিময়ে ।জাতীয় রাজনীতিতে তিনি আরও বেশী এক্সপোজার চান । কংগ্রেস দলের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট পরিনত রাজনীতিবিদ, আপাতত কূর্মি সম্প্রদায়ের তফশিলীজাতির অন্তর্ভুক্তির রাজনীতি নিয়ে জেরবার ।

দক্ষিনের তামিলনাডু জাতীয় রাজনীতিতে ভালই প্রভাব ফেলে । রাজ্যটির বৈশিষ্ট হল - ২ টি দল করুনানিধির নেতৃত্বে ডিএমকে এবং জয়ললিতার নেতৃত্বে এআইএডিএমকে মোটামুটি অল্টারনেট করে ক্ষমতায় আসে । অল্পদিন আগে আম্মা জয়ললিতা মুখ্যমন্ত্রী হলেন । খুব খারাপ শাসন না করলে এবার জয়ললিতা অ্যাডভান্টেজ নিয়ে নয়াদিল্লীতে দরকষাকষিতে হেভিওয়েট দল পাঠাবেন । করুনানিধির দলীয় সাংসদ ও ভূতপূর্ব কেন্দ্রীয় টেলিকমমন্ত্রী টেলিকম কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে আছেন ।মন্ত্রীমহোদয় ও করুনানিধি কন্যা তথা সাংসদ দুজনে এই ইস্যুতে কয়েকমাস জেলের ভাত খেয়ে এলেন সম্প্রতি । নির্বাচনে হাওয়া খারাপ বুঝে করুনানিধি তামিল জাত্যাভিমানের কার্ড খেলে ইউপিএ২ সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের লোকদেখানো খেলা শুরু করে দিয়েছেন ।

পশ্চিমবাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন ।বিভিন্ন ইস্যুতে আগের টিএমসি - কংগ্রেস জোট এখন ভেঙ্গে গিয়েছে । মমতা এখন মুলায়মের ডিগবাজীর কারনে জাতীয় রাজনীতিতে আপাতত অপ্রাসঙ্গিক । রাজ্যে কংগ্রেস, বামজোট ও বিজেপি - সব বিরোধীরা একজোট । পঞ্চায়েতভোট নিয়ে রাজ্যরাজনীতি সরগরম । সরকার বিভিন্ন ইস্যুতে ল্যাজেগোবোরে । জনগনের মোহ অনেকটাই ভঙ্গ হয়েছে কিন্তু বিকল্প কোথায় ? লোকসভায় কংগ্রেস টিএমসি পৃথকভাবে লড়লে ক্ষতি কংগ্রেসের, তাদের আসন কমছেই । এক্ষেত্রে ভোট কাটাকাটিতে বামেদের আসন বাড়লেও বাড়তে পারে ।

বর্তমানে আইনত মনমোহন সরকার সংখ্যালঘু, বাইরে থেকে মায়াবতী ও মুলায়ম নিজেদের রাজনৈতিক লাভের জন্য সরকারকে অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছেন । আপাতত ডিজঅ্যাডভান্টেজ কংগ্রেস । বিজেপির পালে হাওয়া নেই । নতুন আঞ্চলিক জোটের তৃতীয় বিকল্প ? কংগ্রেস বা বিজেপি কে বাদ দিয়ে তৃতীয় জোটও সম্ভব নয় । লোকসভা নির্বাচনের পর কোন সাংসদ কত দামে বিক্রি হচ্ছেন সেটাই দেখার ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.