![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কখনো সখনো নিতান্তই সহজ সরল, তুচ্ছাতিতুচ্ছ উপঘটনাই নিগুঢ় সত্যের অমোঘ উন্মোচক হইয়া ওঠে।
বেল পাকিলে কাকের কি? তাল পড়িলে মালীর কি? কেহ না মরিলেই হইল।
আপেল পড়িলে পড়ুক, তাহাতে নিউটনের কি? আপেল তো আর নতুন পড়িতেছে না! কুড়াইয়া খাইতে পাইলেই হয়। কেন খাইতে পাইলাম, ইহাও কি দোষের নাকি? আপেল নিচে পড়িবে না তো কি উর্ধ্বাকাশে গোল্লাছুট মারিবে? ইহা লইয়া ভাবিয়া কে চাহে জগৎ সংসারে হাস্যাস্পদ হইতে? কেহ চাহেও নাই।
গবাদির উন্নত শংকর বানাইলে ডারউইনের কি? বাপদাদার দাদার বাপের আমল হইতে চলিয়া আসিতেছে শংকরায়ন। অমুকের দুধেল গাইটির সহিত তমুকের তাগড়া ষাড়টির শংকর করাইতে পারিলে, উন্নততর একটি বাছুর পাওয়া যাইবে, ইহা তো প্রপিতামহগণই পরম্পরা ধরিয়া শিখাইয়া আসিতেছেন। তা, আবার গরু আসিল কোথা হইতে, এমন অবান্তর ভাবনা কেন হে বাপু ডারউইন?
অধিকাংশ দুপায়াদেরই বুদ্ধির অহং বেশী, জ্ঞানের বহর বেশী। তাহাদের হাস্যাস্পদ করা চাট্টিখানি কথা নহে। তাহারা গম্ভীর চিত্তে দূরতম অদৃশ্যের ভাবনায় বিলীন হইতে রাজি; হাতের আপেলটি মাটিতে পড়িয়া গেলে, কারণ জানিতে চাহিয়া, কাহারো তামাশার পাত্র হইতে রাজি নহেন।
ইহা এক শ্রেনী। আরেক শ্রেনীও রহিয়াছেন, যাহারা অলৌকিকে বিশ্বাসবলেই পান্ডিত্য অর্জন করিয়াছেন। বিশ্বাস দৃঢ় করিতে কিতাব আওড়াইয়াছেন, আরো পন্ডিত হইয়াছেন। জশ বাড়িয়াছে। নাম হইয়াছে। লোকে সমীহ করে এই ভাবিয়া যে, ইহারা ইহকাল পরকাল উভয়ই জয় করিয়াছেন। এহেন পন্ডিত হইতে হইলে অদৃষ্টের লিখন প্রয়োজন হয় বৈকি!
এহেন পন্ডিতগণকে আজকাল বিবর্তনবাদ ব্যবচ্ছেদে ব্যস্ত দেখিতে পাই। প্রশ্নবানে কি করিয়া পিলে চমকাইয়া দিতে হয়, কি করিয়া ডারউইনের মাথায় আকাশ ভাঙ্গিতে হয়, কি করিয়া ডারউইনবাদীর আক্কেল গুড়ুম করিতে হয়, এতদ্বিষয়ে তাহাদের স্ববিশেষ পারদর্শীতা পরিলক্ষিত হয়। আপনি "বি..." বলিয়া সারিতে পারিবেন না, তাহার আগেই প্রশ্নবিদ্ধ হইবেন, "মসাই, এখন কেন বিবর্তন হইতেছে না? এখন কেন বানর মানুষ হইতেছে না? কোথাও একটিও বানর দেখাইতে পারিবেন, যে কিনা, অর্ধ্বেক মানুষ হইয়া বাকিটাও পরিবর্তনের প্রহর গুনিতেছে?"
---
গতকাল বিকালে কলা কিনিয়া আনিয়াছিলাম। কাঁচাপাকা কাদি। আজ সকালে দেখিলাম, কলাগুলো রাতভর কি অদ্ভুত করিয়া পাকিয়াছে। রঙ বদলাইয়াছে। তাহার হলুদ রঙটি মন কাড়িয়া লইল আমার। বিভোর হইয়া তাকাইয়া আছি। আচ্ছা! যদি সারারাত ভরিয়া কলাগুলোর দিকে অপলক তাকাইয়া থাকিতাম, আমি কি বুঝিতাম যে, ক্রমেই কাচাপাকা কলাগুলি পাকিয়া যাইতেছে, সবুজাভ বরণটি তাহার বিবর্তিত হইয়া হলুদ হইয়া যাইতেছে?
কলা পাকিতেছে অযুত লক্ষ নিযুত কোটি বছর বছর ধরিয়া। কেহ কি একটি কলা একটি দিন চোখের সামনে রাখিয়া, তাহার রঙ বদলের বিবর্তনটি প্রতিমুহুর্তের পার্থক্যসহকারে বুঝিতে পারিয়াছে?
তাকাইয়া থাকিলেই কি আর সব সবাই বুঝিতে পারে? ডারউইনের চোখ থাকিতে পারে নিউটনের চোখে, তাই বলিয়া ঐ চোখ সবার ভাগ্যে নহে।
কলা পাকিতে দেখিয়াও বুঝিলে না! তুমি বিবর্তন বুঝিবে কি প্রকারে?
©somewhere in net ltd.