বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২১

আসসালামু আলাইকুম। সকল ব্লগার ভাইয়েরা, আপনারা কেমন আছেন?



আমি সামু ব্লগে এক্কেবারে নতুন। এটাই আমার প্রথম ব্লগ। এই ব্লগটা পড়ে প্লিজ একটু মন্তব্য করবেন যে, আমার লেখা কতোটা খারাপ! আমি ব্লগিং করার যোগ্য কিনা। গুরুরা একটু পরামর্শ দিবেন- কীভাবে লিখলে ভালো ব্লগার হওয়া যায়!



যাই হোক, এখন মূল কথায় আসি। অনেক চিন্তা ভাবনার পর ঠিক করলাম যে, জীবনের প্রথম ব্লগটা একটু প্রবন্ধ টাইপের ই লিখি। ভেবে-চিন্তে শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম- ঐশী প্রসঙ্গে লিখি। লেখার মান কেমন হল সেটা আপনারাই নির্ধারণ করবেন।



শুরু করা যাক তাহলে!



............



সূর্য পূর্ব দিক থেকে উঠে পশ্চিমে অস্ত যায়। এটা স্বাভাবিক, প্রতিনিয়ত হচ্ছে, তাই কেউ কখনো সূর্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার আগ্রহ বোধ করে না। কিয়ামতের আগে যখন পশ্চিম দিক থেকে ঊদিত হবে আর ঢলে পড়বে পূর্বে, তখন মানুষ দলবেঁধে সূর্য দেখতে থাকবে- এ আবার কী হল সূর্যের!



সন্তান মা বাবার সেবা করবে। দোয়া করবে। বাধ্য থাকবে। এটাই নিয়ম। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সন্তান যদি খারাপ হয়। মা বাবার অবাধ্য হয়। শুধুই কি অবাধ্য? মা বাবার খুনিও। তাহলে এটা অস্বাভাবিক। এমন হলে সবাই তা আলোচনা করবে, সমালোচনায় অতি উৎসাহিত হবে। মুখরোচক নানা গল্প ছড়িয়ে পড়বে মানুষের মুখে মুখে। বাস্তব গল্প, অবাস্তব গল্প।



ক'দিন যাবত ঐশী নামক এক আধুনিক মেয়ে সমালোচনার তুঙ্গে। মিডিয়াতে তাকে নিয়ে তুমুল হইচই। মানুষেরও আগ্রহ ব্যাপক। সে মা বাবাকে খুন করেছে। কফির সঙ্গে প্রথমে ঘুমের ঔষধ খাওয়ায় মা বাবাকে। তারপর তারা ঘুমে ঢলে পড়লে তাদের বুকের উপর বসে সে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকে একের পর এক। মায়ের একবার জ্ঞান ফিরে আসে। ধমক দেন তিনি। কী করিস তুই? মাকে আর সুযোগ দেয়নি ঐশী। আরো হিংস্র হয়ে আঘাত করতে থাকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে।



বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। ঐশী একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ও লেভেলের ছাত্রী। বয়স এখনো কুড়ি ছোঁয়নি, ঊনিশ। ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ফূর্তি করে বেড়াতো। ঘরে ফিরতো মধ্যরাতে। বিভিন্ন বার, নাইট ক্লাব, ডিজে পার্টি ছিল তার সময় কাটানোর সব চেয়ে প্রিয় জায়গা। এসব জায়গাতেই থাকতো সব সময়। সেখানে নেশা করতো, নাচতো, গাইতো, আনন্দ ফূর্তি করে সময় কাটাতো। তাকে নিয়ে যে সর্বশেষ সংবাদটি চোখ বড় বড় করে দেখি বারবার- তার সাপ্তাহিক হাত খরচ ছিল এক লক্ষ টাকা! টাকা পেতো বাবা পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে।



এখন অনেকগুলো প্রশ্ন বারবার উঁকি দিচ্ছে। ঐশী কি এক দিনেই এমন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে? না, কেউ কখনো একদিনেই এতোটা হায়েনা হয়ে উঠতে পারে না, হয়ও না। শিশুকাল থেকেই তাকে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে, যেখানে ইসলাম নেই। যেখানে আদব কায়দার কথা নেই। যেখানে কখনো মা বাবার জন্য দোয়া করতে শেখায় না। শেখায় না 'রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানী সগিরা'....

আরেকটু বড় হওয়ার পর সে যখন মদের বার, ডিজে পার্টি, নাইটক্লাবে সময় কাটাতো তখন কেন বাঁধা দেওয়া হল না? বাবা পুলিশ কর্মকর্তা। তার তো ঐসব বার সম্পর্কে দুনিয়ার সবার চেয়ে ভালো জানার কথা। দেশের সব অপরাধীদের যারা তাড়া করে বেড়ায়, তারা কি নিজেদের মেয়েরা বারে যায়, না কোথায় যায়, তা কি জানেন না? জানেন। তারপরও সুযোগ দিয়েছেন। সেই মা বাবা এতো কিছু বোঝেন, কিন্তু বুঝেন না- সন্তান ওসব জায়গায় গেলে বখে যায়। হয়তোবা বুঝেছেন। কিন্তু অনেক দেরিতে। তখন আর সময় নেই।



ঐশী নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। হাত খরচ ছিল- বছরে নয়, মাসেও নয়, প্রতি সপ্তাহে এক লক্ষ টাকা। কোনো পরিবার থেকে সন্তানকে সপ্তাহে এতো বিপুল টাকা হাত খরচ দিলে যে বখে যেতে পারে, এটা বুঝার জন্য তো খুব বেশি জ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই। পাগলও বুঝে। ঐশী হায়েনা হওয়ার পেছনে সেই বিপুল অর্থের প্রবাহও কি ভূমিকা রাখেনি?



ঐশীর হাতে যে টাকা তুলে দেওয়া হল, সেই টাকা এলো কোথা থেকে? ঐ শ্রেণীর পুলিশের তো বেতন হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। ঐশী একারই যদি হাত খরচ মাসে চার লাখ হয়, তাহলে পুরো পরিবারের খরচ কত? ৩০ হাজার টাকার পুলিশ কি করে এতো টাকা খরচ করে পরিবারের পেছনে! এরকম হাজার প্রশ্ন এখন বারবার উঁকি দিচ্ছে।



ঐশী হয়তো অমানুষ। তার শাস্তি হওয়া দরকার। কিন্তু যারা ঐশীদের ঐশী বানাচ্ছে, তাদের কি শাস্তি হওয়া দরকার না? সবাই তো এক বাক্যে বলবো, 'হ্যাঁ'। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

২ টি +০/-০