নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমাকে রাগানো খুউউউব কঠিন; কিন্তু একবার যদি রেগে যাই, তাহলে খবর আছে!

মহান আল্লাহ ছাড়া কাউকেই ভয় পাই না....

গোলাম রব্বানী মুজাহিদ

সব কাজেই সেরা হতে চেষ্টা করি ।

গোলাম রব্বানী মুজাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সহমরণ

২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৭

এই বছরের জুলাই মাসের পহেলা তারিখ।

সবাই তো অ্যাকুরিয়াম পছন্দ করেন।

বিশেষ করে অ্যাকুরিয়ামের রঙিন মাছের খেলা। আমাদের ছোট্ট দুটি অ্যাকুরিয়ামে চারটি সোনালী মাছ ছিলো। গোল্ডেন ফিশ। দুই রকমের চারটি মাছ, একটি দেখতে পুঁটি মাছের মতো, কিন্তু সোনালী, রঙিন, অপরটি দেখতে রাজরানীর মতো। সেও সোনালী রঙের। অযত্নে কিনা জানি না, অ্যাকুরিয়ামের পুঁটির মতো একটি মাছ মরে গেলো। আমার খালি মনে হতো এই মাছটা একা হয়ে গেছে। তার বড় দুঃখ, তার বড় কষ্ট। হয়ত একাকী অ্যাকুরিয়ামে সাঁতার কাটতে ভয়ও পায়। তার খেলার সঙ্গী নেই। দুজনে একসঙ্গে মিলে নাচানাচি করতো। রাত্রে দূর থেকে বসে দেখতাম অ্যাকুরিয়ামে মাছ দুটি ঝিলিক দিচ্ছে। কী চমৎকারই না লাগতো। আলো প্রতিফলিত হতো ওদের গা থেকে।



মাছটির দুঃখ দূর করার জন্য ওকে রাখলাম প্রজাপতির মতো দুটি মাছের সঙ্গে। এখন একই অ্যাকুরিয়ামে তারা হলো তিনজন। একদিন দেখলাম প্রজাপতির মতো সোনালী মাছ দুটির একটি মরে গেছে। ভীষণ ব্যথা পেলাম মনে। তিনটিতে মিলে কী আনন্দেই না নেচে বেড়াতো পানিতে।



এখন রইলো ওরা দুজন। পুঁটির মতো একটি সোনালী মাছ আর একটি প্রজাপতির মতো। মাছ একা থাকতে চায় না। তার খেলার সঙ্গী দরকার। দুজন, দুজাতের হলেও তাদের মধ্যে ভাব হয়ে যায়। আমি একটু দূরে বসে রাত্রে ওদের খেলা দেখি, নাচানাচি দেখি। মাঝে মাঝে মনে হয় ওরা দুজনে খুব কাছাকাছি হয়ে কী যেন শলাপরামর্শ করছে। বুঝে উঠতে পারি না। দুজনেই তো সঙ্গীহারা। এই দুঃখ কি মাঝে মাঝে ওদের উতলা করে তোলে? কী পরামর্শ করে ওরা? ওদের ভাষা ওরাই বোঝে। আমরা তো বুঝি না। আমরা কি কেবল তাদের নাচ দেখি?



মাছ দুটি আমাদের আনন্দের খোরাক, বিশেষ করে রাত্রে যখন ড্রইংরুমে কেউ থাকে না, তখন আমি চুপ করে বসে অ্যাকুরিয়ামের দিকে চেয়ে থাকি। অন্ধকারে অ্যাকুরিয়ামে, ওরা যখন নাচে, সাঁতার কাটে, তার ঝিলিক উদ্ভাসিত হয়। ওদের জন্য বিশেষ খাবার কেনা হয়। সেই খাবার পেলে ওরা আনন্দে মাতামাতি করতে থাকে। পানিতে অক্সিজেনের দরকার। সব সময় আমাদের খেয়াল থাকে না। তখন ওদের খুব কষ্ট হয়। আমার ছোট বোন মাছগুলোর প্রতি সবসময় নজর রাখে। এগুলো তারই সখের বস্তু। এখন আমারও সুখের বস্তু হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে এমন আনন্দ পাই যার কোনো ব্যাখ্যা নেই, যার কোনো কূল নেই।

সে একদিন বললো, মাছগুলো যাতে নিয়মিত অক্সিজেন পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।

মাছগুলোর যে কখন অসুবিধা হয়, কষ্ট হয় তা বলতেও পারে না। অ্যাকুরিয়ামে যারা মাছ লালন-পালন করেন তাদের সব সময় এদিকে নজর রাখতে হয়। পানিতে যে মাছগুলো ছুটোছুটি করে, আমরা অনেক সময় চিন্তাও করে দেখি না ওদের কী প্রয়োজন। আমরা প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে বাস্ত। আমাদের ওপর যারা নির্ভর করে তাদের কথা মনে রাখি না। তাই তাদের দুঃখ-কষ্ট আমরা চোখে দেখি না। ভিন্ন প্রজাতির দুটি মাছ আজকে আমি একটি ক্ষুদ্র অ্যাকুরিয়ামে রেখেছি, ওরা প্রাণের আনন্দে সাঁতার কাটে, পানির ভিতরে ওলট-পালট খায়, তখন আলো পড়লে ঝিলিক দেয়। বসে বসে দেখি।



কয়েকদিন ধরে একটু অমনোযোগী হয়ে পড়েছি। অ্যাকুরিয়ামের ওপর সবসময় চোখ রাখতে পারি না। মাঝে মাঝে ওদেরকে খুবই বিষণ্ন মনে হয়। মনে হয়, ওরা যেন ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছে। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি মাছ দুটি খুব আস্তে আস্তে দম ফেলছে, মুখের কাছে মুখ নিয়ে নিরবে কী যেন বলছে। আমরা স্থির করেছি, মার্কেটে গিয়ে দুজোড়া মাছ কিনে নিয়ে আসবো। এনে পুঁটি মাছের মতো একটি সোনালী মাছ আমাদের অ্যাকুরিয়ামের সোনালী পুঁটি মাছের সঙ্গে রাখবো। আর একটা প্রজাপতির মতো মাছ এনে রাখবো আর একটি অ্যাকুরিয়ামে প্রজাপতির মতো মাছটির সঙ্গে। তাতে করে হয়তো ওদের একাকীত্ব ঘুচবে। আমি চাই যে ওরা জোড়ায় জোড়ায় থাকুক। আনন্দে খেলুক। সাঁতার কাটুক।



কিন্তু ব্যস্ততার জন্য মার্কেটে যাওয়া হয় না। মাছের খাবারও ফুরিয়ে গেছে। শরীরটাও ভালো থাকে না বলে বাইরে বেরোতে উৎসাহ পাই না। মাঝে মাঝে ওরা কিছু না বললেও মাছগুলোর কষ্ট অনুভব করি। ওরা তো প্রাণী, প্রাণীর সঙ্গে প্রাণীর একটা আত্মিক যোগাযোগ আছে। ওরা বাত্‌চিত না করলেও ওদের একের দুঃখ-কষ্ট অপরের অন্তরে বেদনার ঢেউ তোলে। একে অপরকে বুঝতে পারে। সাঁতার কাটতে কাটতে ঝিলিক দিয়ে যখন হারিয়ে যায়, তখন মনে হয় যেন নিরবে বলছে "বিদায়"

তখন ওদের মুখে আমি যেন হাসি দেখতে পাই।



অ্যাকুরিয়ামটা ড্রইং রুমে রেখেছি। ড্রইং রুমে বসলেই মাছের খেলা চোখে পড়ে। একদিন ঘুম থেকে উঠেছি একটু দেরিতে। ড্রইং রুমে বসে অ্যাকুরিয়ামের দিকে নজর দিয়ে মনে হলো পানি স্থির হয়ে আছে, মাছের নড়াচড়া দেখছি না, এর মধ্যে কাজের মেয়ে তাওহীদা বললো, ভাইয়া- তোমার মাছ তো মরে গেছে।

তাড়াতাড়ি উঠে অ্যাকুরিয়ামের কাছে গিয়ে লক্ষ্য করি, দুটি মাছই মরে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ভাসছে। ওরা দুটিতে কি পরামর্শ করে আত্মহত্যা করেছে? কিছু বুঝতে পারলাম না। কেবলই মনে হতে লাগলো, একাকী মাছ দুটির কাছে জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল। তাই শলাপরামর্শ করে একসঙ্গে দুজনে মৃত্যূবরণ করেছে, সহমরণে গেছে...।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.