নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরবতা

উজ্জল দাস

I am a simple man.

উজ্জল দাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেই ছেলেটি

১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৮





পরিবারের দারুন আর্থিক দৈন্যতা ঘোচাতে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলেটিই রাম পুর বাজারে চাটাই বিছিয়ে পান, বিড়ি, বিস্কুট বিক্রি করে সংসারের প্রতিদিনের খরচ জোগানোর চেষ্টা চালায় । সেদিন কেউ কি ভেবেছিল, এই ছেলেটিই একদিন বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখবে । না । কেউ ভাবেনি । কিন্তু ছেলেটি তাই করে দেখালো । দারিদ্র্যকে সঙ্গী করেই ছেলেটি পড়াশুনা এবং পাশাপাশি লেখালেখিও চালিয়েছিল ।



ছেলেটির নাম যতীন সরকার । নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামে ২রা ভাদ্র ১৩৪৩ ( ১৮ ই আগষ্ট ১৯৩৬ ) সনে জন্মগ্রহন করেন । যেসব ব্যক্তিত্বের জন্য নেত্রকোণা তার আপন মহিমায় উজ্জ্বল, যতীন সরকার তাদের পুরোভাগে ।



“সকৃদুক্তগৃহীতার্থো লঘুহস্তো জিতাক্ষরঃ ।

সর্বশাস্ত্রসমালোকী প্রকৃষ্টো নাম লেখকঃ।।”

চাণক্যের শ্লোক । যার অর্থঃ একবার বললেই যিনি কথার অর্থ বুঝতে পারেন, লেখার ক্ষেত্রে যাঁর হাত দ্রুত চলে, শব্দরাশি যাঁর বশীভূত এবং সর্বশাস্ত্র যাঁর অধিগত তিনিই লেখক হতে পারেন । যতীন সরকার এই সবগুলো গুণের দখলিকার । আর কেনই বা হবেন না । যে ছেলে ছোটবেলায়ই বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলার মতো বই পড়ে তার কাছে শব্দরাশি কি বশীভূত না হতে পারে ? ছোটবেলার পঠনপাঠন সম্পর্কে যতীন সরকার বলেন, "আমি তো ছোটবেলায় শিশুসাহিত্য পড়িনি, শিশুসাহিত্য পড়েছি বড় হয়ে। বলতে গেলে, বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলার মতো বই দিয়ে আমার সাহিত্যপাঠের শুরু। ঈশ্বরচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র ও মাইকেল মধুসূদন- এঁদের লেখা দিয়েই আমার পাঠাপাঠের গোড়াপত্তন।"



১৯৮৫ সালে “সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা” নামক গ্রন্থের মাধ্যমে যতীন সরকার বাংলাসাহিত্যে আত্মপ্রকাশ করেন । সম্ভবতঃ এত বেশি বয়সে প্রথম গ্রন্থ প্রকাশের ঘটনা বাংলাসাহিত্যে এটাই প্রথম । তবে কি তিনি নিজেকে প্রকাশ করতে চাননি ? নাকি নিজেকে পরিপক্ব করতে এই সময় ব্যয় ? এ প্রসঙ্গে যতীন সরকার বলেন, 'আমি প্রতিভাবান নই। আমি কষ্ট করে লিখি। যা লিখি তা-ও আবার পড়ে আমারই পছন্দ হয় না। এসব কারণে ভরসা পাইনি এবং এখনও পাই না। অন্যরা হয়ত প্রশংসা করে ঠিকই।'



তবে প্রাবন্ধিক পরিচয়ে সীমাবদ্ধ নন যতীন সরকার । তিনি একাধারে অধ্যাপক, বাগ্মী, চিন্তানায়ক, প্রাবন্ধিক, এবং ঔপন্যাসিক । তাঁর আত্মজীবনী মূলক লেখা “পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু-দর্শন” এ ঘটনাগুলোকে যেভাবে তিনি উপস্থাপন করেছেন তাতে “পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু-দর্শন”-কে একটি স্বার্থক উপন্যাস বলা যায় ।?



এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি তিনি । একে একে প্রকাশিত হয় 'বাংলাদেশের কবিগান' (১৯৮৬), 'বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য' (১৯৮৬), 'সংস্কৃতির সংগ্রাম', 'মানবমন, মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব' । বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত 'গল্পে গল্পে ব্যাকরণ' (১৯৯৪) বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে এবং ব্যাকরণ গ্রন্থের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। বাংলা একাডেমীর জীবনী গ্রন্থমালার মধ্যে চারটি গ্রন্থ রচনা করেন তিনি। সেগুলো হচ্ছে, 'কেদারনাথ মজুমদার', 'চন্দ্রকুমার দে', 'হরিচরণ আচার্য', 'সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী'। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে 'রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী', 'প্রসঙ্গ মৌলবাদ' ও 'জালাল গীতিকা সমগ্র' । 'জালাল গীতিকা সমগ্র' বাংলাসাহিত্যে নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য সম্পাদনা ।



বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ তাঁর সঙ্গে মানিয়ে যায় বেশ- ঘরকুনো স্বভাবের মানুষ । নিজের খোলসের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে রাখা স্বভাবসুলভ ।



সাজ্‌জাদ আরেফিন “নান্দীপাঠ”-এ তাঁর ছোট্ট কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছেন “আমাদের সমাজে উদার মুক্ত মানবিক মননশীলতার ক্ষেত্র ক্রমেই সংকোচিত হয়ে আসছে । সম্প্রসারিত হচ্ছে গোষ্ঠীবদ্ধতা । আমরা আমাদের চতুষ্পার্শ্বে মূল্যবোধের যে ধস ক্রমাগত লক্ষ করছি, সামাজিক ভারসাম্যহীনতা যেভাবে প্রসারিত হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিষবাষ্পে বাতায়ন যেভাবে কলুষিত হচ্ছে তাকে এক্ষুনি রুখে না দাঁড়ালে সামাজিক মানুষ হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুখ দেখাবার অবস্থা থাকবে বলে মনে হচ্ছে না । এ অবস্থাকে মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজন মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন অসংখ্য মানুষ” । অধ্যাপক যতীন সরকার তেমনি একজন মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ।

আজ ১৮ ই আগষ্ট এই মানুষটির পৃথিবীতে আসার দিন, মাতৃ গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন, যাকে আমরা বলি জন্মদিন । প্রত্যাশা করি যতীন সরকার দীর্ঘজীবী হউক, বাংলা সাহিত্যকে আরো বেশী ঋণী করুক, পাশাপাশি ঋণী হই বর্তমান প্রজন্ম ।





-উজ্জ্বল দাস

[email protected]





তথ্যসূত্র: গুণীজন ডট কম এবং 'পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু দর্শন' গ্রন্থ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৪

অচেনাসময় বলেছেন: বাংলা সাহিত্যের একজন সুপন্ডিত মানুষ

ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন ।

শুভ জন্মদিন

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪১

উজ্জল দাস বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.