নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরবতা

উজ্জল দাস

I am a simple man.

উজ্জল দাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

মফস্বল শহরের একজন প্রচারবিমূখ তথ্যচিত্র নির্মাতা; সেন্টু রায়

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪০


সেন্টু রায় (১২ জুন, ১৯৫৪) তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী, মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী নিবেদিত প্রাণ একজন সংস্কৃতিকর্মী। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক থেকে একজন শিল্পী হয়ে কাজ করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক নিবিড়। বাংলাদেশের যে ক’জন তথ্যচিত্র নির্মাতা মুনশিয়ানার প্রমাণ রেখেছেন সেন্টু রায় তাদেরই একজন। কিন্তু সেন্টু রায় তার সমসাময়িক তথ্যচিত্র নির্মাতাদের মতো ততোটা পরিচিত বা আলোচিত নন। কারণ, সেন্টু রায় প্রচার বিমূখ একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা। তিনি মফস্বল শহর নেত্রকোণা ছেড়ে কখনো ঢাকা অভিমূখি হননি। এটাও একটি কারণ।

সেন্টু রায়ের পিতা-মনীন্দ্র মোহন রায়, মা-প্রেমদা রায়। পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোণায় সেন্টু রায় জন্ম গ্রহন করেন। তৎকালীন নেত্রকোণা মহকোমায় যে ক’টি শিক্ষিত এবং উচ্চবিত্ত পরিবার ছিল তাদের মধ্যে সেন্টু রায়ের পরিবার ছিল অন্যতম।

নেত্রকোণার দত্ত হাই স্কুল থেকে মেট্রিক (এস,এস,সি) পাশ করার পর সেন্টু রায় ঢাকায় গিয়ে কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে আই,এ পাশ করার পর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ. পাস করেন ১৯৭৯ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯৯৩ সালে চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড থেকে ২০০০ সালে ফিল্ম বিষয়ে এম. এফ. এ. ডিগ্রী অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালেই তিনি তৈরি করেন যুদ্ধাপরাধের ওপর একটি তথ্যচিত্র, টিয়ার্স অফ ফায়ার, যেখানে নুরেমবার্গ ট্রায়ালের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিষয়টিও উঠে আসে। এর মধ্যে সেন্টু রায় দেশে আসার জন্য ব্যকুল হয়ে যান। মায়ের ভালোবাসা এবং মাতৃভূমির শীতল ছায়ার অনুপস্থিতি তাকে পাগল করে দেয়। মা ও মাতৃভূমিকে ভালোবেসে সেন্টু রায় যুক্তরাষ্ট্রের বিলাসবহুল জীবন-যাপন ছেড়ে ( হার্ভার্ড এর শিক্ষা সনদ হাতে পাওয়ার পর) ২০০৭ সালে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের লক্ষ্যে ফিরে আসেন।

দেশ ও কালের কাছে সেন্টু রায় দায়বদ্ধ থাকতে চান না, দায়বদ্ধ থাকতে চান না জীবনের কাছেও। তাই প্রবাসের সুখ-স্বাচ্ছন্দ অস্বীকার করে দেশে ফিরে এসে গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন; একের পর এক তথ্যচিত্র তৈরি করে যাচ্ছেন। যেমন-‘টিয়ার্স অব ফায়ার্স’, ‘রাইট টু রিটার্ন্স’, ‘সোনাটা (a story of autism)’, ‘কবিয়াল’, ‘আলতাফ মাহমুদ’, ‘জহির রায়হান’, ‘যাবার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যাও’, ‘তোমারি তরে মা’, ‘মধুর আমার মায়ের হাসি’, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ ইত্যাদি। উল্লেখিত তথ্যচিত্র টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত হয়েছে এবং হয়ে চলেছে।
বীরাঙ্গনাদের নিয়ে সেন্টু রায় আরেকটি তথ্যচিত্র তৈরি করছেন। যার ৯০ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

একজন সৃজনশীল ও বৈচিত্রসন্ধানী মানুষ শুধুমাত্র একটি বৃত্তের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে কখনোই পছন্দ করেন না। সেন্টু রায়ও করেন না। তারই ফলশ্রুতিতে একের পর এক বিষয় উঠে আসছে তার তথ্যচিত্রে।

• টিয়ার্স অব ফায়ার্সঃ বাংলাদেশের যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার বিষয়ে “টিয়ার্স অফ ফায়ার” তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছে । আমেরিকার যে সকল সাংবাদিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলেন সেই সকল সাংবাদিক এবং আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ বিষয়ক গবেষক ও পারদর্শীদের সাক্ষ্য নিয়ে নির্মিত।

• রাইট টু রিটার্ন্সঃ গত দু’শ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেদনাদায়ক ও জঘন্য হলো- ইহুদিবাদীদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনী ভূখন্ড দখলের ঘটনা। ইহুদীরা ফিলিস্তিনীর উপর নির্মম ও নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে । শান্তি প্রতিষ্ঠায় বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টা চালানো হলেও তা কখনো ফলবতী হয়নি। “রাইট টু রিটার্ণ” বিভিন্ন দেশে শরনার্থী শিবিরে বসবাসরত প্যালেষ্ঠাইনিদের দেশে ফিরার অধিকার নিয়ে নির্মিত।

• সোনাটা (a story of autism)ঃ অটিজম কোন রোগ , বংশগত বা মানসিক রোগ নয়, এটা স্নায়ুগত বা মানসিক সমস্যা। এ সমস্যাকে ইংরেজিতে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বলে। অটিজমে আক্রান্তদেরকে অটিস্টিক বলা হয়। অটিষ্টিক শিশুদেরকে কেউ কেউ মানসিক প্রতিবন্ধী বলে থাকেন। অটিজমে আক্রান্ত কোনো কোনো শিশু বা অটিষ্টিক শিশু কখনো কখনো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অত্যন্ত পারদর্শীতা প্রদর্শন করতে পারে। অটিস্টিক শিশুরা অনেক জ্ঞানী হয়। তবে আট দশটা শিশুর মত এদের জ্ঞান সব দিকে সমান থাকে না। এদের কারো থাকে গণিতের উপর অসাধারন জ্ঞান, কারো বিজ্ঞান, কেউ বা অসাধারন সব ছবি আঁকতে পারে, কারো আবার মুখস্ত বিদ্যা প্রচুর বেশি হয়। আর এ জন্য কোন অটিস্টিক শিশুকে ঠিক মত পরিচর্চা করলে হয়ে উঠতে পারে একজন মহা বিজ্ঞানী। এটিই সোনাটার বিষয়বস্তু।

• কবিয়ালঃ নদী-নালা, হাওর-বাঁওড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের নিদর্শন নেত্রকোণা। ১৭শ সালের দিকে এ এলাকার জমিদারদের খাজনা আদায় উৎসবে কবিয়ালদের কবির টপ্পা ছিল আকর্ষনীয় অনুষ্ঠান। প্রজারা খাজনা দিয়ে কবির টপ্পা শুনে মিঠাই খেয়ে বাড়ি ফিরত। জমিদার আমলের প্রখ্যাত কবিয়াল ছিলেন, লোচন কর্মকার, হারাইল বিশ্বাস, লাল মাসুদ, গোবিন্দ আচার্য, অন্ধকবি তাঁরাচাদ, কিংকর শীল প্রমূখ। মদন ঠাকুর এই কবিয়ালদের শেষ প্রজন্ম। কবিয়াল তথ্যচিত্রে মদন ঠাকুর (মদন মোহন আচার্য) এর কবিয়াল জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির নানাদিক এর সাথে সাথে ব্যক্তিক বেদনাকেও তুলে ধরেছেন।

• আলতাফ মাহমুদঃ আলতাফ মাহমুদের মতো গণজাগরণের শিল্পীকে চলচ্চিত্রের বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন সেন্টু রায়। তিনি নিজেও গণসাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত আছেন বলেই হয়তো সম্ভব হয়েছে এমনটা। আলতাফ মাহমুদ তথ্যচিত্রে, আলতাফ মাহমুদের জীবনের ঘটনাগুলোকেই শুধু নয় – সামনে নিয়ে এসেছেন মানুষ আলতাফ মাহমুদকে। যে মানুষটি ছিলেন স্পার্টাকাসের মতন বিদ্রোহী।

• জহির রায়হানঃ জহির রায়হান একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার। জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন। জহির রায়হান দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭১ এর ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা ফিরে আসেন এবং তার নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে শুরু করেন, যিনি স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে পাকিস্তানী আর্মির এদেশীয় দোসর আল বদরবাহিনী কর্তৃক অপহৃত হয়েছিলেন। জহির রায়হান ভাইয়ের সন্ধানে মীরপুরে যান । মীরপুর ছিল ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত বিহারী অধ্যুষিত এলাকা এবং এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে সেদিন বিহারীরা ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালালে তিনি নিহত হন। এমন নির্মম সত্যকেই সেন্টু রায় উপস্থাপন করেছেন জহির রায়হান তথ্যচিত্রটিতে।

• যাবার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যাওঃ ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। এক উন্মাতাল সময় সেটি। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের সময়, শোষণ মুক্তির স্বপ্ন দেখার সময়, রক্তমূল্যে নিজেকে আবিস্কার করার সময় এবং সবুজ জমিনে লাল সূর্যের পতাকা ওড়ানোর সময়। সেই সময়কে স্বাক্ষী রেখে বাংলার দামাল ছেলেরা অংশ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোণা জেলার বিরামপুর গ্রামের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পাকিদের হাতে ধরা পরার পর বিপন্ন হয়ে উঠেছিল তাদের জীবন, সেই বিপন্নতার বেদনা বিমূঢ় করে সেন্টু রায়ের বিবেকীসত্তাকে। কারণ, সেন্টু রায় নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা।“যাবার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যাও” তথ্যচিত্রটিতে সেন্টু রায়ের গবেষণায় উঠে এসেছে বিরামপুর গ্রামের সেই হতভাগ্য মুক্তিযোদ্ধাদের শহীদ হওয়ার করুন বাস্তবতা।

• তোমারি তরে মাঃ ১৯৬৪ সাল। তৎকালীন পাকিস্তানে তখন আইয়ুব খানের শাসন চলছে। পাকিভারত যুদ্ধের গ্লানি থেকে পূর্ববাংলার মানুষের দৃষ্টি অন্য কিছুতে আচ্ছন্ন করার মানসে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আইয়ুবী সরকার একটা দারুণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি করে। এই দাঙ্গা নারায়ণগঞ্জ হতে জয়দেবপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দীর্ঘ ৯ দিন পর্যন্ত নারকীয় হত্যা অগ্নিসংযোগের তাণ্ডব চলে।এই দাঙ্গার ফলে দীর্ঘ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঘৃণা ও প্রতিহিংসার আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় এক অপ্রার্থিত মুহূর্তে। “তোমারি তরে মা” তথ্যচিত্রে সেন্টু রায় ১৯৬৪ সালের সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকেই বিষয়বস্তু করেছেন। বেগম রোকেয়ার ছোট বোনের ছেলে “শহীদ আমীর হোসেন চৌধুরী” যিনি ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে প্রাণ দিয়েছিলেন সেই কাহিনীও প্রকাশ পেয়েছে এই তথ্যচিত্রে।

• মধুর আমার মায়ের হাসি: “ মধুর আমার মায়ের হাসি” তথ্যবয়ান চিত্রে জাহানারা ইমামের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত, উনার বিখ্যাত “৭১-এর দিনগুলি”- এর উল্লেখযোগ্য কিছু দিনের চিত্রবয়ান, ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ রাত্র থেকে ২৭ শে মার্চ পর্যন্ত ঢাকা শহরে যে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে তার প্রত্যক্ষ সাক্ষীর ভিত্তিতে চিত্রবয়ান, এবং ঢাকা ক্র্যাক প্লাটুন ( যে গ্রুপে শহীদ রুমী যুক্ত ছিলেন) গ্রুপের সাহসী কিছু প্রতিরোধমূলক সশস্ত্র অপারেশন যাহা সেই সময় ঢাকা শহরে পাকিস্তানি আর্মীর সশস্ত্র চক্রবুহ্য ভেদ করে প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত পাকিস্তানি সেনা হত্যা করে পাকিস্তানিদের মনোবল একেবারে ভেঙ্গে দিয়েছিল।ছবিতে দেখানো হয়েছে রুমী, আজাদ, আলতাফ মাহমুদ, জুয়েল, বদী সহ যারা পাকিস্তানি আর্মীর হাতে ধরা পড়ে গিয়েছিল তাদের উপর নির্মম অত্যাচার শেষে ওদের করুণ হত্যার চিত্র। পরিশেষে দেখানো হয়েছে যুদ্ধ অপরাধীর বিচার চেয়ে জাহানারা ইমামের গণ আন্দোলন এবং গণ আদালত।
ছবিটি প্রথম বারের মতো ঢাকা সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার মিলনায়তন (পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তন), শাহবাগ, প্রদর্শিত হয়। ছবিটির উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর এম. পি. মহোদয় ।

• আকাশ ভরা সূর্য তারাঃ আমাদের দেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জনজীবন প্রায়শই জলের প্রহারে জর্জরিত হয়। হাওর-বাঁওড়, নদী-নালা অধ্যুষিত এ দেশের মানুষ সেটিকেই অনেকটা নিয়তি হিসেবে ধরে নিয়েছে। আর এই অমোচনীয় নিয়তির কাছে নিতান্ত অসহায়ভাবে আত্ম-সমর্পণ করা ছাড়া অন্য কিছুর চিন্তা এ যাবৎকাল তারা করে উঠতে পারেনি।“আকাশ ভরা সূর্য তারা” নামক তথ্যচিত্রটিতে সেন্টু রায় হাওরের হতভাগ্য অধিবাসীদের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাংক্ষা এবং কঠোর জীবন সংগ্রামের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন।

• বীরাঙ্গনাঃ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ২00,000-এরও বেশি নারী ও মেয়েদের পদ্ধতিগতভাবে ধর্ষণ ও অত্যাচার করা হয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, তাদেরকে বীরাঙ্গনা উপাধিতে শোভিত করা হয়। বীরাঙ্গনা মানে সাহসী নারী। তারা ছিল গেরিলা যোদ্ধা, মা, নার্স, পত্নী, তথ্যবহুল, কন্যা, গুপ্তচর এবং আরও অনেক কিছু।কিন্তু তাদের অনেকেই তাদের পরিবার দ্বারা বিমোহিত হয়েছিল। কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছিল। বাকিদের শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই ভয়াবহ অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখিন হতে হয়েছিল। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক এই ভয়াবহ পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আলোর সংস্পর্শে এসেছে বাকিরা চিরদিনের জন্য অন্ধকারকেই আপন করে নিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের বিপুল ত্যাগ ও প্রত্যাশা এবং যুদ্ধোত্তর সময়ের অরাজকতা ও হতাশাকে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন সেন্টু রায়। কারণ, তিনি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশগ্রহন করেন। ১৯৭১ সালে সেন্টু রায়ের বয়স কত হবে? ১৬ বা ১৭ বছরের এক বালক। মুক্তিযুদ্ধের মানে কি তাও বুঝে উঠতে পারেনি সঠিকভাবে। কিন্তু মা ও মাতৃভূমির প্রতি সেন্টু রায়ের ছিল অগাধ শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও আসক্তি। তাই মা ও মাতৃভূমিকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে শুধুমাত্র এই প্রত্যয়ে সেন্টু রায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন।
তাই যুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বীরাঙ্গনাদের ত্যাগ, ত্যাজ, ক্লেদ আর গ্লানির সংগে যুক্ত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার অনেক কিছুই খুব বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বীরাঙ্গনাদের নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রে।

সেন্টু রায়ের জীবন দর্শনের একদিকে আমরা খুঁজে পাই মুক্তিযুদ্ধের আবেগ, উদ্বামতা, রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা, পাকিস্তানি জানতার প্রতি তীব্র ঘৃণা এবং উজ্জ্বল স্বপ্নময়তার প্রকাশ অন্যদিকে খুঁজে পাই এক উদার অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী মানুষকে, যিনি জাত, ধর্ম ও বর্ণের উর্ধ্বে স্থাপন করতে চান মানব ধর্ম।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:১৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: সেন্টু রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রইল।

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:২৭

উজ্জল দাস বলেছেন: Thanks.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.